০১.
সন্ধ্যেটা সবে আসতে শুরু করেছে;
আবছা হচ্ছে আলোটা। সূর্য এখন অনেকটা সময় নিয়ে আকাশটাকে মাতিয়ে রাখে; তাই সন্ধ্যেটা আসতে দেরি হয়। আর সন্ধ্যেটা পা ফেলতেই ঝুপঝাপ আধাঁর নামতে শুরু করে। আধাঁর নামতে যখন শুরু হয় তখন আবার পাশের নালাটায় ডাক শোনা যায় ঝি ঝি পোকার। একটানা ঝি পোকার শব্দে কান মাতায়।
সেই সাথে ডোবার ধারে করাত করাত করে ডেকে উঠে ব্যাঙ। আজ জোনাক গুলোও বড্ড ছন্নছাড়া হয়ে আছে; পাচঁ-দশটি এক জায়গাতে থাকেই না; বড়োজোর দু’চারটেকে দেখা যায় এদিক-ওদিক উড়ছে। কেন ওরা এমন তা ভাবতে বসে আছে জয়িতা।
সন্ধ্যের প্রদীপটা এখনো জ্বালেনি সে;
আলসেমিটা পেয়ে বসেছে আজ আবার; মা’র বকুনি নির্ঘাত। মেয়েটা যে বড় হয়েছে মায়ের সে খেয়াল থাকেই না; সেই ছোট্টটি কি আর আছে কাল বাদে পরশু যে তার বিয়ে; তাকে কি বকুনি দেয়া যায়? সন্ধ্যে ছেড়ে কিছুতেই মনটা তার উঠতে চায়না আরেকটু বসে থাকতে ইচ্ছে করে কিন্তু সে জো নেই এখুনি সন্ধ্যা ফুরোলো বলে।
ভাবনার তেপান্তর থেকে মনটাকে টেনে নিয়ে সোজা হয়ে দাড়ায় জয়িতা।
সন্ধ্যে প্রদীপ জ্বালতে হবে; বাবা চলে এলো বলে; সন্ধ্যে মরে যচ্ছে কিন্তু প্রদীপ জ্বলেনি দেখলে বাবা রাগ করবে।
০২.
ধ্রুব গেছে শাড়ী, গয়না, আর টোপর কিনতে।
কালকের পরদিন সাতাশ তারিখ জয়িতার বিয়ে। একটা মাত্র বোন। তাকে রাজরানীর মতো সাজিয়ে বিয়ে দেবে।
সুখ কষ্ট যাই হোক বাবার ঘরে; কিন্তু স্বামীর ঘরটা যেন দুঃখের না হয় যেন কষ্টটা ওকে আঁকড়ে ধরতে না পারে কখনো। একটা ভালো পাত্রের সন্ধানে কেটে গেছে তিনশত পয়ষট্টি দিন। চাট্টি খানি কথা। ভালো না হলে চলে।
সে রাতে ঘরে ফিরে ধ্রুব বলে বাইরের পরিবেশটা বেশ থমথেমে; দেখেছিস জয়িতা ?
জয়িতা বলে শুধু কি তাই আজ এই রাতেও কাক ডাকছে বিষাদ স্বরে খুব খারাপ লাগছে রে বুঝতে পারছিনা!! না জানি কোন বিপদ আসছে ধেয়ে কে জানে। বিষন্নতায় মনটা ভরে গেলেও মুখে সেটা ফোটাতে পারেনা; ভয় হয় ধ্র“ব’র যদি পাছে জয়িতার মনে জাগে সংশয়। না তেমন কিছু না এটা; চাপা হাসিতে বলে ধ্রুব।
জয়িতা বলে দাদা বিয়েটা শেষ হলেই চল আমরা এ দেশ ছেড়ে চলে যাবো ? এখানে শান্তি নেই। পাশ বালিশটা টেনে সোফায় বসতে বসতে ধ্র“ব বলে নাহ্ এটা আমার জন্মভূমি আমি ছাড়তে পারবোনা সোদা মাটির গন্ধ এই প্রকৃতি আমাকে ছাড়বেনা; তাছাড়া আমি ভালবাসি দেশকে একদিন দেশের এই হাল থাকবে না আমরা সেদিন সাজাবো নতুন করে; ভরে দেব আলোয় আলোয়।
জানিস এই প্রকৃতি এই হাওয়া আমাকে শক্তি দেয়। পথ চলার প্রেরণা পাই মানুষের ভালোবাসা থেকে। আমি ছাড়তে পারবো না।
জয়িতা বলে তাই বলে এভাবে কি থাকা যায়!!
না জানি কবে মারা পড়বো। সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে ধ্রুব বলে যাই হোক আমি আছি থাকবো।
বিয়ের পর তোর বরের সাথে ঘুড়বো। জয়িতা হেসে বলে তাই নাকি;
দাদা আমার একটা পুচকো থাকবে যেটা তোকে জ্বালাবে ভীষণ।
জয়িতার মা মেয়েকে বলে তারাতারি তোর বিয়েটা হয়ে গেলেই বাঁচি; দেশে যা শুরু হয়েছে কি যে হয় কে, জানে। আজকাল দিনগুলো ভালো যাচ্ছেনা সারাদেশ জুড়ে কিসের যেন পায়তারা চলছে।
০৩.
শব্দটা দেয়ালটাকে কাঁপাচ্ছে।
আধবোজা চোখ মেলে তাকাতেই জয়িতা শব্দের তরঙ্গে কেপে উঠে।
চরদিকে শুধু শব্দ আর শব্দ। মনে হচ্ছে সারা শহরে একনাগারে কেউ আতশ ফোটাচ্ছে।
সেই সাথে মিশেছে আর্ত হাহাকার। জয়িতা উঠে বসে জানালার ধারে তাকায় সামনের দিকে শুধু দেখা যায় আগুনের মেলা বসেছে পুরো মহল্লায়।
সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে আগুনের কোন গোলা এসে পড়েছে শহরে। ধোয়া উঠছে থেকে থেকে। কি হচ্ছে এসব কে যেন সারা শহরকে নরকপুরি করে তোলেছে এরই মাঝে।
দরজা খুলে বাইরে আসে। পুরো শহর যেন জ্বলছে। যেন আগুন তার রাজত্ব পেয়েছে আজ সব পুরিয়ে করবে ছাড়খার। গেটে এসে দাড়ালো জয়িতা। ধ্রুব দাড়িয়ে আছে মা’কে নিয়ে।
ধ্রুব বললো তুই আবার এসেছিস কেন যা ঘরে কিন্তু জয়িতা সেখানেই দাড়িয়ে আছে স্নায়ুবত হয়ে । পাশের মহল্লায় আগুন পড়েছে। বুলেটের আওয়াজে কান পাতা যাচ্ছেনা। বুকের ভেতরে ঢিব ঢিব শব্দটা একটানা হাতুরি পেটাচ্ছে। কালকের পরদিন বিয়ে জয়িতার। কিন্তু অর্তকিত এই নরপিশাচদের হামলায় কি টিকে থাকা যাবে। বিয়েটা বুঝি গেল !!
জয়িতা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উছে দাদা ওরা যদি এদিকে আসে ?
না আসবে না অভয় দেয় ধ্রুব।
দাদা আমার ভয় করছে !! তোকে আমাকে সবাইকে মেরে ফেলবে না'তো ? আবারো অভয় দেয় ধ্রুব।
নরপিশাচরা শব্দশকট হাতে নিয়ে এদিকে আসছে ধীরে ধীরে।
ধ্রুব ভাবে বাড়ি ছেড়ে যে পালাবে সে উপায়টুকু তো নেই। যে হারে বৃষ্টির মতো বুলেট ফুটছে; নির্ঘাত কোন বুলেট এসে বিধঁবে বন্ধুর মতোন এই বুকে। ওদিকে জয়িতার মা বিলাপ শুরু করে দিয়েছে। ঈশ্বর এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দাও ? বিপদ না পড়লে আমাদের ভগবানকে ডাকার তেমন একটা ইচ্ছে মনে জাগেনা আজ তাই এই ঘোর বিপদে তাকেই ভীষণ ভাবে প্রয়োজন।
গেটের পাশটায় জোড়ায় জোড়ায় বুটের আওয়াজ কারা যেন আসছে।
০৪.
টেনে হিচরে নিয়ে যাচ্ছে জয়িতাকে নরপিশাচ গুলো।
বাধাঁ দেবার কেউ নেই। ছোপ ছোপ রক্তে আঙ্গিনা রাঙানো। এই মহল্লার কেউ মনে বাচঁতে পারবেনা আজ এই রাতে; সে সংকল্পে নেমেছে ওরা।
দাদা ওরা আমাকে নিয়ে গেলো ওদের ফেরা ? আকুতিটা খুব করুন ভাবে দেয়াল গুলোকেও কাপাচ্ছে। উপর থেকে কি সুন্দর কলকাঠি নেড়ে যাচ্ছেন তিনি দেখছেন কিভাবে অসহায় হয়ে পড়ে থাকে তার সৃষ্টিরা। জয়িতার চিৎকারটা বাড়ছে ক্রমশই;
কিন্তু ধ্রুব সেটা শুনতে পাচ্ছেনা; বুকটা ঝাঝরা করে দিয়ে গেছে বুলেট সোদা মাটির গন্ধে পাগল ছেলেটা পড়ে আছে; সে। ঘরের ভেতর লাশ হয়ে পড়ে আছে জয়িতার বাবা আর মা; ওরা বাচঁতে চায় নি; শুধু বলেছিলো আমাদের মেরে ফেলো কিন্তু আমাদের প্রিয় সন্তানদের মেরো না।
কিন্তু ওরা শুনবে কেন সে কথা; ওরা আজ নরপিশাচ হয়ে এসেছে।
যেমন সারি বেধে ওরা এসেছিলো, তেমনি চলে গেল লাশ ডিঙ্গিয়ে সাথে নিয়ে গেল জয়িতাকে।
জয়িতার লালপেড়ে শাড়ি পরে কপালে সিদূঁর দিয়ে হাতে শাখা ভরে আর বধূ হওয়া হলোনা। হলোনা পূরণ স্বামীর সোহাগ কিংবা মা ডাক শোনার অদম্য ইচ্ছেটা।
এ রাতে শুধু রক্তে ভরে উঠেছে রাজপথ আর আঙ্গিনা। নরপিশাচরা সেই রক্তে পা ফেলে প্রান নিধন করেই চলেছে ভয়ঙ্কর রাতটা কিছুতেই ফুরাচ্ছে না। রাত যতো বাড়ছে বাতাসে বাড়ছে বারুদের গন্ধ; আর রক্তে রক্তে ঢেকে যাচ্ছে শত শত প্রানের স্বপ্নরা। রাতটা যেমন করে শুরু হয়েছিলো তেমন করে শেষ হচ্ছেনা। জোনাকিরা নেই এখন আর। নালার পাশের ব্যাঙ গুলো আর ডাকছে না থমকে আছে ওরা। এ রাতে কাক আর ডাকবার সুযোগ পায়নি ভয়ে চলে গেছে দুরে কোথাও।
ঘরে পড়ে আছে টোপর আর লাল শাড়ি আর সব তছনছ করে দিয়ে গেছে নরপিশাচেরা কি ভেবে যেন আগুন জ্বালেনি এ বাড়িতে। চারপাশটা কাপছে হয়তো সকাল না হলে আর থামবে না।
রাতটা শেষ হচ্ছেনা সূর্যটা বসে আছে রক্তে আকাঁ সকাল দেখবে বলে;
কখন সকাল হবে ?
সন্ধ্যেটা সবে আসতে শুরু করেছে;
আবছা হচ্ছে আলোটা। সূর্য এখন অনেকটা সময় নিয়ে আকাশটাকে মাতিয়ে রাখে; তাই সন্ধ্যেটা আসতে দেরি হয়। আর সন্ধ্যেটা পা ফেলতেই ঝুপঝাপ আধাঁর নামতে শুরু করে। আধাঁর নামতে যখন শুরু হয় তখন আবার পাশের নালাটায় ডাক শোনা যায় ঝি ঝি পোকার। একটানা ঝি পোকার শব্দে কান মাতায়।
সেই সাথে ডোবার ধারে করাত করাত করে ডেকে উঠে ব্যাঙ। আজ জোনাক গুলোও বড্ড ছন্নছাড়া হয়ে আছে; পাচঁ-দশটি এক জায়গাতে থাকেই না; বড়োজোর দু’চারটেকে দেখা যায় এদিক-ওদিক উড়ছে। কেন ওরা এমন তা ভাবতে বসে আছে জয়িতা।
সন্ধ্যের প্রদীপটা এখনো জ্বালেনি সে;
আলসেমিটা পেয়ে বসেছে আজ আবার; মা’র বকুনি নির্ঘাত। মেয়েটা যে বড় হয়েছে মায়ের সে খেয়াল থাকেই না; সেই ছোট্টটি কি আর আছে কাল বাদে পরশু যে তার বিয়ে; তাকে কি বকুনি দেয়া যায়? সন্ধ্যে ছেড়ে কিছুতেই মনটা তার উঠতে চায়না আরেকটু বসে থাকতে ইচ্ছে করে কিন্তু সে জো নেই এখুনি সন্ধ্যা ফুরোলো বলে।
ভাবনার তেপান্তর থেকে মনটাকে টেনে নিয়ে সোজা হয়ে দাড়ায় জয়িতা।
সন্ধ্যে প্রদীপ জ্বালতে হবে; বাবা চলে এলো বলে; সন্ধ্যে মরে যচ্ছে কিন্তু প্রদীপ জ্বলেনি দেখলে বাবা রাগ করবে।
০২.
ধ্রুব গেছে শাড়ী, গয়না, আর টোপর কিনতে।
কালকের পরদিন সাতাশ তারিখ জয়িতার বিয়ে। একটা মাত্র বোন। তাকে রাজরানীর মতো সাজিয়ে বিয়ে দেবে।
সুখ কষ্ট যাই হোক বাবার ঘরে; কিন্তু স্বামীর ঘরটা যেন দুঃখের না হয় যেন কষ্টটা ওকে আঁকড়ে ধরতে না পারে কখনো। একটা ভালো পাত্রের সন্ধানে কেটে গেছে তিনশত পয়ষট্টি দিন। চাট্টি খানি কথা। ভালো না হলে চলে।
সে রাতে ঘরে ফিরে ধ্রুব বলে বাইরের পরিবেশটা বেশ থমথেমে; দেখেছিস জয়িতা ?
জয়িতা বলে শুধু কি তাই আজ এই রাতেও কাক ডাকছে বিষাদ স্বরে খুব খারাপ লাগছে রে বুঝতে পারছিনা!! না জানি কোন বিপদ আসছে ধেয়ে কে জানে। বিষন্নতায় মনটা ভরে গেলেও মুখে সেটা ফোটাতে পারেনা; ভয় হয় ধ্র“ব’র যদি পাছে জয়িতার মনে জাগে সংশয়। না তেমন কিছু না এটা; চাপা হাসিতে বলে ধ্রুব।
জয়িতা বলে দাদা বিয়েটা শেষ হলেই চল আমরা এ দেশ ছেড়ে চলে যাবো ? এখানে শান্তি নেই। পাশ বালিশটা টেনে সোফায় বসতে বসতে ধ্র“ব বলে নাহ্ এটা আমার জন্মভূমি আমি ছাড়তে পারবোনা সোদা মাটির গন্ধ এই প্রকৃতি আমাকে ছাড়বেনা; তাছাড়া আমি ভালবাসি দেশকে একদিন দেশের এই হাল থাকবে না আমরা সেদিন সাজাবো নতুন করে; ভরে দেব আলোয় আলোয়।
জানিস এই প্রকৃতি এই হাওয়া আমাকে শক্তি দেয়। পথ চলার প্রেরণা পাই মানুষের ভালোবাসা থেকে। আমি ছাড়তে পারবো না।
জয়িতা বলে তাই বলে এভাবে কি থাকা যায়!!
না জানি কবে মারা পড়বো। সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে ধ্রুব বলে যাই হোক আমি আছি থাকবো।
বিয়ের পর তোর বরের সাথে ঘুড়বো। জয়িতা হেসে বলে তাই নাকি;
দাদা আমার একটা পুচকো থাকবে যেটা তোকে জ্বালাবে ভীষণ।
জয়িতার মা মেয়েকে বলে তারাতারি তোর বিয়েটা হয়ে গেলেই বাঁচি; দেশে যা শুরু হয়েছে কি যে হয় কে, জানে। আজকাল দিনগুলো ভালো যাচ্ছেনা সারাদেশ জুড়ে কিসের যেন পায়তারা চলছে।
০৩.
শব্দটা দেয়ালটাকে কাঁপাচ্ছে।
আধবোজা চোখ মেলে তাকাতেই জয়িতা শব্দের তরঙ্গে কেপে উঠে।
চরদিকে শুধু শব্দ আর শব্দ। মনে হচ্ছে সারা শহরে একনাগারে কেউ আতশ ফোটাচ্ছে।
সেই সাথে মিশেছে আর্ত হাহাকার। জয়িতা উঠে বসে জানালার ধারে তাকায় সামনের দিকে শুধু দেখা যায় আগুনের মেলা বসেছে পুরো মহল্লায়।
সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে আগুনের কোন গোলা এসে পড়েছে শহরে। ধোয়া উঠছে থেকে থেকে। কি হচ্ছে এসব কে যেন সারা শহরকে নরকপুরি করে তোলেছে এরই মাঝে।
দরজা খুলে বাইরে আসে। পুরো শহর যেন জ্বলছে। যেন আগুন তার রাজত্ব পেয়েছে আজ সব পুরিয়ে করবে ছাড়খার। গেটে এসে দাড়ালো জয়িতা। ধ্রুব দাড়িয়ে আছে মা’কে নিয়ে।
ধ্রুব বললো তুই আবার এসেছিস কেন যা ঘরে কিন্তু জয়িতা সেখানেই দাড়িয়ে আছে স্নায়ুবত হয়ে । পাশের মহল্লায় আগুন পড়েছে। বুলেটের আওয়াজে কান পাতা যাচ্ছেনা। বুকের ভেতরে ঢিব ঢিব শব্দটা একটানা হাতুরি পেটাচ্ছে। কালকের পরদিন বিয়ে জয়িতার। কিন্তু অর্তকিত এই নরপিশাচদের হামলায় কি টিকে থাকা যাবে। বিয়েটা বুঝি গেল !!
জয়িতা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উছে দাদা ওরা যদি এদিকে আসে ?
না আসবে না অভয় দেয় ধ্রুব।
দাদা আমার ভয় করছে !! তোকে আমাকে সবাইকে মেরে ফেলবে না'তো ? আবারো অভয় দেয় ধ্রুব।
নরপিশাচরা শব্দশকট হাতে নিয়ে এদিকে আসছে ধীরে ধীরে।
ধ্রুব ভাবে বাড়ি ছেড়ে যে পালাবে সে উপায়টুকু তো নেই। যে হারে বৃষ্টির মতো বুলেট ফুটছে; নির্ঘাত কোন বুলেট এসে বিধঁবে বন্ধুর মতোন এই বুকে। ওদিকে জয়িতার মা বিলাপ শুরু করে দিয়েছে। ঈশ্বর এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দাও ? বিপদ না পড়লে আমাদের ভগবানকে ডাকার তেমন একটা ইচ্ছে মনে জাগেনা আজ তাই এই ঘোর বিপদে তাকেই ভীষণ ভাবে প্রয়োজন।
গেটের পাশটায় জোড়ায় জোড়ায় বুটের আওয়াজ কারা যেন আসছে।
০৪.
টেনে হিচরে নিয়ে যাচ্ছে জয়িতাকে নরপিশাচ গুলো।
বাধাঁ দেবার কেউ নেই। ছোপ ছোপ রক্তে আঙ্গিনা রাঙানো। এই মহল্লার কেউ মনে বাচঁতে পারবেনা আজ এই রাতে; সে সংকল্পে নেমেছে ওরা।
দাদা ওরা আমাকে নিয়ে গেলো ওদের ফেরা ? আকুতিটা খুব করুন ভাবে দেয়াল গুলোকেও কাপাচ্ছে। উপর থেকে কি সুন্দর কলকাঠি নেড়ে যাচ্ছেন তিনি দেখছেন কিভাবে অসহায় হয়ে পড়ে থাকে তার সৃষ্টিরা। জয়িতার চিৎকারটা বাড়ছে ক্রমশই;
কিন্তু ধ্রুব সেটা শুনতে পাচ্ছেনা; বুকটা ঝাঝরা করে দিয়ে গেছে বুলেট সোদা মাটির গন্ধে পাগল ছেলেটা পড়ে আছে; সে। ঘরের ভেতর লাশ হয়ে পড়ে আছে জয়িতার বাবা আর মা; ওরা বাচঁতে চায় নি; শুধু বলেছিলো আমাদের মেরে ফেলো কিন্তু আমাদের প্রিয় সন্তানদের মেরো না।
কিন্তু ওরা শুনবে কেন সে কথা; ওরা আজ নরপিশাচ হয়ে এসেছে।
যেমন সারি বেধে ওরা এসেছিলো, তেমনি চলে গেল লাশ ডিঙ্গিয়ে সাথে নিয়ে গেল জয়িতাকে।
জয়িতার লালপেড়ে শাড়ি পরে কপালে সিদূঁর দিয়ে হাতে শাখা ভরে আর বধূ হওয়া হলোনা। হলোনা পূরণ স্বামীর সোহাগ কিংবা মা ডাক শোনার অদম্য ইচ্ছেটা।
এ রাতে শুধু রক্তে ভরে উঠেছে রাজপথ আর আঙ্গিনা। নরপিশাচরা সেই রক্তে পা ফেলে প্রান নিধন করেই চলেছে ভয়ঙ্কর রাতটা কিছুতেই ফুরাচ্ছে না। রাত যতো বাড়ছে বাতাসে বাড়ছে বারুদের গন্ধ; আর রক্তে রক্তে ঢেকে যাচ্ছে শত শত প্রানের স্বপ্নরা। রাতটা যেমন করে শুরু হয়েছিলো তেমন করে শেষ হচ্ছেনা। জোনাকিরা নেই এখন আর। নালার পাশের ব্যাঙ গুলো আর ডাকছে না থমকে আছে ওরা। এ রাতে কাক আর ডাকবার সুযোগ পায়নি ভয়ে চলে গেছে দুরে কোথাও।
ঘরে পড়ে আছে টোপর আর লাল শাড়ি আর সব তছনছ করে দিয়ে গেছে নরপিশাচেরা কি ভেবে যেন আগুন জ্বালেনি এ বাড়িতে। চারপাশটা কাপছে হয়তো সকাল না হলে আর থামবে না।
রাতটা শেষ হচ্ছেনা সূর্যটা বসে আছে রক্তে আকাঁ সকাল দেখবে বলে;
কখন সকাল হবে ?
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন