কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। জন্মেছিলেন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া এ কবি যোগদান করেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৮)।
১৯২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থাত্ পল্টন ভাঙার আগ পর্যন্ত কবি নজরুল ইসলাম করাচিতে অবস্থান করেন, পরে কলকাতায় চলে আসেন। পল্টনে থাকাবস্থায় তিনি লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। গল্প ও কবিতা দিয়েই প্রথম শুরু। কবির সমাধি, মুক্তি, স্বামী হারা, বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী, তুর্ক মহিলার ঘোমটা খোলা, হেনা, আশায়, ব্যথার দান, মেহেরনেগার ও ঘুমের ঘোরসহ আরও অনেক গল্প ও কবিতা কলকাতার প্রবাসী, সওগাত, নূর এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি পত্রিকাসহ অন্যান্য পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
ঐতিহাসিক খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-১৯২২) শুরু হলে এ কে ফজলুল হকের পরিচালনায় সান্ধ্য দৈনিক ‘নবযুগ’ পত্রিকায় কমরেড মুজফ্ফর আহমেদের সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন নজরুল। ১২ জুলাই ১৯২০ সালে নবযুগে যোগদানের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও স্বত্বাধিকারী থাকলেন স্বয়ং একে ফজলুল হক। নবযুগে তার জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় নিবন্ধের জন্য ওই বছরই ব্রিটিশ সরকার নবযুগ পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করে। অবশ্য এর আগে নবযুগ ও নজরুলকে ব্রিটিশ সরকার দু-তিনবার সতর্ক করে দেয়। ওই বছর ডিসেম্বর মাসে নজরুল নবযুগ ছেড়ে দেন এবং সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে কবিতা লেখায় মনোনিবেশ করেন।
১৯২১ সালে মওলানা আকরাম খাঁ-র সম্পাদনায় দৈনিক মোহাম্মদী প্রকাশিত হলে তিনি সম্পাদকীয় বিভাগে যোগদান করেন। ওই পত্রিকায় ‘কাতুকুতু’ নামে ব্যঙ্গাত্মক কলাম লেখা শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যে দৈনিক মোহাম্মদী জনপ্রিয়তা লাভ করে। একই মালিকানায় দৈনিক মোহাম্মদীর পরিবর্তে দৈনিক সেবক (পূর্বতন সাপ্তাহিক সেবক) প্রকাশিত হলে তিনি সম্পাদকীয় বিভাগে যোগদান করেন। কিন্তু সেবকের জন্য লেখা একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধের বিষয়ে অন্যান্য সম্পাদকীয় পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় কাউকেই কিছু না বলে তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান।
১৯২২ সালের আগস্ট মাসে নজরুলের জীবনে এবং বাংলা পত্রিকার জগতে, সাংবাদিকতা ও রাজনীতির ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। এ সময় তাঁর মালিকানায় এবং সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় অর্ধ-সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’। কবি নজরুল, লেখক নজরুল এবং সাংবাদিক নজরুল এই প্রথম তাঁর মত, তাঁর চিন্তা, তাঁর দর্শন বাংলার মানুষের কাছে প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছেন। ‘ধূমকেতু’র সম্পাদকীয়র মূল বিষয় ছিল ভারতবর্ষ, আফ্রিকা এবং অবহেলিত জাতি সম্প্রদায়ের ওপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী নীতির কঠোর সমালোচনা, বিরোধিতা ও তিরস্কারের পাশাপাশি মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জীবনী, গুপ্ত সমিতির কার্যকলাপ, কৃষক ও সমাজতন্ত্রের কথা, তুরস্কের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সমসাময়িক বিষয় কোনোটাই বাদ যায়নি। অল্প দিনের মধ্যে পত্রিকাটি পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার মুখপত্রের মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয়।
ভারতবর্ষের মুক্তির দিশারী হিসেবে ‘অনুশীলন’ ও ‘যুগান্তর’ দলের স্বাধীনতা আন্দোলনকে উত্সাহ প্রদান ও ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করে তিনি বহু অগ্নিঝরা সম্পাদকীয়, কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২২ সালের ‘ধূমকেতু’ পূজা সংখ্যায় তাঁর ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় গ্রেফতার হন। আদালত তাঁকে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। মার্চ ১৯২৩ সালে পত্রিকাটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে বিংশ সংখ্যার পরে তাঁর পক্ষে আর ‘ধূমকেতু’ সম্পাদনা করা সম্ভব হয়নি।
কারাভোগের পর নজরুল রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। অবশ্য তাঁর কবি জীবনের প্রথম থেকেই রাজনীতি সচেতনতা সুস্পষ্ট ছিল। পরবর্তী সময়ে সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতায় রাজনীতির প্রভাব লক্ষণীয়।
তিনি ১৯২৫ সালে বঙ্গীয় কংগ্রেস কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন। ভারতীয় জাতীয় মহাসমিতির অন্তর্গত শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ সম্প্রদায় মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘লাঙল’ প্রকাশিত হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯২৫ সালে। প্রথমে মণিভূষণ মুখোপাধ্যায় পরবর্তী সময়ে গঙ্গাধর বিশ্বাস সম্পাদক এবং কাজী নজরুল ইসলামের প্রধান পরিচালক নিযুক্ত হন। মণিভূষণ ও গঙ্গাধরের নাম সম্পাদকীয় লাইনে থাকলেও নজরুলকেই সম্পাদনা ও পরিচালনার কাজ করতে হতো। তাঁর পরিচালনায় সম্পাদনায় মোট ১৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয় ১৫ এপ্রিল ১৯২৬ সাল।
১৯২৬ সালের ১২ আগস্ট সাপ্তাহিক ‘গণবাণী’ আত্মপ্রকাশ করলে ‘লাঙল’ এর সঙ্গে একীভূত হয়। ১৯২৭ সালে সাপ্তাহিক ও মাসিক সওগাত পত্রিকায় যোগদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন এবং সাপ্তাহিক ‘গণবাণী’ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগ থেকে অব্যাহতি নেন। তিনি সওগাতে প্রায় চার বছরের মতো সাংবাদিকতা করেন।
১৯৪১ সালের অক্টোবর মাসে বাংলার প্রধানমন্ত্রী (মুখ্যমন্ত্রী) একে ফজলুল হকের প্রতিষ্ঠিত ‘দৈনিক নবযুগ’ এর সম্পাদক পদে যোগদান করেন। তিনি পত্রিকায় বরাবরের মতো সম্পাদকীয় ও কবিতায় নতুনত্ব আনার চেষ্টা করতেন। তাঁর সম্পাদনায় ‘নবযুগ’ ১৯৪২ সালের ১০ জুলাই অর্থাত্ অসুস্থতার পূর্ব দিন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। সম্পাদক হিসেবে নজরুলের অভাব এবং সার্বিক পরিচালনার অভাবে ১৯৪৩ সালে একে ফজলুল হক পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।
কাজী নজরুল ইসলামের বৈচিত্র্যময় সাংবাদিকতা জীবনের অবসান হয় ১০ জুলাই ১৯৪২ সালে। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেজাজের পত্রিকা সম্পাদনা, পরিচালনা, যুগ্ম সম্পাদনা কিংবা সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পত্রিকাগুলোর ধরন ও গঠনও ছিল বিভিন্ন চরিত্রের। যেমন—দৈনিক সাপ্তাহিক, অর্ধ সাপ্তাহিক, মাসিক এবং সন্ধ্যাকালীন। পত্রিকা সম্পাদনা বা লেখালেখির ক্ষেত্রে তাঁর নিজের চিন্তা-চেতনা আদর্শ প্রভাবিত হয়েছে সব সময়ে।
আদর্শগত কারণে যখনই তিনি বাধাগ্রস্ত হয়েছেন, তখনই ওই পত্রিকা ত্যাগ করতে দ্বিধাবোধ করেননি কখনও। আর্থিক অনটন থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকতার মতো ঝুঁকিপূর্ণ (ব্রিটিশ ভারতে) পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন উদারভাবে। তাঁর সাংবাদিকতা জীবনে পত্রিকাগুলোতে যে পদেই নিয়োগ লাভ করেন না কেন, সম্পাদকীয় থেকে শুরু করে প্রতিটি বিভাগই তাঁর হাতের পরশে ধন্য হয়েছিল। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষায় আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃত্।
সূত্র : দৈনিক আমার দেশ
১৯২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থাত্ পল্টন ভাঙার আগ পর্যন্ত কবি নজরুল ইসলাম করাচিতে অবস্থান করেন, পরে কলকাতায় চলে আসেন। পল্টনে থাকাবস্থায় তিনি লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন। গল্প ও কবিতা দিয়েই প্রথম শুরু। কবির সমাধি, মুক্তি, স্বামী হারা, বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী, তুর্ক মহিলার ঘোমটা খোলা, হেনা, আশায়, ব্যথার দান, মেহেরনেগার ও ঘুমের ঘোরসহ আরও অনেক গল্প ও কবিতা কলকাতার প্রবাসী, সওগাত, নূর এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি পত্রিকাসহ অন্যান্য পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
ঐতিহাসিক খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-১৯২২) শুরু হলে এ কে ফজলুল হকের পরিচালনায় সান্ধ্য দৈনিক ‘নবযুগ’ পত্রিকায় কমরেড মুজফ্ফর আহমেদের সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন নজরুল। ১২ জুলাই ১৯২০ সালে নবযুগে যোগদানের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও স্বত্বাধিকারী থাকলেন স্বয়ং একে ফজলুল হক। নবযুগে তার জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় নিবন্ধের জন্য ওই বছরই ব্রিটিশ সরকার নবযুগ পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করে। অবশ্য এর আগে নবযুগ ও নজরুলকে ব্রিটিশ সরকার দু-তিনবার সতর্ক করে দেয়। ওই বছর ডিসেম্বর মাসে নজরুল নবযুগ ছেড়ে দেন এবং সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে কবিতা লেখায় মনোনিবেশ করেন।
১৯২১ সালে মওলানা আকরাম খাঁ-র সম্পাদনায় দৈনিক মোহাম্মদী প্রকাশিত হলে তিনি সম্পাদকীয় বিভাগে যোগদান করেন। ওই পত্রিকায় ‘কাতুকুতু’ নামে ব্যঙ্গাত্মক কলাম লেখা শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যে দৈনিক মোহাম্মদী জনপ্রিয়তা লাভ করে। একই মালিকানায় দৈনিক মোহাম্মদীর পরিবর্তে দৈনিক সেবক (পূর্বতন সাপ্তাহিক সেবক) প্রকাশিত হলে তিনি সম্পাদকীয় বিভাগে যোগদান করেন। কিন্তু সেবকের জন্য লেখা একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধের বিষয়ে অন্যান্য সম্পাদকীয় পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় কাউকেই কিছু না বলে তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান।
১৯২২ সালের আগস্ট মাসে নজরুলের জীবনে এবং বাংলা পত্রিকার জগতে, সাংবাদিকতা ও রাজনীতির ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। এ সময় তাঁর মালিকানায় এবং সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় অর্ধ-সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’। কবি নজরুল, লেখক নজরুল এবং সাংবাদিক নজরুল এই প্রথম তাঁর মত, তাঁর চিন্তা, তাঁর দর্শন বাংলার মানুষের কাছে প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছেন। ‘ধূমকেতু’র সম্পাদকীয়র মূল বিষয় ছিল ভারতবর্ষ, আফ্রিকা এবং অবহেলিত জাতি সম্প্রদায়ের ওপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী নীতির কঠোর সমালোচনা, বিরোধিতা ও তিরস্কারের পাশাপাশি মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জীবনী, গুপ্ত সমিতির কার্যকলাপ, কৃষক ও সমাজতন্ত্রের কথা, তুরস্কের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সমসাময়িক বিষয় কোনোটাই বাদ যায়নি। অল্প দিনের মধ্যে পত্রিকাটি পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার মুখপত্রের মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয়।
ভারতবর্ষের মুক্তির দিশারী হিসেবে ‘অনুশীলন’ ও ‘যুগান্তর’ দলের স্বাধীনতা আন্দোলনকে উত্সাহ প্রদান ও ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করে তিনি বহু অগ্নিঝরা সম্পাদকীয়, কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ২২ সেপ্টেম্বর ১৯২২ সালের ‘ধূমকেতু’ পূজা সংখ্যায় তাঁর ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় গ্রেফতার হন। আদালত তাঁকে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। মার্চ ১৯২৩ সালে পত্রিকাটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে বিংশ সংখ্যার পরে তাঁর পক্ষে আর ‘ধূমকেতু’ সম্পাদনা করা সম্ভব হয়নি।
কারাভোগের পর নজরুল রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। অবশ্য তাঁর কবি জীবনের প্রথম থেকেই রাজনীতি সচেতনতা সুস্পষ্ট ছিল। পরবর্তী সময়ে সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতায় রাজনীতির প্রভাব লক্ষণীয়।
তিনি ১৯২৫ সালে বঙ্গীয় কংগ্রেস কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন। ভারতীয় জাতীয় মহাসমিতির অন্তর্গত শ্রমিক-প্রজা-স্বরাজ সম্প্রদায় মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘লাঙল’ প্রকাশিত হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯২৫ সালে। প্রথমে মণিভূষণ মুখোপাধ্যায় পরবর্তী সময়ে গঙ্গাধর বিশ্বাস সম্পাদক এবং কাজী নজরুল ইসলামের প্রধান পরিচালক নিযুক্ত হন। মণিভূষণ ও গঙ্গাধরের নাম সম্পাদকীয় লাইনে থাকলেও নজরুলকেই সম্পাদনা ও পরিচালনার কাজ করতে হতো। তাঁর পরিচালনায় সম্পাদনায় মোট ১৫টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয় ১৫ এপ্রিল ১৯২৬ সাল।
১৯২৬ সালের ১২ আগস্ট সাপ্তাহিক ‘গণবাণী’ আত্মপ্রকাশ করলে ‘লাঙল’ এর সঙ্গে একীভূত হয়। ১৯২৭ সালে সাপ্তাহিক ও মাসিক সওগাত পত্রিকায় যোগদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন এবং সাপ্তাহিক ‘গণবাণী’ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগ থেকে অব্যাহতি নেন। তিনি সওগাতে প্রায় চার বছরের মতো সাংবাদিকতা করেন।
১৯৪১ সালের অক্টোবর মাসে বাংলার প্রধানমন্ত্রী (মুখ্যমন্ত্রী) একে ফজলুল হকের প্রতিষ্ঠিত ‘দৈনিক নবযুগ’ এর সম্পাদক পদে যোগদান করেন। তিনি পত্রিকায় বরাবরের মতো সম্পাদকীয় ও কবিতায় নতুনত্ব আনার চেষ্টা করতেন। তাঁর সম্পাদনায় ‘নবযুগ’ ১৯৪২ সালের ১০ জুলাই অর্থাত্ অসুস্থতার পূর্ব দিন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। সম্পাদক হিসেবে নজরুলের অভাব এবং সার্বিক পরিচালনার অভাবে ১৯৪৩ সালে একে ফজলুল হক পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।
কাজী নজরুল ইসলামের বৈচিত্র্যময় সাংবাদিকতা জীবনের অবসান হয় ১০ জুলাই ১৯৪২ সালে। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেজাজের পত্রিকা সম্পাদনা, পরিচালনা, যুগ্ম সম্পাদনা কিংবা সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পত্রিকাগুলোর ধরন ও গঠনও ছিল বিভিন্ন চরিত্রের। যেমন—দৈনিক সাপ্তাহিক, অর্ধ সাপ্তাহিক, মাসিক এবং সন্ধ্যাকালীন। পত্রিকা সম্পাদনা বা লেখালেখির ক্ষেত্রে তাঁর নিজের চিন্তা-চেতনা আদর্শ প্রভাবিত হয়েছে সব সময়ে।
আদর্শগত কারণে যখনই তিনি বাধাগ্রস্ত হয়েছেন, তখনই ওই পত্রিকা ত্যাগ করতে দ্বিধাবোধ করেননি কখনও। আর্থিক অনটন থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকতার মতো ঝুঁকিপূর্ণ (ব্রিটিশ ভারতে) পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন উদারভাবে। তাঁর সাংবাদিকতা জীবনে পত্রিকাগুলোতে যে পদেই নিয়োগ লাভ করেন না কেন, সম্পাদকীয় থেকে শুরু করে প্রতিটি বিভাগই তাঁর হাতের পরশে ধন্য হয়েছিল। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষায় আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃত্।
সূত্র : দৈনিক আমার দেশ
1 Comment:
He is my favourit poet. I like him. I read this blog alwayse. It's a nice collection.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন