বরগুনার বেতাগী উপজেলার ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে বিবিচিনি শাহী মসজিদ অন্যতম। সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট। দেয়ালগুলো ৬ ফুট চওড়া। দক্ষিণ এবং উত্তর দিকে তিনটি দরজা রয়েছে। এগুলো খিলানের সাহায্যে নির্মিত হয়। মসজিদের ইটগুলো বর্তমানের আধুনিক যুগের ইটের মতো নয়। এগুলো মুঘল আমলের তৈরি ইটের মাপের মতো। ইটের দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওড়া। সমতল ভূমি মসজিদ নির্মিত স্থানটি আনুমানিক কমপক্ষে ৩০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর অবস্থিত। তার ওপর প্রায় ২৫ ফুট মসজিদ গৃহ। শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ ছিলেন এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। তিনি নামজাদা কলুষমুক্ত পীর বলে পরিচিত ছিলেন। এই প্রিয় ব্যক্তিত্বের অনেক অলৌকিক ঘটনা রয়েছে। জানা যায়, ওই সময় বিষখালী নদীর পানি ছিল লবণাক্ত। পানের উপযোগী ছিল না। সুপেয় পানির অভাবে জনগণ বহু কষ্ট পেত। নেয়ামত শাহ্ মানুষের এই কষ্টের কথা অনুভব করে তার সাধকতার আশ্চর্য তসবিহটি বিষখালী নদীতে ধুয়ে দিলে পানি হয়ে যায় সুপেয়। আজও সেই পানি একই অবস্থায় রয়েছে। তা ছাড়া সে যুগে সুন্দরবনসংলগ্ন বিষখালী নদীতে অসংখ্য কুমির ছিল। তার অলৌকিক প্রচেষ্টায় বিবিচিনিসংলগ্ন বিষখালী নদী এলাকায় কোনো কুমির আসত না। এসব কাহিনী এখনো এ এলাকায় প্রচলিত রয়েছে। এ দর্শনীয় শোভা বর্ধনকারী মসজিদটি ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের ঘটনা, যা মানুষের মনে কৌতূহল সৃষ্টি করে। শোনা যায়, আগেকার সময় স্বপ্নেপ্রাপ্ত দূরবর্তী অনেক লোক এ মসজিদ থেকে গুপ্তধন নিয়ে যেত। প্রতিদিন এখানে অগণিত নারী-পুরুষ এসে নামাজ আদায় করত নেক মকসুদ পূরণের আশায়। এ ছাড়া টাকা-পয়সা ও অন্যান্য মানতের মালামাল রেখে যেত মসজিদ প্রান্তে। প্রতি সপ্তাহে অসংখ্য মানুষ এসে সারাক্ষণ ইবাদত-বন্দেগি করে কাটায়। যে যে ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে এখানে আসে তার অধিকাংশ আশাই পূর্ণ হয় বলে অসংখ্য মানুষের কাছে শোনা যায়। মসজিদের পাশেই রয়েছে তিনটি ব্যতিক্রর্মী কবর। এগুলো সাধারণ কবরের মতো হলেও লম্বায় ১৪-১৫ হাত। মসজিদের পশ্চিম ও উত্তর পাশে অবস্থিত কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সাধক শাহ্ নেয়ামতউল্লাহ এবং সহোদর চিনিবিবি ও ইছাবিবি। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে নেয়ামত শাহের ইহকাল ত্যাগের পর তাকে এ স্থানে সমাহিত করা হয়। বিবিচিনির ইতিহাস সমৃদ্ধ মসজিদটি সংরক্ষণ করা জরুরি।
* মনোতোষ হাওলাদার, বরগুনা
* মনোতোষ হাওলাদার, বরগুনা
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন