মূলত লেখার নান্দনিক রূপকে ক্যালিগ্রাফি বলা হয়। গ্রিক ভাষায় ‘কাল্লা’ অর্থ সুন্দর হাতের লেখা। যা দিয়ে লিখিত অক্ষরকে বোঝানো হয়েছে, যার মধ্যে একটি গতি এবং ছন্দময়তা রয়েছে। এটি কলম কিংবা তুলির মাধ্যমে লিখিত হয়ে থাকে।
ক্যালিগ্রাফি প্রাচীন লেখার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অংশ। কিছু কিছু দেশ, যেমন চীন ক্যালিগ্রাফিকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটিকে শিল্পের চেয়েও বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে।
পৃথিবীর নানা দেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চা আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত চলে আসছে, যেমন—বাংলা, ইংরেজি, আরবি এবং ফার্সি ভাষাসহ পৃথিবীর নানা ভাষায়। তুর্কি, আরবি এবং ফার্সি ভাষায় যতটা সাবলীল ক্যালিগ্রাফির চর্চা লক্ষণীয়, অন্য ভাষায় ততটা নয়। বিশেষ করে কোরআন রচনার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।
কোরআন নাজেল হয়েছিল মক্কায়, পাঠ করা হয়েছে মিসরে আর লিখিত হয়েছে ইস্তাম্বুলে দশম শতাব্দীতে। তখন তুর্কিরা পশ্চিমের দিকে ধাবিত হচ্ছিল, যা ছিল তাদের নিজস্ব আবাসভূমি। জায়গাটি ছিল উত্তর-পশ্চিম চীন অঞ্চলে। তারা মূলত তুর্কিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে যায় ইসলামী বিশ্বের সঙ্গে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। তুর্কিদের ধর্মান্তরিত হওয়া ছিল স্থান পরিবর্তনের মূল কারণ, যার ফলে উইঘোর অক্ষর তারা গ্রহণ করেছিল। আরবি পাণ্ডুলিপিতে ১৯২৮ সালের আগে প্রায় এক হাজার বছর তুর্কি অক্ষর প্রচলিত ছিল, যার মধ্যে এক ধরনের নান্দনিকতা লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া আরবি অক্ষরগুলো নানারকম ফর্মে পরিবর্তন করে উপস্থাপন করা হয়।
তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যের আমলে বিভিন্ন আঙ্গিকে এই আরবি অক্ষরগুলোকে বিন্যস্ত করা হয়। এসব অক্ষর নান্দনিক এবং আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মে বিস্তৃতি ঘটায় অটোমানরা ।
প্রাচীনকালে আরবদের পাণ্ডুলিপির পঞ্চাশ বছর পেছনে গেলে দেখা যাবে, হিজিরা (ঐবমরত্ধ) পদ্ধতিতে পাণ্ডুলিপি লেখা হতো সম্ভবত ৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে। এসব লেখার ফর্ম ছিল প্রাচীন সিরীয় পাণ্ডুলিপির আদলে, যা (ঘধনধঃর) নবতি পাণ্ডুলিপির ধারা।
ইসলামের বিকাশের সময়কালে আরবি অক্ষরের আদল পুরনো সিরীয় আদলের কিছুটা পরিবর্তন ঘটিয়ে ব্যবহার করতে শুরু হয়। এই অক্ষরগুলো কুফিক হিসাবে পরিচিত। এই অক্ষর প্রথম ব্যবহৃত হয় ইরাকের কুফা শহরে। কুফিক উপজাতি যারা হজরত মুহাম্মদ (দঃ) অনুসারী ছিল। কুফিক উপজাতির ওমর, ওসমান এবং আলী মহানবীর (সা:) অনুসারী ছিলেন। কোরআন প্রথম লিপিবদ্ধ হয় খেজুর পাতায়, তার কিছুকাল আগে কাগজে লিখিত হয়েছিল। এ ধরনের পাণ্ডুলিপি থুলুত (ঞযঁষঁঃয) এবং নাসকি (ঘধংশযর) নামে পরিচিত ছিল। কুফিক পাণ্ডুলিপি খলিফা মেহমুদ বিন মনসুরের সময়কালের।
থুলুত ও নাসকিতে অনেকটা পরিবর্তন আসে। এসব পাণ্ডুলিপির বিষয়ে ইসাক বিন হাম্মাদ নামে একজন নকশাবিদ আভেলের (অযাধষ) কাছ থেকে ১৪ শতাব্দির প্রথমার্ধে হিজিরা পাণ্ডুলিপি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। ৬২৩ হিজরিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর আলী বিন হেলাল বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তিনি ইবনে বেভারের অধস্তন ছিলেন। একই সময়ে ক্যালিগ্রাফিতে রোহানি এবং মোহাক্কাক পাণ্ডুলিপির উন্নয়ন ঘটান। এর মধ্যে পাণ্ডুলিপির সেসব বিষয় সম্পৃক্ত ছিল। তখন পারসিকরা তালিফ ক্যালিগ্রাফির উন্নয়ন ঘটায়। কুফিক এবং পেহেলভি পাণ্ডুলিপি তখন ইরানে প্রচলিত ছিল, যা হোকাইরো আল নামে পরিচিত ছিল ক্যালিওগ্রাফারদের মধ্যে।
তত্সত্ত্বেও বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফা কামালউদ্দিন ইয়াকুত মোস্তাসামি এলমাসতার একজন ক্রীতদাস ছিলেন। তিনি ক্যালিগ্রাফিকে একটি সূক্ষ্মতার পর্যায়ে নিয়ে যান। তত্কালীন ক্যালিগ্রাফার হিসেবে তার খ্যাতি সপ্তম শতাব্দীতে আরববিশ্বে ছড়িয়ে পরে। ৯৯৮ হিজরিতে (১২৮০ খ্রিস্টাব্দ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনিই প্রথম ক্যালিগ্রাফার যিনি খাগজাতীয় কলমের সাহায্যে অক্ষরের নান্দনিক রূপ ফুটিয়ে তোলেন। তিনিই ছিলেন সে সময়ের সূক্ষ্মতর ক্যালিগ্রাফার।
তাঁর অনেক সঙ্গী ছিলেন। এদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইরগুন, নাসিরউদ্দীন মোতা, তাপরিপ, মোবারক শাহকুতুব, ইউসুফ খোরসান, মীর হায়দার, আহমদ সোহরাওয়ার্দী এবং আবদুল্লাহ শরীফ—এরা সবাই বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ছিলেন।
ফতেহর সময়কার সবচেয়ে সুন্দর ক্যালিগ্রাফি দেখা যায় জেলি থুলুত পাণ্ডুলিপিতে ‘বাবে হুমায়ুন’ প্রাসাদের বাইরের অংশে। তোপাকাপু জাদুঘর ইস্তাম্বুলে প্রথম দরজার প্যানেলে এই কাজটি অত্যন্ত খ্যাতিমান। আলী সুফি করেছিলেন। তিনি ছিলেন আবদুল্লাহ সাইয়েফির ছাত্র।
পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে ইস্তাম্বুল নতুন রাজধানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ‘আনাতোলিয়ান আমিরাত’ এবং সালজুক রাজ্য ক্যালিগ্রাফির অত্যন্ত উন্নত মানের কেন্দ্র ছিল। শেখ হামিদুল্লাহ ১৪৩৬ থেকে ১৫২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুলতান বায়োজিদ দ্বিতীয় নতুন ধারার ক্যালিগ্রাফির স্টাইল তৈরির চেষ্টা চালান। থুলুত, নকশি এবং মোহাক্কাক ধারার কাছাকাছি ছিল তাদের ক্যালিগ্রাফির কাজ। তাছাড়া ইয়াকুত এবং অন্য সদস্যরা একই স্কুলের ছাত্র।
শেখ হামিদুল্লাহ আমাসিয়ার প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি দীক্ষা নিয়েছিলেন থুলুত ও নকশি ক্যালিগ্রাফার মারসার হাইরোদ্দিনের কাছ থেকে। ইয়াকুত স্কুল অব ক্যালিগ্রাফির সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তার এই নান্দনিক কর্ম বায়োজিদের রাজকুমার শেহজাদকে আকৃষ্ট করেছিল। সে সময় শেহজাদ আমাসিয়ার গভর্নর ছিলেন। শেহজাদ তার ছেলেকে ক্যালিগ্রাফি শিক্ষার জন্য শেখ হামিদুল্লাহর কাছে পাঠিয়েছিলেন। বায়োজিদের পরে শেহজাদ সুলতান হন। তিনি ক্যালিওগ্রাফারকে দাওয়াত দেন মসজিদের দেয়ালে ক্যালিগ্রাফি করার জন্য, যাতে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে।
শেখ হামিদুল্লাহ যখন ইস্তাম্বুলে, তিনি নতুন ক্যালিগ্রাফির স্কুল চালু করেন। এ সময় সুলতানের ব্যক্তিগত সংগৃহীত ক্যালিগ্রাফিগুলো শেখ হামিদুল্লাহকে প্রদান করেন এবং এগুলো নতুন করে অঙ্কনের জন্য অনুরোধ জানান। এখানে ছয় ধরনের ক্যালিগ্রাফি ছিল। হামিদুল্লাহ এগুলো হুবহু সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।
তুরস্কের তোপাকাপু রাজপ্রাসাদে শেখ হামিদুল্লাহর ক্যালিগ্রাফিগুলো সংরক্ষিত আছে। যেগুলো থুলুত, নকশি মোহাক্কাক রিকা, তিভকি এবং ডিভানি পাণ্ডুলিপির ধারায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে কোরআনে অলঙ্কৃত করা হয়েছে, যা ১৬ শতাব্দীর ক্যালিগ্রাফির স্কুলগুলোতে দেখতে পাই। শেখ হামিদুল্লাহর ‘কিবলাতুল কুতুব’-এ এর অপূর্ব সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। এসব পাণ্ডুলিপির স্কুলগুলোতে নকশি ক্যালিগ্রাফিতে হাজার হাজার বই রচনা করা হতো, যা এখন লাইব্রেরি ও জাদুঘরে পাওয়া যায়।
একই সময়ে বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফির মাস্টার আহমদ কোরাইশি (১৪৬৮-১৫৫৬) ক্যালিগ্রাফিতে নতুন স্টাইলের সূচনা করেন, যা সম্পূর্ণভাবে আলাদা। কোরাইশির ক্যালিগ্রাফিতে আসাদুল্লাহ কিরমানির প্রাধান্য ছিল, যার মধ্যে ইয়াহিয়া সুফির বিষয়বস্তু পরিলক্ষিত হয়। ইয়াকুত স্কুলে এসব বিষয় প্রচলিত ছিল। পরে কোরাইশির ছেলে হাসান সেলেবি এটি অনুসরণ করেছিলেন।
কোরাইশি তত্কালীন সময়ের খ্যাতিমান ক্যালিগ্রাফার ছিলেন। তাঁর দু’টি অত্যন্ত সুন্দর ক্যালিগ্রাফি কোরআন শরিফে শোভা পাচ্ছে—একটি একটু বড় অন্যটি মধ্যম সাইজের, যেগুলো তোপাকাপু জাদুঘরে রক্ষিত আছে। এই বড় আকৃতির কোরআন মোহাক্কাক থুলুত, নকশি এবং রেহানি ধারায় করা হয়েছে। প্রতিটি পৃষ্ঠা সজ্জিত করা হয়েছে চারটি কোশতোকের মাধ্যমে। কোরআন মূলত অত্যন্ত সূক্ষ্ম ক্যালিগ্রাফিতে রচিত হয়েছে, যার নকশা অতি উজ্জ্বল হয়ে আমাদের সম্মুখে বিদ্যমান।
অটোমান সাম্রাজ্যের আমলে মসজিদ, প্রাসাদ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ক্যালিগ্রাফির মাস্টারদের নান্দনিক শিল্পকর্ম এখনও শোভা পাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে এই ক্যালিগ্রাফির স্কুলগুলোর সমাপ্তি ঘটে, তথাপি ‘ডেমিরচি কুলু ইউসুফের ক্যালিগ্রাফি’ ফিলিক আলপাশা ও মসজিদে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে শোভা পাচ্ছে।
শেখ হামিদুল্লাহর এই অসাধারণ নান্দনিক ক্যালিগ্রাফিগুলো অতি উজ্জ্বল হয়ে বর্তমান পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকবে। এই বিখ্যাত তুর্কি ক্যালিগ্রাফার সে স্কুলের সূচনা করে গেছেন। ক্যালিগ্রাফিগুলো এতই সুন্দর যে, সারাবিশ্বে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল।
হামিদুল্লাহর ধারা যেসব ক্যালিগ্রাফার অনুসরণ করেছেন, তারা হলেন—শেখ হামিদুল্লাহর ছেলে মুস্তফা ডেট, তার পালকপুত্র শুকরুল্লা হেলিথ, তার পৌত্র দারভিস মুহাম্মদ সাইদ, মুহাম্মদ ডেট, আবদুল্লাহ কিরমানি, হাসান স্কুদারি, হালিদ ইরজুরমি, মেহমুদ বিগরেদি, দারবিশ আল ইসকি, স্থাল জোদি, হোসেইন হাবলি এবং মোস্তফা কোথাই।
তুর্কি ক্যালিগ্রাফির আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হাফিজ ওসমানের। তিনি নকশি ক্যালিগ্রাফিকে অত্যন্ত সূক্ষ্মতায় পৌঁছে দেন, যার নাম ‘সোহসেনি’ বলে পরিচিত।
১২ শতাব্দীর শেষে এবং ১৩ শতাব্দীর পুরো সময় হাগিরায় অনেক ক্যালিগ্রাফারের আগমন ঘটেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় যেমন—থুলুত, জেল থুলুত। নকশি ধারায় খ্যাতিমান হলেন—কাতিব জেদ মোহাম্মদ, রফি রোদিশ ইব্রাহিম, আবু বাকের রশিদ কনিয়ার, সরাই হোকেসি ইউসুফ, শেখের জেদ মাহমুদ শফিক, মুহসীন জেদ আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ জোদাই, ভাদেতি, আসাদ ইয়াসারি, ইয়াসির জেদ মুসতবাইজ্জত, ইয়াহিয়া ইলমি এবং মোহাম্মদ শেরকি। তুরস্কের নানা মসজিদে এবং অন্যান্য স্থাপনায়, ডোমে ও দরজায় এদের কাজগুলো শোভা পাচ্ছে।
অটোমানরা বিভিন্ন কারণে তালিক ধারার বিরোধিতা করলেও ইরানিয়ান তালিক ধারাকে সম্মানের চোখে দেখত। তালিক ধারার সামান্য কিছু পরিবর্তন করে ‘কাতিবজাদ’ মোহাম্মদ রফি এবং পরে ইয়াসিরি অটোমানদের সময়ে প্রচলিত ছিল। মোহাম্মদ আসাদ ইয়াসিরি, মোস্তফা ইজ্জত ইয়াফেন্দির পুত্র পিতার ধারাকে অনুসরণ করেন, যিনি তালিত পাণ্ডুলিপির মাস্টার ছিলেন। পিতা ও পুত্র মিলে ইস্তাম্বুলের অনেক স্থাপনায়, মসজিদের দরজায়, ছাদে, ঝরনায় এবং স্কুলে পাথরে খোদাই করে অনেক ক্যালিগ্রাফি চিত্রিত করেছেন।
তুরস্কে তালিত ক্যালিগ্রাফির উন্নয়ন তাঁরাই ঘটিয়েছিলেন। এই বিখ্যাত ক্যালিওগ্রাফাররা ছিলেন সেমি এফেনডিক ধারার। কামাল বাতেনি, নাজমুদ্দিন এফেনডি এবং হুলুসি এফেনডি ছিলেন জেলি থুলুত ধারার মাস্টার।
থুলুত ও নকশি পাণ্ডুলিপির উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার মোস্তফা রাকিম, যা তিনি শিখেছিলেন সেভকি এফেন্দিসের কাছ থেকে। অন্য একজন বিখ্যাত তুর্কি ক্যালিগ্রাফার হাসান লেলেবির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, যার নাম হামিদ আতিক। বর্তমানের শ্রেষ্ঠ ক্যালিওগ্রাফার। ১৯৮২ সালে তিনি মারা যান। তুর্কি ক্যালিগ্রাফিতে একটি ধারাবাহিক উন্নতির ছাপ আমরা দেখতে পাই। যেমন—জিভানি, সিয়াকাত, টেডকি এবং রিকা অধিকাংশই তৈরি করা হয়েছে বছরব্যাপী। প্রতিটি ক্যালিগ্রাফি উপস্থাপিত হয়েছে সৌন্দর্য ও দক্ষতার সঙ্গে।
তুর্কি ক্যালিগ্রাফি নিঃসন্দেহে উত্সাহ জুগিয়েছে অন্যান্য ভাষার ক্যালিগ্রাফি নির্মাণের ক্ষেত্রে, যেমন—আরবি, ফার্সি, উর্দু ও অন্যান্য ভাষার ক্ষেত্রে। তুর্কি সুলতানদের ক্যালিগ্রাফির প্রতি দুর্বলতার সুযোগ ক্যালিওগ্রাফাররা পুরোপুরি গ্রহণ করেছে চিত্রকলা, সাজসজ্জা ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রেও।
অটোমান সম্রাটরা ক্যালিওগ্রাফারদের সহযোগিতা দিয়েছেন, যার ফলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসকরাও এ বিষয়ে শিক্ষিত হয়েছিলেন। অটোমান সুলতান শিল্পকলা ও ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তিনি ক্যালিওগ্রাফারদের সম্মানের চোখে দেখতেন। বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার শেখ হামাদউল্লাহকে সাধারণ মানুষ শিক্ষক হিসেবে জানতেন।
সুলতান আহমেদ প্রথম এবং মাহমুদ দ্বিতীয় উভয়ে মোস্তফা রাকিমকে দক্ষ ক্যালিগ্রাফারের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
ক্যালিগ্রাফি প্রাচীন লেখার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অংশ। কিছু কিছু দেশ, যেমন চীন ক্যালিগ্রাফিকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটিকে শিল্পের চেয়েও বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে।
পৃথিবীর নানা দেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চা আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত চলে আসছে, যেমন—বাংলা, ইংরেজি, আরবি এবং ফার্সি ভাষাসহ পৃথিবীর নানা ভাষায়। তুর্কি, আরবি এবং ফার্সি ভাষায় যতটা সাবলীল ক্যালিগ্রাফির চর্চা লক্ষণীয়, অন্য ভাষায় ততটা নয়। বিশেষ করে কোরআন রচনার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।
কোরআন নাজেল হয়েছিল মক্কায়, পাঠ করা হয়েছে মিসরে আর লিখিত হয়েছে ইস্তাম্বুলে দশম শতাব্দীতে। তখন তুর্কিরা পশ্চিমের দিকে ধাবিত হচ্ছিল, যা ছিল তাদের নিজস্ব আবাসভূমি। জায়গাটি ছিল উত্তর-পশ্চিম চীন অঞ্চলে। তারা মূলত তুর্কিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে যায় ইসলামী বিশ্বের সঙ্গে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। তুর্কিদের ধর্মান্তরিত হওয়া ছিল স্থান পরিবর্তনের মূল কারণ, যার ফলে উইঘোর অক্ষর তারা গ্রহণ করেছিল। আরবি পাণ্ডুলিপিতে ১৯২৮ সালের আগে প্রায় এক হাজার বছর তুর্কি অক্ষর প্রচলিত ছিল, যার মধ্যে এক ধরনের নান্দনিকতা লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া আরবি অক্ষরগুলো নানারকম ফর্মে পরিবর্তন করে উপস্থাপন করা হয়।
তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যের আমলে বিভিন্ন আঙ্গিকে এই আরবি অক্ষরগুলোকে বিন্যস্ত করা হয়। এসব অক্ষর নান্দনিক এবং আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মে বিস্তৃতি ঘটায় অটোমানরা ।
প্রাচীনকালে আরবদের পাণ্ডুলিপির পঞ্চাশ বছর পেছনে গেলে দেখা যাবে, হিজিরা (ঐবমরত্ধ) পদ্ধতিতে পাণ্ডুলিপি লেখা হতো সম্ভবত ৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে। এসব লেখার ফর্ম ছিল প্রাচীন সিরীয় পাণ্ডুলিপির আদলে, যা (ঘধনধঃর) নবতি পাণ্ডুলিপির ধারা।
ইসলামের বিকাশের সময়কালে আরবি অক্ষরের আদল পুরনো সিরীয় আদলের কিছুটা পরিবর্তন ঘটিয়ে ব্যবহার করতে শুরু হয়। এই অক্ষরগুলো কুফিক হিসাবে পরিচিত। এই অক্ষর প্রথম ব্যবহৃত হয় ইরাকের কুফা শহরে। কুফিক উপজাতি যারা হজরত মুহাম্মদ (দঃ) অনুসারী ছিল। কুফিক উপজাতির ওমর, ওসমান এবং আলী মহানবীর (সা:) অনুসারী ছিলেন। কোরআন প্রথম লিপিবদ্ধ হয় খেজুর পাতায়, তার কিছুকাল আগে কাগজে লিখিত হয়েছিল। এ ধরনের পাণ্ডুলিপি থুলুত (ঞযঁষঁঃয) এবং নাসকি (ঘধংশযর) নামে পরিচিত ছিল। কুফিক পাণ্ডুলিপি খলিফা মেহমুদ বিন মনসুরের সময়কালের।
থুলুত ও নাসকিতে অনেকটা পরিবর্তন আসে। এসব পাণ্ডুলিপির বিষয়ে ইসাক বিন হাম্মাদ নামে একজন নকশাবিদ আভেলের (অযাধষ) কাছ থেকে ১৪ শতাব্দির প্রথমার্ধে হিজিরা পাণ্ডুলিপি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। ৬২৩ হিজরিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর আলী বিন হেলাল বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তিনি ইবনে বেভারের অধস্তন ছিলেন। একই সময়ে ক্যালিগ্রাফিতে রোহানি এবং মোহাক্কাক পাণ্ডুলিপির উন্নয়ন ঘটান। এর মধ্যে পাণ্ডুলিপির সেসব বিষয় সম্পৃক্ত ছিল। তখন পারসিকরা তালিফ ক্যালিগ্রাফির উন্নয়ন ঘটায়। কুফিক এবং পেহেলভি পাণ্ডুলিপি তখন ইরানে প্রচলিত ছিল, যা হোকাইরো আল নামে পরিচিত ছিল ক্যালিওগ্রাফারদের মধ্যে।
তত্সত্ত্বেও বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফা কামালউদ্দিন ইয়াকুত মোস্তাসামি এলমাসতার একজন ক্রীতদাস ছিলেন। তিনি ক্যালিগ্রাফিকে একটি সূক্ষ্মতার পর্যায়ে নিয়ে যান। তত্কালীন ক্যালিগ্রাফার হিসেবে তার খ্যাতি সপ্তম শতাব্দীতে আরববিশ্বে ছড়িয়ে পরে। ৯৯৮ হিজরিতে (১২৮০ খ্রিস্টাব্দ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনিই প্রথম ক্যালিগ্রাফার যিনি খাগজাতীয় কলমের সাহায্যে অক্ষরের নান্দনিক রূপ ফুটিয়ে তোলেন। তিনিই ছিলেন সে সময়ের সূক্ষ্মতর ক্যালিগ্রাফার।
তাঁর অনেক সঙ্গী ছিলেন। এদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইরগুন, নাসিরউদ্দীন মোতা, তাপরিপ, মোবারক শাহকুতুব, ইউসুফ খোরসান, মীর হায়দার, আহমদ সোহরাওয়ার্দী এবং আবদুল্লাহ শরীফ—এরা সবাই বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ছিলেন।
ফতেহর সময়কার সবচেয়ে সুন্দর ক্যালিগ্রাফি দেখা যায় জেলি থুলুত পাণ্ডুলিপিতে ‘বাবে হুমায়ুন’ প্রাসাদের বাইরের অংশে। তোপাকাপু জাদুঘর ইস্তাম্বুলে প্রথম দরজার প্যানেলে এই কাজটি অত্যন্ত খ্যাতিমান। আলী সুফি করেছিলেন। তিনি ছিলেন আবদুল্লাহ সাইয়েফির ছাত্র।
পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে ইস্তাম্বুল নতুন রাজধানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ‘আনাতোলিয়ান আমিরাত’ এবং সালজুক রাজ্য ক্যালিগ্রাফির অত্যন্ত উন্নত মানের কেন্দ্র ছিল। শেখ হামিদুল্লাহ ১৪৩৬ থেকে ১৫২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুলতান বায়োজিদ দ্বিতীয় নতুন ধারার ক্যালিগ্রাফির স্টাইল তৈরির চেষ্টা চালান। থুলুত, নকশি এবং মোহাক্কাক ধারার কাছাকাছি ছিল তাদের ক্যালিগ্রাফির কাজ। তাছাড়া ইয়াকুত এবং অন্য সদস্যরা একই স্কুলের ছাত্র।
শেখ হামিদুল্লাহ আমাসিয়ার প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি দীক্ষা নিয়েছিলেন থুলুত ও নকশি ক্যালিগ্রাফার মারসার হাইরোদ্দিনের কাছ থেকে। ইয়াকুত স্কুল অব ক্যালিগ্রাফির সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তার এই নান্দনিক কর্ম বায়োজিদের রাজকুমার শেহজাদকে আকৃষ্ট করেছিল। সে সময় শেহজাদ আমাসিয়ার গভর্নর ছিলেন। শেহজাদ তার ছেলেকে ক্যালিগ্রাফি শিক্ষার জন্য শেখ হামিদুল্লাহর কাছে পাঠিয়েছিলেন। বায়োজিদের পরে শেহজাদ সুলতান হন। তিনি ক্যালিওগ্রাফারকে দাওয়াত দেন মসজিদের দেয়ালে ক্যালিগ্রাফি করার জন্য, যাতে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে।
শেখ হামিদুল্লাহ যখন ইস্তাম্বুলে, তিনি নতুন ক্যালিগ্রাফির স্কুল চালু করেন। এ সময় সুলতানের ব্যক্তিগত সংগৃহীত ক্যালিগ্রাফিগুলো শেখ হামিদুল্লাহকে প্রদান করেন এবং এগুলো নতুন করে অঙ্কনের জন্য অনুরোধ জানান। এখানে ছয় ধরনের ক্যালিগ্রাফি ছিল। হামিদুল্লাহ এগুলো হুবহু সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।
তুরস্কের তোপাকাপু রাজপ্রাসাদে শেখ হামিদুল্লাহর ক্যালিগ্রাফিগুলো সংরক্ষিত আছে। যেগুলো থুলুত, নকশি মোহাক্কাক রিকা, তিভকি এবং ডিভানি পাণ্ডুলিপির ধারায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে কোরআনে অলঙ্কৃত করা হয়েছে, যা ১৬ শতাব্দীর ক্যালিগ্রাফির স্কুলগুলোতে দেখতে পাই। শেখ হামিদুল্লাহর ‘কিবলাতুল কুতুব’-এ এর অপূর্ব সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। এসব পাণ্ডুলিপির স্কুলগুলোতে নকশি ক্যালিগ্রাফিতে হাজার হাজার বই রচনা করা হতো, যা এখন লাইব্রেরি ও জাদুঘরে পাওয়া যায়।
একই সময়ে বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফির মাস্টার আহমদ কোরাইশি (১৪৬৮-১৫৫৬) ক্যালিগ্রাফিতে নতুন স্টাইলের সূচনা করেন, যা সম্পূর্ণভাবে আলাদা। কোরাইশির ক্যালিগ্রাফিতে আসাদুল্লাহ কিরমানির প্রাধান্য ছিল, যার মধ্যে ইয়াহিয়া সুফির বিষয়বস্তু পরিলক্ষিত হয়। ইয়াকুত স্কুলে এসব বিষয় প্রচলিত ছিল। পরে কোরাইশির ছেলে হাসান সেলেবি এটি অনুসরণ করেছিলেন।
কোরাইশি তত্কালীন সময়ের খ্যাতিমান ক্যালিগ্রাফার ছিলেন। তাঁর দু’টি অত্যন্ত সুন্দর ক্যালিগ্রাফি কোরআন শরিফে শোভা পাচ্ছে—একটি একটু বড় অন্যটি মধ্যম সাইজের, যেগুলো তোপাকাপু জাদুঘরে রক্ষিত আছে। এই বড় আকৃতির কোরআন মোহাক্কাক থুলুত, নকশি এবং রেহানি ধারায় করা হয়েছে। প্রতিটি পৃষ্ঠা সজ্জিত করা হয়েছে চারটি কোশতোকের মাধ্যমে। কোরআন মূলত অত্যন্ত সূক্ষ্ম ক্যালিগ্রাফিতে রচিত হয়েছে, যার নকশা অতি উজ্জ্বল হয়ে আমাদের সম্মুখে বিদ্যমান।
অটোমান সাম্রাজ্যের আমলে মসজিদ, প্রাসাদ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ক্যালিগ্রাফির মাস্টারদের নান্দনিক শিল্পকর্ম এখনও শোভা পাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে এই ক্যালিগ্রাফির স্কুলগুলোর সমাপ্তি ঘটে, তথাপি ‘ডেমিরচি কুলু ইউসুফের ক্যালিগ্রাফি’ ফিলিক আলপাশা ও মসজিদে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে শোভা পাচ্ছে।
শেখ হামিদুল্লাহর এই অসাধারণ নান্দনিক ক্যালিগ্রাফিগুলো অতি উজ্জ্বল হয়ে বর্তমান পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকবে। এই বিখ্যাত তুর্কি ক্যালিগ্রাফার সে স্কুলের সূচনা করে গেছেন। ক্যালিগ্রাফিগুলো এতই সুন্দর যে, সারাবিশ্বে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল।
হামিদুল্লাহর ধারা যেসব ক্যালিগ্রাফার অনুসরণ করেছেন, তারা হলেন—শেখ হামিদুল্লাহর ছেলে মুস্তফা ডেট, তার পালকপুত্র শুকরুল্লা হেলিথ, তার পৌত্র দারভিস মুহাম্মদ সাইদ, মুহাম্মদ ডেট, আবদুল্লাহ কিরমানি, হাসান স্কুদারি, হালিদ ইরজুরমি, মেহমুদ বিগরেদি, দারবিশ আল ইসকি, স্থাল জোদি, হোসেইন হাবলি এবং মোস্তফা কোথাই।
তুর্কি ক্যালিগ্রাফির আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হাফিজ ওসমানের। তিনি নকশি ক্যালিগ্রাফিকে অত্যন্ত সূক্ষ্মতায় পৌঁছে দেন, যার নাম ‘সোহসেনি’ বলে পরিচিত।
১২ শতাব্দীর শেষে এবং ১৩ শতাব্দীর পুরো সময় হাগিরায় অনেক ক্যালিগ্রাফারের আগমন ঘটেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় যেমন—থুলুত, জেল থুলুত। নকশি ধারায় খ্যাতিমান হলেন—কাতিব জেদ মোহাম্মদ, রফি রোদিশ ইব্রাহিম, আবু বাকের রশিদ কনিয়ার, সরাই হোকেসি ইউসুফ, শেখের জেদ মাহমুদ শফিক, মুহসীন জেদ আবদুল্লাহ, আবদুল্লাহ জোদাই, ভাদেতি, আসাদ ইয়াসারি, ইয়াসির জেদ মুসতবাইজ্জত, ইয়াহিয়া ইলমি এবং মোহাম্মদ শেরকি। তুরস্কের নানা মসজিদে এবং অন্যান্য স্থাপনায়, ডোমে ও দরজায় এদের কাজগুলো শোভা পাচ্ছে।
অটোমানরা বিভিন্ন কারণে তালিক ধারার বিরোধিতা করলেও ইরানিয়ান তালিক ধারাকে সম্মানের চোখে দেখত। তালিক ধারার সামান্য কিছু পরিবর্তন করে ‘কাতিবজাদ’ মোহাম্মদ রফি এবং পরে ইয়াসিরি অটোমানদের সময়ে প্রচলিত ছিল। মোহাম্মদ আসাদ ইয়াসিরি, মোস্তফা ইজ্জত ইয়াফেন্দির পুত্র পিতার ধারাকে অনুসরণ করেন, যিনি তালিত পাণ্ডুলিপির মাস্টার ছিলেন। পিতা ও পুত্র মিলে ইস্তাম্বুলের অনেক স্থাপনায়, মসজিদের দরজায়, ছাদে, ঝরনায় এবং স্কুলে পাথরে খোদাই করে অনেক ক্যালিগ্রাফি চিত্রিত করেছেন।
তুরস্কে তালিত ক্যালিগ্রাফির উন্নয়ন তাঁরাই ঘটিয়েছিলেন। এই বিখ্যাত ক্যালিওগ্রাফাররা ছিলেন সেমি এফেনডিক ধারার। কামাল বাতেনি, নাজমুদ্দিন এফেনডি এবং হুলুসি এফেনডি ছিলেন জেলি থুলুত ধারার মাস্টার।
থুলুত ও নকশি পাণ্ডুলিপির উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার মোস্তফা রাকিম, যা তিনি শিখেছিলেন সেভকি এফেন্দিসের কাছ থেকে। অন্য একজন বিখ্যাত তুর্কি ক্যালিগ্রাফার হাসান লেলেবির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, যার নাম হামিদ আতিক। বর্তমানের শ্রেষ্ঠ ক্যালিওগ্রাফার। ১৯৮২ সালে তিনি মারা যান। তুর্কি ক্যালিগ্রাফিতে একটি ধারাবাহিক উন্নতির ছাপ আমরা দেখতে পাই। যেমন—জিভানি, সিয়াকাত, টেডকি এবং রিকা অধিকাংশই তৈরি করা হয়েছে বছরব্যাপী। প্রতিটি ক্যালিগ্রাফি উপস্থাপিত হয়েছে সৌন্দর্য ও দক্ষতার সঙ্গে।
তুর্কি ক্যালিগ্রাফি নিঃসন্দেহে উত্সাহ জুগিয়েছে অন্যান্য ভাষার ক্যালিগ্রাফি নির্মাণের ক্ষেত্রে, যেমন—আরবি, ফার্সি, উর্দু ও অন্যান্য ভাষার ক্ষেত্রে। তুর্কি সুলতানদের ক্যালিগ্রাফির প্রতি দুর্বলতার সুযোগ ক্যালিওগ্রাফাররা পুরোপুরি গ্রহণ করেছে চিত্রকলা, সাজসজ্জা ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রেও।
অটোমান সম্রাটরা ক্যালিওগ্রাফারদের সহযোগিতা দিয়েছেন, যার ফলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসকরাও এ বিষয়ে শিক্ষিত হয়েছিলেন। অটোমান সুলতান শিল্পকলা ও ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তিনি ক্যালিওগ্রাফারদের সম্মানের চোখে দেখতেন। বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার শেখ হামাদউল্লাহকে সাধারণ মানুষ শিক্ষক হিসেবে জানতেন।
সুলতান আহমেদ প্রথম এবং মাহমুদ দ্বিতীয় উভয়ে মোস্তফা রাকিমকে দক্ষ ক্যালিগ্রাফারের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন