কাঁঠাল গাছটা বেশ পুরোনো। বয়স কম করে হলেও পঞ্চাশ তো হবেই। এই গাছের ডালেই ছোটখাটো একটা গর্ত। আর এই গর্তে বাস করে একটা শালিক। বেশিরভাগ সময়ই অবশ্য সে গর্তের বাইরে থাকে। এমনকি রাতের বেলায়ও। কিন্তু ঝড় বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। সোজা ঢুকে পড়ে ডালের গর্তে। মুষলধারে যতই বৃষ্টি হোক, তার গায়ে একটা ফোঁটাও লাগে না। এমন চমৎকার একটা জায়গা পেয়ে দারুণ খুশি শালিকটা। এই জায়গাটা না পেলে হয়তো তাকেও ভিজতে হতো অন্যান্য পাখিদের মতো। তারপর জ্বর ঠাণ্ডা আরো কত কী হতে পারত!
সেদিন গর্তে বসে ঘুমোচ্ছিলো শালিকটা। হঠাৎ ঠকঠক শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেলো। এমন কাঁচা একটা ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণে মেজাজটা ভালোই খারাপ হলো শালিকের। তড়িঘড়ি করে সে বের হলো গর্ত থেকে। দেখতে পেলো তার বাসার পাশেই গর্ত খুঁড়ছে এক কাঠঠোকরা। খুব রাগ হলো শালিকের। খুব কড়া করে বললো_আরে বাপু, তুমি আর জায়গা পেলে না? আমার বাসার পাশে এসে বাসা বানাচ্ছো! আমার ঘুমের সমস্যা করছো? কাঠঠোকরা বললো_আমার ভুল হয়ে গেছে শালিক ভাই। আমি জানতাম না তুমি যে ঘুমুচ্ছো।
শালিক আগের মতোই বললো_তোমার জেনে নেওয়া উচিত ছিলো। কারো বাসার পাশে এসে ঠকঠক করবে, এটা তো ঠিক না। তুমি আমার অনুমতি নিয়ে নিলে পারতে। শত হলেও এই বাসাটা আমার। আমার বাসার পাশে তোমাকে কোন কাজ করতে দেবো কি দেবো না, সেটা আমার ব্যাপার। শালিকের মুখে বারবার 'আমার বাসা আমার বাসা' শুনে কাঠঠোকরা বললো_তুমি ভুল করছো শালিক ভাই। তুমি যে বাসাটাকে তোমার বাসা বলছো, সেটা কিন্তু আমারই বানানো। অনেক কষ্ট করে ডাল খুঁড়ে খুঁড়ে বানিয়েছিলাম।
কাঠঠোকরার কথাগুলো ভালো লাগলো না শালিকের। কারণ কে বানিয়েছে সেটা বড় কথা না। বাসাটা এখন তার নিজের, সেটাই হলো বড় কথা। তাই শালিকটা মুখ কালো করে ঢুকে গেলো গর্তের ভেতরে। কাঠঠোকরাও আর কোনো কথা না বলে উড়ে গেলো অন্যদিকে। শালিকের কথায় সে কষ্ট পেলো না। সে ধরে নিলো শালিকের হয়তো কোন কারণে মন খারাপ তাই এসব কথা বলেছে। মন ভালো হলে নিশ্চয়ই হাসিমুখে কথা বলবে। এই ভেবে কাঠঠোকরার খুব ভালো লাগলো, তার বানানো বাসায় আরেকজন খুব আরাম করে থাকতে পারছে।
একমাস পরের ঘটনা। খাবার খেতে গিয়ে দোয়েলের সঙ্গে দেখা হলো কাঠঠোকরার। দোয়েল বললো, একটা খারাপ খবর আছে। খারাপ খবর! কী খারাপ খবর? ব্যস্ত হয়ে জানতে চাইলো কাঠঠোকরা। দোয়েল বললো_কাঁঠাল গাছে একটা শালিক থাকতো না? অই যে তোমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। তারপর বলো। দোয়েল মুখ ভার করে বললো_তার অনেক বিপদ। বাঁচবে কিনা সন্দেহ আছে। জানো, ওর জন্যে আমার খুব মায়া হচ্ছে। বেচারার ভাগ্যটাই খারাপ। নইলে এমন বিপদে পড়তে যাবে কেন।
এবার অস্থির হয়ে গেলো কাঠঠোকরা_কী বিপদ আমাকে তাড়াতাড়ি বলো। দেখি কিছু করা যায় কিনা।
দোয়েল বললো_তুমি কিছু করতে পারবে কিনা জানি না। তবে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিছুই করতে পারিনি। ও যে গর্তে থাকে, গতরাতের ঝড়ে সেই গর্তের মুখে একটা ডাল ভেঙে পড়েছে। ডালটা খুব মোটা না অবশ্য। তবু আমরা চেষ্টা করেও সরাতে পারিনি। এখন শালিকটা গর্তের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। না পারছে বের হতে, না পারছে খেতে। খেতে না পেলে কীভাবে বাঁচবে বলো।
দোয়েলের কথা শুনে আর দেরি করলো না কাঠঠোকরা। এক উড়ালে চলে গেলো কাঁঠাল গাছে। ডালে গিয়ে বসতেই সে শুনতে পেলো ভেতর থেকে শালিকের কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। শালিকের কান্না শুনে খুব কান্না পেলো কাঠঠোকরারও। সে সিদ্ধান্ত নিলো, যেভাবেই হোক শালিককে উদ্ধার করবে। গর্তের একেবারে কাছে গিয়ে বসলো কাঠঠোকরা। যে ডালটা ভেঙে পড়েছে সেটা মোটা না হলেও সে যে ধাক্কা দিয়ে সরাতে পারবে না, তা সে বুঝতে পারলো। তাই বলে সে হার মানবে না। যেভাবেই হোক, শালিককে সে উদ্ধার করবেই।
কিছুক্ষণ বসে থেকে কাঠঠোকরা তার ধারালো ঠোঁট চালিয়ে দিলো। অল্প সময়ের মধ্যেই কেটে দুই ভাগ করে ফেললো গর্তের মুখে পড়ে থাকা ডালটা। একদম পরিস্কার হয়ে গেলো গর্তের মুখ। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো শালিকটা। এসেই জড়িয়ে ধরলো
কাঠঠোকরাকে। কান্নার জন্যে অনেকক্ষণ কোন কথাই বলতে পারলো না সে। তারপর যখন কান্না থামলো তখন বললো_তুমি না থাকলে আজ আমার কী হতো জানি না। অথচ তোমার সঙ্গে সেদিন আমি কী খারাপ ব্যবহারটাই না করেছিলাম। তুমি আমাকে ক্ষমা...শালিককে আর কিছুই বলতে দিল না কাঠঠোকরা। শুধু বুকে
জড়িয়ে নিল।
সেদিন গর্তে বসে ঘুমোচ্ছিলো শালিকটা। হঠাৎ ঠকঠক শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেলো। এমন কাঁচা একটা ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণে মেজাজটা ভালোই খারাপ হলো শালিকের। তড়িঘড়ি করে সে বের হলো গর্ত থেকে। দেখতে পেলো তার বাসার পাশেই গর্ত খুঁড়ছে এক কাঠঠোকরা। খুব রাগ হলো শালিকের। খুব কড়া করে বললো_আরে বাপু, তুমি আর জায়গা পেলে না? আমার বাসার পাশে এসে বাসা বানাচ্ছো! আমার ঘুমের সমস্যা করছো? কাঠঠোকরা বললো_আমার ভুল হয়ে গেছে শালিক ভাই। আমি জানতাম না তুমি যে ঘুমুচ্ছো।
শালিক আগের মতোই বললো_তোমার জেনে নেওয়া উচিত ছিলো। কারো বাসার পাশে এসে ঠকঠক করবে, এটা তো ঠিক না। তুমি আমার অনুমতি নিয়ে নিলে পারতে। শত হলেও এই বাসাটা আমার। আমার বাসার পাশে তোমাকে কোন কাজ করতে দেবো কি দেবো না, সেটা আমার ব্যাপার। শালিকের মুখে বারবার 'আমার বাসা আমার বাসা' শুনে কাঠঠোকরা বললো_তুমি ভুল করছো শালিক ভাই। তুমি যে বাসাটাকে তোমার বাসা বলছো, সেটা কিন্তু আমারই বানানো। অনেক কষ্ট করে ডাল খুঁড়ে খুঁড়ে বানিয়েছিলাম।
কাঠঠোকরার কথাগুলো ভালো লাগলো না শালিকের। কারণ কে বানিয়েছে সেটা বড় কথা না। বাসাটা এখন তার নিজের, সেটাই হলো বড় কথা। তাই শালিকটা মুখ কালো করে ঢুকে গেলো গর্তের ভেতরে। কাঠঠোকরাও আর কোনো কথা না বলে উড়ে গেলো অন্যদিকে। শালিকের কথায় সে কষ্ট পেলো না। সে ধরে নিলো শালিকের হয়তো কোন কারণে মন খারাপ তাই এসব কথা বলেছে। মন ভালো হলে নিশ্চয়ই হাসিমুখে কথা বলবে। এই ভেবে কাঠঠোকরার খুব ভালো লাগলো, তার বানানো বাসায় আরেকজন খুব আরাম করে থাকতে পারছে।
একমাস পরের ঘটনা। খাবার খেতে গিয়ে দোয়েলের সঙ্গে দেখা হলো কাঠঠোকরার। দোয়েল বললো, একটা খারাপ খবর আছে। খারাপ খবর! কী খারাপ খবর? ব্যস্ত হয়ে জানতে চাইলো কাঠঠোকরা। দোয়েল বললো_কাঁঠাল গাছে একটা শালিক থাকতো না? অই যে তোমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। তারপর বলো। দোয়েল মুখ ভার করে বললো_তার অনেক বিপদ। বাঁচবে কিনা সন্দেহ আছে। জানো, ওর জন্যে আমার খুব মায়া হচ্ছে। বেচারার ভাগ্যটাই খারাপ। নইলে এমন বিপদে পড়তে যাবে কেন।
এবার অস্থির হয়ে গেলো কাঠঠোকরা_কী বিপদ আমাকে তাড়াতাড়ি বলো। দেখি কিছু করা যায় কিনা।
দোয়েল বললো_তুমি কিছু করতে পারবে কিনা জানি না। তবে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিছুই করতে পারিনি। ও যে গর্তে থাকে, গতরাতের ঝড়ে সেই গর্তের মুখে একটা ডাল ভেঙে পড়েছে। ডালটা খুব মোটা না অবশ্য। তবু আমরা চেষ্টা করেও সরাতে পারিনি। এখন শালিকটা গর্তের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। না পারছে বের হতে, না পারছে খেতে। খেতে না পেলে কীভাবে বাঁচবে বলো।
দোয়েলের কথা শুনে আর দেরি করলো না কাঠঠোকরা। এক উড়ালে চলে গেলো কাঁঠাল গাছে। ডালে গিয়ে বসতেই সে শুনতে পেলো ভেতর থেকে শালিকের কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। শালিকের কান্না শুনে খুব কান্না পেলো কাঠঠোকরারও। সে সিদ্ধান্ত নিলো, যেভাবেই হোক শালিককে উদ্ধার করবে। গর্তের একেবারে কাছে গিয়ে বসলো কাঠঠোকরা। যে ডালটা ভেঙে পড়েছে সেটা মোটা না হলেও সে যে ধাক্কা দিয়ে সরাতে পারবে না, তা সে বুঝতে পারলো। তাই বলে সে হার মানবে না। যেভাবেই হোক, শালিককে সে উদ্ধার করবেই।
কিছুক্ষণ বসে থেকে কাঠঠোকরা তার ধারালো ঠোঁট চালিয়ে দিলো। অল্প সময়ের মধ্যেই কেটে দুই ভাগ করে ফেললো গর্তের মুখে পড়ে থাকা ডালটা। একদম পরিস্কার হয়ে গেলো গর্তের মুখ। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো শালিকটা। এসেই জড়িয়ে ধরলো
কাঠঠোকরাকে। কান্নার জন্যে অনেকক্ষণ কোন কথাই বলতে পারলো না সে। তারপর যখন কান্না থামলো তখন বললো_তুমি না থাকলে আজ আমার কী হতো জানি না। অথচ তোমার সঙ্গে সেদিন আমি কী খারাপ ব্যবহারটাই না করেছিলাম। তুমি আমাকে ক্ষমা...শালিককে আর কিছুই বলতে দিল না কাঠঠোকরা। শুধু বুকে
জড়িয়ে নিল।
সূত্র : সমকাল
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন