তোমরা কবি মতিউর রহমান মল্লিকের নাম অবশ্যই শুনেছ। আর শুনবেই না কেন! তিনি তো তোমাদের এই পাতাবাহারেরই পরিচালক ছিলেন। ছিলেন তোমাদের মতো ছোট্ট কুঁড়িদের প্রিয় বন্ধু। তিনি তোমাদেরকে কতই না ভালোবাসতেন। তাছাড়া পত্রিকার পাতায় পাতায় ছন্দে ছন্দে তোমাদের জন্য কতো গান-কবিতাই না লিখেছেন। শিশু সাহিত্যের বাঁকে বাঁকে ছিলো তাঁর বিচরণ। তিনি তাঁর লেখায় ছোট্ট কুঁড়িদের কি বলেছেন একবার দেখোই নাÑ
‘ফুলকুঁড়িদের মাঝে আমার
থাকতে লাগে ভালো
ফুলকুঁড়িরাই জ্বালছে দেশে
জ্ঞান-গরীমার আলো।
তারাতো নয় কাগজের ফুল
মেকী ফুলের কুঁড়ি
আসল ফুলের মেলা বসায়
সারাটা দেশ জুড়ি।’
তাহলে বুঝতেই পারছ তিনি তোমাদেরকে কতো ভালোবাসতেন। কতোই না কাছের বন্ধু ছিলেন। সেই প্রিয় মানুষটির কথাই তোমাদেরকে বলছিলাম।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন জানো? বলছি শোন। ১৯৫৬ সালের ১লা মার্চ বাগেরহাট জেলার রায়পাড়ার বারোইপাড়া গ্রামে কবি মতিউর রহমান মল্লিক জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইন্তেকাল করেছেন ১২ আগস্ট ২০১০ সালের ১ রমজান। তাঁর পিতার নাম মুন্সী কায়েস উদ্দীন মল্লিক আর মা আছিয়া খাতুন। গ্রামের পাঠশালা থেকেই কবি মল্লিকের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। তিনি মাদরাসা থেকে ফাজিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ (সাবসিডিয়ারি) পাস করেন।
কর্মজীবনে কবি মল্লিক সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক, মাসিক কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের সদস্য সচিব ছিলেন। তাছাড়া তিনি একাধারে ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ, গান লিখে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন করেছেন।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন একজন হাস্যরসিক। তাঁর মন ছিলো নরম। গাল্পিক মন। তিনি সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলতেন। শিশু মনের অধিকারী এই কবি ছোট্ট বন্ধুদের হাসির জগতে আকর্ষণ করেছেন। তিনি কখনো নির্মল আনন্দ বিতরণ করেছেন, কখনো বা নীতি উপদেশপূর্ণ ভালো ভালো কথা-গীতি কাব্যের মাধ্যমে তুলে ধরে তোমাদের মতো ছোট্ট বন্ধুদের তৃপ্ত করেছেন।
যেমন ধরো-
‘এইতো সেদিন রাত বারোটায় দেখি
হায়! হায়! হায়! চৌরাস্তায় একি
পিচ্চি ম্যালা, পনরো ষোল আর
যুবকতো নয় নাঙ্গা তলোওয়ার
সমান তালে মারছে রঙের গোলা
ঠাঁয় দাঁড়িয়ে হাসছে ক’জন ভোলা।’
অসাধারণ সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী কবি মতিউর রহমান মল্লিক বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম গীতি কবি। তাঁর কবিতায় গানে রয়েছে ছন্দ, শিল্প, সুষমা, ভাবের সুঠাম বিন্যাস আর নিখুঁত কারুকাজ। তাঁর রচিত প্রতিটি লেখায় ধ্বনিত হয় একটি ম্যাসেজ যা বড় মাপের একজন কবির প্রধান বৈশিষ্ট্য।
কবি মতিউর রহমান মল্লিকের লেখা পড়লেই বুঝতে পারবেÑ তিনি ছোট্ট শিশু-কিশোরদের কতো আনন্দ দিয়েছেন। তিনি নতুন নতুন শব্দ ও ভাষার ঝংকারে রস-রচনা লিখেছেন অনেক। মন ও মেজাজে চঞ্চল এই লেখক সমাজ বা জাতির জন্য মূলত লেখনি ধারণ করলেও তাঁর শিশুতোষ রচনাবলী স্পন্দিত হয়েছে। শিশু সাহিত্যে তিনি ছিলেন আলোর অভিসারী, রঙিন সকাল প্রত্যাশী মানবতাবাদী। যেমন কবি ফররুখ আহমদকে নিয়ে তাঁর শিশুতোষ একটি লেখা-
‘বুকে তার সাহস ছিল বাঘের মত
প্রাণে তার ফুটতো গোলাপ ডাগর ডাগর
মনে তার লক্ষনিযুত তারা জ্বলতো
চোখে তার স্বপ্ন ছিল সাগর সাগর।’
কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন অপূর্ব প্রাণশক্তির প্রতীক। তিনি ছিলেন প্রেমের কবি। সে প্রেম প্রকৃতির জন্যে, মানুষের জন্যে, দেশের জন্যে, দেশবাসীর জন্যে, মানবতার জন্যে। তাঁর লেখায় ছিলো আল্লাহর প্রেম, রাসূল (সা.) এর প্রেম। তিনি ছোট বড় সবাইকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসের সাথে লড়ে যেতে উৎসাহিত করতেন। বলেন-
‘নামবে আঁধার তাই বলে কি
আলোর আশা করবো না?
বিপদ-বাধায় পড়বো বলে
ন্যায়ের পথে লড়বো না?’
শিশু রচনায় কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন শিশু মনস্তত্ত্ববিদ এবং শিশু বন্ধু। তিনি শিশুদের পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বলতেন-
‘পড় এবং পড়, যে পড়ে সে বড়ো
লেখার জন্য পড়ো, শেখার জন্য পড়ো।’
কবি মতিউর রহমান মল্লিক গ্রামেই লালিত পালিত এবং গ্রাম্য সৌন্দর্যময়ী প্রকৃতি তাঁকে মুগ্ধ কবি আত্মার অধিকারী করেছে। বাংলার প্রাকৃতিক রূপ, গাঁয়ের সরল মানুষের প্রেম-প্রীতি, ঝগড়া-বিসংবাদ, আনন্দ-বিলাপ, স্ফূর্তি সবকিছুকে তিনি মমতার দৃষ্টি নিয়ে বাংলাসাহিত্যে চুষ্মান করেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন এই ঐতিহ্য ধারার অনুসারী। কবি মতিউর রহমানের শিশুতোষ রচনায় তিনি এসব অনুসরণ-অনুকরণ করলেও স্বীয় কর্মের প্রভাবে তিনি উত্তরসুরী হয়েও এ পথে এক নবদিগন্তের দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শিশু সাহিত্য সাধনায় তিনি লোকজীবনের উপাদান ও ঐতিহ্যের যথার্থ প্রয়োগে ছিলেন কুশলী। পল্লীর প্রচলিত গান, গজল ও লোক সাহিত্য সংগ্রহ করতে করতে তিনি অলক্ষ্যে বাংলা সাহিত্যে ইসলামী ধারার গান, কবিতা ইত্যাদি সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। তাঁর লেখা ছড়া-কবিতা যেমনি তোমাদেরকে আনন্দ দেয় তেমনি তাঁর লেখা অসংখ্য হামদ, নাত এবং আধুনিক ইসলামী গান শ্রোতাদের মন জয় করেছে। কবি মতিউর রহমান মল্লিক বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সঙ্গীতকে আধুনিক ভাবধারায় উজ্জীবিত করেছেন। যেমনÑ
‘পাখি তুই কখন এসে বলে গেলি
মোহাম্মদের নাম
যে নাম শুনে পৃথিবীকে
ভালো বাসিলাম।’
কবি মতিউর রহমান মল্লিখ ছোট-বড় সবার প্রিয় কবি। তিনি সবার জন্য লিখেছেন। অনেক অনেক লেখা তাঁর। সে তুলনায় প্রকাশিত হয়েছে মাত্র সামান্য কিছু গান, কবিতা। তাঁর অসংখ্য লেখা এখনো অপ্রকাশিত রয়েছে। তাঁর লেখা প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থের সাথে তোমাদের পরিচয় করে দিচ্ছি।
কাব্য : আবর্তিত তৃণলতা (১৯৮৭), অনবরত বৃক্ষের গান (২০০১), তোমাদের ভাষায় তিè ছায়া, চিত্রল প্রজাপতি, কিশোর কবিতা : রঙিন মেঘের পালকি (২০০২)। গান : ঝংকার (১৯৭৮), যত গান গেয়েছি ও নির্বাচিত প্রবন্ধ।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। যেমন সবুজ মিতালী সংঘ সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় সাহিত্য সংসদ স্বর্ণপদক, কলম সেনা সাহিত্য পদক, লক্ষ্মীপুর সংসদ সাহিত্য পদক, রাঙ্গামাটি পরিষদ সাহিত্য পদক, খানজাহান আলী শিল্পী গোষ্ঠী সাহিত্য পদক, সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ সাহিত্য পুরস্কার (বাগেরহাট), আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সাহিত্য পুরস্কার (বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, প্যারিস, ফ্রান্স), বায়তুশ শরফ সাহিত্য পুরস্কার (চট্টগ্রাম), বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ পুরস্কার, কিশোর কণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার ও বাংলা সাহিত্য পরিষদ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
এই বড় মানুষটি এখন আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি আমাদের ছেড়ে চির বিদায় নিয়েছেন। তিনি তাঁর গানে কী বলেছেন জানো?
‘পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়
মরণ একদিন মুছে দেবে সকল রঙিন পরিচয়।’
তাই হলো! তিনি আর এই পৃথিবীতে নেই। তাঁকে শুধু মনে পড়ে। চলো না বন্ধুরা আমরা সবাই আল্লাহকে বলি ‘প্রভু তুমি প্রিয় কবি মল্লিককে বড় জান্নাতটায় প্রবেশের সুযোগ করে দাও। তিনি যেন ইসলামের কবিদের সাথে এক হয়ে তোমার জান্নাতের দিনগুলো উপভোগ করতে পারেন।’
‘ফুলকুঁড়িদের মাঝে আমার
থাকতে লাগে ভালো
ফুলকুঁড়িরাই জ্বালছে দেশে
জ্ঞান-গরীমার আলো।
তারাতো নয় কাগজের ফুল
মেকী ফুলের কুঁড়ি
আসল ফুলের মেলা বসায়
সারাটা দেশ জুড়ি।’
তাহলে বুঝতেই পারছ তিনি তোমাদেরকে কতো ভালোবাসতেন। কতোই না কাছের বন্ধু ছিলেন। সেই প্রিয় মানুষটির কথাই তোমাদেরকে বলছিলাম।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন জানো? বলছি শোন। ১৯৫৬ সালের ১লা মার্চ বাগেরহাট জেলার রায়পাড়ার বারোইপাড়া গ্রামে কবি মতিউর রহমান মল্লিক জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইন্তেকাল করেছেন ১২ আগস্ট ২০১০ সালের ১ রমজান। তাঁর পিতার নাম মুন্সী কায়েস উদ্দীন মল্লিক আর মা আছিয়া খাতুন। গ্রামের পাঠশালা থেকেই কবি মল্লিকের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। তিনি মাদরাসা থেকে ফাজিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ (সাবসিডিয়ারি) পাস করেন।
কর্মজীবনে কবি মল্লিক সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক, মাসিক কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের সদস্য সচিব ছিলেন। তাছাড়া তিনি একাধারে ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ, গান লিখে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন করেছেন।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন একজন হাস্যরসিক। তাঁর মন ছিলো নরম। গাল্পিক মন। তিনি সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলতেন। শিশু মনের অধিকারী এই কবি ছোট্ট বন্ধুদের হাসির জগতে আকর্ষণ করেছেন। তিনি কখনো নির্মল আনন্দ বিতরণ করেছেন, কখনো বা নীতি উপদেশপূর্ণ ভালো ভালো কথা-গীতি কাব্যের মাধ্যমে তুলে ধরে তোমাদের মতো ছোট্ট বন্ধুদের তৃপ্ত করেছেন।
যেমন ধরো-
‘এইতো সেদিন রাত বারোটায় দেখি
হায়! হায়! হায়! চৌরাস্তায় একি
পিচ্চি ম্যালা, পনরো ষোল আর
যুবকতো নয় নাঙ্গা তলোওয়ার
সমান তালে মারছে রঙের গোলা
ঠাঁয় দাঁড়িয়ে হাসছে ক’জন ভোলা।’
অসাধারণ সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী কবি মতিউর রহমান মল্লিক বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম গীতি কবি। তাঁর কবিতায় গানে রয়েছে ছন্দ, শিল্প, সুষমা, ভাবের সুঠাম বিন্যাস আর নিখুঁত কারুকাজ। তাঁর রচিত প্রতিটি লেখায় ধ্বনিত হয় একটি ম্যাসেজ যা বড় মাপের একজন কবির প্রধান বৈশিষ্ট্য।
কবি মতিউর রহমান মল্লিকের লেখা পড়লেই বুঝতে পারবেÑ তিনি ছোট্ট শিশু-কিশোরদের কতো আনন্দ দিয়েছেন। তিনি নতুন নতুন শব্দ ও ভাষার ঝংকারে রস-রচনা লিখেছেন অনেক। মন ও মেজাজে চঞ্চল এই লেখক সমাজ বা জাতির জন্য মূলত লেখনি ধারণ করলেও তাঁর শিশুতোষ রচনাবলী স্পন্দিত হয়েছে। শিশু সাহিত্যে তিনি ছিলেন আলোর অভিসারী, রঙিন সকাল প্রত্যাশী মানবতাবাদী। যেমন কবি ফররুখ আহমদকে নিয়ে তাঁর শিশুতোষ একটি লেখা-
‘বুকে তার সাহস ছিল বাঘের মত
প্রাণে তার ফুটতো গোলাপ ডাগর ডাগর
মনে তার লক্ষনিযুত তারা জ্বলতো
চোখে তার স্বপ্ন ছিল সাগর সাগর।’
কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন অপূর্ব প্রাণশক্তির প্রতীক। তিনি ছিলেন প্রেমের কবি। সে প্রেম প্রকৃতির জন্যে, মানুষের জন্যে, দেশের জন্যে, দেশবাসীর জন্যে, মানবতার জন্যে। তাঁর লেখায় ছিলো আল্লাহর প্রেম, রাসূল (সা.) এর প্রেম। তিনি ছোট বড় সবাইকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসের সাথে লড়ে যেতে উৎসাহিত করতেন। বলেন-
‘নামবে আঁধার তাই বলে কি
আলোর আশা করবো না?
বিপদ-বাধায় পড়বো বলে
ন্যায়ের পথে লড়বো না?’
শিশু রচনায় কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন শিশু মনস্তত্ত্ববিদ এবং শিশু বন্ধু। তিনি শিশুদের পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বলতেন-
‘পড় এবং পড়, যে পড়ে সে বড়ো
লেখার জন্য পড়ো, শেখার জন্য পড়ো।’
কবি মতিউর রহমান মল্লিক গ্রামেই লালিত পালিত এবং গ্রাম্য সৌন্দর্যময়ী প্রকৃতি তাঁকে মুগ্ধ কবি আত্মার অধিকারী করেছে। বাংলার প্রাকৃতিক রূপ, গাঁয়ের সরল মানুষের প্রেম-প্রীতি, ঝগড়া-বিসংবাদ, আনন্দ-বিলাপ, স্ফূর্তি সবকিছুকে তিনি মমতার দৃষ্টি নিয়ে বাংলাসাহিত্যে চুষ্মান করেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন এই ঐতিহ্য ধারার অনুসারী। কবি মতিউর রহমানের শিশুতোষ রচনায় তিনি এসব অনুসরণ-অনুকরণ করলেও স্বীয় কর্মের প্রভাবে তিনি উত্তরসুরী হয়েও এ পথে এক নবদিগন্তের দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শিশু সাহিত্য সাধনায় তিনি লোকজীবনের উপাদান ও ঐতিহ্যের যথার্থ প্রয়োগে ছিলেন কুশলী। পল্লীর প্রচলিত গান, গজল ও লোক সাহিত্য সংগ্রহ করতে করতে তিনি অলক্ষ্যে বাংলা সাহিত্যে ইসলামী ধারার গান, কবিতা ইত্যাদি সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। তাঁর লেখা ছড়া-কবিতা যেমনি তোমাদেরকে আনন্দ দেয় তেমনি তাঁর লেখা অসংখ্য হামদ, নাত এবং আধুনিক ইসলামী গান শ্রোতাদের মন জয় করেছে। কবি মতিউর রহমান মল্লিক বাংলা সাহিত্যে ইসলামী সঙ্গীতকে আধুনিক ভাবধারায় উজ্জীবিত করেছেন। যেমনÑ
‘পাখি তুই কখন এসে বলে গেলি
মোহাম্মদের নাম
যে নাম শুনে পৃথিবীকে
ভালো বাসিলাম।’
কবি মতিউর রহমান মল্লিখ ছোট-বড় সবার প্রিয় কবি। তিনি সবার জন্য লিখেছেন। অনেক অনেক লেখা তাঁর। সে তুলনায় প্রকাশিত হয়েছে মাত্র সামান্য কিছু গান, কবিতা। তাঁর অসংখ্য লেখা এখনো অপ্রকাশিত রয়েছে। তাঁর লেখা প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থের সাথে তোমাদের পরিচয় করে দিচ্ছি।
কাব্য : আবর্তিত তৃণলতা (১৯৮৭), অনবরত বৃক্ষের গান (২০০১), তোমাদের ভাষায় তিè ছায়া, চিত্রল প্রজাপতি, কিশোর কবিতা : রঙিন মেঘের পালকি (২০০২)। গান : ঝংকার (১৯৭৮), যত গান গেয়েছি ও নির্বাচিত প্রবন্ধ।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। যেমন সবুজ মিতালী সংঘ সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় সাহিত্য সংসদ স্বর্ণপদক, কলম সেনা সাহিত্য পদক, লক্ষ্মীপুর সংসদ সাহিত্য পদক, রাঙ্গামাটি পরিষদ সাহিত্য পদক, খানজাহান আলী শিল্পী গোষ্ঠী সাহিত্য পদক, সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ সাহিত্য পুরস্কার (বাগেরহাট), আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সাহিত্য পুরস্কার (বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, প্যারিস, ফ্রান্স), বায়তুশ শরফ সাহিত্য পুরস্কার (চট্টগ্রাম), বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ পুরস্কার, কিশোর কণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার ও বাংলা সাহিত্য পরিষদ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
এই বড় মানুষটি এখন আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি আমাদের ছেড়ে চির বিদায় নিয়েছেন। তিনি তাঁর গানে কী বলেছেন জানো?
‘পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয়
মরণ একদিন মুছে দেবে সকল রঙিন পরিচয়।’
তাই হলো! তিনি আর এই পৃথিবীতে নেই। তাঁকে শুধু মনে পড়ে। চলো না বন্ধুরা আমরা সবাই আল্লাহকে বলি ‘প্রভু তুমি প্রিয় কবি মল্লিককে বড় জান্নাতটায় প্রবেশের সুযোগ করে দাও। তিনি যেন ইসলামের কবিদের সাথে এক হয়ে তোমার জান্নাতের দিনগুলো উপভোগ করতে পারেন।’
1 Comment:
আমার প্রিয় কবি। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসীব করুন (আমিন)!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন