জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেনের জন্ম ১৯৫২ সালের ৫ মে। জন্মস্থান মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ীর দামপাড়া গ্রামে। তার বাবা মুজিবুল হক ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ইতিহাস পড়াতেন। ছেলেবেলায় মাইনুল চেয়েছিল প্রকৌশল বিষয়ে পড়তে। ঢাকায় তখন গণঅভ্যুত্থানের ডামাডোল চলছে। ওই সময় মাইনুলকে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ১৯৭০ সালে তিনি ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসে সিট পেলেও সেখানে তার মন টিকত না। সুযোগ পেলেই চলে যেতেন ধানমন্ডির খালার বাসায়। ১৯৭১ সালে দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ হয়ে যায় বুয়েটে। মাইনুল তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর দামপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেন। খুব কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করেন তিনি। ১৬ ডিসেম্বরের পর সৈয়দ মাইনুল হোসেন ফিরে যান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসে। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক হন। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে EAH Consultant Ltd-এ জুনিয়র স্থপতি হিসাবে যোগ দেন। কয়েক মাস পর চাকরি ছেড়ে ওই বছরের আগস্টে যোগ দেন 'বাংলাদেশ কনসালট্যান্ট লিমিটেড'-এ। তার কর্মজীবন বেশ বৈচিত্র্যময়। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত বিভাগ মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরপর নকশা আহ্বান করা হয়। তখন ২৬ বছরের তরুণ স্থপতি মাইনুল স্মৃতিসৌধের নকশা জমা দেন। প্রায় ১৭-১৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে তিনি প্রথম হয়ে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার পান। আর তার করা নকশা অনুসারে ঢাকার অদূরে সাভারে নির্মিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এরপর তিনি স্থপতি সংসদ লিমিটেড, শহীদুল্যাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড এবং কুয়েতের আল ট্রুট লিমিটেডে কাজ করেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সৈয়দ মাইনুল হোসেন ৩৮টি বড় বড় স্থাপনার নকশা করেন। এর মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, IRDP ভবন কাওরানবাজার, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন, চট্টগ্রাম ইপিজেড, বাংলাদেশ চামড়াজাত প্রযুক্তির কর্মশালা ভবন, উত্তরা মডেল টাউন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার খাদ্য গুদামের নকশা, কফিল উদ্দিন প্লাজা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ভবন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের নকশা করেছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি বেশ অসুস্থ ও অবসর জীবনযাপন করছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মহান এই স্থপতি একুশে পদক লাভ করেন।
জগদীশ দাশ
জগদীশ দাশ
সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন