মা বলতেন আমার জন্ম বর্ষাকালে। সে কারণেই কি না জানি না, ছোটবেলা থেকে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ আমাকে খুব টানে। স্কুলে না যাওয়া ছাড়াও দল বেঁধে মাছ ধরা, তাল কুড়ানো, নদী-পুকুরে লাফ-ঝাঁপ ছাড়া কম বৃষ্টির দিনই কেটে। বৃষ্টির দিনে টিনের চালার তলে বসে লুডু খেলা, খুিচড়ি খাওয়ার মতো আনন্দের তুলনা হয় না। ঝুম বৃষ্টিতে ফুটবল খেলা সব আনন্দকে ছাপিয়ে যেত। ছোটবেলায় মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে নেমে পড়তাম বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত রাস্তায়। পড়াশোনার উদ্দেশ্যে গ্রাম থেকে শহরে আসার পরও আমার বৃষ্টিবিলাস কমেনি। ছাতা হাতে নিয়ে নিয়নবাতির মৃদু আলোয় প্রকৃতির কান্নার দৃশ্য অবলোকন করা থেকে রক্ষা পায়নি গভীর রাতও।
গত কয়েক দিনের টানা দাবদাহের পর সেদিন হঠাত্ করেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি ঝরতে লাগল। ব্যস্ত নগর জীবন যখন প্রকৃতির রুদ্রতায় চরম বিরক্ত তখন ওই বৃষ্টির স্বস্তির সুবাতাস ছড়িয়ে দিল সবার মনে। বৃষ্টির জলে ভেজার আকাঙ্ক্ষা কম-বেশি সবার থাকে। জানালা দিয়ে দেখলাম আশপাশের প্রতিটি বাড়ির ছাদে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্করাও ভিজতে শুরু করেছেন। সত্যি বলতে কি, সবাই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দিল হঠাত্ পাওয়া ওই বৃষ্টিকে ছুয়ে দেখার আনন্দে। সবার ওই আনন্দ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
আমাদের পাশের বাড়ির ছাদে এক কিশোরী মেয়েকে দেখলাম বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাচছে। মেয়েটার পায়ে নূপুর ছিল আর চুলগুলোও ছিল খুব লম্বা। ওই দৃশ্য কোনো সিনেমার দৃশ্যের চেয়ে কম উপভোগ্য ছিল না।
আসলে বৃষ্টিকে মানুষের মনে কতখানি প্রাণের স্পন্দন জোগায় তা হয়তো ওই দৃশ্য না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। এসব ভাবতে ভাবতেই দেখলাম, বৃষ্টি আরও জোরে পড়তে লাগল। হঠাত্ পাওয়া স্বস্তির ওই বৃষ্টি মিস করতে চাইলাম না। সোজা চলে গেলাম। ছাদে! বৃষ্টি এখনও অঝোর ধারায় নেমে আসছিল পৃথিবীতে। জানালা দিয়ে যে মেয়েটিকে নাচতে দেখেছিলাম সে তখন চোখ বন্ধ করে দু’হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তার চুলগুলো ভিজে চুপসে গেছে, গলার ওড়নাটা পড়ে আছে অনেক দূরে। ভেজা কাপড়ে তার অসাধারণ দেহসৌষ্ঠব ফুটে উঠেছিল দারুণভাবে। তারপর যখন রুমে ফিরে আসতে চাইলাম তখন একেবারেই নিচের দিকে চোখ পড়ল। দেখলাম, আমাদের গলির ধারে গড়ে ওঠা গিঞ্জি পল্লীতে এক ছাপড়া ঘরে এক নারী তার ছোট্ট দুই শিশুকে নিয়ে নিরুপায় হয়ে ভিজছেন। ওই ঘরের চাল বলতে কিছুই ছিল না। ওপরে কেবল মোটা টাইপের পলিথিন দেয়া আর তা এতো বড় ছিদ্রযুক্ত ছিল যে, ওপর থেকেও নারীর ভাবলেশহীন মুখটা দেখতে আমার মোটেও অসুবিধা হচ্ছিল না। ওই ঘরের ভেতর নগ্ন এক শিশু দাঁড়িয়ে ছিল। সে বৃষ্টির জলে ভিজছিল। কিন্তু ওই বৃষ্টিতে ভেজার মধ্যে সে কোনো আনন্দ পাচ্ছিল না। তারই পাশে নিরুপায় সেই মা তার কোলের শিশুকে বুকে আগলে ধরে বসে মেঝেতে জমে যাওয়া পানির ওপরটায় বসে ছিলেন।
উপরে থেকে ওই দৃশ্য দেখে স্বস্তির এ বৃষ্টি অনেক নিষ্ঠুর মনে হচ্ছিল। আর যে মেয়েটিকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে অভিভূত হয়ে ছিলাম তাকে মনে হচ্ছিল অপরাধী। একই পৃথিবীর বাসিন্দা হলেও এর সব কিছু সবার জন্য নয়। কিছু মানুষের জীবন ভিন্ন, বহু রকমের। কিছু মানুষের কাছে হঠাত্ পাওয়া বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ আকর্ষণীয় কোনো সুর নয় বরং প্রকৃতির এক নিষ্ঠুরতা। পরের দিনও খুব বৃষ্টি হয়েছিল। সেই বৃষ্টিতে আমি শিখেছি, বৃষ্টি শুধু আনন্দই দেয় না, বরং চোখের পানিও ধুয়ে দেয়।
গত কয়েক দিনের টানা দাবদাহের পর সেদিন হঠাত্ করেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি ঝরতে লাগল। ব্যস্ত নগর জীবন যখন প্রকৃতির রুদ্রতায় চরম বিরক্ত তখন ওই বৃষ্টির স্বস্তির সুবাতাস ছড়িয়ে দিল সবার মনে। বৃষ্টির জলে ভেজার আকাঙ্ক্ষা কম-বেশি সবার থাকে। জানালা দিয়ে দেখলাম আশপাশের প্রতিটি বাড়ির ছাদে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্করাও ভিজতে শুরু করেছেন। সত্যি বলতে কি, সবাই যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দিল হঠাত্ পাওয়া ওই বৃষ্টিকে ছুয়ে দেখার আনন্দে। সবার ওই আনন্দ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
আমাদের পাশের বাড়ির ছাদে এক কিশোরী মেয়েকে দেখলাম বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাচছে। মেয়েটার পায়ে নূপুর ছিল আর চুলগুলোও ছিল খুব লম্বা। ওই দৃশ্য কোনো সিনেমার দৃশ্যের চেয়ে কম উপভোগ্য ছিল না।
আসলে বৃষ্টিকে মানুষের মনে কতখানি প্রাণের স্পন্দন জোগায় তা হয়তো ওই দৃশ্য না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। এসব ভাবতে ভাবতেই দেখলাম, বৃষ্টি আরও জোরে পড়তে লাগল। হঠাত্ পাওয়া স্বস্তির ওই বৃষ্টি মিস করতে চাইলাম না। সোজা চলে গেলাম। ছাদে! বৃষ্টি এখনও অঝোর ধারায় নেমে আসছিল পৃথিবীতে। জানালা দিয়ে যে মেয়েটিকে নাচতে দেখেছিলাম সে তখন চোখ বন্ধ করে দু’হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তার চুলগুলো ভিজে চুপসে গেছে, গলার ওড়নাটা পড়ে আছে অনেক দূরে। ভেজা কাপড়ে তার অসাধারণ দেহসৌষ্ঠব ফুটে উঠেছিল দারুণভাবে। তারপর যখন রুমে ফিরে আসতে চাইলাম তখন একেবারেই নিচের দিকে চোখ পড়ল। দেখলাম, আমাদের গলির ধারে গড়ে ওঠা গিঞ্জি পল্লীতে এক ছাপড়া ঘরে এক নারী তার ছোট্ট দুই শিশুকে নিয়ে নিরুপায় হয়ে ভিজছেন। ওই ঘরের চাল বলতে কিছুই ছিল না। ওপরে কেবল মোটা টাইপের পলিথিন দেয়া আর তা এতো বড় ছিদ্রযুক্ত ছিল যে, ওপর থেকেও নারীর ভাবলেশহীন মুখটা দেখতে আমার মোটেও অসুবিধা হচ্ছিল না। ওই ঘরের ভেতর নগ্ন এক শিশু দাঁড়িয়ে ছিল। সে বৃষ্টির জলে ভিজছিল। কিন্তু ওই বৃষ্টিতে ভেজার মধ্যে সে কোনো আনন্দ পাচ্ছিল না। তারই পাশে নিরুপায় সেই মা তার কোলের শিশুকে বুকে আগলে ধরে বসে মেঝেতে জমে যাওয়া পানির ওপরটায় বসে ছিলেন।
উপরে থেকে ওই দৃশ্য দেখে স্বস্তির এ বৃষ্টি অনেক নিষ্ঠুর মনে হচ্ছিল। আর যে মেয়েটিকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে অভিভূত হয়ে ছিলাম তাকে মনে হচ্ছিল অপরাধী। একই পৃথিবীর বাসিন্দা হলেও এর সব কিছু সবার জন্য নয়। কিছু মানুষের জীবন ভিন্ন, বহু রকমের। কিছু মানুষের কাছে হঠাত্ পাওয়া বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ আকর্ষণীয় কোনো সুর নয় বরং প্রকৃতির এক নিষ্ঠুরতা। পরের দিনও খুব বৃষ্টি হয়েছিল। সেই বৃষ্টিতে আমি শিখেছি, বৃষ্টি শুধু আনন্দই দেয় না, বরং চোখের পানিও ধুয়ে দেয়।
সূত্র : আমার দেশ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন