রাসায়নিক যুদ্ধে শত্রুকে হত্যার জন্য অথবা তার শারীরিক ক্ষতিসাধনের জন্য অথবা খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বিনষ্ট করার জন্য রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের যুদ্ধ যুগ যুগ ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে। বস্তুত মানব সমাজের সমগ্র ইতিহাসজুড়ে এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, গ্রিসের যোদ্ধারা রাসায়নিক অগি্নবোমা আবিষ্কার করে এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৮) রাসায়নিক যুদ্ধের ব্যাপক প্রয়োগ দেখা যায়। ১৯১৫ সালের জানুয়ারি মাসে জার্মানরা পোল্যান্ডযুদ্ধে রুশদের বিরুদ্ধে ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করে কিন্তু তাতে বিশেষ ফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু ২২ এপ্রিল ফ্ল্যান্ডর্স-এর যুদ্ধে ফরাসি ও ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে ঠিক একই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে তারা কৌশলগত বিজয় অর্জন করে_ যা তাদের পক্ষে আশাতীত ছিল। ক্লোরিন সৈন্যদের ফুসফুসের ওপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তাদের শ্বাসরোধ করে দেওয়া হয়। ফলে তাদের পক্ষে নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। এর ফলে এত অধিক সংখ্যক সৈন্য শক্তিহীন হয়ে পড়ে যে, জার্মানরা পরবর্তীকালে ক্ষতিকারক গ্যাস সম্পর্কে গবেষণার জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে শুরু করে। ১৯১৭ সালে জার্মানরা মাস্টার্ড গ্যাস নামক মারাত্মক গ্যাসের ব্যবহার শুরু করে। এর শক্তি হলো_ এটি মানুষের চামড়ায় সরাসরি আঘাত করে ও চামড়ায় মিশে যায়। ফলে গ্যাস প্রতিরোধক মুখোশ কার্যকর হয় না এর ফলে চামড়ায় ফোসকা পড়ে এবং ফুসফুসে জ্বালা শুরু হয়। অন্যান্য গ্যাসের তুলনায় এ গ্যাস ব্যবহারে অনেক সৈন্যের মৃত্যু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নার্ভ গ্যাস আবিষ্কার করে জার্মানরা এক বিরাট সাফল্য অর্জন করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত গ্যাসের তুলনায় এটি অনেক বেশি বিষাক্ত কিন্তু কখনো এর প্রয়োগ হয়নি। বস্তুত নার্ভ গ্যাস মানুষের শরীরের নার্ভ কোষের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে শরীরের মাংসপেশির প্রবল আলোড়ন, বমি এবং মৃত্যুও ঘটাতে পারে। এরকম অনেক গ্যাসের কোনো স্বাদ নেই, গন্ধ নেই এবং এগুলো বর্ণহীন। এরকম অনেক বিষাক্ত গ্যাস বিভিন্ন দেশে আবিষ্কার হয়েছে বলে জানা যায়। তার মধ্যে অন্যতম গ্যাস হলো ব্লাড গ্যাস যা রক্ত চলাচলের স্বাভাবিক ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করে এবং শরীরের টিস্যু বা কোষসমূহ দ্বারা অক্সিজেন ব্যবহারে ব্যাঘাত ঘটায়। টিআর গ্যাস জাতীয় অন্যান্য গ্যাসের প্রতিক্রিয়া সাময়িক। টিআর গ্যাসের ফলে প্রচণ্ড কান্না আসে, নাক-মুখ ও চোখ জ্বালা করে এবং প্রচণ্ড কাশি আসে। জনসমাবেশ ও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের কাজে পুলিশ বাহিনী এ গ্যাস ব্যবহার করে। কখনো কখনো সেনাবাহিনীও এর প্রয়োগ করে। সুপ্ত ক্ষমতার বিচারে গ্যাসযুদ্ধ এত ক্ষতিকারক যে, এর ব্যবহার বন্ধ করার জন্য অনেক আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অতএব, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নিয়মিত গ্যাসের অস্ত্র ব্যবহার হয়নি। গাছ-গাছড়া ধ্বংস করার জন্য কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
প্রীতম সাহা সুদীপ
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
প্রীতম সাহা সুদীপ
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন