রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট ১২ বার বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে ছিলেন। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২
সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন। প্রথম জীবনে
দুই বার (১৮৭৮ ও ১৮৯০ সালে) তিনি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। ১৯১২ সালে
ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য তৃতীয়বার ইংল্যান্ডে গিয়ে ইয়েটসসহ কয়েকজন
ইংরেজ কবি ও বুদ্ধিজীবীর কাছে সদ্যরচিত গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ
পাঠ করে শোনান। এই ভ্রমণের সময়ই দীনবন্ধু চার্লস ফ্রিয়ার অ্যান্ড্রুজের
সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে। ১৯১৩ সালে সুইডিশ একাডেমী তাকে নোবেল
পুরস্কারে ভূষিত করে। ১৯১৬-১৭ সালে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে
রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি বক্তৃতা
দেন। এসব বক্তৃতাও সংকলিত হয় তার ন্যাশনালিজম (১৯১৭) গ্রন্থে। ১৯২০-২১
সাল নাগাদ আবার ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান কবি। ওই সফরে
পাশ্চাত্য দেশগুলোতে তিনি সংবর্ধিত হয়েছিলেন। ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ যান
চীন সফরে। এরপর চীন থেকে জাপানে গিয়ে সেখানেও জাতীয়তাবাদবিরোধী বক্তৃতা
দেন কবি। ১৯২৪ সালের শেষের দিকে পেরু সরকারের আমন্ত্রণে সে দেশে যাওয়ার
পথে আর্জেন্টিনায় অসুস্থ হয়েছে কবি ভিক্টোরিয়া ও কাম্পোর আতিথ্যে তিন
মাস কাটান। স্বাস্থ্যের কারণে পেরু ভ্রমণ তিনি স্থগিত করে দেন। ১৯২৬ সালে
বেনিতো মুসোলিনির আমন্ত্রণে ইতালি সফরে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথমে
মুসোলিনির আতিথেয়তায় মুগ্ধ হলেও পরে লোকমুখে তার স্বৈরাচারের কথা জানতে
পেরে মুসোলিনির কাজকর্মের সমালোচনা করেন কবি। ফলে উভয়ের মধ্যে
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ছেদ পড়ে। পরে রবীন্দ্রনাথ গ্রিস, তুরস্ক ও মিসর
ভ্রমণ করে ভারতে ফিরে আসেন। ১৯২৭ সালে চার সঙ্গীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ
গিয়েছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে। ওই সময় তিনি ভ্রমণ করেন বালি, জাভা,
কুয়ালালামপুর, মালাক্কা, পেনাং, সিয়াম ও সিঙ্গাপুর। ১৯৩০ সালে কবি
শেষবার ইংল্যান্ডে যান অঙ্ফোর্ডে হিবার্ট বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। এরপর তিনি
ভ্রমণ করেন ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৩২ সালে ইরাক ও পারস্য ভ্রমণে গিয়েছিলেন কবি। এরপর ১৯৩৪
সালে সিংহলে যান রবীন্দ্রনাথ। এটিই ছিল তার সর্বশেষ বিদেশ সফর। রবীন্দ্রনাথ
যেসব বইয়ে বিদেশ ভ্রমণে তার অভিজ্ঞতাগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখেন সেগুলো হলো_
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র (১৮৮১), য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়রি (১৮৯১, ১৮৯৩),
জাপান-যাত্রী (১৯১৯), যাত্রী (পশ্চিম-যাত্রীর ডায়রি ও জাভা-যাত্রীর পত্র,
১৯২৯), রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১), পারস্যে (১৯৩৬) ও পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)। ব্যাপক
বিশ্বভ্রমণের ফলে রবীন্দ্রনাথ তার সমসাময়িক অরিঁ বের্গসঁ, আলবার্ট
আইনস্টাইন, রবার্ট ফ্রস্ট, টমাস মান, জর্জ বার্নার্ড শ, এইচ জি ওয়েলস,
রোম্যাঁ রোলাঁ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ
পেয়েছিলেন। জীবনের একেবারে শেষ পর্বে পারস্য, ইরাক ও সিংহল ভ্রমণের সময়
মানুষের পারস্পরিক ভেদাভেদ ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে তার বিতৃষ্ণা আরও তীব্র
হয়েছিল। অন্যদিকে বিশ্বপরিক্রমার ফলে ভারতের বাইরে নিজের রচনাকে পরিচিত
করে তোলার এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিনিময়ের সুযোগও পেয়েছিলেন
তিনি
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন