শুনেছি আপোস ছাড়া কবিরা বাঁচতে পারে না আমি আার কত আপোস করবো। সকাল দুপুর সারা বেলাই তো আপোস করছি কিন্তু আত্মরার জায়গা কোথায় আমার কখনো কখনো মাটির নীচে ভ০ালো আশ্রয় হয় আমি কি তাহলে অভ্যন্তরেই ঢুকে পড়বো।
কতো সহজ এই অভিব্যক্তি প্রকাশের ভাষা, কতো সাবলীল; অথচ কতো হৃদয়নিংড়ানো। ‘লেখকের লেখা হইতেছে তাঁহার প্রাণের সত্য অভিব্যক্তি।’ কাজী নজরুল ইসলামের এ কথাটিকে ধ্র“ব ধরে নিয়ে গোলাম মোহাম্মদের এই অভিব্যক্তিকে তাঁরই প্রাণের সত্য অভিব্যক্তি হিসেবে আমরা গ্রহণ করতে পারি; আর আমর যদি ঠিক তাই করি, তবে আমাদের সমাজে কবিদের আত্মরার কোন জায়গার খুঁজে পাবো না, ‘মাটির নীচে’ ছাড়া। গোলাম মোহাম্মদ একজন কবিই ছিলেন; আর তাই তাঁরও আশ্রয় হয়েছে মাটির নীচেই।‘জীবনের পরম সত্য কবির চিরকালের জানা।’ গোলাম মোহাম্মদ তাই জেনেছিলেন। ফলে তার অভিব্যক্তি প্রকাশের ভাষা যত সহজ ততই সহজ সে-ভাষায় হৃদয়ের দখল প্রতিষ্ঠা। গোলাম মোহাম্মদ জানতেন, কিভাবে ‘নিরেট পাথরকুচি সহসা হয়ে ওঠে দ্যুতিময় সুখের হীরক।’ তিনি জানতেন, কিভাবে ‘জাদুবাস্তব গোল্ডফিশ একটা একটা মুদ্রা ছড়াতে থাকে। তাঁর বোধের অগম্য ছিলো না, ‘কবির সোনার কাঠিতে নড়ে ওঠে মৃতজীর্ণ ঘাসহীন প্রান্তর।’
‘অন্যের ঠিক প্রানে গিয়া আঘাত করিবার মতো শক্তি পাইতে নিজের প্রাণ থাকা চাই।’ গোলাম মোহাম্মদ এই প্রাণ নিয়েই আবিভূর্ত হয়েছেন আমাদের কবিতায়, গীতি কবিতায়। গোলাম মোহাম্মদের এই প্রাণটি কোন অতল সমুদ্রে ডুব দিয়েছিলে সেই রহস্যের অনুসন্ধানই তার বিশিষ্টতার দিক নির্ণায়ক। ইতোমধ্যে প্রকাশিত ‘কবি গোলাম মোহাম্মদ রচনা সমগ্র’ সেই দিক নির্ণায়ক খোঁজার পথ সহজ করে দিয়েছে। রচনা সমগ্রের প্রকাশিত প্রথম খন্ডটিতে কবির জীবদ্দশায় প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থাবলী ও জনপ্রিয় গীতিকথা সমূহের সঞ্চয় হয়েছে। ১৯৫৯-২০০২, মাত্র ৪৩ বছরের জীবনে, প্রায় ৩ দশকের সাহিত্য সাধনায় গোলাম মোহাম্মদ বাংলা ভাষার কতটা তাৎপর্যময় কবি হয়ে উঠেছেন সেটা এ গ্রন্থটি সামনে রেখে বিচার-বিবেচনা করা সহজ। রচনা সমগ্রের সম্পাদনা কর্মটি সাধিত হযেছে আবদুল মান্নান সৈয়দের হাতে। অত্যন্ত যতœ ও আন্তরিকতার সাথেই এটি সম্পাদিত হয়েছে। এর পেছনে কাজ করেছে শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা। প্রয়োজনীয় উলেখযোগ্য তথ্যবলীও এতে সংগৃহীত হয়েছে। ৫টি কাব্যগ্রন্থ, ২টি শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ, হামদ-নাত ও গান শিরোনামে গীতিগুচ্ছ, কয়েকটি গদ্যরচনা ও একটি অভিভাষর্ণ গোলাম মোহাম্মদ রচনা সমগ্রের প্রথম খন্ডে স্থান পেয়েছে। এসব মোহাম্মদ রচনা সমগ্রের প্রথম খন্ডে স্থান পেয়েছে। এসব রচনার ভেতর থেকে গোলাম মোহাম্মদের মানস লোক দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
গোলাম মোহাম্মদের সবধনের রচনার মধ্যে যে বিশেষ আবহতি পরিদৃশ্য, তা হচ্ছে পবিত্রতা। পবিত্রতার এই কোমল পরমাটি তার সব রচনার মধ্যেই বিদ্যমান। গোটা বাংলা সাহিত্যে এমন পবিত্র আলোক ছড়ানো কবির সংখ্যা নিতান্তই কম। গোলাম মোহাম্মদের কাছে ‘কবিতা আত্মার মতো’ আর তাই পবিত্রার পরশে, চিত্রকল্পের লবাণ্যে উপস্থাপনের ভঙ্গিতে শব্দাবলীর পারস্পারিক সুসম্পর্কে তাঁর কবিতার তাঁরই আত্মার আলোক হিসেবে ফুটে উঠেছে বাংলা সাহিত্যে গোলাম মোহাম্মদ এই পবিত্রতা অর্জনের অনুষ্ঠানে নিবিষ্ট ছিলেন গোটা জীবন। আমরা তারই একটি কবিতা থেকে পেশ করতে পারি- কবিতার নাম ‘বিনীত সময়।’
নরম হেজাব ঢাকা রাত যেন কামিনীর মুখ বিনীত সময় আর নিজেকে নিকেশ করা বীরাল চাবুক কিছুই যায় না দেখা, দেখা যায় নিজেকে শুধুই কোলাহল থেমে যায় নীরব সময় নড়ে বাসা বোনে দিলেন বাবুই।
অন্ধকার নয় যেন আলোর কুসুম তাতে ওযে রাত যত গাঢ় হয় দিন তত কাছে আসে ক্রমে প্রশান্তির সালাতের প্রার্থনার লম্বমান সময় এ-রাত জাগতিক ভার ফেলে অবসাদে স্তবদ্ধ নত কাত নরম নিবিড় রাত শান্তির কম্বল গায় নিরাপদ যুদ্ধহীন; আয়োজন তুলে রেখে পৃথিবী ঘুমায় যেই রাতে সিজদার স্মরণের বিনীত সময় সে রাতে আঁধার নেই, আলো আর আলোর বিজয়।
সালাত ও সিদার সাথে এই বিস্ময়কর সম্পর্কের মধ্যদিয়েই গোলাম মোহাম্মদের কবিতায় পরিবত্রতার আবহটি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলার চিন্তাজগৎ থাকে মরমী চেতনা’ বলে তার আধুনিক মননঋদ্ধ আদলটি গোলাম মোহাম্মদের হচ্ছে, শিতি শুদ্ধচিত্ত ক্রম বিকশিত গোলাম মোহাম্মদ। এত পরিশীলিত তার বোধ ও বোধের বিন্যাস যে, শিল্পের সীমাস্থলন সম্পর্কে তিনি সর্বদা জাগ্রত ছিলেন। ‘নরম হেজার ঢাক’ আর রাতের রূপক, ‘কামিনার মুখ’ তার রাতের উপো; আর যখন তখন বিনীত বিশেষণে সিক্ত ঠিক সেই রাতে তিনি হাতে তুলে নিয়েছেন। নিজেকে নিকেশ করা ধারালো চাবুক’। যখন কিছুই দেখা যায় না, তখন নিজেকেই নিজের সামনে হাজির করেন গোলাম মোহাম্মদ। তারপর সকল কোলাহল স্তব্ধ হয়ে গেলে নীরবতার নড়চড়া প্রত্য করেন তিনি। এ-সময় বাসা বুনে চলে তার ‘দিলের বাবুই’। এমন রাতে তাৎপর্য অতপর তীব্রভাবে বাঙময় হয়ে ওঠে কবিতাটির দ্বিতীয় চরনে। এ-রাত অন্ধকার নয় মূরত, এ-রাতে আলোর কুসুম ওসে। এ-রাত যত গাঢ় হতে থাকে দিন তত নিকটতম হতে থাকে। ফলে গোলাম মোহাম্মদ, এ-রাতকে অভিহিত করেন প্রশান্তির, সালাতে, প্রার্থনার লম্বমান রাত হিসেবে। আধুনিক বাংলা কবিতায় গোলাম মোহাম্মদের এই অভিব্যক্তি অবিস্মরনীয় স্বতন্ত্র। এভাবেই তার কবিতায় পবিত্রতার ভাবাবহটি সৃষ্টি হয়েছে। খেয়ালের দাসত্ব করা যেহেতু তাঁর রাতে ছিলো না, সে-কারণেই পবিত্রা অর্জনের অনুষ্ঠানে তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। খেয়ালের দাসত্বকারীদের জন্য তিনি আফসোস করেছেন।-
কতো সহজ এই অভিব্যক্তি প্রকাশের ভাষা, কতো সাবলীল; অথচ কতো হৃদয়নিংড়ানো। ‘লেখকের লেখা হইতেছে তাঁহার প্রাণের সত্য অভিব্যক্তি।’ কাজী নজরুল ইসলামের এ কথাটিকে ধ্র“ব ধরে নিয়ে গোলাম মোহাম্মদের এই অভিব্যক্তিকে তাঁরই প্রাণের সত্য অভিব্যক্তি হিসেবে আমরা গ্রহণ করতে পারি; আর আমর যদি ঠিক তাই করি, তবে আমাদের সমাজে কবিদের আত্মরার কোন জায়গার খুঁজে পাবো না, ‘মাটির নীচে’ ছাড়া। গোলাম মোহাম্মদ একজন কবিই ছিলেন; আর তাই তাঁরও আশ্রয় হয়েছে মাটির নীচেই।‘জীবনের পরম সত্য কবির চিরকালের জানা।’ গোলাম মোহাম্মদ তাই জেনেছিলেন। ফলে তার অভিব্যক্তি প্রকাশের ভাষা যত সহজ ততই সহজ সে-ভাষায় হৃদয়ের দখল প্রতিষ্ঠা। গোলাম মোহাম্মদ জানতেন, কিভাবে ‘নিরেট পাথরকুচি সহসা হয়ে ওঠে দ্যুতিময় সুখের হীরক।’ তিনি জানতেন, কিভাবে ‘জাদুবাস্তব গোল্ডফিশ একটা একটা মুদ্রা ছড়াতে থাকে। তাঁর বোধের অগম্য ছিলো না, ‘কবির সোনার কাঠিতে নড়ে ওঠে মৃতজীর্ণ ঘাসহীন প্রান্তর।’
‘অন্যের ঠিক প্রানে গিয়া আঘাত করিবার মতো শক্তি পাইতে নিজের প্রাণ থাকা চাই।’ গোলাম মোহাম্মদ এই প্রাণ নিয়েই আবিভূর্ত হয়েছেন আমাদের কবিতায়, গীতি কবিতায়। গোলাম মোহাম্মদের এই প্রাণটি কোন অতল সমুদ্রে ডুব দিয়েছিলে সেই রহস্যের অনুসন্ধানই তার বিশিষ্টতার দিক নির্ণায়ক। ইতোমধ্যে প্রকাশিত ‘কবি গোলাম মোহাম্মদ রচনা সমগ্র’ সেই দিক নির্ণায়ক খোঁজার পথ সহজ করে দিয়েছে। রচনা সমগ্রের প্রকাশিত প্রথম খন্ডটিতে কবির জীবদ্দশায় প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থাবলী ও জনপ্রিয় গীতিকথা সমূহের সঞ্চয় হয়েছে। ১৯৫৯-২০০২, মাত্র ৪৩ বছরের জীবনে, প্রায় ৩ দশকের সাহিত্য সাধনায় গোলাম মোহাম্মদ বাংলা ভাষার কতটা তাৎপর্যময় কবি হয়ে উঠেছেন সেটা এ গ্রন্থটি সামনে রেখে বিচার-বিবেচনা করা সহজ। রচনা সমগ্রের সম্পাদনা কর্মটি সাধিত হযেছে আবদুল মান্নান সৈয়দের হাতে। অত্যন্ত যতœ ও আন্তরিকতার সাথেই এটি সম্পাদিত হয়েছে। এর পেছনে কাজ করেছে শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা। প্রয়োজনীয় উলেখযোগ্য তথ্যবলীও এতে সংগৃহীত হয়েছে। ৫টি কাব্যগ্রন্থ, ২টি শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ, হামদ-নাত ও গান শিরোনামে গীতিগুচ্ছ, কয়েকটি গদ্যরচনা ও একটি অভিভাষর্ণ গোলাম মোহাম্মদ রচনা সমগ্রের প্রথম খন্ডে স্থান পেয়েছে। এসব মোহাম্মদ রচনা সমগ্রের প্রথম খন্ডে স্থান পেয়েছে। এসব রচনার ভেতর থেকে গোলাম মোহাম্মদের মানস লোক দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
গোলাম মোহাম্মদের সবধনের রচনার মধ্যে যে বিশেষ আবহতি পরিদৃশ্য, তা হচ্ছে পবিত্রতা। পবিত্রতার এই কোমল পরমাটি তার সব রচনার মধ্যেই বিদ্যমান। গোটা বাংলা সাহিত্যে এমন পবিত্র আলোক ছড়ানো কবির সংখ্যা নিতান্তই কম। গোলাম মোহাম্মদের কাছে ‘কবিতা আত্মার মতো’ আর তাই পবিত্রার পরশে, চিত্রকল্পের লবাণ্যে উপস্থাপনের ভঙ্গিতে শব্দাবলীর পারস্পারিক সুসম্পর্কে তাঁর কবিতার তাঁরই আত্মার আলোক হিসেবে ফুটে উঠেছে বাংলা সাহিত্যে গোলাম মোহাম্মদ এই পবিত্রতা অর্জনের অনুষ্ঠানে নিবিষ্ট ছিলেন গোটা জীবন। আমরা তারই একটি কবিতা থেকে পেশ করতে পারি- কবিতার নাম ‘বিনীত সময়।’
নরম হেজাব ঢাকা রাত যেন কামিনীর মুখ বিনীত সময় আর নিজেকে নিকেশ করা বীরাল চাবুক কিছুই যায় না দেখা, দেখা যায় নিজেকে শুধুই কোলাহল থেমে যায় নীরব সময় নড়ে বাসা বোনে দিলেন বাবুই।
অন্ধকার নয় যেন আলোর কুসুম তাতে ওযে রাত যত গাঢ় হয় দিন তত কাছে আসে ক্রমে প্রশান্তির সালাতের প্রার্থনার লম্বমান সময় এ-রাত জাগতিক ভার ফেলে অবসাদে স্তবদ্ধ নত কাত নরম নিবিড় রাত শান্তির কম্বল গায় নিরাপদ যুদ্ধহীন; আয়োজন তুলে রেখে পৃথিবী ঘুমায় যেই রাতে সিজদার স্মরণের বিনীত সময় সে রাতে আঁধার নেই, আলো আর আলোর বিজয়।
সালাত ও সিদার সাথে এই বিস্ময়কর সম্পর্কের মধ্যদিয়েই গোলাম মোহাম্মদের কবিতায় পরিবত্রতার আবহটি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলার চিন্তাজগৎ থাকে মরমী চেতনা’ বলে তার আধুনিক মননঋদ্ধ আদলটি গোলাম মোহাম্মদের হচ্ছে, শিতি শুদ্ধচিত্ত ক্রম বিকশিত গোলাম মোহাম্মদ। এত পরিশীলিত তার বোধ ও বোধের বিন্যাস যে, শিল্পের সীমাস্থলন সম্পর্কে তিনি সর্বদা জাগ্রত ছিলেন। ‘নরম হেজার ঢাক’ আর রাতের রূপক, ‘কামিনার মুখ’ তার রাতের উপো; আর যখন তখন বিনীত বিশেষণে সিক্ত ঠিক সেই রাতে তিনি হাতে তুলে নিয়েছেন। নিজেকে নিকেশ করা ধারালো চাবুক’। যখন কিছুই দেখা যায় না, তখন নিজেকেই নিজের সামনে হাজির করেন গোলাম মোহাম্মদ। তারপর সকল কোলাহল স্তব্ধ হয়ে গেলে নীরবতার নড়চড়া প্রত্য করেন তিনি। এ-সময় বাসা বুনে চলে তার ‘দিলের বাবুই’। এমন রাতে তাৎপর্য অতপর তীব্রভাবে বাঙময় হয়ে ওঠে কবিতাটির দ্বিতীয় চরনে। এ-রাত অন্ধকার নয় মূরত, এ-রাতে আলোর কুসুম ওসে। এ-রাত যত গাঢ় হতে থাকে দিন তত নিকটতম হতে থাকে। ফলে গোলাম মোহাম্মদ, এ-রাতকে অভিহিত করেন প্রশান্তির, সালাতে, প্রার্থনার লম্বমান রাত হিসেবে। আধুনিক বাংলা কবিতায় গোলাম মোহাম্মদের এই অভিব্যক্তি অবিস্মরনীয় স্বতন্ত্র। এভাবেই তার কবিতায় পবিত্রতার ভাবাবহটি সৃষ্টি হয়েছে। খেয়ালের দাসত্ব করা যেহেতু তাঁর রাতে ছিলো না, সে-কারণেই পবিত্রা অর্জনের অনুষ্ঠানে তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। খেয়ালের দাসত্বকারীদের জন্য তিনি আফসোস করেছেন।-
বুকের ভেতর বাউল কথার বাস মানুষ যে আজ কোন খেয়ালের দাস!
এই বাউল কথায় গোলাম মোহাম্মদ খেয়ালি হয়ে ওঠেননি, হয়েছেন সিজদাবনত। তিনি জানতেন-
নামায হলে শুদ্ধ সহি খাঁটি জীবন হবে তবেই পরিপাটি
ফুলের মতো বইবে মধুর ঘ্রাণ
চাঁদের মতো হাসবে তোমার গা-টি।
গোলাম মোহাম্মদের কাব্যিক বৈশিষ্ট্যটি রোমান্টিক। পবিত্রতার বাতাবরনে স্বপ্নকল্পনার জগৎ সৃষ্টিতে তার পারস্মতা প্রতিষ্ঠিত। তার কল্পনার জগৎ কতদূর বিস্তার লাভ করেছিল, কিসের সন্ধানে বি¯তৃত হয়েছিলো-
সে কেমন ছিলো প্রথম সূর্যোদয়
প্রথম মানব -মানবীর পরিচয়
প্রথম বাতাস শুনাল কিসের গান
পাখির কণ্ঠে কিসের খুশির বান।
কেমন সে ছিলো প্রথশ আনারফুল
প্রথম পোষাক কুঞ্চিত কালোচুল
বন-মর্মর নদীর নতুন কূল
ধূ-ধূ প্রান্তর ঘরহীন সঙ্কুল
পুরোটা পৃথিবী দু’জন মানুষ মোটে
কি কথা প্রথম বেজে উঠেছিলো ঠোঁটে
কেমন কেটেছে ফুলেল প্রথম দিন
কি খাবার খেয়ে কিংবা খাবারহীন।
ছিলো কি চন্দ্র আসমানে সারারাত
রজনীগন্ধ ছিলো কি বাগান ভরে
রাতজাগা পাখি কোন গান করেছিলো
সারারাত জেগে অনুনয় করে করে।
এই কল্পাচিত্রে গোলাম মোহাম্মদের রোমন্টিক কবি-মানস উদ্ভাসিত। নিতান্ত সরল পদ্যের আঙ্গিকে একজন তুমুল কবির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। ‘প্রথম সূর্যোদয়’ নামের এ-কবিতাটির প্রথম স্তবকেই তিনি পাঠককে সুদূর অতীতের এমন একটি সময়ে নিয়ে গেছেন, যখন-
পৃথিবীতে এলো মানুষের আদি পিতা
পৃথিবীতে এলো প্রথম যুগলজন
নয়া পৃথিবীর মাটিতে নতুন পা
নতুন বৃ, নতুন পুষ্প-বন।
এমন কল্পনা পাঠক-মানসে শিহরন না তুলে পারে না। এই কল্পনার মধ্যেও আছে পবিত্রতার সূ পরম আর বিশ্বাসী চিন্তার বলিষ্ট স্বার। পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটেছে বেহেস্ত থেকে। বিশ শতকে পৃথিবীর চিন্তা জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ডারউইনের বিবর্তনবাদ, বিজ্ঞানের ছাত্র গোলাম মোহাম্মদকে একটুও স্পর্শ করেনি। এমন বিভ্রান্ত চিন্তা থেকে তিনি বিমুক্ত ছিলেন। কবিতার শেষ স্তবকে বেহেস্ত থেকে প্রথম মানুষকে তিনি পূত পবিত্রজন বলে উলেখ করেছেন।
সময়ের চলমানতা গোলাম মোহাম্মদের চিন্তাজগতকে নানাভাবে আলোড়িত করেছে। বেশিরভাগ েেত্রই তার চিন্তাগত ‘সময়’ মৃত্যু চেতনার সঙ্গী হয়েছে।
সময়েই তো হিমালয়ের বরফ গলিয়ে নদী বানায়
শীতার্ত পাখিদের মতো এদেশ সেদেশ ঘুরে ঘুরে আশ্রয় খোঁজে সেদিন দেখলাম যমুনা সেতুর নীচ দিয়ে সবেগে সময় বয়ে যাছে। অনেকে মাথার সাদা চুল দেখে হাসে কেউ কেউ বলে এতো সময়ের কাজ ঢলে পড়া সূর্যের গোঙানির ভেতর সময়ের লালগুড়ো যেমন কারুময় কষ্টের।
একটি অসাধারণ চিত্রকল্পের ভেতর দিয়ে পরিষ্ফুট হয়ে উঠেছে কবি গোলাম মোহাম্মদের সময় দর্শন। ‘ঢলে পড়া সূর্যের মধ্যে তিনি সময়ের লালগুড়ো দেখতে পেয়েছেন। যা পাঠকের মনে অস্ত যাওয়ার চিন্তাকে জাগিয়ে তোলে। অস্তগামী সূর্য আর সাদা চুলের মানুষকে তিনি সমান্তরালে স্থাপন করেছেন। এই কারুময় চিত্র তার কাছের ছিলো কষ্টের। অন্য একটি কবিতায় তিনি বলেছেন-ধূসর ডানার মৃত্যুরা কত মানুষ নিয়ে যাচ্ছে এই সত্য মেনে নিতে অনেক রকম কষ্ট।
এত কষ্টের পরও গোলাম মোহাম্মদ বলেছেন-
মানুষ তো কিছুতেই দূরে যেতে পারে না চোখের তারায় তার ছবি আঁকা থাকে ছায়ার মতোই ঘুরে বেড়ায় উপস্থিতি মানুষ কি সত্যিই দূরে যেতে পারে।
না, মানুষ দূরে যেতে পারে না, গোলাম মোহাম্মদ ও দূরে যেতে পারেননি, তার কবিতার মধ্যেই তার ছবি আঁকা আছে, তার কবিতার মধ্যেই তিনি ছায়ার মতো বিরাজ করছেন। পবিত্র মানসলোকেই শহীদদের মতো তাঁকে জীবন্ত রেখেছে।
গোলাম মোহাম্মদের প্রিয় মানুষদের একজন ছিলেন আলীয়া আলী ইজেতবেগোভিচ। আলীয়া বস নিয়ার মুসলমানদের নেতাই শুধু ছিলেন না, বিশ শতকের একজন চিন্তানায়ক হিসেবেও বেতাই প্রসিদ্ধ। বিশ্ববাসের ভিত্তি থেকে আধুনিক যুইবিজ্ঞার জবাব দিয়েছেন তিনি। গোলাম মোহাম্মদের জীবন ও কাব্য চেতনা আলীমিয়ার চিন্তা চেতনারই সমান্তরাল। গোলাম মোহাম্মদের চেতনায় আমরা যে মরমীবোধের সন্ধান পেয়েছে, তার পাশাপাশি উপাস্থিত ছিলো তার জাগতিক বোধ। ‘নয়’ এর সাথে ‘প্রতিনয়’ এর যে সমন্বয় আবিষ্কার করেছেন আলীয়া, গোলাম মোহাম্মদ সেই সমন্বয়ের কবি। ফলে গোলাম মোহাম্মদের স্বপ্ন হয়ে উঠেছিলো সর্বাতœক সামাজিক বিপব। তার অনুভবে আলীয়া’র অবস্থানও ছিলো বৈপবিক। ফলে গোলাম মোহাম্মদ তার সেই পবিত্রতাজারিত মরমী কিবাং অধ্যাত্মচেতনার একটি সর্বাতœক সামাজিক বিপবের সবগুলো রঙে পৃথিবীকে রাঙিয়ে তুলতে চেয়েছে-
যে ঘরে যোদ্ধার লাশ ফিরে এসেছে তাদের ভালবাসা কত রক্তাক্ত ভালোবাসার জন্যই এখন পৃথিবীর একশ কোটি মানুষ বারুদের মুখে খাড়া হচ্ছে তাহলে কি আমদের ভালবাসা শহীদের রক্তের মতো মৃত্যুহীন লাল?
নাকি একটি সর্বাতœক বিপবের মতো সবগুলো রঙ বেনিআসহকলা।
গোলাম মোহাম্মদ প্রার্থনায় নিমগ্র হতে চেয়েছেন একটি সর্বাতœক বিপবের জন্যই একই কারণে করেছেন পবিত্রতার অনুষ্ঠান। এরই মধ্যদিয়ে তিনি ঘটাতে চেয়েছেন আত্মার মুক্তি। তাঁর ‘হে ঘুম’ নামক কবিতাটি আমরা তুলে ধরতে পারি।-
হে ঘুম জড়তা অবসাদসময়ের চলমানতা গোলাম মোহাম্মদের চিন্তাজগতকে নানাভাবে আলোড়িত করেছে। বেশিরভাগ েেত্রই তার চিন্তাগত ‘সময়’ মৃত্যু চেতনার সঙ্গী হয়েছে।
সময়েই তো হিমালয়ের বরফ গলিয়ে নদী বানায়
শীতার্ত পাখিদের মতো এদেশ সেদেশ ঘুরে ঘুরে আশ্রয় খোঁজে সেদিন দেখলাম যমুনা সেতুর নীচ দিয়ে সবেগে সময় বয়ে যাছে। অনেকে মাথার সাদা চুল দেখে হাসে কেউ কেউ বলে এতো সময়ের কাজ ঢলে পড়া সূর্যের গোঙানির ভেতর সময়ের লালগুড়ো যেমন কারুময় কষ্টের।
একটি অসাধারণ চিত্রকল্পের ভেতর দিয়ে পরিষ্ফুট হয়ে উঠেছে কবি গোলাম মোহাম্মদের সময় দর্শন। ‘ঢলে পড়া সূর্যের মধ্যে তিনি সময়ের লালগুড়ো দেখতে পেয়েছেন। যা পাঠকের মনে অস্ত যাওয়ার চিন্তাকে জাগিয়ে তোলে। অস্তগামী সূর্য আর সাদা চুলের মানুষকে তিনি সমান্তরালে স্থাপন করেছেন। এই কারুময় চিত্র তার কাছের ছিলো কষ্টের। অন্য একটি কবিতায় তিনি বলেছেন-ধূসর ডানার মৃত্যুরা কত মানুষ নিয়ে যাচ্ছে এই সত্য মেনে নিতে অনেক রকম কষ্ট।
এত কষ্টের পরও গোলাম মোহাম্মদ বলেছেন-
মানুষ তো কিছুতেই দূরে যেতে পারে না চোখের তারায় তার ছবি আঁকা থাকে ছায়ার মতোই ঘুরে বেড়ায় উপস্থিতি মানুষ কি সত্যিই দূরে যেতে পারে।
না, মানুষ দূরে যেতে পারে না, গোলাম মোহাম্মদ ও দূরে যেতে পারেননি, তার কবিতার মধ্যেই তার ছবি আঁকা আছে, তার কবিতার মধ্যেই তিনি ছায়ার মতো বিরাজ করছেন। পবিত্র মানসলোকেই শহীদদের মতো তাঁকে জীবন্ত রেখেছে।
গোলাম মোহাম্মদের প্রিয় মানুষদের একজন ছিলেন আলীয়া আলী ইজেতবেগোভিচ। আলীয়া বস নিয়ার মুসলমানদের নেতাই শুধু ছিলেন না, বিশ শতকের একজন চিন্তানায়ক হিসেবেও বেতাই প্রসিদ্ধ। বিশ্ববাসের ভিত্তি থেকে আধুনিক যুইবিজ্ঞার জবাব দিয়েছেন তিনি। গোলাম মোহাম্মদের জীবন ও কাব্য চেতনা আলীমিয়ার চিন্তা চেতনারই সমান্তরাল। গোলাম মোহাম্মদের চেতনায় আমরা যে মরমীবোধের সন্ধান পেয়েছে, তার পাশাপাশি উপাস্থিত ছিলো তার জাগতিক বোধ। ‘নয়’ এর সাথে ‘প্রতিনয়’ এর যে সমন্বয় আবিষ্কার করেছেন আলীয়া, গোলাম মোহাম্মদ সেই সমন্বয়ের কবি। ফলে গোলাম মোহাম্মদের স্বপ্ন হয়ে উঠেছিলো সর্বাতœক সামাজিক বিপব। তার অনুভবে আলীয়া’র অবস্থানও ছিলো বৈপবিক। ফলে গোলাম মোহাম্মদ তার সেই পবিত্রতাজারিত মরমী কিবাং অধ্যাত্মচেতনার একটি সর্বাতœক সামাজিক বিপবের সবগুলো রঙে পৃথিবীকে রাঙিয়ে তুলতে চেয়েছে-
যে ঘরে যোদ্ধার লাশ ফিরে এসেছে তাদের ভালবাসা কত রক্তাক্ত ভালোবাসার জন্যই এখন পৃথিবীর একশ কোটি মানুষ বারুদের মুখে খাড়া হচ্ছে তাহলে কি আমদের ভালবাসা শহীদের রক্তের মতো মৃত্যুহীন লাল?
নাকি একটি সর্বাতœক বিপবের মতো সবগুলো রঙ বেনিআসহকলা।
গোলাম মোহাম্মদ প্রার্থনায় নিমগ্র হতে চেয়েছেন একটি সর্বাতœক বিপবের জন্যই একই কারণে করেছেন পবিত্রতার অনুষ্ঠান। এরই মধ্যদিয়ে তিনি ঘটাতে চেয়েছেন আত্মার মুক্তি। তাঁর ‘হে ঘুম’ নামক কবিতাটি আমরা তুলে ধরতে পারি।-
তোমরা আমাকে নি®কৃতি দাও।
আমাকে কথা বলতে দাও পরম সত্যের সাথে
আমাকে বলতে দাও, অশ্র“ ফেলতে দাও
বিনীত উচ্চারণে আমাকে প্রার্থনা করতে দাও
তোমাদের সাথে তো আছি ৪২ বছর
ঘুমে অলসতায় অসতর্ক চেতনাহীন।
হে কান্তি
নিমগ্ন হতে দাও যিকিরে যিকিরে
ডুবে যেতে দাও অনন্ত সুরের সাথে
আমাকে উচ্চারণ করতে দাও মাগফেরাতের
শব্দমালা, পবিত্র কালামের ভাষা
শব্দের অলঙ্কারে ধ্বনির মাধুর্তে হৃদয়ের
সবটুকু নিবেদন।
আমাকে জাগতে দাও। কাঁদতে দাও
চাইতো দাও প্রভুর কাছে দু’হাত ভরে।
জিহাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রস্তুতি
হেদায়েতের সরল সুপথ।
পবিত্রার পরশে মানবজীবনের গঠন, পুনর্গঠনই ছিলো গোলাম মোহাম্মদের চিন্তাজগতের কেন্দ্রীয় বিষয়। তিনি যে সর্বাতœক বিপবের কথা বলেছেন সে-বিপবও সিক্ত হয় পবিত্রতার নির্যাসে। সময়কে তিনি পবিত্রতার রঙে রাঙাত চেয়েছেন; আর এই পবিত্রতার রঙ হচ্ছে স্বয়ং আলাহ রঙ। স্বয়ং আলাহ মানুষকে তাগিদে করেছেন আলাহর রঙে রঙিন হতে যে রঙ মানুষকে বাউল দুঃখে জর্জরিত করে না, যে রঙ মানববন্ধে বাউল ব্যাথার বাসা বোনে না। সে রঙের সন্ধানেই গোলাম মোহাম্মদের সিজদার আরে জমজম ———-এখন দিন নেই- রাত নেই সময়ের গুড়েগুলো আশ্চর্য দানার মতো মূল্যবান মোহনীয় একটি একটি রুকু অগণিত রুকু একটি একটি সিজদা আগনি সিজদার আরে জমজম। গোটা বাংলা সাহিত্যে গোলাম মোহাম্মদ তাঁর সমকালীন কবিদের মধ্যে এই একটি কারণেই বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। অতি অনায়সে আমরা তাকে পবিত্রার কবি হিসেবে অভিষিক্ত করতে পারি। কাব্যশিল্পের নিপুর্ণতা ও চিন্তাশিল্পের শুদ্ধতা গোলাম মোহাম্মদের কবিতাকে একটি দার্শনিক বিশিষ্টতা ও দান করেছে। ফলে বাংলা কবিতায় তিনি একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন ও দখল করে নিয়েছেন। গোলাম মোহাম্মদের কবিতার ব্যাপক গঠন পাঠকের মধ্যে দিয়ে আমাদের মনোজগতে পবিত্রতার আলোক ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং তাঁর মর্যাদাপূর্ণ আসনটি নিশ্চিত করতে পারে।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন