হিজল বনে পালিয়ে গেছে পাখি
যতই তারে করুণ কেঁদে ডাকি,
দেয় না সাড়া নীরব গহিন বন,
বাতাসে তার ব্যথার গুঞ্জরণ…
সেই সংগ্রামী মানুষের সারিতে,
আমাকেও রাখিও রহমান,
যারা কুরআনের আহবানে নির্ভীক,
নির্ভয়ে সব করে দান।
যতই তারে করুণ কেঁদে ডাকি,
দেয় না সাড়া নীরব গহিন বন,
বাতাসে তার ব্যথার গুঞ্জরণ…
সেই সংগ্রামী মানুষের সারিতে,
আমাকেও রাখিও রহমান,
যারা কুরআনের আহবানে নির্ভীক,
নির্ভয়ে সব করে দান।
এই সব অসাধারণ জনপ্রিয় গানের গীতিকার ও আশির দশকের শক্তিমান কবি গোলাম মোহাম্মদ এর জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৩ এপ্রিল মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার গোপালনগর গ্রামে, মৃত্যু ২০০২ সালের ২২ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সুবহে সাদিকের সময়। প্রচারবিমুখ, স্মিতহাস্যময় অভিমানী কবি পৃথিবীর সকল মায়া নিকটতম আত্মীয় স্বজন, গুণগ্রাহী বন্ধুদের ছেড়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভ করেছেন। রেখে গেছেন প্রায় হাজারখানেক গান, যার ৫০টির অধিক ক্যাসেটে সংযোজিত হয়েছে।
অত্যন্ত নিভৃতচারী এই কবির ৭টি কাবগ্রন্থ যার মধ্যে গ্রন্থিত হয়েছে অসাধারণ সব কবিতা – “অদৃশ্যের চিল” (১৯৯৭), “ফিরে চলা এক নদী”(১৯৯৮), “হিজল বনের পাখি” (১৯৯৯), “ঘাসফুল বেদনা” (২০০০), “হে সুদূর হে নৈকট্য” (২০০২) প্রকাশিত হয়, শিশুদের জন্য ২টি ছড়াগ্রন্থ “ছড়ায় ছড়ায় সুরের মিনার” ও “নানুর বাড়ী” তার কবিতায় আধ্যাত্মিক রোমান্টিকতার শৈল্পিক ও নান্দনিক উপস্থাপন।
দেশবরেণ্য সাহিত্য সমালোচক কবি গল্পকার আবদুল মান্নান সৈয়দ তার শেষ কাব্যগ্রন্থ “হে সূদূর হে নৈকট্য” সম্বন্ধে বলেন, ‘কবি গোলাম মোহাম্মদের হে সূদূর হে নৈকট্য বইটি গভীরভাবে তাৎপর্য নিয়ে দেখা দিয়েছে। যেন বইটির নামের মধ্যে বেজে উঠেছে গূঢ় গভীর অন্য এক ব্যঞ্জনা, আত্মনিবেশী কবি শিল্পী গোলাম মোহাম্মদ এই বইয়ে অনেক পাতার আড়ালে পরিপক্ব ফল নিয়ে উপস্থিত। আত্মার যে গভীরতর তল থেকে কবিতা তথা তাবৎ শিল্পের উৎসারণ, অদৃশ্যের সেই মৌচাক এই বইয়ে বাসা বেঁধে আছে। চমকে উঠেছি এই বইয়ে জীবন ও মৃত্যুর স্পাইরাল বুনটের গ্রন্থনায়। তাঁর অপরূপ স্বজ্ঞাবলে গোলাম মোহাম্মদ কি আগেই জেনে গিয়েছিলেন তার আসন্ন পরিণাম? কী রকম একটি বিধুরতায় তাই ভরে উঠেছে এই গ্রন্থের কবিতার অনেক পঙক্তি। মৃত্যুর মোহন বাঁশি শুনতে শুনতে কবি তাঁর গণিতের মধ্যে মিশে গেলেন কিংবা ‘একা একা বসে গুনতে পারি সময়ের সব পদশব্দ; মানুষেরা যে আসলেই একা। একা আসে একা যায় আমরা বিমূঢ় হয়ে পড়ি।’ নাম কবিতায় সর্বশেষ পঙক্তিতে গোলাম মোহাম্মদ যখন লিখেছিলেন, প্রসারিত নিদ্রার মধ্যেই অনন্ত জীবনের শুরু, তখন বুঝতে পারি তার সর্বশেষ এই কবিতাগুচ্ছ উঠে এসেছিল উপলব্ধির কোন গভীর পাতাল থেকে। সমসাময়িক দেশ কাল নিয়ে বেদনা ছিল (সাতাল নগর), যন্ত্রণা ছিল (কবিতা); ছিল বেশ কিছু কবিতায় মৃত্যুচিন্তা (একা; মৃত্যুর সাথে; নীল মৃত্যুর মুখোমুখি প্রভৃতি); কিন্তু তারই মধ্যে বিজয়ী হয়ে আছে জীবনপ্রেম আর প্রার্থনার কবিতাগুলো। এই বইয়ের কবিতায় ছড়িয়ে আছে জীবনের নতুন নতুন বিন্যাসের আশ্চর্যতা। একটি ছোট মেয়ের সান্নিধ্যে অপরূপ বাৎসল্য রস উছলে উঠেছে রক্তজবা কবিতায়। আলোর আবাহন কবিতায় একটি সকালের মুগ্ধতা, বেদনা, যন্ত্রণা, দোলাচল, ভালবাসায় এই কবিতার বইটি একটি সম্পূর্ণ পৃথিবী রচনা করেছে, এক স্বয়ংসম্পূর্ণ পৃথিবী, মৃত্যুকে নিয়েই জীবনের এক সামগ্রিক উচ্চারণ, এক পাক ঘুরে আসা, ৪০ পৃষ্ঠার মধ্যে এক পরিসীমাহীন জীবনের পরিক্রমা।
এই বইয়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রথম সূর্যোদয়। গোলাম মোহাম্মদ, যিনি মর্মে মর্মে ছিলেন গীতিকবি, ছন্দোবদ্ধ কবিতাতেই আমি লক্ষ্য করেছি তাঁর সাফল্য বেশি। সেখানে তিনি অনেক বেশি লক্ষ্যভেদী, অনেক বেশি সংস্করণ সক্ষম। তার কম্পমান সংবেদনের রেখামালা এইসব কবিতা গানেই সফলভাবে রূপায়িত হয়েছে। প্রথম সূর্যোদয় কবিতায় আদিপিতা ও আদিমাতাকে নিয়ে কল্পনা ডানা মেলেছে। আর কিছু না, কোনো বাণী নয়, কোনো তত্ত্বচিন্তা নয়, শুধু এই প্রথম দু’জন মানুষ মানুষীকে নিয়ে স্বেচ্ছা মিলান্ত মাত্রাবৃত্তে গোলাম মোহাম্মদ যে কয়েকটি স্তবক রচনা করেছেন, তার মধ্য দিয়ে তাঁর অপাপবিদ্ধ কবিহৃদয় স্বাক্ষরিত থেকে গেল।’
কবি গোলাম মোহাম্মদের সাথে আমার পরিচয় ১৯৮০ সালে এলিফেন্ট রোডের একটি অফিসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে ওখানে গেলে প্রায়ই দেখা হতো। তার বিনয়ী ভাব, সুন্দর করে কথা বলা, বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব আমাকে সহজেই তার কাছে টেনে নেয়।
তারপর যখন দৈনিক সংগ্রামে চাকরি নিয়ে মগবাজার আসি, তখন আরও কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয়। তার কিছু জিনিস আমার ভীষণ ভালো লাগে, আকৃষ্ট করে। এক বুক জ্বালা বুকে ধারণ করেও মুখে মুখে হাসি, শত যন্ত্রণা সহ্য করেও নীরবে মুক্তা ফলানো, নিরহঙ্কার ও প্রচার বিমুখতা ছিলো তার সহজাত। এক সময় তার প্রতি ভীষণ আকর্ষণ অনুভব করি। বাসা থেকে বের হয়ে তার সাথে আড্ডা দিতাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের কথা চলতো জাতীয় দৈনিকগুলোর রিপোর্ট, কবিতা, গল্প, রাজনৈতিক, কালচারাল ও বিভিন্ন শিল্পী ও শিল্পকর্ম ইত্যাদি নিয়ে, কোনো বিষয় বাদ যেত না। একদিন দেখা না হলে কথা না বললে মনটা অস্থির হয়ে যেত। তাকে খোঁজ করতাম। প্রীতিতে, বাংলা সাহিত্য পরিষদে সিএইচপিতে দেখা না হওয়া পর্যন্ত ভীষণ কষ্ট হতো যা কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না।
কবি গোলাম মোহাম্মদ ভাই একজন শিল্পী ছিলেন। শিল্পকলার ওপর প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকলেও তিনি স্বশিক্ষিত একজন শিল্পী ছিলেন। শিল্পকলার ওপর প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। জানার আগ্রহও ছিল প্রচুর। ইসলামী শিল্পকলা, ক্যালিগ্রাফির ওপর বেশকিছু প্রবন্ধ ইবনে মালেক নামে পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তিনি তৃতীয় ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে চমৎকার বক্তব্য দিয়েছিলেন।
মগবাজারে ‘শিল্পকোণ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান। তিনি অনেক বইয়ের কভারসহ প্রচুর ডিজাইন করেছেন; কম্পিউটার আসার পূর্বে হাতে লিখে অসংখ্য পোস্টার ডিজাইন করেছেন। তার হাতের লেখা বিশেষ করে বিদ্যাসাগরীয় ও অর্নামেন্ট লেখা ছিল অসাধারণ। আমি অনেক সময় তার হাতকে কম্পিউটারের হাত বলতাম।
কবি গোলাম মোহাম্মদ ভাইয়ের কবিতার একজন ভক্ত আমি। তার সাথে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতাম পকেটে আছে নাকি? তিনি বুঝতে পেরে একটার পর একটা পকেট থেকে বের করে পড়তেন, আমি মনোযোগ দিয়ে শুনতাম।
তার আবৃত্তির সময়, আমার স্মৃতিতে ভেসে উঠতো আমার চিরচেনা গ্রাম, কাশবন, মাঠ-ঘাট, নদী, ফসলের মাঠ, সিম গাছ, হিজল বন, দেবদারু, অর্ধডোবা, ধান ক্ষেতের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ডিঙি নৌকা। আমি গ্রামকে ভালোবাসি। বেশ কিছু নিসর্গের ছবি এঁকেছি। কবি গোলাম মোহাম্মদের কবিতায় গ্রাম বাংলার খুঁটিনাটি উপকরণ চমৎকারভাবে এঁকেছেন। এ যেন স্বাদ্ধ দিয়ে ছবি আঁকা। কবি গোলাম মোহাম্মদ সুন্দর সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টাকে খুঁজে পেতেন। তার কবিতা বাহুল্য বিবর্জিত। শব্দগুলো যেন আওয়াজ করে বাজে!
আমি ছবি আঁকি। কবিতা বুঝি না, তবে কবিতা ভালোবাসি, পড়ি। গোলাম মোহাম্মদের শেষের দিকের কবিতাগুলো আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে এবং প্রচুর লিখতেন। শেষের দিকে তার কবিতাগুলোতে বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কুরআনের আয়াত সংযোজন করেছেন যা একান্তই তার নিজস্ব ধারা, যা বাংলা কবিতায় নতুন সংযোজন।
তাকে অনেক দিন বলেছি কবিতাগুলো পত্রিকা অফিসে সাহিত্য পাতায় পাঠান। ছাপা হলে পাঠক পড়ার সুযোগ পাবে। জানতে পারবে। অতি চমৎকার কবিতা লিখছেন, অথচ কেউ জানতেও পারবে না।
একদিন দু’জন রিকশাযোগে পল্টন যাচ্ছি। রিকশায় বসেই তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আছে নাকি পকেটে কিছু? উনি একটা কবিতা পকেট থেকে বের করে পড়তে লাগলেন। কবিতাটি ছিল ফিলিস্তিনে শিশু হত্যার ওপর। তিনি কবিতা পড়ছেন। তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি ঝরছে। আমিও স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কোনো কথা বলতে পারলাম না। কতই না গভীর ছিল তার লেখার উপলব্ধি!
শিল্পের জন্য শিল্প এই কথা তিনি বিশ্বাস করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন জীবনের জন্য শিল্প। শিল্প সত্যের জন্য, সুন্দরের জন্য। মুক্তির জন্য। কবি গোলাম মোহাম্মদ তার কবিতায় আধ্যাত্মিকভাবে রোমান্টিকতা শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। বিশ্বাসী চেতনার পরিস্ফুটন এবং নিসর্গের সৌন্দর্যকে তিনি তার কবিতায়, গানে ধারণ করেছেন। কাজেই নির্দ্বিধায় বলা যায় তিনি জালালুদ্দিন রুমী, ফররুখ আহমদের অনুসারী। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, তিনি এত অল্প সময়ে প্রায় হাজারখানেক গান লিখেছেন। তার অনেক গানই সিডি ও ক্যাসেটবদ্ধ হয়ে দেশে বিদেশে সমাদৃত হয়েছে।
তার পকেটে সব সময় একাধিক কলম ও কাগজ থাকতো। তিনি প্রকৃতিতে গভীরভাবে উপলব্ধি করে তাৎক্ষণিক কবিতা, গান লিখে ফেলতে পারতেন। সে এক অসাধারণ প্রতিভা।
তিনি জীবিত থাকতেই শিল্পী বায়জিদ ও মশিউরকে বলতে শুনেছি গোলাম মোহাম্মদ ভাই যে কী প্রতিভার অধিকারী তাকে আমরা চিনলাম না।
কবি গোলাম মোহাম্মদ ছিলেন আল্লাহর রাহে নিবেদিতপ্রাণ। তিনি ছাত্র অবস্থায়ই উচ্চারণ করেছিলেন, “ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া ইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।” এবং আমৃত্যু এই শপথের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। দুনিয়ার অন্য কোনো লোভ লালসা, পঙ্কিলতা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
কবি গোলাম মোহাম্মদ ছিলেন পুরোপুরি একজন কবি। পারিবারিক আর্থিক চাহিদা মেটাতে ব্যবসা শুরু করলেও উদারতা ও উদাসীনতার দরুন সুবিধা করতে পারেননি। তাকে যথেষ্ট অর্থকষ্ট ও পারিবারিক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। সংসারের ক্ষুদ্র পরিসর তাকে আটকাতে পারেনি। তিনি বৃহত্তর বিষয় নিয়ে ভাবতেন। ভাবতেন দেশ, জাতি, কৃষ্টি ও কালচার নিয়ে। একজন শিল্পী, সাহিত্যিক শুধু দেশ ও জাতির নয়, গোটা মানবজাতির সম্পদ। কবি গোলাম মোহাম্মদও নিজের চিন্তা না করে জাতির চিন্তা করতেন।
তিনি শারীরিক অসুস্থতা, অর্থনৈতিক কষ্ট এসব কিছু মিষ্টি হাসির আড়ালে লুকিয়ে রাখতেন যা আমরা এত কাছে থেকেও বুঝতে পারিনি, তিনিও বুঝতে দেননি।
তবে ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। একটা অপরাধ বোধ সব সময়ই তাড়া করে বেড়ায়। এত কাছে থেকে কেন বুঝতে পারিনি, কেন জানতে চাইনি গোলাম মোহাম্মদ ভাই আপনার ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়, কিভাবে সংসার চালাচ্ছেন? চিকিৎসা হচ্ছে কি না?
তার মনে অনেক অভিমান ছিল, ক্ষোভ ছিল, যা কাউকে বুঝতে দেননি কোনোদিন। শেষতক প্রচারবিমুখ কবি ক্ষোভ যন্ত্রণা নিয়ে নিঃশব্দে নীরবে অভিমান নিয়েই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। চলে গেলেন অত্যন্ত আদরের, যাকে দু’চোখের আড়ালে থাকতে পারতেন না সে কন্যা, পুত্র ও স্ত্রীকে ছেড়ে।
কবি গোলাম মোহাম্মদ ২০০২ সালের ২২ আগস্ট ইন্তেকাল করলেন। রেডিও- টিভিসহ জাতীয় সব দৈনিকে ছবিসহ খবর ছাপা হলো। সারা দেশ বিদেশ থেকে শোকবাণী আসতে লাগলো পত্রিকা অফিসে। মন্ত্রীরা শোকবাণী দিলেন। নাগরিক শোকসভায় মন্ত্রীসহ নেতৃবৃন্দ ছিলেন। অনেক বুদ্ধিজীবী কর্মকর্তা কেঁদে বুক ভাসালেন। দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকাগুলোর পূর্ণ পৃষ্ঠা ছবি ছাপা হলো। তার ওপর, তার কবিতা, গানের ওপর প্রচুর ফিচার ছাপা হলো। তার রচনাসামগ্রী, স্মারকগ্রন্থ, গানের সিডি, ক্যাসেট প্রদর্শিত হলো। তার ফ্যামিলি ও লেখা তত্ত্বাবধানের জন্য গঠিত হলো কবি গোলাম মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন। গঠন করা হলো কবি গোলাম মোহাম্মদ ট্রাস্ট। মরণোত্তর পেয়েছেন কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পদক।
কিন্তু এসব কিছু হলো মৃত্যুর পর।
জীবিত থাকতে আমরা তাকে চিনতে ও বুঝতে পারিনি। মূল্যায়ন করতে পারিনি। পৃথিবীর অনেক মনীষী, শিল্পী-সাহিত্যিকই পৃথিবীর জন্য অনেক কিছু দিতে দিতে নিঃস্ব হন, এমনকি না খেয়েও মারা গেছেন- শুধুমাত্র তাদেরকে বুঝতে না পারার দরুন। পরবর্তী সময় তাদের কর্মে সাড়া পড়ে গেছে। কোটি কোটি ডলারে বিক্রি হয়েছে। সে অবস্থায় থেকে আজও আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনি। কবিকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য, জাতির জন্য লজ্জাকর।
তবে আশা করি, এই মৃত্যু আমাদের উপলব্ধিকে জাগ্রত করবে। সজাগ করবে। আর যেন কোনো শিল্পী, সাহিত্যিক, কবিকে এই অবাঞ্ছিত মৃত্যুকে বরণ করতে না হয়। আমরা না হারাই, তার মৃত্যুর আগেই যেন তাকে মূল্যায়ন করতে পারি। সবাই যথাযোগ্য সম্মান যেন পান। আল্লাহ তার এই নেক বান্দাকে কবুল করুন।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন