তখন সবে কৈশোরে পা দিয়েছি। আশ্বিন মাসের শেষার্ধ ছিল। দিনের সময়টা বিকেলবেলা। বরাবরের মতো আমরা চারজন রিপন, সিমিয়ন, প্রিন্স আর আমি বিকেলের বৈঠকে বসলাম, কী করা যায়। সিমিয়ন কুবুদ্ধি দিল , ‘এই সময়ে আখ চুরি করে খাওয়া যাক।’ আমরাও তার মতে সাড়া দিলাম। চলে গেলাম গ্রামের পাশে থাকা আখের খেতে। উঁচু জমিতে আখের আবাদ ছিল আর তার চারপাশে নিচু জমিতে ছিল কচুর আবাদ, তার মধ্যে ছোট্ট রাস্তা। প্রত্যেকে একটি করে আখ বেছে ভেঙে নিয়ে আখের জমি থেকে বের হলাম। আমাদের দলের নেতা রিপন ছিল সবার আগে আর সবার পেছনে ছিলাম আমি। পায়ে কাদা লেগেছিল বলে আমরা নিচু জমিতে পা ধুচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি সিমিয়ন, রিপন ও প্রিন্স আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। পরমুহূর্তে দেখি রিপন ‘পালাও’ বলেই লম্বা দৌড় দিয়েছে। পেছনে ফিরে দেখি, আখের খেতের মালিক ঠিক আমাকে ধরার জন্য আমার দিকেই ছুটে আসছে। খেতের মালিককে দেখামাত্র যেই না দৌড় দিলাম, আমি যেন উড়ে চলছি। দৌড়ে গ্রামে পৌঁছানোর পর দেখি, আমার সঙ্গে শুধু সিমিয়ন আছে, আর বাকি দুজন—! তাদের কথা না হয় এখন থাক। কোনো বুদ্ধি না পেয়ে আমি আর সিমিয়ন খালের মধ্যে পানিতে ডুবে পাড়ে থাকা কলাগাছের আড়ালে লুকিয়ে আছি। ভুলটা হলো সেখানেই। খালের পানি এমন ঠান্ডা ছিল, শরীরটা যেন জমে আসছিল। এদিকে মালিকের হইচই কানে এল। এই সময় খাল থেকে ওঠা যাবে না। ধরে ফেলবে। মনে মনে সিমিয়নের কুবুদ্ধিকে অভিশাপ দিতে লাগলাম। সিমিয়নকে বিদ্রূপ করে বললাম, ‘কিরে, আর আখ খাবি?’ সিমিয়ন বলল, ‘এ যাত্রা বেঁচে গেলেই হয়।’ আমি বললাম, ‘তবে চল, ভুলটা স্বীকার করে শাস্তি মাথা পেতে নেব।’ সিমিয়ন প্রায় কান্নার সুরে বলল, ‘আমাদের আর আলাদাভাবে শাস্তি পেতে হবে না। শাস্তি এখানেই যে পাচ্ছি!’
পবিত্র হেমব্রম
পাঁচবিবি ডিগ্রি কলেজ, জয়পুরহাট।
পবিত্র হেমব্রম
পাঁচবিবি ডিগ্রি কলেজ, জয়পুরহাট।
সূত্র : প্রথম আলো
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন