আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ সালে। তিনি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেছেন। কী অসাধারণ প্রতিভাবান এক উজ্জ্বল পুরুষ। কী কবিতায়, কী গদ্যে, কী শিশুতোষ রচনায়Ñ সকল েেত্রই তিনি ছিলেন সফল। নজরুলের তুলনা এই উপমহাদেশে কেন, গোটা বিশ্ব সাহিত্যে বিরল। আজকে আমরা এই মহান কবির কিছু শিশুতোষ কবিতার সাথে পরিচিত হব। দেখবো, তিনি কী অপরিসীম দরদ দিয়ে লিখে গেছেন আমাদের জন্য কত বিচিত্র ধরনের কবিতা। নজরুলের এ ধরনের কবিতার নাম করতে গেলেই প্রথমে মনে পড়বে তার ঝিঙে ফুল কবিতাটির কথা। কী চমৎকার শব্দ আর ছন্দে হেলে দুলে চলেছে কবিতাটি। ঠিক যেন নদীর ঢেউয়ের ওপর দিয়ে বয়ে চলা ফিরফিরে বাতাসের দোলা। কখনো মনে হয়, বহুরাঙা একটি আশ্চর্য ক্যানভাস। যেখানে সবুজ-শ্যামল প্রাকৃতিক দৃশ্য আছে, আছে আকাশ আর নানা বর্ণের ফুল ও পাখির মেলা। কী চমৎকার উচ্চারণে :
ঝিঙে ফুল! ঝিঙে ফুল!
সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ফিঙে কুল
ঝিঙে ফুল।
গুল্মে পর্ণে
লতিকার কর্ণে
ঢলঢল স্বর্ণে
ঝলমল দোলে দুল-
ঝিঙে ফুল! ঝিঙে ফুল!
সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ফিঙে কুল
ঝিঙে ফুল।
গুল্মে পর্ণে
লতিকার কর্ণে
ঢলঢল স্বর্ণে
ঝলমল দোলে দুল-
ঝিঙে ফুল।
পাতার দেশের পাখি বাঁধা হিয়া বোঁটাতে,
গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।
পউষের বেলা শেষ
পরি’ জাফরানী বেশ
মরা মাচানের দেশ
করে তোল মশগুল-
ঝিঙে ফুল।
আবার নজরুল ইসলামের খুকি ও কাঠবেরালি কবিতায় দেখি অন্য রকম মজা। এ যেন কবিতা নয়, নাটকের খেলা। এর প্রতিটি পঙক্তিতে ছড়িয়ে আছে শিশু মনের স্বপ্ন, আকাক্সা আর সংলাপ। আনন্দ, বেদনা, চাওয়া আর শিশু সুলভ খুনসুটিও আছে এখানে। ওই যেÑ
ডাইনী তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক।
বাতাবি লেবু সকলগুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
কিংবা-
পেয়ারা দেবে? যা তুই ওঁচা!
তাইতে তোর নাকটি বোঁচা!
হুতমো-চোখী! গাপুস গুপুস
একলাই খাও হাপুস হুপুস!
পেটে তোমার পিলে হবে! কুড়ি-কুষ্টি মুখে!
হেই ভগবান! একটা পোকা যাস পেটে ওর ঢুকে!
ইস! খেয়োনা মস্তপানা ঐ সে পাকাটাও!
আমিও খুবই পেয়ারা খাই যে! একটি আমায় দাও।
প্রথম, এই প্রথমই আমরা কেবল নজরুলের কবিতাতেই এ ধরনের নতুন শব্দ, উপমা আর নাটকীয় দৃশ্য উপভোগ করলাম। শিশুতোষ কবিতাÑতাও যে কত বিচিত্র ধরনের, বিচিত্র ঢঙ-এর হতে পারে, তা নজরুলের কবিতা পড়লেই কেবল বুঝা যায়। তার কবিতায় রসিকতাও আছে। ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপও আছে। দুষ্টুমিও আছে বৈকি! খোকার খুশিটা সামনে রাখি একটু!-
সত্যি, কও না মামা,
আমাদের অমনি জামা
অমনি মাধায় ধামা
দেবে না বিয়ে দিয়ে?
মামী মা আসলে এ ঘর
মোদেরও করবে আদর?
বাস, কি মজার খবর!
আমি রোজ করব বিয়ে।
মায়ের সাথেও তার দুষ্টুমির শেষ নেই। যেমন-
পাতার দেশের পাখি বাঁধা হিয়া বোঁটাতে,
গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।
পউষের বেলা শেষ
পরি’ জাফরানী বেশ
মরা মাচানের দেশ
করে তোল মশগুল-
ঝিঙে ফুল।
আবার নজরুল ইসলামের খুকি ও কাঠবেরালি কবিতায় দেখি অন্য রকম মজা। এ যেন কবিতা নয়, নাটকের খেলা। এর প্রতিটি পঙক্তিতে ছড়িয়ে আছে শিশু মনের স্বপ্ন, আকাক্সা আর সংলাপ। আনন্দ, বেদনা, চাওয়া আর শিশু সুলভ খুনসুটিও আছে এখানে। ওই যেÑ
ডাইনী তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক।
বাতাবি লেবু সকলগুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
কিংবা-
পেয়ারা দেবে? যা তুই ওঁচা!
তাইতে তোর নাকটি বোঁচা!
হুতমো-চোখী! গাপুস গুপুস
একলাই খাও হাপুস হুপুস!
পেটে তোমার পিলে হবে! কুড়ি-কুষ্টি মুখে!
হেই ভগবান! একটা পোকা যাস পেটে ওর ঢুকে!
ইস! খেয়োনা মস্তপানা ঐ সে পাকাটাও!
আমিও খুবই পেয়ারা খাই যে! একটি আমায় দাও।
প্রথম, এই প্রথমই আমরা কেবল নজরুলের কবিতাতেই এ ধরনের নতুন শব্দ, উপমা আর নাটকীয় দৃশ্য উপভোগ করলাম। শিশুতোষ কবিতাÑতাও যে কত বিচিত্র ধরনের, বিচিত্র ঢঙ-এর হতে পারে, তা নজরুলের কবিতা পড়লেই কেবল বুঝা যায়। তার কবিতায় রসিকতাও আছে। ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপও আছে। দুষ্টুমিও আছে বৈকি! খোকার খুশিটা সামনে রাখি একটু!-
সত্যি, কও না মামা,
আমাদের অমনি জামা
অমনি মাধায় ধামা
দেবে না বিয়ে দিয়ে?
মামী মা আসলে এ ঘর
মোদেরও করবে আদর?
বাস, কি মজার খবর!
আমি রোজ করব বিয়ে।
মায়ের সাথেও তার দুষ্টুমির শেষ নেই। যেমন-
অ মা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং?
খ্যাঁদা নাকে নাচছে ন্যাদা-নাক ডেঙাডেং ড্যাং।
ওঁর নাকটাকে কে কবল খ্যাঁদা র্যাঁদা বুলিয়ে?
চামচিকে-ছা বসে যেন ন্যাজুড় ঝুলিয়ে!
বুড়ো গরুর টিকে যেন শুয়ে কোলা ব্যাং!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙাডেং ড্যাং!
[ খাদু-দাদু]
আবার এই নজরুলই দিদির বে’তে খোকার চোখের পানি আর বুকের কষ্টকে বাড়িয়ে তুলেছেন শতগুণে। কী অভূতপূর্ব এক হৃদয়স্পর্শী উচ্চারণ :
মনে হয়, মণ্ডা মেঠাই
খেয়ে জোর আয়েশ মেটাই!-
ভাল ছাই লাগছে না ভাই,
যাবি তুই একেলাটি!
দিদি, তুই সেথায় গিয়ে
যদি ভাই যাস ঘুমিয়ে,
জাগাব পরশ দিয়ে
রেখে যাস সোনার কাঠি।
খ্যাঁদা নাকে নাচছে ন্যাদা-নাক ডেঙাডেং ড্যাং।
ওঁর নাকটাকে কে কবল খ্যাঁদা র্যাঁদা বুলিয়ে?
চামচিকে-ছা বসে যেন ন্যাজুড় ঝুলিয়ে!
বুড়ো গরুর টিকে যেন শুয়ে কোলা ব্যাং!
অ মা! আমি হেসে মরি, ন্যাক ডেঙাডেং ড্যাং!
[ খাদু-দাদু]
আবার এই নজরুলই দিদির বে’তে খোকার চোখের পানি আর বুকের কষ্টকে বাড়িয়ে তুলেছেন শতগুণে। কী অভূতপূর্ব এক হৃদয়স্পর্শী উচ্চারণ :
মনে হয়, মণ্ডা মেঠাই
খেয়ে জোর আয়েশ মেটাই!-
ভাল ছাই লাগছে না ভাই,
যাবি তুই একেলাটি!
দিদি, তুই সেথায় গিয়ে
যদি ভাই যাস ঘুমিয়ে,
জাগাব পরশ দিয়ে
রেখে যাস সোনার কাঠি।
যে নজরুল মায়ের সাথে দুষ্টুমি করলেন, সেই নজরুলই আবার মাকে নিয়ে লিখলেন হৃদয় কাঁপানো এক বিখ্যাত কবিতা। নজরুলে ছাড়া এমন উচ্চারণ আর কোথায় আছে?Ñ
যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই!
হেরিলে মায়ের সুখ
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কতনা সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।
[মা]
মাকে আমরা প্রচণ্ড ভালোবাসি। ভালোবাসতেন নজরুলও। তাইতো তার কবিতায় ঘুরে-ফিরে মা এসেছেন-একেকভাবে, বিচিত্র অথচ বর্ণাঢ্য ভঙ্গিতে। খোকার বুদ্ধিতে মা আছেন। মা আছেন খোকার গপ্প বলাতেও। কিন্তু লণীয় বিষয় বটে, শিশুতোষ কবিতায় নজরুল যে পরিমাণ নতুন শব্দ, উপমা, সংলাপ আর নটাকীয়তা সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, আর কোনো কবির মধ্যে তেমনটি নেই। তার লিচুচোর, হোঁদল-কুঁৎকুঁতের বিজ্ঞাপন, ব্যাংফুলী, পিলে পটকা, চিঠি, প্রভৃতি কবিতাতেও এর স্বার রয়ে গেছে।
কাজী নজরুল ইসলাম ছোটদেরকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। তার ছিল ভালোবাসার মত একটি বিশাল হৃদয়। সাগরের মত। উদার আকাশের মত। সেই হৃদয়ে ছোটরা বাস করতো, হাসতো, খেলতো, মজা করতো আর দুলে উঠতো স্বপ্নদোলায়।
হ্যাঁ, নজরুলই তো ছোটদেরকে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছেন এভাবে :
থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে দেখবো এবার জগৎটাকে,-
কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে!
আমার সীমার বাঁধন টুটে
দশ দিকেতে পড়ব লুটে,
পাতাল ফেড়ে নামব নীচে, ওঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে,
বিশ্ব-জগৎ দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।
কিংবা-
আমরা শক্তি আমরা বল
আমরা ছাত্রদল,
মোদের পায়ের তলায় মূর্ছে তুফান
ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল।
আমরা ছাত্রদল ॥
মোদের আঁধার রাতে বাধার পথে
যাত্রা নাঙ্গা পায়,
আমরা শক্ত মাটি রক্তে রাঙাই
বিষম চলার ঘায়।
যুগে যুগে রক্তে মোদের
সিক্ত হল পৃথ্বিতল ॥
আমরা ছাত্রদল ॥
নজরুল, কবি নজরুল ইসলাম ছোটদেরকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সামনে চলার সাহস দেখিয়েছেন। তাদেরকে বুকে টেনে নিয়েছেন বড় মমতায়। কিশোর কাননে নজরুলের উপস্থিতি আর অবস্থান একজন প্রকৃত দরদী অভিভাবকের মতই। এজন্য তিনিও আমাদের হৃদয়ে মিশে আছেন গভীর শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায়। তিনি যে আমাদের কাছের কবি, হৃদয়ের কবি, আপন কবি পরম প্রিয়।
সুত্র : সাপ্তাহিক সোনার বাংলা
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন