মুমিনের ঈমান বা মৌল ধর্মীয় বিশ্বাসের পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা হলো— কতিপয় সুনির্দিষ্ট বিষয়ে অন্তরে অবিচল বিশ্বাস, দ্ব্যর্থহীন মৌখিক ঘোষণা বা স্বীকৃতি এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সে বিশ্বাস ও ঘোষণার প্রতিফলন। বিশ্বাস ও ঘোষণার বিষয়-শিরোনাম ‘আল্লাহর তাওহিদ ও তাঁর প্রেরিত পুরুষের রিসালাত সম্পর্কীয় সত্যতা। ‘তাওহিদ’ ও ‘রিসালাত’ আরবি শব্দ দুটির পারিভাষিক অর্থ ও দার্শনিক মর্ম ব্যাপক ও বিস্তৃত। অল্প কথায় তাওহিদের অন্তর্নিহিত মর্মবাণী হলো— সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালক, জীবন ও মৃত্যুর মালিক এবং ইবাদত-উপাসনার একমাত্র উপযুক্ত আল্লাহ। তিনি অনাদি, অনন্ত, অবিনশ্বর। নভোমণ্ডল-ভূমণ্ডলস্থিত সব কিছুর নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব কেবলই তাঁর। এসব ক্ষেত্রে অন্য কেউ তাঁর সমতুল্য, সমকক্ষ, অংশীদার, সহযোগী থাকার অবকাশই নেই, প্রয়োজনও নেই।
রিসালাতের সারসংক্ষেপ ও নিহিতার্থ হলো, আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্য এবং তাঁর উপর নাজিলকৃত মহাগ্রন্থ আল কোরআন ও আনীত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাই মুমিনের সামগ্রিক জীবনে একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ—এ মর্মে আস্থা জ্ঞাপন, বিশ্বাস স্থাপন ও বাস্তব জীবনে তার অনুশীলন।
সুতরাং একজন মুমিন বান্দার প্রাত্যহিক জীবন ও যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মূলে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও অবিচল বিশ্বাস একটি বুনিয়াদি বিষয়। অন্যকথায়, এটা প্রকৃত ঈমানের দাবি। তাঁর বিপরীত ঘোষণা বা বিশ্বাস মুসলমানের মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে বরাবরই সাংঘর্ষিক। মনে রাখা দরকার, এটা আদৌ কোনো স্লোগানের বিষয় কিংবা ঐচ্ছিক ব্যাপার নয়। কেননা, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিপরীতে আছে তাঁর প্রতি অনাস্থা ও অবিশ্বাস। একজন মুমিনের কোনোক্রমে একই সঙ্গে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী হওয়ার সুযোগ নেই। যেমনটি আস্তিকতা ও নাস্তিকতার সহাবস্থান অসম্ভব।
একই সঙ্গে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’-এর অর্থবিকৃতি কোরআনের অপব্যাখ্যার শামিল।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত (সূরা নাম্ল, আয়াত : ৩০ দ্রষ্টব্য)। সব ধর্মের প্রতি ‘উদারতা’ প্রদর্শনের দোহাই দিয়ে পবিত্র কোরআনের কোনো আয়াতের মনগড়া বা সুবিধামত অনুবাদ কিংবা ব্যাখ্যা করা চলে না। রাষ্ট্রীয় ফরমানবলে তা করা হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশ্বাসী মানুষ কর্তৃক সেটি নাকচ হতে বাধ্য। অন্যদিকে ‘আল্লাহ’ শব্দটি কোরআনের সর্বত্র অভিন্নরূপে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। রাসুলের অসংখ্য হাদিসের কোথাও আল্লাহ শব্দটির সমার্থক, প্রতিশব্দ বা বিকল্প লক্ষ্য করা যাবে না। পবিত্র কোরআনের সবক’টি তাফসির গ্রন্থে আল্লাহ শব্দটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে—‘আল্লাহ’ এক, একক, অদ্বিতীয়, অবিভাজ্য, অবিনশ্বর সত্তার নাম। যার অস্তিত্ব সুনিশ্চিত, অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ শব্দটি ছাড়াও মহান আল্লাহর আরও ৯৯টি গুণবাচক নাম আছে, যেমন—‘রব’ অর্থ পালনকর্তা, রাজ্জাক অর্থ অন্নদাতা, রাহমান অর্থ পরম করুণাময়, রহীম অর্থ অসীম দয়ালু এবং খালেক অর্থ সৃষ্টিকর্তা। এসব নামের কোনোটাই আল্লাহ শব্দের অর্থ, সমার্থক বা প্রতিশব্দ নয়। উপরন্তু অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা, স্রষ্টা প্রভৃতি বোঝানোর জন্য ‘ঈশ্বর’, ‘ব্রহ্মা’, ‘গড’ ইত্যাদি যেসব শব্দ ব্যবহার করে তা তাদের ধর্মীয় পরিভাষা হতে পারে কিন্তু ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহ বোঝাতে ওসব শব্দের ব্যবহার অনুমোদিত নয়। আর আল্লাহ শব্দের স্থলে বা এর ভাষান্তর হিসেবে তাঁর গুণবাচক নামগুলো থেকে যেকোনো একটির অর্থ প্রতিস্থাপন রীতিমত অর্থবিকৃতির শামিল। কোরআনের আয়াতের তাফসির হিসেবে তা অপব্যাখ্যারূপে চিহ্নিত হবে।
সূরা বাকারার ৫৮ নম্বর আয়াতের তাফসিরে বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা মুফতি শফী (রাহ.) তার মা’রিফুল কোরআনে আল্লামা কুরতুবীকে উদ্ধৃত করে লিখেন, ‘কোনো কোনো বাক্যাংশে বা বক্তব্যে শব্দই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে এবং মর্ম ও ভাব প্রকাশের জন্য শব্দই অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়। এ ধরনের উক্তি ও বাণীর ক্ষেত্রে শব্দগত পরিবর্তনও জায়েজ নয়। যেমন আজানের জন্য নির্ধারিত শব্দের স্থলে সমার্থবোধক অন্য কোনো শব্দ পাঠ করা জায়েজ নয়। অনুরূপভাবে নামাজের মধ্যে নির্দিষ্ট দোয়াগুলো। যেমন সানা, আত্তাহিয়্যাতু, দোয়ায়ে কুনুত ও রুকু-সিজদার তসবিহগুলো। এগুলোর অর্থ সম্পূর্ণভাবে ঠিক রেখেও কোনো রকম শব্দগত পরিবর্তন জায়েজ নয়। তেমনিভাবে সমগ্র কোরআন মজীদের শব্দাবলীও একই হুকুম (পবিত্র কোরআনুল কারিম, বাংলা অনুবাদ সংক্ষিপ্ত তাফসির, পৃ. ৪১—৪২, মূল তাফসির মারেফুল কোরআন, আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী রাহ., অনুবাদ ও সম্পাদনা, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, বাদশাহ ফাহদ, কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প, মদিনা মুনাওয়ারা)।
পবিত্র কোরআনের বিপথগামী ইহুদি-খ্রিস্টানধর্মীয় পণ্ডিত কর্তৃক আসমানিগ্রন্থে বিকৃতি ও অপব্যাখ্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এর মাধ্যমে (সামাজিক কর্তৃত্ব ও কায়েমি স্বার্থরক্ষার হীনউদ্দেশ্যে) সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার ব্যাপারে তিরস্কার এ অপকর্মের অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে।
পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবগুলোর (বিকৃতি ও বিলুপ্তি থেকে) সংরক্ষণে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি না থাকায় তা শাব্দিক ও মর্মগত বিকৃতি প্রতিরোধক ছিল না। পবিত্র কোরআনের বেলায় আল্লাহ সুস্পষ্টভাষায় কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত এর পূর্ণ হিফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন বলেই এর শাব্দিক বিকৃতি চৌদ্দশ’ বছরেও কারও পক্ষে সম্ভবপর হয়নি। কিন্তু অপব্যাখ্যা করে সাময়িকভাবে হলেও সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করা যায়।
‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি’— বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের এরূপ বাংলা অনুবাদই যথাযথ। এখানে আল্লাহ, রাহমান, রাহীম তিনটি শব্দের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি তাত্পর্যপূর্ণ তা হলো, রাহমান, রাহিম শব্দগুলোর বাংলা অর্থে সমার্থবোধক বিভিন্ন শব্দ ব্যবহৃত হতে পারে কিন্তু আল্লাহ শব্দের বেলায় সৃষ্টিকর্তা বা অন্যকোনো শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নেই। এটা অর্থগত বিকৃতি এবং অগ্রহণযোগ্য। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের অর্থ লেখা হয়েছে— পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে। যেখানে সৃষ্টিকর্তা শব্দটি আল্লাহ শব্দের বিকল্প হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এটি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম-এর শুদ্ধ ও সঠিক ভাষান্তর নয়। আরোপিত এই অনুবাদ আরবি ভাষাজ্ঞানে পারদর্শী ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিজ্ঞ কোনো আলিম কর্তৃক যে যাচাই ও সমর্থিত হয়নি তা স্পষ্ট। অথচ এটা অপরিহার্য ছিল। এ ধরনের খামখেয়ালি ইসলামের দৃষ্টিতে চরম গর্হিত কাজ।
আমাদের সংবিধান থেকে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বাদ দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বহু বিশিষ্ট আলিম ও শীর্ষস্থানীয় মুফতি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমাদের সরকার আল্লাহর প্রতি অনাস্থা দিল।’ আরেক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট রাজনীতিক অত্যন্ত জোরালো ও যৌক্তিক ভাষায় প্রশ্ন তুলেছেন—‘আল্লাহর ওপর যদি আস্থা না রাখতে পারি তাহলে কী শয়তানের ওপর রাখব?’ একজন মুমিন হিসেবে এ প্রশ্ন সংখ্যাগরিষ্ঠ সব নাগরিকের। মুসলিম শাসকদের এমন গর্হিত পদক্ষেপে মুসলমানমাত্রই ভাবিত না হয়ে উপায় নেই। ষ
লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক
সূত্র : আমার দেশ
রিসালাতের সারসংক্ষেপ ও নিহিতার্থ হলো, আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সত্য এবং তাঁর উপর নাজিলকৃত মহাগ্রন্থ আল কোরআন ও আনীত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাই মুমিনের সামগ্রিক জীবনে একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ—এ মর্মে আস্থা জ্ঞাপন, বিশ্বাস স্থাপন ও বাস্তব জীবনে তার অনুশীলন।
সুতরাং একজন মুমিন বান্দার প্রাত্যহিক জীবন ও যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মূলে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও অবিচল বিশ্বাস একটি বুনিয়াদি বিষয়। অন্যকথায়, এটা প্রকৃত ঈমানের দাবি। তাঁর বিপরীত ঘোষণা বা বিশ্বাস মুসলমানের মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে বরাবরই সাংঘর্ষিক। মনে রাখা দরকার, এটা আদৌ কোনো স্লোগানের বিষয় কিংবা ঐচ্ছিক ব্যাপার নয়। কেননা, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিপরীতে আছে তাঁর প্রতি অনাস্থা ও অবিশ্বাস। একজন মুমিনের কোনোক্রমে একই সঙ্গে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী হওয়ার সুযোগ নেই। যেমনটি আস্তিকতা ও নাস্তিকতার সহাবস্থান অসম্ভব।
একই সঙ্গে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’-এর অর্থবিকৃতি কোরআনের অপব্যাখ্যার শামিল।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত (সূরা নাম্ল, আয়াত : ৩০ দ্রষ্টব্য)। সব ধর্মের প্রতি ‘উদারতা’ প্রদর্শনের দোহাই দিয়ে পবিত্র কোরআনের কোনো আয়াতের মনগড়া বা সুবিধামত অনুবাদ কিংবা ব্যাখ্যা করা চলে না। রাষ্ট্রীয় ফরমানবলে তা করা হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশ্বাসী মানুষ কর্তৃক সেটি নাকচ হতে বাধ্য। অন্যদিকে ‘আল্লাহ’ শব্দটি কোরআনের সর্বত্র অভিন্নরূপে বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। রাসুলের অসংখ্য হাদিসের কোথাও আল্লাহ শব্দটির সমার্থক, প্রতিশব্দ বা বিকল্প লক্ষ্য করা যাবে না। পবিত্র কোরআনের সবক’টি তাফসির গ্রন্থে আল্লাহ শব্দটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে—‘আল্লাহ’ এক, একক, অদ্বিতীয়, অবিভাজ্য, অবিনশ্বর সত্তার নাম। যার অস্তিত্ব সুনিশ্চিত, অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ শব্দটি ছাড়াও মহান আল্লাহর আরও ৯৯টি গুণবাচক নাম আছে, যেমন—‘রব’ অর্থ পালনকর্তা, রাজ্জাক অর্থ অন্নদাতা, রাহমান অর্থ পরম করুণাময়, রহীম অর্থ অসীম দয়ালু এবং খালেক অর্থ সৃষ্টিকর্তা। এসব নামের কোনোটাই আল্লাহ শব্দের অর্থ, সমার্থক বা প্রতিশব্দ নয়। উপরন্তু অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা, স্রষ্টা প্রভৃতি বোঝানোর জন্য ‘ঈশ্বর’, ‘ব্রহ্মা’, ‘গড’ ইত্যাদি যেসব শব্দ ব্যবহার করে তা তাদের ধর্মীয় পরিভাষা হতে পারে কিন্তু ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহ বোঝাতে ওসব শব্দের ব্যবহার অনুমোদিত নয়। আর আল্লাহ শব্দের স্থলে বা এর ভাষান্তর হিসেবে তাঁর গুণবাচক নামগুলো থেকে যেকোনো একটির অর্থ প্রতিস্থাপন রীতিমত অর্থবিকৃতির শামিল। কোরআনের আয়াতের তাফসির হিসেবে তা অপব্যাখ্যারূপে চিহ্নিত হবে।
সূরা বাকারার ৫৮ নম্বর আয়াতের তাফসিরে বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা মুফতি শফী (রাহ.) তার মা’রিফুল কোরআনে আল্লামা কুরতুবীকে উদ্ধৃত করে লিখেন, ‘কোনো কোনো বাক্যাংশে বা বক্তব্যে শব্দই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে এবং মর্ম ও ভাব প্রকাশের জন্য শব্দই অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়। এ ধরনের উক্তি ও বাণীর ক্ষেত্রে শব্দগত পরিবর্তনও জায়েজ নয়। যেমন আজানের জন্য নির্ধারিত শব্দের স্থলে সমার্থবোধক অন্য কোনো শব্দ পাঠ করা জায়েজ নয়। অনুরূপভাবে নামাজের মধ্যে নির্দিষ্ট দোয়াগুলো। যেমন সানা, আত্তাহিয়্যাতু, দোয়ায়ে কুনুত ও রুকু-সিজদার তসবিহগুলো। এগুলোর অর্থ সম্পূর্ণভাবে ঠিক রেখেও কোনো রকম শব্দগত পরিবর্তন জায়েজ নয়। তেমনিভাবে সমগ্র কোরআন মজীদের শব্দাবলীও একই হুকুম (পবিত্র কোরআনুল কারিম, বাংলা অনুবাদ সংক্ষিপ্ত তাফসির, পৃ. ৪১—৪২, মূল তাফসির মারেফুল কোরআন, আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী রাহ., অনুবাদ ও সম্পাদনা, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, বাদশাহ ফাহদ, কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প, মদিনা মুনাওয়ারা)।
পবিত্র কোরআনের বিপথগামী ইহুদি-খ্রিস্টানধর্মীয় পণ্ডিত কর্তৃক আসমানিগ্রন্থে বিকৃতি ও অপব্যাখ্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এর মাধ্যমে (সামাজিক কর্তৃত্ব ও কায়েমি স্বার্থরক্ষার হীনউদ্দেশ্যে) সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার ব্যাপারে তিরস্কার এ অপকর্মের অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে।
পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবগুলোর (বিকৃতি ও বিলুপ্তি থেকে) সংরক্ষণে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি না থাকায় তা শাব্দিক ও মর্মগত বিকৃতি প্রতিরোধক ছিল না। পবিত্র কোরআনের বেলায় আল্লাহ সুস্পষ্টভাষায় কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত এর পূর্ণ হিফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন বলেই এর শাব্দিক বিকৃতি চৌদ্দশ’ বছরেও কারও পক্ষে সম্ভবপর হয়নি। কিন্তু অপব্যাখ্যা করে সাময়িকভাবে হলেও সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করা যায়।
‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি’— বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের এরূপ বাংলা অনুবাদই যথাযথ। এখানে আল্লাহ, রাহমান, রাহীম তিনটি শব্দের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি তাত্পর্যপূর্ণ তা হলো, রাহমান, রাহিম শব্দগুলোর বাংলা অর্থে সমার্থবোধক বিভিন্ন শব্দ ব্যবহৃত হতে পারে কিন্তু আল্লাহ শব্দের বেলায় সৃষ্টিকর্তা বা অন্যকোনো শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নেই। এটা অর্থগত বিকৃতি এবং অগ্রহণযোগ্য। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের অর্থ লেখা হয়েছে— পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে। যেখানে সৃষ্টিকর্তা শব্দটি আল্লাহ শব্দের বিকল্প হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এটি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম-এর শুদ্ধ ও সঠিক ভাষান্তর নয়। আরোপিত এই অনুবাদ আরবি ভাষাজ্ঞানে পারদর্শী ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিজ্ঞ কোনো আলিম কর্তৃক যে যাচাই ও সমর্থিত হয়নি তা স্পষ্ট। অথচ এটা অপরিহার্য ছিল। এ ধরনের খামখেয়ালি ইসলামের দৃষ্টিতে চরম গর্হিত কাজ।
আমাদের সংবিধান থেকে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বাদ দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বহু বিশিষ্ট আলিম ও শীর্ষস্থানীয় মুফতি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমাদের সরকার আল্লাহর প্রতি অনাস্থা দিল।’ আরেক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট রাজনীতিক অত্যন্ত জোরালো ও যৌক্তিক ভাষায় প্রশ্ন তুলেছেন—‘আল্লাহর ওপর যদি আস্থা না রাখতে পারি তাহলে কী শয়তানের ওপর রাখব?’ একজন মুমিন হিসেবে এ প্রশ্ন সংখ্যাগরিষ্ঠ সব নাগরিকের। মুসলিম শাসকদের এমন গর্হিত পদক্ষেপে মুসলমানমাত্রই ভাবিত না হয়ে উপায় নেই। ষ
লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক
সূত্র : আমার দেশ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন