ফাল্গুন মাস। ঝিরঝিরে বাতাস। পুকুরপাড়ে ছোট একটা মেহগনি গাছ। হাওয়ায় দুলছে গাছটা। গাছটার ছোট একটা ডালের সব পাতা বাতাসে উড়ে গেছে। দুটি পাতা ছাড়া। একটা হলুদ পাতা, একটা কমলা পাতা। এরাও উড়ে যাবে। কারণ এই মাসটাই এখন পাতা ওড়ার।
গত বছর এই সময়ে পাতা দুটি যখন মেহগনির শক্ত কাঠ ফুঁড়ে বের হয়েছিল, তখন ওরা ছিল নরম তুলতুলে, আর চকচকে-ঝকঝকে। শুধু ওরা না, ওদের সঙ্গে আরও অনেক পাতা ছিল। ওরা সবাই বাতাসে উড়ে গিয়েছে। কেউ উড়ে গিয়েছে পুকুরের ওই পাড়টায়, কেউ একেবারে পুকুরের পানিতে। কেউ পড়েছে গাছের নিচেই উড়তে উড়তে। কিন্তু কেউই নিজের ইচ্ছায় গাছ ছেড়ে উড়তে চায়নি। আঁকড়ে থাকতে চেয়েছে মেহগনির ডালপালা। কিন্তু কী আর করা, সবই ফাল্গুনের হাওয়া। উড়তে তো হবেই। তা ছাড়া নতুন সবুজ পাতা এলে হলুদ-কমলা পাতাদের তো উড়তে হবেই। এটাই নিয়ম।
কমলা পাতা আর হলুদ পাতা। দু'জনেরই মন খারাপ। আর বোধ হয় গাছে থাকা যাবে না। উড়ে যেতে হবে। কমলা বললো হলুদ পাতাকে_
আচ্ছা ভাই হলুদ, উড়তে তো হবেই। তো উড়ে উড়ে কোথায় যেতে চাও তুমি?
হলুদ পাতা বললো_
উড়তে তো মন চায় না রে ভাই। তবে উড়তে উড়তে যদি আকাশে যাওয়া যেত, তাহলে মন্দ হতো না। এই বলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো হলুদ পাতা, তারপর কমলা পাতাকে জিজ্ঞেস করলো_
তো কমলা ভাই, তোমার কী ইচ্ছা? তুমি কোথায় উড়ে যেতে চাও?
কমলা বললো_ বাহ! তোমার ইচ্ছার সঙ্গে আমার ইচ্ছার তো দারুণ মিল ভাই। আমিও তো আকাশে উড়ে যেতে চাই। সেটা কি সম্ভব? কীভাবে সম্ভব? ভাবনায় পড়ে গেল পাতা দুটি। অনেকক্ষণ তারা ভাবলো। ভাবতে... ভাবতে... ভাবতে... ভাবতে... কমলা বললো_ আচ্ছা, আমরা যদি একসঙ্গে ওড়া শুরু করি ঠিক যেমন করে পাখি ওড়ে। আমরা বোঁটায় বোঁটা লাগিয়ে ঝাপটানো শুরু করবো পাখির মতো করে। তারপর আকাশে উড়ে যাবো।
হলুদ বললো, বাহ, আমরা দু'জন মিলে তাহলে পাখির ডানা হয়ে যাব? পাখি হয়ে যাব?
ঠিক তাই! কমলা বললো।
খুশিতে হলুদ পাতা নেচে উঠলো আর গেয়ে উঠলো_
কী মজা কী মজা পাতা হবে পাখির ডানা
কী মজা কী মজা উড়তে পাখির নেইকো মানা।
কমলা পাতা হলুদ পাতার গান থামিয়ে দিয়ে বললো_ কিন্তু ভাই, এত সহজে কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। এই ঝিরঝিরে ফাল্গুনী হাওয়ায় কিন্তু আকাশে ওড়া যাবে না। তার জন্য দরকার ঝড়ো হাওয়ার। সেটা আসতে এখনও অনেক দেরি। কেবল তো ফাল্গুন, তারপর চৈত্র, তারপর বৈশাখ। এত সময় পর্যন্ত কি আর থাকা সম্ভব! আমাদের বোঁটার শক্তি তো কমে এসেছে। কখন জানি টুক করে পড়ে যাই!
হলুদ বললো, সেটা একটা সমস্যা বটে। কিন্তু মনের জোর থাকলে আসলে কোনো সমস্যা না। আমরা আমাদের বোঁটা দিয়ে বৈশাখ পর্যন্ত আঁকড়ে থাকবো এই ডালটা। তারপর উড়াল দেব কালবৈশাখী ঝড়ে।
কমলা বললো, ঠিক আছে, তা-ই হবে।
তারপর হলুদ পাতা আর কমলা পাতা মনের প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো। আর কয়েকদিন পরেই বৈশাখ মাস। এর মধ্যেই মেহগনি গাছের সব পাতা উড়ে গেছে। হলুদ পাতা আর কমলা পাতাও নিজেদের শরীরের রঙ বদল করে ফেলেছে।
হলুদ হয়েছে কমলা আর কমলা হয়েছে লাল। তবে মনের শক্তি তাদের কমেনি একটুও। আকাশে তারা উড়বেই। তারা অপেক্ষা করতেই থাকে, কখন বৈশাখী ঝড় আসবে আর তারা ভাসবে বাতাসে। উড়বে আকাশে, পাখির মতো করে।
তারপর একদিন আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল। আর শুরু হলো কালবৈশাখী ঝড়। আকাশ-বাতাস তোলপাড় করা ঝড়। অপেক্ষার পালা শেষ, লাল পাতা আর কমলা পাতা নিজেদের বোঁটা ছেড়ে দিল ডাল থেকে। তারপর বোঁটা দুটো একসঙ্গে করে পাখির মতো পাতা ঝাপটাতে থাকলো।
আর আকাশের দিকে উড়তে থাকলো। উড়তে উড়তে উড়তে উড়তে পাতা দুটো ছোট হতে থাকলো। ছোট হতে হতে একসময় লাল আর কমলা বিন্দুর মতো দেখা গেল তাদের। মনে হলো, লাল আর কমলা ডানাঅলা একটা পাখি উড়ে যাচ্ছে বুঝি।
গত বছর এই সময়ে পাতা দুটি যখন মেহগনির শক্ত কাঠ ফুঁড়ে বের হয়েছিল, তখন ওরা ছিল নরম তুলতুলে, আর চকচকে-ঝকঝকে। শুধু ওরা না, ওদের সঙ্গে আরও অনেক পাতা ছিল। ওরা সবাই বাতাসে উড়ে গিয়েছে। কেউ উড়ে গিয়েছে পুকুরের ওই পাড়টায়, কেউ একেবারে পুকুরের পানিতে। কেউ পড়েছে গাছের নিচেই উড়তে উড়তে। কিন্তু কেউই নিজের ইচ্ছায় গাছ ছেড়ে উড়তে চায়নি। আঁকড়ে থাকতে চেয়েছে মেহগনির ডালপালা। কিন্তু কী আর করা, সবই ফাল্গুনের হাওয়া। উড়তে তো হবেই। তা ছাড়া নতুন সবুজ পাতা এলে হলুদ-কমলা পাতাদের তো উড়তে হবেই। এটাই নিয়ম।
কমলা পাতা আর হলুদ পাতা। দু'জনেরই মন খারাপ। আর বোধ হয় গাছে থাকা যাবে না। উড়ে যেতে হবে। কমলা বললো হলুদ পাতাকে_
আচ্ছা ভাই হলুদ, উড়তে তো হবেই। তো উড়ে উড়ে কোথায় যেতে চাও তুমি?
হলুদ পাতা বললো_
উড়তে তো মন চায় না রে ভাই। তবে উড়তে উড়তে যদি আকাশে যাওয়া যেত, তাহলে মন্দ হতো না। এই বলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো হলুদ পাতা, তারপর কমলা পাতাকে জিজ্ঞেস করলো_
তো কমলা ভাই, তোমার কী ইচ্ছা? তুমি কোথায় উড়ে যেতে চাও?
কমলা বললো_ বাহ! তোমার ইচ্ছার সঙ্গে আমার ইচ্ছার তো দারুণ মিল ভাই। আমিও তো আকাশে উড়ে যেতে চাই। সেটা কি সম্ভব? কীভাবে সম্ভব? ভাবনায় পড়ে গেল পাতা দুটি। অনেকক্ষণ তারা ভাবলো। ভাবতে... ভাবতে... ভাবতে... ভাবতে... কমলা বললো_ আচ্ছা, আমরা যদি একসঙ্গে ওড়া শুরু করি ঠিক যেমন করে পাখি ওড়ে। আমরা বোঁটায় বোঁটা লাগিয়ে ঝাপটানো শুরু করবো পাখির মতো করে। তারপর আকাশে উড়ে যাবো।
হলুদ বললো, বাহ, আমরা দু'জন মিলে তাহলে পাখির ডানা হয়ে যাব? পাখি হয়ে যাব?
ঠিক তাই! কমলা বললো।
খুশিতে হলুদ পাতা নেচে উঠলো আর গেয়ে উঠলো_
কী মজা কী মজা পাতা হবে পাখির ডানা
কী মজা কী মজা উড়তে পাখির নেইকো মানা।
কমলা পাতা হলুদ পাতার গান থামিয়ে দিয়ে বললো_ কিন্তু ভাই, এত সহজে কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। এই ঝিরঝিরে ফাল্গুনী হাওয়ায় কিন্তু আকাশে ওড়া যাবে না। তার জন্য দরকার ঝড়ো হাওয়ার। সেটা আসতে এখনও অনেক দেরি। কেবল তো ফাল্গুন, তারপর চৈত্র, তারপর বৈশাখ। এত সময় পর্যন্ত কি আর থাকা সম্ভব! আমাদের বোঁটার শক্তি তো কমে এসেছে। কখন জানি টুক করে পড়ে যাই!
হলুদ বললো, সেটা একটা সমস্যা বটে। কিন্তু মনের জোর থাকলে আসলে কোনো সমস্যা না। আমরা আমাদের বোঁটা দিয়ে বৈশাখ পর্যন্ত আঁকড়ে থাকবো এই ডালটা। তারপর উড়াল দেব কালবৈশাখী ঝড়ে।
কমলা বললো, ঠিক আছে, তা-ই হবে।
তারপর হলুদ পাতা আর কমলা পাতা মনের প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো। আর কয়েকদিন পরেই বৈশাখ মাস। এর মধ্যেই মেহগনি গাছের সব পাতা উড়ে গেছে। হলুদ পাতা আর কমলা পাতাও নিজেদের শরীরের রঙ বদল করে ফেলেছে।
হলুদ হয়েছে কমলা আর কমলা হয়েছে লাল। তবে মনের শক্তি তাদের কমেনি একটুও। আকাশে তারা উড়বেই। তারা অপেক্ষা করতেই থাকে, কখন বৈশাখী ঝড় আসবে আর তারা ভাসবে বাতাসে। উড়বে আকাশে, পাখির মতো করে।
তারপর একদিন আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল। আর শুরু হলো কালবৈশাখী ঝড়। আকাশ-বাতাস তোলপাড় করা ঝড়। অপেক্ষার পালা শেষ, লাল পাতা আর কমলা পাতা নিজেদের বোঁটা ছেড়ে দিল ডাল থেকে। তারপর বোঁটা দুটো একসঙ্গে করে পাখির মতো পাতা ঝাপটাতে থাকলো।
আর আকাশের দিকে উড়তে থাকলো। উড়তে উড়তে উড়তে উড়তে পাতা দুটো ছোট হতে থাকলো। ছোট হতে হতে একসময় লাল আর কমলা বিন্দুর মতো দেখা গেল তাদের। মনে হলো, লাল আর কমলা ডানাঅলা একটা পাখি উড়ে যাচ্ছে বুঝি।
সূত্র : সমকাল
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন