বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী চরিত্র বনলতা সেন। সুদীর্ঘকাল সকলের ধারণা ছিলো বাস্তবে বনলতা সেন বলে কারোর অস্তিত্ব নেই। ‘বনলতা সেন’ কেবলই কবির কল্পনা। না, বনলতা কবির ভাবনা পটে আঁকা কোনো ছবি নয়। বনলতা বাস্তবেরই এক চরিত্র। যে কিনা কবির মানসজগতকে প্রভাবিত করতে সমর্থ হয়েছিল। কবির ইংরেজিতে লেখা দিনলিপি ’লিটারেরি নোটস’-এ ‘ওয়াই’ হিসেবে চিহ্নিত মেয়েটি ‘শোভনা’-ই বনলতা সেন বলে পাঠোদ্ধার করেছেন জীবনানন্দ গবেষক ও জীবনানন্দের রচনাবলীর সম্পাদক ভূমেন্দ্র গুহ। যার সঙ্গে প্রথম যৌবনেই পরিচয় হয়েছিল কবির। সম্পর্কে তিনি কবির কাকাতো বোন।
জীবনানন্দের কাকা ফরেস্ট অফিসার অতুলান্ত দাশের মেয়ে শোভনা। যার ডাক নাম বেবী। জানা গেছে, ১৯৩৩ সাল অর্থ্যাৎ কবির বয়স যখন চৌত্রিশের কোঠায় তখন শুধু শোভনা নয়, কবি আরো তিনটি মেয়ের প্রেমে পড়েন। শোভনাকে তিনি ভালোবেসেছেন ঠিকই কিন্তু জীবনসঙ্গী করতে চাননি। কেননা যখন লাবণ্য দাশের সঙ্গে কবির বিয়ের কথা পাকাপাকি তখনও কবি কোনো অনিচ্ছা প্রকাশ করেননি। অথচ বিয়ের আগে থেকেই তিনি শোভনাকে ভালোবাসতেন। শোভনা যখন বেনী দুলিয়ে হাঁটতেন আর অদ্ভূত বিস্ময়ে মিলুদা মানে কবির কবিতা শুনতেন তখন থেকেই কবির সঙ্গে শোভনার ভাব তৈরি হয়। আর ১৯৩৩ সালেই বনলতা সেন কবিতাটি লেখা হয়। কবির মৃত্যুর পর বুদ্ধদেব বসুর কবিতা পত্রিকার পৌষ ১৩৪২ সংখ্যায় (১৯৩৫ সালের ডিসেম্বর মাসে) কবিতাটি প্রকাশিত হয়। শোভনাকে নিয়ে কবির বনলতা সেনই প্রথম লেখা নয়। এর আগে কারুবাসনা নামে যে উপন্যাসটি লেখেন তাতেও অকপটে শোভনা প্রসঙ্গ ব্যক্ত করেন। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’ শোভনাকে উৎসর্গ করেছিলেন। তৎকালীন রক্ষণশীল পরিমণ্ডলে বাড়ির অভিভাবকদের নির্দেশ উপেক্ষা করে ডিব্র“গড়ে শোভনাদের বাড়িতে দরজা বন্ধ করে জীবনানন্দ শোভনাকে কবিতা শোনাতেন। বরিশাল ছেড়ে কলকাতায় কবি যখন সিটি কলেজে শিক্ষকতা করছেন তখন শোভনা ডায়োসেশান কলেজে পড়ছেন। এ সময় (১৯৩২ এর আগস্টে) তিনি উপন্যাস লিখলেন ‘কলকাতা ছাড়ছি’। উপন্যাসের নায়িকা শচীও ডায়োসেশানে পড়ে। এছাড়া ‘গ্রাম ও শহরের গল্প’ উপন্যাসটির নায়িকা শচী- জীবনানন্দের শোভনাই। লিটেরেরি নোটস-এ লেখা আছে ওয়াই = শচী। ধারণা করা হয় ‘প্রেম’ কবিতাও তিনি শোভনাকে নিয়ে লিখেছেন।
সম্পাদনা: হাসান জাকির
আপনি আছেন: জোনাকী > জীবনানন্দের কাকাতো বোন শোভনা ছিলেন বনলতা সেন
জীবনানন্দের কাকাতো বোন শোভনা ছিলেন বনলতা সেন
প্রসঙ্গ সাহিত্য
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন