“সুমান” ছানাটি তার নীড়ে গুটি শুটি মেরে এত টুকুন হয়ে বসে আছে। শীতে তার সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে। দুঃখে তার মন ভার হয়ে আছে। দু’চোখে জলের ধারা। একা বসে তার ভাগ্যের কথা ভাবছে। অপেক্ষা করছে মা কবে ফিরে আসবে। আদৌ ফিরে আসবে তো? সে দেশের পাষন্ড শিকারদের নির্মম গুলির আঘাত থেকে তারা নিজেদের বাঁচাতে পারবে তো ? তার খুব ভয় হচ্ছে। তা ছাড়া এত দিন সে নিজেই বা বেঁচে থাকবে তো ?
মা ও তার দুই বোন তাকে এখানে রেখে দক্ষিণাঞ্চলে গরমের দেশে চলে গেছে। শীতের সময় এখানে থাকা যায় না। প্রচন্ড শীত পড়ে। তবু তাকে এখানে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া কোন উপায়ও নেই। কারণ সে যে আহত-অসুস্থ। একদিন মাকে ফাঁকি দিয়ে ডানা মেলে উড়তে গিয়েছিল মুক্ত আকাশে। উড়েও ছিল কিছুক্ষণ, কিন্তু তা ক্ষণিকের জন্য। পরক্ষণেই এক শিকারীর গুলি এসে লাগল তার ডান পাখার নিচে। সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। এর পর কি হয়েছিল তা সে জানে না। যখন জ্ঞান ফিরলো, চোখ মেলে দেখে ‘মা’- তার মাথার পাশে বসে কাঁদছেন। সে পাখা নাড়তে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। যন্ত্রনায় কাঁফিয়ে উঠে। গ্রীষ্মকাল শেষ শরতের মাঝামাঝি এসেছে। সে ভাল হচ্ছে না। মা তার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নীরবে কাঁদে- “সুমান” পাখীর দল গরমের দেশে যেতে প্রস্তুত হচ্ছে।
একদিন ভোর বেলা মা তাকে এক গাছপালা ভরা সুন্দর বাগানে নিয়ে আসে। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলে- “আমরা দক্ষিণের গরমের দেশে চলে যাচ্ছি, তুমি তো যেতে পারবে না। সে বহু দুরের পথ, তুমি এই বাগানেই থাক। মজবুত করে একটি বাসা বানিয়ে দিয়েছি। ভেতরে কোমল কাপড় দিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা করছি। তাছাড়া ক্ষুধা লাগলে ইচ্ছামত ফলমুল খেতে পারবে বাগান থেকে। আমাদের জন্য কোন চিন্তা কর না। বসন্তকালে আবার ফিরে আসবো - ইনশাল্লাহ্ - আমি দোয়া করছি ইতিমধ্যে আল্লাহ তোমাকে সুস্থতা দান করবেন। তুমি আবার মনের সুখে উড়তে পারবে ঐ নীল আকাশে।
“সুমান”- ছানা মায়ের পাখার নিচে মাথা গুঁজে কাঁদতে লাগল। এরপর কখন যে মা চলে গেল সে বলতে ও পারলো না। তারপর খেয়ে না খেয়ে দুঃখে কষ্টে দিন কাটতে লাগল সুমান ছানার। এখন শীতের ভরা মওসুম। মাঝে মাঝে তুষারপাত হয় বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়ছে আজ বাইরে। বৃষ্টির একটি ফোঁটা পড়লো তার ছোট্ট নীড়ের উপর। সুমান ছানা শুনতে পেল বৃষ্টির ফোঁটা বলছে- আহ্! আমি বড্ড ক্লান্ত- সুমান ছানা বৃষ্টির ফোঁটাকে জিজ্ঞেস করলো তুমি কোত্থেকে এসেছ ভাই ?? সে বলল- “আমি অনেক পথ সফর করে এসেছি। আমি বৃষ্টির ফোঁটা নই। আমি এক দুঃখীনি মায়ের অশ্র“বিন্দু-”।
সুমান ছানা অবাক হয়ে বলল- অশ্র“বিন্দু! তুমি অশ্র“বিন্দু !! অশ্র“বিন্দু সত্যিই তুমি? সে বলল হ্যাঁ আমি এক দুঃখিনী মায়ের অশ্র“বিন্দু। আমি ছিলাম এক মা সুমানের চোখে। একদিন জোরে বাতাস বইছিল। তখন সেই সুমান পাখি বাতাসকে ডেকে বলল- এই যে ভাই বাতাস, আমার দু’টি কথা শুনে যাও। আমার নীড়ের উপর দিয়ে যাবার সময় আমার ছোট বাচ্চাটাকে এক নজর দেখে যেও। খাবার- দাবার যেন ঠিকমত খায়। আমরা ভাল আছি। তাকে ছেড়ে এসে আমাদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। সে যেন আমাদের জন্য কোন চিন্তা করে না”।
বাতাস জিজ্ঞেস করলো, তোমার বাচ্চা কোথায়? সে কেঁদে বলল- “সাগরের একেবারে শেষ মাথায়। এক মনোরম বাগানের বড় এক গাছের ছোট্ট নীড়ে থাকে। তুমি ভূলে যেওনা কিন্তু”। যখন মা ‘সুমান’ কথা গুলো বলছিল তখন টপ করে তার চোখ থেকে পড়লাম। আর অমনি বাতাস আমাকে মাটিতে পড়ার আগেই লুফে নিল এবং কোলে করে এখানে নিয়ে এল।
অশ্র“বিন্দুর কথা শুনে ‘সুমান’ ছানার ব্যথিত মন খুশিতে ভরে গেল। বলল- “আল-হামদুলিল্লাহ্ ... আমার মা তাহলে ভাল আছেন। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই অশ্র“বিন্দু।
মা চলে যাওয়ার পর এই প্রথম ‘সুমান’ ছানা নিশ্চিন্তে ঘুমাল। আর তার মনে হলে মা যেন তার পাশেই শুয়ে আছেন।
বিঃ দ্রঃ গল্পটি আরব্য রূপকথা অবলম্বনে লিখা হয়েছে।
সূত্র : সোনার বাংলাদেশ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন