আলিফ আমার চাচাত ভাই। কাকতালীয়ভাবে আমাদের দু’জনের জন্ম একইদিন একই হাসপাতাল এবং প্রায় একই সময়ে। একইদিনে জন্ম হওয়ার কারণে আমাদের দু’জনের ডাকনাম মিলিয়ে রাখা হয়েছে আরিফ আর আলিফ। আলিফের চেয়ে আমি এক ঘণ্টার বড় হলেও আমাকে কোনোদিন ভাইয়া বলা তো দূরে থাক বরং একঘণ্টা বড় হওয়ার অপরাধে ওর যাবতীয় অপকর্ম আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আসছে সেই ছোটকাল থেকে। ৪ বছর বয়সে বিছানায় হিসু করা আমি বন্ধ করে দিলেও আলিফ ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত এই অপকর্মটা প্রায়ই বিছানায় সারত এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে, চিত্কার করে আমার আম্মুকে বলত—বড়মা, আরিফ আমার গায়ে হিসু করে দিয়েছে। ইচ্ছা করে পানির গ্লাস, চায়ের কাপ ভেঙে আমার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে মিটমিট করে হাসত। একদিন চাচী আলিফকে বলেছিল, আচ্ছা ঘটনা কি; তুই প্রায়ই অভিযোগ করিস আরিফ তোর গায়ে হিসু করে দেয়, গ্লাস ভেঙে ফেলেছে, এই করেছে, সেই করেছে অথচ আরিফ আজ পর্যন্ত একদিনও তোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করল না, আমার তো মনে হয় তুই সব অপকর্ম করে আরিফের ওপর দোষ চাপিয়ে দিস? আলিফ বলল, তুমি আমার আম্মু না আমার আম্মু হচ্ছে বড় মা। ডাক্তার ষড়যন্ত্র করে তোমাকে আমার মা বানিয়ে দিয়েছে। তুমি আমাকে খালি সন্দেহ কর, বড়মা আমাকে একটুও সন্দেহ করে না।
গতকালের কথা। পাশের বিল্ডিংয়ের নাহিদাকে আমার নাম্বার থেকে এসএমএস পাঠাল ‘দেখতে তুই ইয়া বড় গোল আলু, তাই তো তোকে ডাকি পটেটো।’ একটু পর নাহিদার বাবা হাজির। ইভটিজিংয়ের মামলার হুমকি না দিয়ে নেক্সট যদি এমন করি তাহলে আমার মতো ৫০ পয়সার এসএমএস ইভটিজারকে জেলে না পচিয়ে নাহিদার র্যাব মামাত ভাইকে দিয়ে সোজা ক্রসফায়ারে দিয়ে দেবে। ফলাফল, এই বয়সে আম্মুর হাতে ঝাড়ুর বাড়ি। ছোটমা যদি সময়মত এসে না পড়তেন, ক্রসফায়ারের আগেই ঝাড়ুফায়ার হয়ে যেতাম নিশ্চিত। ঝাড়ুপেটা খেয়ে রুমে গিয়ে দেখি আলিফ মিটমিট করে হাসছে। বললাম, এই বয়সে আমারে মায়ের হাতে ঝাড়ুর বাড়ি খাওয়াইয়া হাসতাছোস? আলিফ মিটমিটি হাসি থামিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে কেউ নেই দেখে শিওর হয়ে বলল, তুই হচ্ছিস আমার বিরোধী দল। আমি যত দোষ করব সব তোর ঘাড়ে চাপাব, বুঝলি? তুই ছাড়া আর আমার আছে কে, যে দোষ চাপাব? ক্যান ক্যান আমার উপর চাপাবি...বলা শেষ না হতেই আলিফ হাসি থামিয়ে বলল, দেখছ বড়মাও দোষ করে এখন আমাকে এসে বলছে, আমি নাকি ষড়যন্ত্র করে মাইর খাইয়েছি। এতবড় সাহস তোর, নিজে দোষ করে আবার আলিফকে ঝাড়ছিস বলে আম্মু আবার ধোলাই দেয়ার প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে দেখে কোনোরকম বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম।
বাস্তব জীবনে আলিফের সঙ্গে আমাদের ডিজিটাল সরকারের দারুণ মিল। আলিফ যেমন কিছু হলেই আমার উপর দোষ চাপিয়ে দেয়, তেমনি আমাদের ডিজিটাল সরকারও কিছু হলেই বিরোধী দলের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়। সব বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র হিসেবে মিডিয়ায় বুলি আওড়ায়। লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ। দোষ কার? বিরোধী দলের। বিরোধীদল বিদ্যুতের নাটবল্টু খুলে নেয় বলেই লোডশেডিং। পানি সঙ্কটে রাজধানীবাসীর বেহাল দশার দোষও বিরোধীদলের। দ্রব্যমূল্যের পাগলাঘোড়া লাফিয়ে লাফিয়ে গ্রহ-উপগ্রহ ঘুরে বেড়াচ্ছে। দোষ সেই বিরোধী দলের। বিরোধীদল ষড়যন্ত্র করে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, কোনো মন্ত্রী কিংবা এমপির বাথরুমের বদনা চুরি হলেও পরদিন পত্রিকায় দেখা যাবে বিরোধীদল বাথরুমের বদনা চুরি করে ফেলেছে। এ নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারির জন্য বসে তো আছেনই মাননীয়রা!
গত কয়েকমাস ধরে আবার যুক্ত হয়েছে যুদ্ধাপরাধ। বিরোধীদলের কোনো নেতা বড় করে একটা কাশি দিলেও সেটা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র হয়ে যায়। দাদারা এই দেশের উপর দিয়ে মাগনা তথাকথিত পরীক্ষামূলক ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে, তা নিয়ে কথা বলা মানেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার ষড়যন্ত্র করা! দেশের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, অথচ চড়া সুদে টাকা নিয়ে সেই টাকায় দাদাদের রাস্তা করে দিয়ে ফ্রিতে চলাচল করে দেয়া নিয়েও কিছু বললে দাদাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার ষড়যন্ত্র! তিস্তার পানি না এলে ট্রানজিট হবে না। পানি আসছে না ঠিকই, কিন্তু তথাকথিত পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের নামে ট্রানজিট ঠিকই চালু হয়ে গেছে। তথাকথিত পরীক্ষামূলক ট্রানজিট পেয়েও মনমোহন দাদা আর সোনিয়া মাসী মমতাকে নরম করতে পারল না, তাই মমতার মমতা পেতে কলকাতায় আরও বেশি বেশি ইলিশ পাঠানোর জন্য কমিটি গঠন করাও হয়ে গেছে। ইলিশ কূটনীতি দিয়ে মমতার মমতা পাওয়ার চেষ্টা দেখে মনে হচ্ছে, পানি তুই আইবি না মানে। তোরে আইতে হইবই, দরকার হলে দেশের অর্ধেক লেইখ্যা দিমু, তবু তোরে আইন্যা ছাড়ুম! কিরে এমন দেশ উদ্ধার করা ভাবুক হইয়া কই যাস? শুনে ভাবনার জগত থেকে পেছন ফিরে দেখি আলিফ। বললাম, যন্ত্র মানে অস্ত্র কিনতে যাচ্ছি। সেই অস্ত্র দিয়ে মুটকি নাহিদার বাপরে খুন করুম। এরপর তোর আঙুলের ছাপ নিয়ে তোরে ফাঁসামু। বুঝছিস?
—ফাঁসানোর অনেক সুযোগ পাবি, এখন জলদি ২০০ টাকা দে, না হয় বড়মা’কে গিয়ে বলব, তুই চায়ের দোকানে বসে পায়ের উপর পা তুলে সিগারেট খাইতাছিস। আমি বাধা দেয়ায় আমাকে বলছিস তোর বড়মা’কে কি আমি ভয় পাই নাকি, বলেই হাত বাড়াল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে বললাম, সব রেকর্ড হয়ে গেছে ছোটভাই! এইবার ২০০ টাকা উল্টো আমাকে দে। না হয় ছোটমা’কে সব শুনিয়ে তোকে ঝাড়ুর বাড়ি খাওয়াব। আলিফ এই প্রথম ধরা খেয়ে ২০০ টাকা দিয়ে অন্যদিকে হাঁটা শুরু করল। বেচারা ছোট ভাই আমার!
ahmedarif2011@gmail.com
সূত্র : আমার দেশ
গতকালের কথা। পাশের বিল্ডিংয়ের নাহিদাকে আমার নাম্বার থেকে এসএমএস পাঠাল ‘দেখতে তুই ইয়া বড় গোল আলু, তাই তো তোকে ডাকি পটেটো।’ একটু পর নাহিদার বাবা হাজির। ইভটিজিংয়ের মামলার হুমকি না দিয়ে নেক্সট যদি এমন করি তাহলে আমার মতো ৫০ পয়সার এসএমএস ইভটিজারকে জেলে না পচিয়ে নাহিদার র্যাব মামাত ভাইকে দিয়ে সোজা ক্রসফায়ারে দিয়ে দেবে। ফলাফল, এই বয়সে আম্মুর হাতে ঝাড়ুর বাড়ি। ছোটমা যদি সময়মত এসে না পড়তেন, ক্রসফায়ারের আগেই ঝাড়ুফায়ার হয়ে যেতাম নিশ্চিত। ঝাড়ুপেটা খেয়ে রুমে গিয়ে দেখি আলিফ মিটমিট করে হাসছে। বললাম, এই বয়সে আমারে মায়ের হাতে ঝাড়ুর বাড়ি খাওয়াইয়া হাসতাছোস? আলিফ মিটমিটি হাসি থামিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে কেউ নেই দেখে শিওর হয়ে বলল, তুই হচ্ছিস আমার বিরোধী দল। আমি যত দোষ করব সব তোর ঘাড়ে চাপাব, বুঝলি? তুই ছাড়া আর আমার আছে কে, যে দোষ চাপাব? ক্যান ক্যান আমার উপর চাপাবি...বলা শেষ না হতেই আলিফ হাসি থামিয়ে বলল, দেখছ বড়মাও দোষ করে এখন আমাকে এসে বলছে, আমি নাকি ষড়যন্ত্র করে মাইর খাইয়েছি। এতবড় সাহস তোর, নিজে দোষ করে আবার আলিফকে ঝাড়ছিস বলে আম্মু আবার ধোলাই দেয়ার প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে দেখে কোনোরকম বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম।
বাস্তব জীবনে আলিফের সঙ্গে আমাদের ডিজিটাল সরকারের দারুণ মিল। আলিফ যেমন কিছু হলেই আমার উপর দোষ চাপিয়ে দেয়, তেমনি আমাদের ডিজিটাল সরকারও কিছু হলেই বিরোধী দলের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়। সব বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র হিসেবে মিডিয়ায় বুলি আওড়ায়। লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ। দোষ কার? বিরোধী দলের। বিরোধীদল বিদ্যুতের নাটবল্টু খুলে নেয় বলেই লোডশেডিং। পানি সঙ্কটে রাজধানীবাসীর বেহাল দশার দোষও বিরোধীদলের। দ্রব্যমূল্যের পাগলাঘোড়া লাফিয়ে লাফিয়ে গ্রহ-উপগ্রহ ঘুরে বেড়াচ্ছে। দোষ সেই বিরোধী দলের। বিরোধীদল ষড়যন্ত্র করে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, কোনো মন্ত্রী কিংবা এমপির বাথরুমের বদনা চুরি হলেও পরদিন পত্রিকায় দেখা যাবে বিরোধীদল বাথরুমের বদনা চুরি করে ফেলেছে। এ নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারির জন্য বসে তো আছেনই মাননীয়রা!
গত কয়েকমাস ধরে আবার যুক্ত হয়েছে যুদ্ধাপরাধ। বিরোধীদলের কোনো নেতা বড় করে একটা কাশি দিলেও সেটা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র হয়ে যায়। দাদারা এই দেশের উপর দিয়ে মাগনা তথাকথিত পরীক্ষামূলক ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে, তা নিয়ে কথা বলা মানেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার ষড়যন্ত্র করা! দেশের রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, অথচ চড়া সুদে টাকা নিয়ে সেই টাকায় দাদাদের রাস্তা করে দিয়ে ফ্রিতে চলাচল করে দেয়া নিয়েও কিছু বললে দাদাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার ষড়যন্ত্র! তিস্তার পানি না এলে ট্রানজিট হবে না। পানি আসছে না ঠিকই, কিন্তু তথাকথিত পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের নামে ট্রানজিট ঠিকই চালু হয়ে গেছে। তথাকথিত পরীক্ষামূলক ট্রানজিট পেয়েও মনমোহন দাদা আর সোনিয়া মাসী মমতাকে নরম করতে পারল না, তাই মমতার মমতা পেতে কলকাতায় আরও বেশি বেশি ইলিশ পাঠানোর জন্য কমিটি গঠন করাও হয়ে গেছে। ইলিশ কূটনীতি দিয়ে মমতার মমতা পাওয়ার চেষ্টা দেখে মনে হচ্ছে, পানি তুই আইবি না মানে। তোরে আইতে হইবই, দরকার হলে দেশের অর্ধেক লেইখ্যা দিমু, তবু তোরে আইন্যা ছাড়ুম! কিরে এমন দেশ উদ্ধার করা ভাবুক হইয়া কই যাস? শুনে ভাবনার জগত থেকে পেছন ফিরে দেখি আলিফ। বললাম, যন্ত্র মানে অস্ত্র কিনতে যাচ্ছি। সেই অস্ত্র দিয়ে মুটকি নাহিদার বাপরে খুন করুম। এরপর তোর আঙুলের ছাপ নিয়ে তোরে ফাঁসামু। বুঝছিস?
—ফাঁসানোর অনেক সুযোগ পাবি, এখন জলদি ২০০ টাকা দে, না হয় বড়মা’কে গিয়ে বলব, তুই চায়ের দোকানে বসে পায়ের উপর পা তুলে সিগারেট খাইতাছিস। আমি বাধা দেয়ায় আমাকে বলছিস তোর বড়মা’কে কি আমি ভয় পাই নাকি, বলেই হাত বাড়াল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে বললাম, সব রেকর্ড হয়ে গেছে ছোটভাই! এইবার ২০০ টাকা উল্টো আমাকে দে। না হয় ছোটমা’কে সব শুনিয়ে তোকে ঝাড়ুর বাড়ি খাওয়াব। আলিফ এই প্রথম ধরা খেয়ে ২০০ টাকা দিয়ে অন্যদিকে হাঁটা শুরু করল। বেচারা ছোট ভাই আমার!
ahmedarif2011@gmail.com
সূত্র : আমার দেশ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন