বাঘের খালা বিল্লী
আস্লো ঘুরে দিল্লী
তুলতুলে চার বাচ্চা,
বল্ছি আমি সাচ্চা,
পায়ের নিচে মখমল;
চোখ জ্বলে তার জ্বলজ্বল ॥
আস্লো ঘুরে দিল্লী
তুলতুলে চার বাচ্চা,
বল্ছি আমি সাচ্চা,
পায়ের নিচে মখমল;
চোখ জ্বলে তার জ্বলজ্বল ॥
এমন সুন্দর পঙ্ক্তি কার হতে পারে, জানা আছে? হ্যাঁ, যার চেহারায় মায়াবী আভা, যিনি শুভ্রতার প্রলেপে মোড়ানো চারিত্রিক গুণাবলিতে পরিপূর্ণ মানুষ, ডিমের মতো বিশাল চোখের চাহনিতে যার বুদ্ধিদীপ্ত তারুণ্য ঝলছে উঠতো প্রতিনিয়ত, কথা-কাজের ভারসাম্য যাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতো, যিনি দূর থেকে শুধু কবিতা পড়ে তাঁকে ভালবাসতেন তিনি কোনোভাবে তাঁর সাক্ষাৎ পেলে জীবনকে ধন্য করে নিতেন। এমন আকর্ষণীয় চরিত্রের সুন্দর মানুষটি আর কেউ নন; পবিত্র রমজান মাসে জন্মেছিলেন বলে দাদীমা তাঁকে আদর করে রমজান বলে ডাকতেন। তিনিই আমাদের প্রিয়কবি ফররুখ আহমদ।
সংস্কৃতির উৎসভূমি বৃহত্তর যশোর। সেখানকার অন্যতম পাদপীঠ বর্তমান মাগুরা জেলার মধুমতি পাড়ের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত মাঝআইল গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে অর্থাৎ ১৯১৮ সালের ১০ জুন ব্রিটিশ আমলের সাবরেজিস্ট্রার অফিসের প্রভাবশালী কর্মকর্তা সৈয়দ আব্বাস আলীর পুত্র পুলিশ ইন্সপেক্টর সৈয়দ হাতেম আলীর ঔরসে জন্মগ্রহণ করলেন তিনি। মাত্র ছয় বছর বয়সে মা রওশন আখতার মারা গেলে জমিদারকন্যা দাদীমা তাঁকে লালন পালন করেন। পুণ্যবতী সুশিক্ষিতা দাদীমার কাছেই তাঁর কাব্যমানস তৈরি হয়েছিল। দাদীমা তাঁকে শুনিয়েছেন দাতা হাতেমতায়ী, দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসীন, সত্যসাধক বাদশা আলমগীরের মজার মজার কাহিনী। এ ছাড়া তাযকিরাতুল আউলিয়া, কাসাসুল আম্বিয়াসহ আরব্য উপন্যাসের সিন্দবাদ এবং আলী বাবার গল্পও শুনেছিলেন দাদীমার কাছেই।
দাদীমার তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতেই শিক্ষার হাতেখড়ি তাঁর। অতঃপর কলকাতায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি। তবে পিতার কর্মস্থল বদলির কারণে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। স্কুলজীবনের এ উচ্ছলতাময় সময়ে সংস্পর্শ পান কবি গোলাম মোস্তফা, কবি আবুল হাশিম ও সাহিত্যিক আবুল ফজলের এবং সখ্য গড়ে ওঠে সত্যজিৎ রায়, আবু রুশদ, আহসান হাবীব, আবুল হোসেন প্রমুখের সাথে। কলকাতা রিপন কলেজ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কবি বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু, প্রমথনাথ বিশীর মতো বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য লেখকদেরকে শিক্ষক হিসেবে এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও ফতেহ লোহানীকে পান বন্ধু হিসেবে। শিক্ষক ও বন্ধুদের প্রেরণায় কবিতার অঙ্গন তার ধ্যান-জ্ঞান হয়ে পড়ে। চিন্তার অস্থিমজ্জায় শুধু কবিতা আর কবিতা। দাম্পত্য ও কর্মজীবনের ঝামেলা তাঁকে এ অঙ্গন থেকে ক্ষণিকের জন্যও বিরত রাখতে পারেনি। তাইতো তিনি বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে, বেঁচে থাকবেন সগৌরবে।
মানুষকে খুব আপন করে দেখতেন ফররুখ। পোশাক পরিচ্ছদ খাওয়া দাওয়া চলাফেরা এমনকি চিন্তার দিক থেকেও তিনি নিজেকে সাধারণ মানুষের সাথে একাত্ম করে ফেলতেন। সকল মতের কবিবন্ধুদের সাথেই ছিল তার সখ্য। সকল মানুষকেই তিনি সম্মান করতেন, শ্রদ্ধা করতেন, এমনকি যথাসাধ্য সাহায্যও করতেন। তিনি সমস্ত মানুষকে আত্মার আত্মীয় বলে মনে করতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘মানুষকে জন্মাতে হয় বলেই ভিন্ন ভিন্ন মায়ের পেটে জন্মে। কেউ কাউকে পর ভাবা ঠিক নয়। যাদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক তারা রক্তীয়, আর যাদের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক- আত্মার সম্পর্ক তারাই আত্মীয়, পরম আত্মীয়।’
তিনি ছিলেন মানবতাবাদী কবিপুরুষ। ইসলামের সুমহান আদর্শ অবলম্বনে মহানবীর (সা) দেখানো মানবতাবাদকে সরাসরি স্পর্শ করেছেন তিনি। তিনি গভীরভাবে লক্ষ্য করেন যে, পরদেশী ব্রিটিশের শাসন ও শোষণের ভয়াবহ ছোবল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় তিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী মুজাহিদদের ইতিহাস দেখেছেন। সেই সাথে হযরত শাহসুফী আবুবকর সিদ্দিকীর তাসাউফী অন্তর, মুনসী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ ও ইসমাইল হোসেন শিরাজীর প্রতিবাদী কণ্ঠ এবং মহাকবি আল্লামা ইকবাল ও কাজী নজরুল ইসলামের মানবতাবাদী বিদ্রোহী চেতনাকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যান। আদর্শবাদিতা, রোমান্টিসিজম এবং মেধা ও মননের প্রখরতায় গড়ে তোলা তীক্ষè কাব্যশক্তিকে তিনি মানবতার জন্য উৎস্বর্গ করেছিলেন। তাইতো তাঁর সাহসী উচ্চারণÑ
জীবন আমার করে যেন
দুস্থজনে সমর্থন
দুঃখী এবং বৃদ্ধ জয়িফ
যেন আমার হয় আপন।
সংস্কৃতির উৎসভূমি বৃহত্তর যশোর। সেখানকার অন্যতম পাদপীঠ বর্তমান মাগুরা জেলার মধুমতি পাড়ের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত মাঝআইল গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে অর্থাৎ ১৯১৮ সালের ১০ জুন ব্রিটিশ আমলের সাবরেজিস্ট্রার অফিসের প্রভাবশালী কর্মকর্তা সৈয়দ আব্বাস আলীর পুত্র পুলিশ ইন্সপেক্টর সৈয়দ হাতেম আলীর ঔরসে জন্মগ্রহণ করলেন তিনি। মাত্র ছয় বছর বয়সে মা রওশন আখতার মারা গেলে জমিদারকন্যা দাদীমা তাঁকে লালন পালন করেন। পুণ্যবতী সুশিক্ষিতা দাদীমার কাছেই তাঁর কাব্যমানস তৈরি হয়েছিল। দাদীমা তাঁকে শুনিয়েছেন দাতা হাতেমতায়ী, দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসীন, সত্যসাধক বাদশা আলমগীরের মজার মজার কাহিনী। এ ছাড়া তাযকিরাতুল আউলিয়া, কাসাসুল আম্বিয়াসহ আরব্য উপন্যাসের সিন্দবাদ এবং আলী বাবার গল্পও শুনেছিলেন দাদীমার কাছেই।
দাদীমার তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতেই শিক্ষার হাতেখড়ি তাঁর। অতঃপর কলকাতায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি। তবে পিতার কর্মস্থল বদলির কারণে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। স্কুলজীবনের এ উচ্ছলতাময় সময়ে সংস্পর্শ পান কবি গোলাম মোস্তফা, কবি আবুল হাশিম ও সাহিত্যিক আবুল ফজলের এবং সখ্য গড়ে ওঠে সত্যজিৎ রায়, আবু রুশদ, আহসান হাবীব, আবুল হোসেন প্রমুখের সাথে। কলকাতা রিপন কলেজ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কবি বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু, প্রমথনাথ বিশীর মতো বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য লেখকদেরকে শিক্ষক হিসেবে এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও ফতেহ লোহানীকে পান বন্ধু হিসেবে। শিক্ষক ও বন্ধুদের প্রেরণায় কবিতার অঙ্গন তার ধ্যান-জ্ঞান হয়ে পড়ে। চিন্তার অস্থিমজ্জায় শুধু কবিতা আর কবিতা। দাম্পত্য ও কর্মজীবনের ঝামেলা তাঁকে এ অঙ্গন থেকে ক্ষণিকের জন্যও বিরত রাখতে পারেনি। তাইতো তিনি বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে, বেঁচে থাকবেন সগৌরবে।
মানুষকে খুব আপন করে দেখতেন ফররুখ। পোশাক পরিচ্ছদ খাওয়া দাওয়া চলাফেরা এমনকি চিন্তার দিক থেকেও তিনি নিজেকে সাধারণ মানুষের সাথে একাত্ম করে ফেলতেন। সকল মতের কবিবন্ধুদের সাথেই ছিল তার সখ্য। সকল মানুষকেই তিনি সম্মান করতেন, শ্রদ্ধা করতেন, এমনকি যথাসাধ্য সাহায্যও করতেন। তিনি সমস্ত মানুষকে আত্মার আত্মীয় বলে মনে করতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘মানুষকে জন্মাতে হয় বলেই ভিন্ন ভিন্ন মায়ের পেটে জন্মে। কেউ কাউকে পর ভাবা ঠিক নয়। যাদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক তারা রক্তীয়, আর যাদের সঙ্গে হৃদয়ের সম্পর্ক- আত্মার সম্পর্ক তারাই আত্মীয়, পরম আত্মীয়।’
তিনি ছিলেন মানবতাবাদী কবিপুরুষ। ইসলামের সুমহান আদর্শ অবলম্বনে মহানবীর (সা) দেখানো মানবতাবাদকে সরাসরি স্পর্শ করেছেন তিনি। তিনি গভীরভাবে লক্ষ্য করেন যে, পরদেশী ব্রিটিশের শাসন ও শোষণের ভয়াবহ ছোবল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় তিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী মুজাহিদদের ইতিহাস দেখেছেন। সেই সাথে হযরত শাহসুফী আবুবকর সিদ্দিকীর তাসাউফী অন্তর, মুনসী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ ও ইসমাইল হোসেন শিরাজীর প্রতিবাদী কণ্ঠ এবং মহাকবি আল্লামা ইকবাল ও কাজী নজরুল ইসলামের মানবতাবাদী বিদ্রোহী চেতনাকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যান। আদর্শবাদিতা, রোমান্টিসিজম এবং মেধা ও মননের প্রখরতায় গড়ে তোলা তীক্ষè কাব্যশক্তিকে তিনি মানবতার জন্য উৎস্বর্গ করেছিলেন। তাইতো তাঁর সাহসী উচ্চারণÑ
জীবন আমার করে যেন
দুস্থজনে সমর্থন
দুঃখী এবং বৃদ্ধ জয়িফ
যেন আমার হয় আপন।
নীতিগত দিক থেকে কবি ছিলেন আলিফের মতো খাড়া। তিনি সকল মানুষের সাথেই একাত্ম হয়েছিলেন বটে, কিন্তু আদর্শকে বিকিয়ে দিয়ে নয়। মাখানো ময়দার মধ্য থেকে চুলকে যেভাবে বের করা হয়, ঠিক সেভাবেই তিনি ঐ সমাজ থেকে নিজের আদর্শকে পঙ্কিলতা মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। স্বার্থান্ধতা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। স্বভাবে, অভাবে, সুখে দুঃখে কোনো সময়ই তিনি চাটুকারিতার আশ্রয় নিতে যাননি। দুনিয়ার তথাকথিত বৈভব সাফল্য তার কাছে লোভনীয় ছিল না। তাঁর মূল সুর ছিল-
‘তোরা চাসনে কিছু কারো কাছে খোদার মদদ ছাড়া
তোরা পরের উপর ভরসা ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়া।’
এমনকি যারা স্বার্থ হাসিলের জন্য নীতি বিসর্জন দেয়, তাদের জন্য তিনি শিশুতোষ কাব্য নাটিকায় বাদুরের সাথে তুলনা করেন এবং শেষ পঙ্ক্তিতে প্রমাণ করেছেন- ‘সুযোগ মতো যারা ও ভাই মতটা বদল করে/অতি চালাক বাদুরগুলোর মতই তারা মরে।’ নৈতিক অবস্থানকে মজবুত রাখতে শিশু-কিশোরদেরকেও নির্যাতিত অভাবী ও দুস্থজনের পার্শ্বে দাঁড়ানোর ছবক দিতেন কবি ফররুখ। তিনি বলেনÑ
খোকন যাবে কার বাড়ি?
খোকন যাবে তার বাড়ি
নাই জামা যার নাই গাড়ি।
‘তোরা চাসনে কিছু কারো কাছে খোদার মদদ ছাড়া
তোরা পরের উপর ভরসা ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়া।’
এমনকি যারা স্বার্থ হাসিলের জন্য নীতি বিসর্জন দেয়, তাদের জন্য তিনি শিশুতোষ কাব্য নাটিকায় বাদুরের সাথে তুলনা করেন এবং শেষ পঙ্ক্তিতে প্রমাণ করেছেন- ‘সুযোগ মতো যারা ও ভাই মতটা বদল করে/অতি চালাক বাদুরগুলোর মতই তারা মরে।’ নৈতিক অবস্থানকে মজবুত রাখতে শিশু-কিশোরদেরকেও নির্যাতিত অভাবী ও দুস্থজনের পার্শ্বে দাঁড়ানোর ছবক দিতেন কবি ফররুখ। তিনি বলেনÑ
খোকন যাবে কার বাড়ি?
খোকন যাবে তার বাড়ি
নাই জামা যার নাই গাড়ি।
পাকিস্তানের সমর্থক আখ্যা দিয়ে ফররুখ আহমদকে কেউ কেউ ভিন্ন চোখে দেখার চেষ্টা করেন। সত্যিকার অর্থে তিনি পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন না বরং একজন মানবতাবাদী হিসেবে তিনি ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ। ব্রিটিশের কবল থেকে মুক্ত হবার জন্য তার স্বাধীনচেতা অন্তর সব সময় অস্থির ছিল। মুসলমানদের হাতে দেশের ক্ষমতা এলে মানবতা বিকশিত হবে এটা তাঁর স্বপ্ন ছিল। কিন্তু পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী জাতিকে হতাশ করেছে। এমনকি এ হতাশাব্যঞ্জক আচরণের কারণে তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে কোনো মোসাহেবি তো দূরের কথা সংস্কারমূলক সমালোচনা ছাড়া তাদের পছন্দসই কোনো কথাই বলেননি। কবি কামরুল হাসানের ভাষায় ‘আপন বিবেকের দিকে দৃষ্টি রেখে বলতেই হবে, আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তান আমলের বহু কিছু আমরা মেনে নিয়েছিলাম। আমরা যারা ১৯৭১ সালের মুক্তি সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলাম, তাদের বহু সংখ্যক মহারথীই পশ্চিম পাকিস্তানে বহুবার পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে ঘুরে এসেছিলাম। কিন্তু নীতির যুদ্ধে যে লোকটিকে আমরা চিরকাল শত্র“ শিবিরের লোক বলেই চিহ্নিত করে এলাম, সেই ফররুখ ভাইকে গত তেইশ বছরের পাকিস্তান সরকার একটি দিনের জন্যও পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যেতে পারেনি। এটা আপনাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই বাস্তব ঘটনা এবং পর্বত-শিখরের মতই এমনি নিজের একান্ত মতবাদে অটল ছিলেন ফররুখ ভাই। এমনকি পাকিস্তানি শাসকদের অনভিপ্রেত কার্যাবলির প্রেক্ষিতে তিনি ‘রাজ রাজরা’ নামক ব্যঙ্গ নাটকের মাধ্যমে তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন।’
মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়েই কবির পথ চলা। মানুষের অধিকার যার হাতে ক্ষুণœ হয় সে তাঁর বন্ধু হলেও তিনি তার বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পরই যখন তিনি বাংলা ভাষার ক্রান্তিকালের আভাস পেলেন তখনই তিনি ভাষার পক্ষে প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধের ছত্রে ছত্রে ছিল রাষ্ট্রভাষার দাবি। প্রবন্ধের সূচনাই তিনি করেছিলেন এভাবেÑ ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে এ নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলোচনা হয়েছে। জনগণ ও ছাত্রসমাজ অকুণ্ঠভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং এটা দৃঢ়ভাবেই আশা করা যায় যে, পাকিস্তানের জনগণের বৃহৎ অংশের মতানুযায়ী পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে।’ ভাষা আন্দোলন শুরুর আগেই তার এ প্রবন্ধ ভাষা আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। এ প্রবন্ধে তিনি গণতান্ত্রিক ধারাকে মুক্তির মোহনায় এনে প্রমাণ করেছেন যে, তিনি একজন গণতান্ত্রিক ও মানবতাবাদী মানুষ।
সত্যিকারার্থে মানবতার মুক্তির জন্য চাই হযরত উমর (রা)-এর মতো দরাজ দিলের মানুষ। এ প্রত্যাশায় কবি বলেনÑ
লুণ্ঠিত হলে মানবতা তুমি
জাগো অনাচার বাধন টুঁটি
প্রবল লাথিতে ভেঙে ফেলে ছেঁড়ো
সব জালিমের পাপের ঝুটি।
পূর্বসূরি তীতুমীরের আন্দোলন সম্পর্কেও কবির মূল্যায়ন;
তীতুমীরের স্বপ্ন সফল হবে
যেদিন ধরায় জুলুম নাহি রবে।
সত্যিকারার্থে মানবতার মুক্তির জন্য চাই হযরত উমর (রা)-এর মতো দরাজ দিলের মানুষ। এ প্রত্যাশায় কবি বলেনÑ
লুণ্ঠিত হলে মানবতা তুমি
জাগো অনাচার বাধন টুঁটি
প্রবল লাথিতে ভেঙে ফেলে ছেঁড়ো
সব জালিমের পাপের ঝুটি।
পূর্বসূরি তীতুমীরের আন্দোলন সম্পর্কেও কবির মূল্যায়ন;
তীতুমীরের স্বপ্ন সফল হবে
যেদিন ধরায় জুলুম নাহি রবে।
কবি প্রভুর দরবারে চলে গেলেন ১৯৭৪ সালের ১৯ জুন সন্ধ্যাবেলায়। জীবনব্যাপী জালিমের নিষ্টুরতা, নির্মমতা, অমানবিকতা ও অসহায়দের চিত্রিত করতে কবি ফররুখ যেমন নির্মাণ করেছেন বিরান মড়কের গান, তুলে এনেছেন অসহায় মানুষের ‘আউলাদ, পথে পথে দেখেছেন মানবতার ‘লাশ’ আর মুক্তিকামী মানুষের জন্য খুঁজে ফিরেছেন ‘উমর দরাজ দিল’, সাত সাগরের মাঝি হয়ে সফর করেছেন ‘বার দরিয়ায়’, পরখ করেছেন ‘দরিয়ার শেষ রাত্রি’, সিন্দবাদকে ডেকে হাতেম তায়ীকে সঙ্গী করে হেরার রাজ তোরণে’ পৌঁছতে চেয়েছেন সগৌরবে। তেমনি শিশুদের দেশজ চেতনাকে শাণিত করার জন্য তিনি লিখেছেন, পাখির বাসা, নতুন লেখা, হরফের ছড়া, ছড়ার আসর, চিড়িয়াখানা, কিসসা ও কাহিনী, ফুলের জলসা, মজার ছড়া, ছড়া ছবির দেশে, আলোকলতা প্রভৃতি মজার মজার কাব্যসম্ভার।
সরলতা ও সহবোধ্যতা তাঁর শিশুতোষ কবিতাকে সুখপাঠ্য করে তুলেছে। অন্যদিকে প্রতীকীর ব্যবহার, দূরদর্শী চিত্রকল্প ও বুদ্ধিদীপ্ত উপমা তাঁর ভাবময় কবিতাকেও পাঠক হৃদয়কে আঁকড়ে রেখেছে মায়াবী বাঁধনে। তাঁর কোনো কবিতাই পাঠককে দূরে ঠেলে দেয় না। এখানেই কবি ফররুখের বড় সফলতা। বাংলাদেশ, বাংলাভাষা এবং ফররুখ আহমদ একই সূত্রে গাঁথা।
আপন গুণেই তিনি পাঠক হৃদয়ে জাগরুক থাকবেন চিরদিন। কেননা তিনি যেমন গণমানুষের কবি তেমনি দেশপ্রেমিক কবিদেরও কবি।
সরলতা ও সহবোধ্যতা তাঁর শিশুতোষ কবিতাকে সুখপাঠ্য করে তুলেছে। অন্যদিকে প্রতীকীর ব্যবহার, দূরদর্শী চিত্রকল্প ও বুদ্ধিদীপ্ত উপমা তাঁর ভাবময় কবিতাকেও পাঠক হৃদয়কে আঁকড়ে রেখেছে মায়াবী বাঁধনে। তাঁর কোনো কবিতাই পাঠককে দূরে ঠেলে দেয় না। এখানেই কবি ফররুখের বড় সফলতা। বাংলাদেশ, বাংলাভাষা এবং ফররুখ আহমদ একই সূত্রে গাঁথা।
আপন গুণেই তিনি পাঠক হৃদয়ে জাগরুক থাকবেন চিরদিন। কেননা তিনি যেমন গণমানুষের কবি তেমনি দেশপ্রেমিক কবিদেরও কবি।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন