এক খুকির নাম টুসটুসি। খুব পুচ্চি খুকি। কেবল অ আ ক খ পড়ে। তার একটা বর্ণমালার বই আছে। বইটা খুব সুন্দর। পাতায় পাতায় রঙিন বর্ণমালা। রঙিন রঙিন ছবি। প্রজাপতির ছবি। পাখির ছবি। ফুলের ছবি। হাঁসের ছবি। গাছের ছবি। মাছের ছবি। আরও অনেক অনেক ছবি। জানালার পাশে বসে টুসটুসি বর্ণমালার বই পড়ে। প্রতিদিন। সকাল-বিকেল।
জানালার ওপাশেই একটি গোলাপের গাছ। গাছে সবুজ পাতা। পাতার ফাঁকে ফাঁকে টুকটুকে লাল ফুল। বাতাসে দোল খায়। মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। সেই গন্ধ জানালা দিয়ে এসে টুসটুসিকে ছুঁয়ে যায়। টুসটুসি পড়ে আর পাতার দিকে তাকায়। ফুলের দিকে তাকায়। কখনও কোনো কারণে যদি ওর মন খারাপ হয়, তাহলে ফুল-পাতার দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক চোখে। সঙ্গে সঙ্গে মনটা ভালো হয়ে যায় তার। এরপর মন রাখে বর্ণমালার বইয়ে। লেখার খাতায়।
একটা দোয়েল পাখি উড়ে এসে গোলাপ গাছে বসে। পাখা নাড়ে আর গান গায়। কিচমিচ, কিচিরমিচির। টুসটুসি অবাক হয়। এতো সুন্দর পাখি। মন ভোলানি তার গানের সুর। কিচমিচ, কিচিরমিচির। দোয়েলটার সঙ্গে ওর একসময় বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ও পড়তে বসলেই কোথা থেকে যেন পাখিটা উড়ে আসে। এসেই গান জুড়ে দেয়। টুসটুসি গান শোনে আর বইয়ের পাতা ওল্টায়।
হঠাৎ একদিন টুসটুসি দেখলো কি_ গোলাপ গাছের পাতায় একটা প্রজাপতি। হায়, হায়, কী সুন্দর ডানা! কী অপরূপ! রূপ তো নয়, যেন রঙের কারখানা। টুসটুসি ওটা দেখা মাত্রই চিনে ফেলে। ওটা প্রজাপতি। চেনার কারণ হলো, ওর বর্ণমালার বইয়েও ঠিক একই রকম একটা ছবি আছে। ছবির নিচে লেখা প-তে প্রজাপতি। ও দোয়েল পাখি দেখে যতোটা অবাক হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অবাক হলো প্রজাপতি দেখে। এমন জাদুমাখা রূপ যেন আর কারও নেই।
প্রজাপতিটাও গোলাপ গাছের পাতায় বসে থাকে। ফুলেও বসে। আর নাড়াচাড়া করে কোমল ডানা দুটি। মাঝে মধ্যে কোথায় যেন চলে যায় উড়তে উড়তে। একটু পর আবার আসে। টুসটুসি পড়তে বসলেই দোয়েলটা আসে। প্রজাপতিও আসে। ওরা হয়তো টুসটুসিকে ভীষণ ভালোবাসে। টুসটুসি তো মিষ্টি সুরে বর্ণমালা পড়ে। পড়া শুনতেও বুঝি ওরা খুব মজা পায়।
দোয়েল, প্রজাপতি ও টুসটুসি_ এই তিনজন এখন একে অপরের বন্ধু। কীভাবে এমন নিবিড় বন্ধুত্ব হলো, টুসটুসি ভেবে পায় না। তবে এটুকু বুঝতে পারে যে, দোয়েলের শিস না শুনলে, প্রজাপতির রূপ-ডানা দেখতে না পারলে ওর পড়ালেখাই হবে না।
কিন্তু একদিন একটা ঘটনা ঘটলো। টুসটুসির বাবা কেটে ফেললো গোলাপ গাছটা। কারণ ওই গাছটার জন্য নাকি জানালা দিয়ে পর্যাপ্ত বাতাস ঘরে ঢুকতে পারে না। টুসটুসি তো খুবই আদরের মেয়ে। টাটকা বাতাস না পেলে ওর মন ভালো থাকবে কী করে! মন ভালো না থাকলে তো পড়ালেখাও ভালো হবে না। ওকে নিয়ে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন। পড়ালেখা করে আলোয় আলোয় বড় হবে ও। মানুষ হবে। অনেক বড় মানুষ। ও যাতে ঠিকমতো আলো-বাতাস পায়, পড়ালেখায় যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্যই কেটে ফেলা হয়েছে গাছটি।
যে জন্য গাছ কাটা হলো, ঘটলো তার উল্টো। টুসটুসির এখন মন ভালো থাকে না একটুও। বইয়ের পাতায়, লেখায় মন বসে না। গোলাপ গাছটা কাটার পর থেকে দোয়েলটাও আসে না। প্রজাপতিটাও না। আসবে যে, বসবে কোথায়? দোয়েলটা এখন হয়তো দূরের কোনো গাছে বসে শিস কাটে। প্রজাপতিও চলে গেছে অন্য কোথাও। অন্য কোনো ফুল বাগানে। টুসটুসির এখন দোয়েল ও প্রজাপতির সঙ্গে কথা বলা হয় না। তাকিয়ে থাকা হয় না লাল লাল ফুলের দিকে। তাহলে ওর মন ভালো থাকবে কেমন করে? মন ভালো না থাকলে পড়তেও ইচ্ছা হয় না। ওর মনে পড়ে দোয়েলের কথা। প্রজাপতির কথা। লাল লাল গোলাপ ফুলের কথা। টুসটুসি শুধু শুধু জানালার পাশে পড়ার টেবিলে বই-খাতা-কলম নিয়ে মুখ ভার করে বসে থাকে। পড়তে চেষ্টা করে। মুখস্থ হয় না। একসময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। মা এসে বলেন, 'তোমার কী হয়েছে মামণি? তুমি কাঁদছো কেন?'
_আমার গোলাপ গাছটা চাই মা। বাবা যে গাছ কেটে ফেলেছে; সেই গাছ। লাল লাল ফুল চাই। দোয়েল বন্ধু চাই। চাই প্রজাপতি বন্ধু।
_কেটে ফেলেছে তো কী হয়েছে? আজই একটা গোলাপ চারা জানালার পাশে রোপণ করে দেবো। সেটা বড় হলে আবারও ফুল ফুটবে। দোয়েল আসবে। প্রজাপতি আসবে।
_বড় হতে তো অনেক দিন লাগবে। আমি যে এক্ষুনি চাই। না হলে দোয়েল বন্ধুটা আসবে না। আসবে না প্রজাপতি। গোলাপের গাছ না পেলে আমি কথা বলবো না। খাবো না। পড়বো না। ইশকুলে যাবো না।
টুসটুসির মন খারাপ হওয়ার ব্যাপারটা ওর বাবাও জেনে গেলেন। তিনিও বুঝতে পারলেন যে, গোলাপ গাছটা কেটে ফেলা ঠিক হয়নি। এখন কী করে মেয়ের মন ভালো করা যায়, সেই চিন্তা করতে লাগলেন তিনি। তারপর খুঁজে পেলেন সমস্যা সমাধানের উপায়। নার্সারি থেকে কিনে আনলেন গোলাপের টব। টবের গাছে থোকা থোকা লাল ফুল। আগে যেখানে গাছটি ছিলো, ঠিক সেই জায়গায় টবটি বসিয়ে দিলেন।
গোলাপ গাছ ফিরে পেয়ে টুসটুসির মন খুশিতে এক্কেবারে টইটম্বুর। সেদিন বিকেলেই জানালার পাশে পড়তে বসলো টুসটুসি। তারপর পাতার দিকে তাকালো। ফুলের দিকে তাকালো। দু'চোখ জুড়িয়ে গেলো পাতার সবুজ আর রাঙা ফুলের সৌন্দর্য দেখে। এখন দোয়েল এবং প্রজাপতির জন্য অপেক্ষা করছে ও। কিছুক্ষণের মধ্যেই কোথা থেকে শিস কাটতে কাটতে উড়ে এলো দোয়েল। উড়ে এলো প্রজাপতি। গোলাপ গাছে বসলো ওরা। টুসটুসির মনটাও তখন আনন্দে দোয়েল হয়ে উঠলো। প্রজাপতি হয়ে উড়তে লাগলো।
টুসটুসি দোয়েল ও প্রজাপতিকে বললো, 'গোলাপ গাছটা কেটে ফেলেছিলো বলে তোমরা খুব রাগ করছিলে, তাই না?'
দোয়েল কিচমিচ, কিচিরমিচির শব্দে বললো, 'হ্যাঁ, খুব রাগ করেছিলাম।' প্রজাপতি পাখা নেড়ে সে কথাই বুঝিয়ে দিলো।
_এবার রাগ ভেঙেছে তো? আজ থেকে তোমরা প্রতিদিন আসবে। আসবে কিন্তু!
দোয়েল শিস কেটে বলল, 'আসবো বন্ধু, আসবো।'
প্রজাপতি পাখা ঝাঁকিয়ে বললো, আসবো বন্ধু, আবার আসবো।'
জানালার ওপাশেই একটি গোলাপের গাছ। গাছে সবুজ পাতা। পাতার ফাঁকে ফাঁকে টুকটুকে লাল ফুল। বাতাসে দোল খায়। মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। সেই গন্ধ জানালা দিয়ে এসে টুসটুসিকে ছুঁয়ে যায়। টুসটুসি পড়ে আর পাতার দিকে তাকায়। ফুলের দিকে তাকায়। কখনও কোনো কারণে যদি ওর মন খারাপ হয়, তাহলে ফুল-পাতার দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক চোখে। সঙ্গে সঙ্গে মনটা ভালো হয়ে যায় তার। এরপর মন রাখে বর্ণমালার বইয়ে। লেখার খাতায়।
একটা দোয়েল পাখি উড়ে এসে গোলাপ গাছে বসে। পাখা নাড়ে আর গান গায়। কিচমিচ, কিচিরমিচির। টুসটুসি অবাক হয়। এতো সুন্দর পাখি। মন ভোলানি তার গানের সুর। কিচমিচ, কিচিরমিচির। দোয়েলটার সঙ্গে ওর একসময় বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ও পড়তে বসলেই কোথা থেকে যেন পাখিটা উড়ে আসে। এসেই গান জুড়ে দেয়। টুসটুসি গান শোনে আর বইয়ের পাতা ওল্টায়।
হঠাৎ একদিন টুসটুসি দেখলো কি_ গোলাপ গাছের পাতায় একটা প্রজাপতি। হায়, হায়, কী সুন্দর ডানা! কী অপরূপ! রূপ তো নয়, যেন রঙের কারখানা। টুসটুসি ওটা দেখা মাত্রই চিনে ফেলে। ওটা প্রজাপতি। চেনার কারণ হলো, ওর বর্ণমালার বইয়েও ঠিক একই রকম একটা ছবি আছে। ছবির নিচে লেখা প-তে প্রজাপতি। ও দোয়েল পাখি দেখে যতোটা অবাক হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অবাক হলো প্রজাপতি দেখে। এমন জাদুমাখা রূপ যেন আর কারও নেই।
প্রজাপতিটাও গোলাপ গাছের পাতায় বসে থাকে। ফুলেও বসে। আর নাড়াচাড়া করে কোমল ডানা দুটি। মাঝে মধ্যে কোথায় যেন চলে যায় উড়তে উড়তে। একটু পর আবার আসে। টুসটুসি পড়তে বসলেই দোয়েলটা আসে। প্রজাপতিও আসে। ওরা হয়তো টুসটুসিকে ভীষণ ভালোবাসে। টুসটুসি তো মিষ্টি সুরে বর্ণমালা পড়ে। পড়া শুনতেও বুঝি ওরা খুব মজা পায়।
দোয়েল, প্রজাপতি ও টুসটুসি_ এই তিনজন এখন একে অপরের বন্ধু। কীভাবে এমন নিবিড় বন্ধুত্ব হলো, টুসটুসি ভেবে পায় না। তবে এটুকু বুঝতে পারে যে, দোয়েলের শিস না শুনলে, প্রজাপতির রূপ-ডানা দেখতে না পারলে ওর পড়ালেখাই হবে না।
কিন্তু একদিন একটা ঘটনা ঘটলো। টুসটুসির বাবা কেটে ফেললো গোলাপ গাছটা। কারণ ওই গাছটার জন্য নাকি জানালা দিয়ে পর্যাপ্ত বাতাস ঘরে ঢুকতে পারে না। টুসটুসি তো খুবই আদরের মেয়ে। টাটকা বাতাস না পেলে ওর মন ভালো থাকবে কী করে! মন ভালো না থাকলে তো পড়ালেখাও ভালো হবে না। ওকে নিয়ে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন। পড়ালেখা করে আলোয় আলোয় বড় হবে ও। মানুষ হবে। অনেক বড় মানুষ। ও যাতে ঠিকমতো আলো-বাতাস পায়, পড়ালেখায় যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সে জন্যই কেটে ফেলা হয়েছে গাছটি।
যে জন্য গাছ কাটা হলো, ঘটলো তার উল্টো। টুসটুসির এখন মন ভালো থাকে না একটুও। বইয়ের পাতায়, লেখায় মন বসে না। গোলাপ গাছটা কাটার পর থেকে দোয়েলটাও আসে না। প্রজাপতিটাও না। আসবে যে, বসবে কোথায়? দোয়েলটা এখন হয়তো দূরের কোনো গাছে বসে শিস কাটে। প্রজাপতিও চলে গেছে অন্য কোথাও। অন্য কোনো ফুল বাগানে। টুসটুসির এখন দোয়েল ও প্রজাপতির সঙ্গে কথা বলা হয় না। তাকিয়ে থাকা হয় না লাল লাল ফুলের দিকে। তাহলে ওর মন ভালো থাকবে কেমন করে? মন ভালো না থাকলে পড়তেও ইচ্ছা হয় না। ওর মনে পড়ে দোয়েলের কথা। প্রজাপতির কথা। লাল লাল গোলাপ ফুলের কথা। টুসটুসি শুধু শুধু জানালার পাশে পড়ার টেবিলে বই-খাতা-কলম নিয়ে মুখ ভার করে বসে থাকে। পড়তে চেষ্টা করে। মুখস্থ হয় না। একসময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। মা এসে বলেন, 'তোমার কী হয়েছে মামণি? তুমি কাঁদছো কেন?'
_আমার গোলাপ গাছটা চাই মা। বাবা যে গাছ কেটে ফেলেছে; সেই গাছ। লাল লাল ফুল চাই। দোয়েল বন্ধু চাই। চাই প্রজাপতি বন্ধু।
_কেটে ফেলেছে তো কী হয়েছে? আজই একটা গোলাপ চারা জানালার পাশে রোপণ করে দেবো। সেটা বড় হলে আবারও ফুল ফুটবে। দোয়েল আসবে। প্রজাপতি আসবে।
_বড় হতে তো অনেক দিন লাগবে। আমি যে এক্ষুনি চাই। না হলে দোয়েল বন্ধুটা আসবে না। আসবে না প্রজাপতি। গোলাপের গাছ না পেলে আমি কথা বলবো না। খাবো না। পড়বো না। ইশকুলে যাবো না।
টুসটুসির মন খারাপ হওয়ার ব্যাপারটা ওর বাবাও জেনে গেলেন। তিনিও বুঝতে পারলেন যে, গোলাপ গাছটা কেটে ফেলা ঠিক হয়নি। এখন কী করে মেয়ের মন ভালো করা যায়, সেই চিন্তা করতে লাগলেন তিনি। তারপর খুঁজে পেলেন সমস্যা সমাধানের উপায়। নার্সারি থেকে কিনে আনলেন গোলাপের টব। টবের গাছে থোকা থোকা লাল ফুল। আগে যেখানে গাছটি ছিলো, ঠিক সেই জায়গায় টবটি বসিয়ে দিলেন।
গোলাপ গাছ ফিরে পেয়ে টুসটুসির মন খুশিতে এক্কেবারে টইটম্বুর। সেদিন বিকেলেই জানালার পাশে পড়তে বসলো টুসটুসি। তারপর পাতার দিকে তাকালো। ফুলের দিকে তাকালো। দু'চোখ জুড়িয়ে গেলো পাতার সবুজ আর রাঙা ফুলের সৌন্দর্য দেখে। এখন দোয়েল এবং প্রজাপতির জন্য অপেক্ষা করছে ও। কিছুক্ষণের মধ্যেই কোথা থেকে শিস কাটতে কাটতে উড়ে এলো দোয়েল। উড়ে এলো প্রজাপতি। গোলাপ গাছে বসলো ওরা। টুসটুসির মনটাও তখন আনন্দে দোয়েল হয়ে উঠলো। প্রজাপতি হয়ে উড়তে লাগলো।
টুসটুসি দোয়েল ও প্রজাপতিকে বললো, 'গোলাপ গাছটা কেটে ফেলেছিলো বলে তোমরা খুব রাগ করছিলে, তাই না?'
দোয়েল কিচমিচ, কিচিরমিচির শব্দে বললো, 'হ্যাঁ, খুব রাগ করেছিলাম।' প্রজাপতি পাখা নেড়ে সে কথাই বুঝিয়ে দিলো।
_এবার রাগ ভেঙেছে তো? আজ থেকে তোমরা প্রতিদিন আসবে। আসবে কিন্তু!
দোয়েল শিস কেটে বলল, 'আসবো বন্ধু, আসবো।'
প্রজাপতি পাখা ঝাঁকিয়ে বললো, আসবো বন্ধু, আবার আসবো।'
সূত্র : সমকাল
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন