দাদুর ঘুমপাড়ানি গল্প বলা একদম ভালো লাগছে না তিথির। কেমন যেনো পানসে মনে হচ্ছে। রেডিও’র মতো অনর্গল বলে যাচ্ছেন তো যাচ্ছেনই, গল্প শেষই হচ্ছে না তার।
তিথির মা নেই। বাবা থাকেন সারাক্ষণ ব্যস্ত। বাবা সকালে বের হন, ফেরেন দুপুর রাতে। বাবার সঙ্গে তিথির প্রায় দেখা হয় না। তাই দাদুই তার সবকিছু। খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা আর ঘুমানো, সবই দাদুর সঙ্গে।
তিথির মন একেবারেই ভালো নেই আজ। বাবা অনেক দামি দামি পোশাক এনেছেন তিথির জন্যে। তারপর থেকে একটা বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে পড়ছে তিথি। ভাবছে বাবাকে বিষয়টি বললে তো হয়! বাবার আলমারিতে অনেক টাকা। বাবা ইচ্ছে করলেই তার আশা পূরণ করতে পারেন। কিন্তু বাবা এখন নেই! তাহলে উপায়?
কথাগুলো ভাবতে না ভাবতেই তিথি থমকে গেলো! তার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অপরূপ সুন্দরী এক মেয়ে। তাকে সে আগে কখনো দেখেনি। তিথির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে মেয়েটি। মনে হলো যেন তিথি মেয়েটির অনেক দিনের চেনা। তিথি একটু ঘাবড়ে গেলো! এক-পা দু-পা করে তিথির দিকে এগিয়ে গেলো মেয়েটি। তারপর বললো—ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে দেখতে এলাম, বুঝলে!
তিথি বললো, তুমি কে?
সেই মেয়েটি বললো, আমি কিংকরি। আমাকে চিনতে পারছো না? আমি পরীর দেশের রানী! দেশে দেশে ঘুরে বেড়াই আর ছোট্ট সোনাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি।
: তুমি কি পরী! প্রশ্ন করলো তিথি।
পরী বললো—হ্যাঁ, তোমার দাদুর কাছ থেকে আমার অনেক গল্প শুনেছো, তাই তোমাকে দেখতে এলাম। তুমি কি পরীর দেশে যাবে? আমার ডানার ওপর উঠে বসবে আর আমি উড়ে যাবো আমাদের দেশে! তুমি চোখ মেলে দেখবে পরীর দেশের ফুল-ফল, রঙ-বেরঙের পাখি, আরও কত কী! তোমাকে অনেক কিছু খাওয়াবো যা তোমাদের দেশে নেই। ও-মা, তুমি যে কিছু বলছো না! তোমার কি মন খারাপ?
তিথি গোমরা মুখে বসে আছে। কোনো কিছুই বলছে না সে।
পরী এবার তিথিকে জড়িয়ে ধরে বললো, তিথি সোনা, বলো তো তোমার কী হয়েছে! আমাকে বলো, আমি তোমার সব সমস্যা সমাধান করে দেবো। চটপট বলো!
তিথির মনে একটু আশার সঞ্চার হলো। সে পরীকে তার ইচ্ছার কথা বলবে বলে ভাবছে। দাদু বলেছেন, পরীরা অনেক কিছু করতে পারে। তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তারা অনেক ভালো, মানুষের উপকারও করে।
তিথি বললো, তুমি আমার একটা উপকার করবে?
পরী বললো—বলে দেখোই না। সঙ্গে সঙ্গে কাজ হয়ে যাবে। তিথি বললো, তুমি কি জানো, পরশু ঈদ? তো যাদের টাকা আছে তারাই ঈদের পোশাক কিনবে, ভালো ভালো খাবার খাবে। আর যাদের নেই তারা ভালো ভালো খেতে পারবে না। ভালো পোশাক পরতে পারবে না। এটা কি ঠিক?
পরী রানী কিংকরি তিথির কথা বুঝতে পেরে তারপর উত্তর দিলো—না। কিছুতেই ঠিক নয়! তাহলে তুমি কী করতে চাও?
তিথি বললো, আমি সবাইকে ভালো-মন্দ খেতে দিতে চাই। ভালো পোশাক দিতে চাই। তুমি আমাকে হেল্প করবে পরী? তুমি আমাকে কিছু টাকা দেবে, বাবা এলে তোমাকে সব টাকা দিয়ে দেবো!
পরী এতোক্ষণ তিথির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো আর ভাবলো এ শিশু মেয়েটির কথা। পরীর দেশের রানী কিংকরি হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ করে হেসে উঠলো। আহা রে তিথি সোনা। ভাবছো কেনো, আমি আছি না! এই নাও জাদুর বাক্স। সঙ্গে সঙ্গে তিথির টেবিলের ওপর একটা বাক্স চলে এলো। তিথি দেখে তো অবাক! অসম্ভব সুন্দর একটা বাক্স। বাক্সটির চারপাশে ঝিকমিক করে আলো জ্বলছে। দাদু ঠিক বলেছেন, পরীরা জাদু জানে, না জানি এটার ভেতর কী আছে!
পরী রানী কিংকরী বললো, তিথি মণি, এই বাক্সটি এখন তোমার। এই বাক্সে দুটি জাদুর কাঠি আছে। একটি ধনদৌলতের, অন্যটি পোশাকের। প্রথম কাঠিটি কারো ঘরে গিয়ে বলবে—ইং বিং লিং, এই কথাটি তিনবার বলার সঙ্গে সঙ্গে দেখবে সেই বাড়ির সিন্দুকে টাকা-পয়সা ভরে গেছে। ওই টাকা সে কখনো শেষ করতে পারবে না। আর দ্বিতীয় কাঠিটি কারো স্পর্শ করে বলবে, টিং টং জং—এই কথাটিও তিনবার বলবে। সঙ্গে সঙ্গে দেখবে তার ঘর ভরতি পছন্দের পোশাক আর পোশাক এসে গেছে।
এ বলে পরীটি এক নিমিষে উড়ে তার দেশে চলে গেলো। আর যাওয়ার সময় বলে গেলো, আমার দরকার হলে বাক্সটির ওপর হাত রেখে বলবে—‘আয় ছুটে আয় পরী রানী’। এ কথাটি তিনবার বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি তোমার সামনে হাজির হবো।
পরীর কথামতো তিথি দাদুকে নিয়ে বস্তিতে চলে গেলো। সঙ্গে নিলো সেই জাদুর বাক্সটি। খবর পেয়ে দলেবলে ছুটে এলো তার বন্ধুরাও। শুরু হলো অভিযান। একে একে বস্তির ঘরে ঘরে টাকা-পয়সা ধনদৌলতে ভরে যেতে লাগলো। চারদিকে নাম ছড়িয়ে পড়তে লাগলো তিথির।
কেউ আর এখন গরিব নেই। চারদিকে খুশির বন্যা বয়ে গেলো। এতোদিন যারা গরিব ছিল, তাদের আর নোংরা-আবর্জনা-ময়লার স্তূপে বাস করতে হবে না। কেউ আর তাদের টোকাই বলবে না। তারাও বানাবে বাড়ি, হবে গাড়ি। তাদের ছেলেমেয়েরা এখন স্কুলে যাবে, পড়ালেখা করবে। উফ! ভাবতেই ভালো লাগছে তিথির! শুধু এই ঈদটা নয়, সারা জীবনে যত ঈদ আসে, সবগুলো তাদের অনেক ভালো যাবে। যা তারা কখনো ভাবতেই পারেনি!
এমন আনন্দের মাঝে এক সময় তিনি অনুভব করলো, কে যেনো তার কোমরে ধাক্কা দিচ্ছে। বারবার সে হাত সরিয়ে দিচ্ছে তিথি। কিন্তু একবার-দুইবার-তিনবার, বারবার, এবার তিথি বকা দিলো তাকে, বললো দেখতে পারছো না আমি কাজে ব্যস্ত! তারপর ভালো করে দেখতে গিয়ে অবাক হলো সে! তিথি দেখলো, সে তার বিছানায় শুয়ে আছে! পাছে দাঁড়িয়ে আছে দাদু! তিথিকে বলছেন, তাড়াতাড়ি করো দাদুভাই। তোমার হোম টিউটর এসেছেন।
তিথি তাড়াতাড়ি চোখ মেলে দেখতে চাইলো জাদুর বাক্সটি! কিন্তু বাক্সটি আর নেই! তিথি ভাবছে, ব্যাপারটি তাহলে কী হলো? বস্তি থেকে আমি কখন এলাম বা কখন ঘুমিয়ে পড়লাম কিছুই তো বুঝতে পারছি না! দাদুকে জাদুর বাক্সের কথা জিজ্ঞেস করতেই দাদু বুঝলো তিথি স্বপ্ন দেখেছে। দাদু জাদুর বাক্সের কোনো খোঁজ দিতে পারলো না দেখে, তিথি কান্না শুরু করে দিলো।
তিথির সব ঘটনা শুনলো দাদু। তারপর ভাবলেন, এতোটুকু মেয়ের অনুভূতি সত্যিই প্রশংসনীয়। তার এই ভালো অনুভূতিকে নষ্ট করা যাবে না। মানুষকে ভালোবাসতে শেখাতে হবে। মানুষ তো মানুষের জন্য।
দাদু তিথিকে কোলে নিয়ে আদর করে বললেন, আমি হচ্ছি তোমার বন্ধু। তোমার চাওয়া তো আমার চাওয়া। নাও, তোমার আশা পূরণ হয়ে গেছে। তোমার বাবা প্রতি বছর জাকাত দেয়, সেখানে শাড়ি-লুঙ্গি রয়েছে। এবার তোমাদের মতো বন্ধুদেরও পোশাক আনা হয়েছে! চলো, আমরা সেগুলো বস্তিতে দিয়ে আসি।
এই মুহূর্তে তিথির সেই পরীটির ওপর ভীষণ রাগ হলো! পরীটি তাকে ফাঁকি দিয়েছে। পরীটির মতো মানুষের মুখে সব সময়ের জন্য হাসি ফুটিয়ে দিতে চায় সে। সামান্য কয়টা পোশাক দিয়ে কি সে আশা পূরণ হবে? বাবার মতো যাদের অনেক টাকা, তারা ইচ্ছা করলেই তো গরিব মানুষদের দিতে পারে, তাতে তো সেই পরীর জাদুর কাঠির ছোঁয়া লেগে যাবে প্রতি ঘরে ঘরে। একে অন্যকে সাহায্য করবে! কারো আর দুঃখ থাকবে না। কেউ আর না খেয়ে থাকবে না। সবার মুখে হাসি ফুটবে। এটাই ছিল তিথির চাওয়া।
তিথির মা নেই। বাবা থাকেন সারাক্ষণ ব্যস্ত। বাবা সকালে বের হন, ফেরেন দুপুর রাতে। বাবার সঙ্গে তিথির প্রায় দেখা হয় না। তাই দাদুই তার সবকিছু। খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা আর ঘুমানো, সবই দাদুর সঙ্গে।
তিথির মন একেবারেই ভালো নেই আজ। বাবা অনেক দামি দামি পোশাক এনেছেন তিথির জন্যে। তারপর থেকে একটা বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে পড়ছে তিথি। ভাবছে বাবাকে বিষয়টি বললে তো হয়! বাবার আলমারিতে অনেক টাকা। বাবা ইচ্ছে করলেই তার আশা পূরণ করতে পারেন। কিন্তু বাবা এখন নেই! তাহলে উপায়?
কথাগুলো ভাবতে না ভাবতেই তিথি থমকে গেলো! তার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অপরূপ সুন্দরী এক মেয়ে। তাকে সে আগে কখনো দেখেনি। তিথির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে মেয়েটি। মনে হলো যেন তিথি মেয়েটির অনেক দিনের চেনা। তিথি একটু ঘাবড়ে গেলো! এক-পা দু-পা করে তিথির দিকে এগিয়ে গেলো মেয়েটি। তারপর বললো—ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে দেখতে এলাম, বুঝলে!
তিথি বললো, তুমি কে?
সেই মেয়েটি বললো, আমি কিংকরি। আমাকে চিনতে পারছো না? আমি পরীর দেশের রানী! দেশে দেশে ঘুরে বেড়াই আর ছোট্ট সোনাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি।
: তুমি কি পরী! প্রশ্ন করলো তিথি।
পরী বললো—হ্যাঁ, তোমার দাদুর কাছ থেকে আমার অনেক গল্প শুনেছো, তাই তোমাকে দেখতে এলাম। তুমি কি পরীর দেশে যাবে? আমার ডানার ওপর উঠে বসবে আর আমি উড়ে যাবো আমাদের দেশে! তুমি চোখ মেলে দেখবে পরীর দেশের ফুল-ফল, রঙ-বেরঙের পাখি, আরও কত কী! তোমাকে অনেক কিছু খাওয়াবো যা তোমাদের দেশে নেই। ও-মা, তুমি যে কিছু বলছো না! তোমার কি মন খারাপ?
তিথি গোমরা মুখে বসে আছে। কোনো কিছুই বলছে না সে।
পরী এবার তিথিকে জড়িয়ে ধরে বললো, তিথি সোনা, বলো তো তোমার কী হয়েছে! আমাকে বলো, আমি তোমার সব সমস্যা সমাধান করে দেবো। চটপট বলো!
তিথির মনে একটু আশার সঞ্চার হলো। সে পরীকে তার ইচ্ছার কথা বলবে বলে ভাবছে। দাদু বলেছেন, পরীরা অনেক কিছু করতে পারে। তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তারা অনেক ভালো, মানুষের উপকারও করে।
তিথি বললো, তুমি আমার একটা উপকার করবে?
পরী বললো—বলে দেখোই না। সঙ্গে সঙ্গে কাজ হয়ে যাবে। তিথি বললো, তুমি কি জানো, পরশু ঈদ? তো যাদের টাকা আছে তারাই ঈদের পোশাক কিনবে, ভালো ভালো খাবার খাবে। আর যাদের নেই তারা ভালো ভালো খেতে পারবে না। ভালো পোশাক পরতে পারবে না। এটা কি ঠিক?
পরী রানী কিংকরি তিথির কথা বুঝতে পেরে তারপর উত্তর দিলো—না। কিছুতেই ঠিক নয়! তাহলে তুমি কী করতে চাও?
তিথি বললো, আমি সবাইকে ভালো-মন্দ খেতে দিতে চাই। ভালো পোশাক দিতে চাই। তুমি আমাকে হেল্প করবে পরী? তুমি আমাকে কিছু টাকা দেবে, বাবা এলে তোমাকে সব টাকা দিয়ে দেবো!
পরী এতোক্ষণ তিথির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো আর ভাবলো এ শিশু মেয়েটির কথা। পরীর দেশের রানী কিংকরি হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ করে হেসে উঠলো। আহা রে তিথি সোনা। ভাবছো কেনো, আমি আছি না! এই নাও জাদুর বাক্স। সঙ্গে সঙ্গে তিথির টেবিলের ওপর একটা বাক্স চলে এলো। তিথি দেখে তো অবাক! অসম্ভব সুন্দর একটা বাক্স। বাক্সটির চারপাশে ঝিকমিক করে আলো জ্বলছে। দাদু ঠিক বলেছেন, পরীরা জাদু জানে, না জানি এটার ভেতর কী আছে!
পরী রানী কিংকরী বললো, তিথি মণি, এই বাক্সটি এখন তোমার। এই বাক্সে দুটি জাদুর কাঠি আছে। একটি ধনদৌলতের, অন্যটি পোশাকের। প্রথম কাঠিটি কারো ঘরে গিয়ে বলবে—ইং বিং লিং, এই কথাটি তিনবার বলার সঙ্গে সঙ্গে দেখবে সেই বাড়ির সিন্দুকে টাকা-পয়সা ভরে গেছে। ওই টাকা সে কখনো শেষ করতে পারবে না। আর দ্বিতীয় কাঠিটি কারো স্পর্শ করে বলবে, টিং টং জং—এই কথাটিও তিনবার বলবে। সঙ্গে সঙ্গে দেখবে তার ঘর ভরতি পছন্দের পোশাক আর পোশাক এসে গেছে।
এ বলে পরীটি এক নিমিষে উড়ে তার দেশে চলে গেলো। আর যাওয়ার সময় বলে গেলো, আমার দরকার হলে বাক্সটির ওপর হাত রেখে বলবে—‘আয় ছুটে আয় পরী রানী’। এ কথাটি তিনবার বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি তোমার সামনে হাজির হবো।
পরীর কথামতো তিথি দাদুকে নিয়ে বস্তিতে চলে গেলো। সঙ্গে নিলো সেই জাদুর বাক্সটি। খবর পেয়ে দলেবলে ছুটে এলো তার বন্ধুরাও। শুরু হলো অভিযান। একে একে বস্তির ঘরে ঘরে টাকা-পয়সা ধনদৌলতে ভরে যেতে লাগলো। চারদিকে নাম ছড়িয়ে পড়তে লাগলো তিথির।
কেউ আর এখন গরিব নেই। চারদিকে খুশির বন্যা বয়ে গেলো। এতোদিন যারা গরিব ছিল, তাদের আর নোংরা-আবর্জনা-ময়লার স্তূপে বাস করতে হবে না। কেউ আর তাদের টোকাই বলবে না। তারাও বানাবে বাড়ি, হবে গাড়ি। তাদের ছেলেমেয়েরা এখন স্কুলে যাবে, পড়ালেখা করবে। উফ! ভাবতেই ভালো লাগছে তিথির! শুধু এই ঈদটা নয়, সারা জীবনে যত ঈদ আসে, সবগুলো তাদের অনেক ভালো যাবে। যা তারা কখনো ভাবতেই পারেনি!
এমন আনন্দের মাঝে এক সময় তিনি অনুভব করলো, কে যেনো তার কোমরে ধাক্কা দিচ্ছে। বারবার সে হাত সরিয়ে দিচ্ছে তিথি। কিন্তু একবার-দুইবার-তিনবার, বারবার, এবার তিথি বকা দিলো তাকে, বললো দেখতে পারছো না আমি কাজে ব্যস্ত! তারপর ভালো করে দেখতে গিয়ে অবাক হলো সে! তিথি দেখলো, সে তার বিছানায় শুয়ে আছে! পাছে দাঁড়িয়ে আছে দাদু! তিথিকে বলছেন, তাড়াতাড়ি করো দাদুভাই। তোমার হোম টিউটর এসেছেন।
তিথি তাড়াতাড়ি চোখ মেলে দেখতে চাইলো জাদুর বাক্সটি! কিন্তু বাক্সটি আর নেই! তিথি ভাবছে, ব্যাপারটি তাহলে কী হলো? বস্তি থেকে আমি কখন এলাম বা কখন ঘুমিয়ে পড়লাম কিছুই তো বুঝতে পারছি না! দাদুকে জাদুর বাক্সের কথা জিজ্ঞেস করতেই দাদু বুঝলো তিথি স্বপ্ন দেখেছে। দাদু জাদুর বাক্সের কোনো খোঁজ দিতে পারলো না দেখে, তিথি কান্না শুরু করে দিলো।
তিথির সব ঘটনা শুনলো দাদু। তারপর ভাবলেন, এতোটুকু মেয়ের অনুভূতি সত্যিই প্রশংসনীয়। তার এই ভালো অনুভূতিকে নষ্ট করা যাবে না। মানুষকে ভালোবাসতে শেখাতে হবে। মানুষ তো মানুষের জন্য।
দাদু তিথিকে কোলে নিয়ে আদর করে বললেন, আমি হচ্ছি তোমার বন্ধু। তোমার চাওয়া তো আমার চাওয়া। নাও, তোমার আশা পূরণ হয়ে গেছে। তোমার বাবা প্রতি বছর জাকাত দেয়, সেখানে শাড়ি-লুঙ্গি রয়েছে। এবার তোমাদের মতো বন্ধুদেরও পোশাক আনা হয়েছে! চলো, আমরা সেগুলো বস্তিতে দিয়ে আসি।
এই মুহূর্তে তিথির সেই পরীটির ওপর ভীষণ রাগ হলো! পরীটি তাকে ফাঁকি দিয়েছে। পরীটির মতো মানুষের মুখে সব সময়ের জন্য হাসি ফুটিয়ে দিতে চায় সে। সামান্য কয়টা পোশাক দিয়ে কি সে আশা পূরণ হবে? বাবার মতো যাদের অনেক টাকা, তারা ইচ্ছা করলেই তো গরিব মানুষদের দিতে পারে, তাতে তো সেই পরীর জাদুর কাঠির ছোঁয়া লেগে যাবে প্রতি ঘরে ঘরে। একে অন্যকে সাহায্য করবে! কারো আর দুঃখ থাকবে না। কেউ আর না খেয়ে থাকবে না। সবার মুখে হাসি ফুটবে। এটাই ছিল তিথির চাওয়া।
সূত্র : আমার দেশ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন