সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে গেছে তো গেছেই। আসার নামটি পর্যন্ত নেই। গ্রামজুড়ে ভুতুড়ে অন্ধকার। জানালা দিয়ে খোলা আকাশ দেখা যায়। আকাশে অগুনতি তারা। কোনোটি জুঁই ফুলের মতো সাদা। কোনোটি একটু উজ্জ্বল।
আচ্ছা! এতো তারা আকাশে আসে কোত্থেকে। কীভাবেইবা সৃষ্টি তাদের! কাল বিজ্ঞান স্যার দূর আকাশের ওই তারা নিয়েই তো আলোচনা করবেন। অথচ আলোর অভাবে কিছুই পড়া হয়নি তার। কী যে হবে কাল? আবোল-তাবোল ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে বেলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র প্রদীপ্ত জামান। ডাক নাম শেলী।
'ওঠো শেলী, ওঠো!'
একটি নরম হাতের ছোঁয়ায় চোখ মেলে শেলী। সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক পরী। তার ডানায় অনেক তারা ঝিকমিক করছে। ঝিকিমিকি তারার আলোয় চোখ দুটো কেমন যেন ঝলসে যায় শেলীর। চমকে ওঠে সে।
'কী ভাবছো শেলী! আমাকে বসতে বলবে না,' পরী মিষ্টি করে হেসে বলে।
'বসতে তো বলব; কিন্তু তুমি কে? কোথা থেকে এসেছ তুমি?' বলে শেলী। 'আমি পরীরাজ্যের তারা সুন্দরী। থাকি দূরে, ওই তারার দেশে।' তারার দিকে হাত দেখিয়ে বলে পরী।
'তুমি কেন এসেছো এখানে?' শেলী জিজ্ঞাসা করে।
'বারে! তুমি না একটু আগে তারা নিয়ে ভাবছিলে?'
'হ্যাঁ, তা ভাবছিলাম। কিন্তু তুমি সে খবর জানলে কি করে?'
'জানব না? আমি তোমাদের মতো শিশুদের মনের খবর জানতে পারি।' মাথায় হাত বুলিয়ে বললো পরী সুন্দরী।
'তা, আমি তোমায় কি নামে ডাকবো?'
'পরীমা। পরীমা বলেই ডাকবে আমাকে!'
'সে-ই ভালো! আমি তোমাকে পরীমা বলেই ডাকবো। জানো পরীমা, আমি আমার মাকে কতদিন দেখি না। বাবা বলেন, মা নাকি ওই আকাশের তারাদের সঙ্গে মিশে গেছে। আচ্ছা তুমিই বলো, মানুষ কি কখনও আকাশের তারা হতে পারে?'
'কী জানি বাপু, অতোশতো বুঝি না। তবে আমি যে তোমার পরীমা, এটুকুই শুধু বুঝি। থাকগে, বাদ দাও ওসব কথা। এখন বলো, আকাশের ওই তারা নিয়ে তোমার কি কি প্রশ্ন আছে?'
'তারা সৃষ্টি হলো কীভাবে?' শেলী প্রশ্ন করে।
'গ্যাস আর ধুলার মেঘ দিয়েই তারকামণ্ডলীর সৃষ্টি। মহাশূন্যে আছে গ্যাস আর ধূলিকণার অসংখ্য মেঘ। গ্যাস আর ধূলিকণার এ মেঘ দিয়েই তৈরি হয়েছে এই তারা।'
'পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের তারা কোনটি পরীমা?'
'পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের যে তারাটি আমরা দেখতে পাই সেটিই তো সূর্য। আর সূর্যটাও জ্বলন্ত গ্যাসের আধার।' উত্তর দেয় পরী।
'সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা কোনটি?'
'সূর্য হচ্ছে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা। এ তারাটি পৃথিবীর অনেক কাছে।
তুমি কি বলতে পারো, আকাশে কত তারা আছে?'
রাতের আকাশ যখন খুবই পরিষ্কার থাকে তখন তুমি বড়জোর দুই হাজার তারা গুনতে পারো। পৃথিবীর সব দিক থেকে প্রায় ছয় হাজার তারা আমরা দেখতে পাই। অথচ মহাবিশ্বে লাখ লাখ কোটি কোটি তারা। সবচেয়ে আমাদের কাছে রয়েছে সূর্য। তাই এটিকে এতো বড় দেখা যায়। সূর্যের চেয়ে অনেক বড় তারা রয়েছে মহাকাশে। সেগুলো এতো দূরে যে, সাধারণ টেলিস্কোপের সাহায্যে তা দেখা যায় না।'
'দাঁড়াও পরীমা, দাঁড়াও। আমার মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে। শেলী বললো।'
'ও বুঝেছি! আমি খুব ভারী কথা বললাম, তাই তো! পরী বললো।'
শেলী আবার বলে, 'ঠিক আছে। তুমি শুরু করো। আমি রেডি।'
'সুপারনোভা নামে আরেক ধরনের তারা আছে। তা সব সময় দেখা যায় না। এই জ্বলে আর এই নেভে। শেষ সুপারনোভাটি দেখা গিয়েছিলো ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে।'
'বাব্বা! এতো কিছু জানো তুমি!' চোখ দুটো কপালে তুলে বললো শেলী।
'জানবো না? আমি তোমার মতো ঘুমকাতুরে নই! আমি সুযোগ পেলেই বই নিয়ে বসি। পরী বলল।
তোমাদের পরীরাজ্যে কি স্কুল-কলেজ আছে?
আছে না! ঢের আছে। তবে সেখানে ছাত্রছাত্রীরা দারুণ পড়ূয়া। আমার এখন ফেরার সময় হলো। আমি তবে যাই।
যেতে পার। তবে কথা দিতে হবে, আবার আসবে তুমি। আমাকে আদার করবে, পড়াবে। পরীর হাত দুটো ধরে শেলী বলল।
আসব। তবে তোমাকেও কথা দিতে হবে, তুমি ভালোভাবে পড়াশোনা করবে। কথা দিলাম। বলতেই বাবার ডাকে ঘুম ভেঙে যায় শেলীর।
পুবের জানালা দিয়ে তখন উঁকি দিচ্ছে সোনার থালার মতো ভোরের সূর্য।
এ সূর্যই তো আমাদের পৃথিবীর নিটকতম তারা। এই তারা আমাদের আলো দেয়, তাপ দেয়। স্বপ্ন দেখায় অন্ধকার থেকে আলোর পথে চলার।
আচ্ছা! এতো তারা আকাশে আসে কোত্থেকে। কীভাবেইবা সৃষ্টি তাদের! কাল বিজ্ঞান স্যার দূর আকাশের ওই তারা নিয়েই তো আলোচনা করবেন। অথচ আলোর অভাবে কিছুই পড়া হয়নি তার। কী যে হবে কাল? আবোল-তাবোল ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে বেলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র প্রদীপ্ত জামান। ডাক নাম শেলী।
'ওঠো শেলী, ওঠো!'
একটি নরম হাতের ছোঁয়ায় চোখ মেলে শেলী। সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক পরী। তার ডানায় অনেক তারা ঝিকমিক করছে। ঝিকিমিকি তারার আলোয় চোখ দুটো কেমন যেন ঝলসে যায় শেলীর। চমকে ওঠে সে।
'কী ভাবছো শেলী! আমাকে বসতে বলবে না,' পরী মিষ্টি করে হেসে বলে।
'বসতে তো বলব; কিন্তু তুমি কে? কোথা থেকে এসেছ তুমি?' বলে শেলী। 'আমি পরীরাজ্যের তারা সুন্দরী। থাকি দূরে, ওই তারার দেশে।' তারার দিকে হাত দেখিয়ে বলে পরী।
'তুমি কেন এসেছো এখানে?' শেলী জিজ্ঞাসা করে।
'বারে! তুমি না একটু আগে তারা নিয়ে ভাবছিলে?'
'হ্যাঁ, তা ভাবছিলাম। কিন্তু তুমি সে খবর জানলে কি করে?'
'জানব না? আমি তোমাদের মতো শিশুদের মনের খবর জানতে পারি।' মাথায় হাত বুলিয়ে বললো পরী সুন্দরী।
'তা, আমি তোমায় কি নামে ডাকবো?'
'পরীমা। পরীমা বলেই ডাকবে আমাকে!'
'সে-ই ভালো! আমি তোমাকে পরীমা বলেই ডাকবো। জানো পরীমা, আমি আমার মাকে কতদিন দেখি না। বাবা বলেন, মা নাকি ওই আকাশের তারাদের সঙ্গে মিশে গেছে। আচ্ছা তুমিই বলো, মানুষ কি কখনও আকাশের তারা হতে পারে?'
'কী জানি বাপু, অতোশতো বুঝি না। তবে আমি যে তোমার পরীমা, এটুকুই শুধু বুঝি। থাকগে, বাদ দাও ওসব কথা। এখন বলো, আকাশের ওই তারা নিয়ে তোমার কি কি প্রশ্ন আছে?'
'তারা সৃষ্টি হলো কীভাবে?' শেলী প্রশ্ন করে।
'গ্যাস আর ধুলার মেঘ দিয়েই তারকামণ্ডলীর সৃষ্টি। মহাশূন্যে আছে গ্যাস আর ধূলিকণার অসংখ্য মেঘ। গ্যাস আর ধূলিকণার এ মেঘ দিয়েই তৈরি হয়েছে এই তারা।'
'পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের তারা কোনটি পরীমা?'
'পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের যে তারাটি আমরা দেখতে পাই সেটিই তো সূর্য। আর সূর্যটাও জ্বলন্ত গ্যাসের আধার।' উত্তর দেয় পরী।
'সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা কোনটি?'
'সূর্য হচ্ছে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা। এ তারাটি পৃথিবীর অনেক কাছে।
তুমি কি বলতে পারো, আকাশে কত তারা আছে?'
রাতের আকাশ যখন খুবই পরিষ্কার থাকে তখন তুমি বড়জোর দুই হাজার তারা গুনতে পারো। পৃথিবীর সব দিক থেকে প্রায় ছয় হাজার তারা আমরা দেখতে পাই। অথচ মহাবিশ্বে লাখ লাখ কোটি কোটি তারা। সবচেয়ে আমাদের কাছে রয়েছে সূর্য। তাই এটিকে এতো বড় দেখা যায়। সূর্যের চেয়ে অনেক বড় তারা রয়েছে মহাকাশে। সেগুলো এতো দূরে যে, সাধারণ টেলিস্কোপের সাহায্যে তা দেখা যায় না।'
'দাঁড়াও পরীমা, দাঁড়াও। আমার মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে। শেলী বললো।'
'ও বুঝেছি! আমি খুব ভারী কথা বললাম, তাই তো! পরী বললো।'
শেলী আবার বলে, 'ঠিক আছে। তুমি শুরু করো। আমি রেডি।'
'সুপারনোভা নামে আরেক ধরনের তারা আছে। তা সব সময় দেখা যায় না। এই জ্বলে আর এই নেভে। শেষ সুপারনোভাটি দেখা গিয়েছিলো ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে।'
'বাব্বা! এতো কিছু জানো তুমি!' চোখ দুটো কপালে তুলে বললো শেলী।
'জানবো না? আমি তোমার মতো ঘুমকাতুরে নই! আমি সুযোগ পেলেই বই নিয়ে বসি। পরী বলল।
তোমাদের পরীরাজ্যে কি স্কুল-কলেজ আছে?
আছে না! ঢের আছে। তবে সেখানে ছাত্রছাত্রীরা দারুণ পড়ূয়া। আমার এখন ফেরার সময় হলো। আমি তবে যাই।
যেতে পার। তবে কথা দিতে হবে, আবার আসবে তুমি। আমাকে আদার করবে, পড়াবে। পরীর হাত দুটো ধরে শেলী বলল।
আসব। তবে তোমাকেও কথা দিতে হবে, তুমি ভালোভাবে পড়াশোনা করবে। কথা দিলাম। বলতেই বাবার ডাকে ঘুম ভেঙে যায় শেলীর।
পুবের জানালা দিয়ে তখন উঁকি দিচ্ছে সোনার থালার মতো ভোরের সূর্য।
এ সূর্যই তো আমাদের পৃথিবীর নিটকতম তারা। এই তারা আমাদের আলো দেয়, তাপ দেয়। স্বপ্ন দেখায় অন্ধকার থেকে আলোর পথে চলার।
সূত্র : সমকাল
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন