কবি, বুদ্ধিজীবী, সমাজনেত্রী এবং অনন্যসাধারণ নারী ব্যক্তিত্ব। সুফিয়া কামালের জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক অভিজাত পরিবারে। তার পিতা সৈয়দ আবদুল বারি পেশায় ছিলেন উকিল। সুফিয়া কামাল তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেননি। তখনকার পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবেশে বাস করেও তিনি নিজ চেষ্টায় হয়ে ওঠেন সশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত।
১৯১৮ সালে সুফিয়া মায়ের সঙ্গে কলকাতা যান। সেখানে তার সাক্ষাৎ হয় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের (১৮৮০-১৯৩২) সঙ্গে। কিছুদিন পরে তিনি শায়েস্তাবাদ ফিরে আসেন বটে কিন্তু তার শিশুমনে রোকেয়া-দর্শনের সেই স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকে; রোকেয়ার ব্যক্তিত্ব তাকে অবিরাম অনুপ্রাণিত করতে থাকে।
১৯২৩ সালে মাত্র বারো বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে সুফিয়ার বিয়ে হয়। তখন তিনি ‘সুফিয়া এন. হোসেন’ নামে পরিচিত। নেহাল হোসেন ছিলেন একজন উদার প্রকৃতির মানুষ। তিনি সুফিয়াকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহ দেন।
১৯২৩ সালে তিনি রচনা করেন প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’, যা বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১৯২৫ সালে বরিশালে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সুফিয়ার সাক্ষাৎ হয়। তার আগে গান্ধীর স্বাধীনতা সংগ্রামের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি কিছুদিন চরকায় সুতাও কাটেন।
সুফিয়া তার স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় গেলে সেখানে বিশেষ বিশেষ বাঙালি ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তাদের একজন হলেন কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)। নজরুল সুফিয়ার কবিতা পড়ে মুগ্ধ হন এবং সেগুলো পত্রিকায় প্রকাশের জন্য তাকে উদ্বুদ্ধ করেন। সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন (১৮৮৮-১৯৯৪) ১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশ করেন।
১৯২৯ সালে সুফিয়া কামাল বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত মুসলিম মহিলা সংগঠন ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম’-এ যোগ দেন। এখানে নারী শিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারসহ নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হতো। বেগম রোকেয়ার সামাজিক আদর্শ সুফিয়াকে আজীবন প্রভাবিত করেছে। তিনি রোকেয়ার ওপর অনেক কবিতা রচনা করেন এবং তার নামে ‘মৃত্তিকার ঘ্রাণ (১৯৭০) শীর্ষক একটি সঙ্কলন উৎসর্গ করেন। তিনি ‘রোকেয়া সাখাওয়াত স্মৃতি কমিটি’ গঠনের সহায়তা করেন, যার প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হল রোকেয়ার নামে করা হয়।
১৯৩১ সালে সুফিয়া মুসলিম মহিলাদের মধ্যে প্রথম ‘ভারতীয় মহিলা ফেডারেশন’-এর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩২ সালে বিয়ের মাত্র দশ বছরের সুফিয়াকে বৈধব্য বরণ করতে হয়। তার স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বিশোর্ধ্ব সুফিয়া অকালে বিধবা হন বটে, কিন্তু দৃঢ় মনোবলের সাহায্যে তিনি নানা প্রতিকূলতা ও সঙ্কট কাটিয়ে ওঠেন। নিজেকে গড়ে তোলার ব্রতেও তিনি ছিলেন প্রত্যয়ী। এ সময় তিনি মা, ভাই ও মেয়ের সঙ্গে কিছুদিন কলকাতায় কাটান। ১৯৩৩-৪১ পর্যন্ত তিনি কলকাতা কর্পোরেশন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এই স্কুলেই তার পরিচয় হয় প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪) এবং কবি জসীমউদ্দীন (১৯০৩-১৯৭৬)-এর সঙ্গে।
স্কুলে চাকরির পাশাপাশি সুফিয়ার সাহিত্যচর্চাও চলতে থাকে এবং ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থটি। এর ভূমিকা লিখেছিলেন নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথ এটি পড়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। এর মাধ্যমেই সুফিয়ার কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। পরের বছর আপনজন ও শুভানুধ্যায়ীদের ইচ্ছায় তিনি চট্টগ্রামের লেখক ও অনুবাদক কামালউদ্দীন আহমদের সঙ্গে পুনরায় পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। সেই থেকে তিনি ‘সুফিয়া কামাল’ নামে পরিচিত হন।
১৯৪৬ সালে কলকাতায় যখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাধে তখন দাঙ্গাপীড়িতদের সাহায্যের ক্ষেত্রে সুফিয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজে একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার ব্যাপারে সাহায্য করেন। পরের বছর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকা প্রকাশ করলে তিনি প্রথম সম্পাদক নিযুক্ত হন। এ বছরেরই অক্টোবর মাসে তিনি সপরিবারে ঢাকা চলে আসেন।
১৯৪৯ সালে তার যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সুলতানা পত্রিকা, যার নামকরণ করা হয় বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গ্রন্থের প্রধান চরিত্রের নামানুসারে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সুফিয়া কামাল সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ‘মহিলা সংগ্রাম পরিষদ’ (বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে তিনি তার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাচিত হন এবং আজীবন তিনি এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সুফিয়া কামালের দুই মেয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং ভারতের আগরতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার জন্য একটি হাসপাতাল স্থাপন করেন। সুফিয়া, তার স্বামী ও ছেলে দেশের মধ্যেই থেকে যান মুক্তিবাহিনীকে সাহস ও শক্তি জোগানোর জন্য এবং বিভিন্ন খবরাখবর সরবরাহের জন্য। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ‘একাত্তরের ডায়েরি’ নামে একটি দিনলিপি রচনা করেন এবং এ সময়ে লেখা তার কবিতাগুলো পরবর্তীকালে ‘মোর যাদুদের সমাধি পরে’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
সুফিয়া কামাল ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবিদের একজন। তিনি অনেক ছোটগল্প এবং ক্ষুদ্র উপন্যাসও রচনা করেছেন। ‘কেয়ার কাঁটা’ (১৯৩৭) তার একটি উল্লেখযোগ্য গল্পগন্থ। তার আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো : ‘মায়া কাজল’ (১৯৫১), মন ও জীবন (১৯৫৭), উদাত্ত পৃথিবী (১৯৬৪), অভিযাত্রিক (১৯৬৯) ইত্যাদি।
সাহিত্যচর্চার জন্য সুফিয়া কামাল অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘তঘমা-ই-ইমতিয়াজ’ নামক জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন; কিন্তু ১৯৬৯ সালে বাঙালিদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি তা বর্জন করেন। উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি পুরস্কার ও পদক হলো: বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২), একুশে পদক (১৯৭৬), নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৭৭), মুক্তধারা পুরস্কার (১৯৮২), জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫), Womens Federation for World Peace Crest (১৯৯৬), বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬), দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক (১৯৯৬), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭) ইত্যাদি। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের Lenin Centenary Jubilee Medal (১৯৭০) এবং Ges Czechoslovakia Medal (১৯৮৬)সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।
কবি হিসেবে সুফিয়া কামালের পরিচিতি যেমন উজ্জ্বল, তেমনি বুদ্ধিজীবী হিসেবেও তার ভাবমূর্তি এবং সামাজিক ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। যে সময়ে মুসলমান মেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষায় ছিল একেবারেই পশ্চাৎপদ সে সময়ে সুফিয়া কামালের মতো শিক্ষিত ও সমাজপ্রগতি-সচেতন নারীর আবির্ভাব ছিল এক অসাধারণ ব্যাপার।
১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় তার জীবনাবসান ঘটে।
তথ্য সূত্র : বাংলা একাডেমী, ইন্টারনেট।
১৯১৮ সালে সুফিয়া মায়ের সঙ্গে কলকাতা যান। সেখানে তার সাক্ষাৎ হয় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের (১৮৮০-১৯৩২) সঙ্গে। কিছুদিন পরে তিনি শায়েস্তাবাদ ফিরে আসেন বটে কিন্তু তার শিশুমনে রোকেয়া-দর্শনের সেই স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকে; রোকেয়ার ব্যক্তিত্ব তাকে অবিরাম অনুপ্রাণিত করতে থাকে।
১৯২৩ সালে মাত্র বারো বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে সুফিয়ার বিয়ে হয়। তখন তিনি ‘সুফিয়া এন. হোসেন’ নামে পরিচিত। নেহাল হোসেন ছিলেন একজন উদার প্রকৃতির মানুষ। তিনি সুফিয়াকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহ দেন।
১৯২৩ সালে তিনি রচনা করেন প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’, যা বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১৯২৫ সালে বরিশালে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সুফিয়ার সাক্ষাৎ হয়। তার আগে গান্ধীর স্বাধীনতা সংগ্রামের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি কিছুদিন চরকায় সুতাও কাটেন।
সুফিয়া তার স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় গেলে সেখানে বিশেষ বিশেষ বাঙালি ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তাদের একজন হলেন কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)। নজরুল সুফিয়ার কবিতা পড়ে মুগ্ধ হন এবং সেগুলো পত্রিকায় প্রকাশের জন্য তাকে উদ্বুদ্ধ করেন। সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন (১৮৮৮-১৯৯৪) ১৯২৬ সালে তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশ করেন।
১৯২৯ সালে সুফিয়া কামাল বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত মুসলিম মহিলা সংগঠন ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম’-এ যোগ দেন। এখানে নারী শিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারসহ নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হতো। বেগম রোকেয়ার সামাজিক আদর্শ সুফিয়াকে আজীবন প্রভাবিত করেছে। তিনি রোকেয়ার ওপর অনেক কবিতা রচনা করেন এবং তার নামে ‘মৃত্তিকার ঘ্রাণ (১৯৭০) শীর্ষক একটি সঙ্কলন উৎসর্গ করেন। তিনি ‘রোকেয়া সাখাওয়াত স্মৃতি কমিটি’ গঠনের সহায়তা করেন, যার প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হল রোকেয়ার নামে করা হয়।
১৯৩১ সালে সুফিয়া মুসলিম মহিলাদের মধ্যে প্রথম ‘ভারতীয় মহিলা ফেডারেশন’-এর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩২ সালে বিয়ের মাত্র দশ বছরের সুফিয়াকে বৈধব্য বরণ করতে হয়। তার স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বিশোর্ধ্ব সুফিয়া অকালে বিধবা হন বটে, কিন্তু দৃঢ় মনোবলের সাহায্যে তিনি নানা প্রতিকূলতা ও সঙ্কট কাটিয়ে ওঠেন। নিজেকে গড়ে তোলার ব্রতেও তিনি ছিলেন প্রত্যয়ী। এ সময় তিনি মা, ভাই ও মেয়ের সঙ্গে কিছুদিন কলকাতায় কাটান। ১৯৩৩-৪১ পর্যন্ত তিনি কলকাতা কর্পোরেশন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এই স্কুলেই তার পরিচয় হয় প্রাবন্ধিক আবদুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪) এবং কবি জসীমউদ্দীন (১৯০৩-১৯৭৬)-এর সঙ্গে।
স্কুলে চাকরির পাশাপাশি সুফিয়ার সাহিত্যচর্চাও চলতে থাকে এবং ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থটি। এর ভূমিকা লিখেছিলেন নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথ এটি পড়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। এর মাধ্যমেই সুফিয়ার কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। পরের বছর আপনজন ও শুভানুধ্যায়ীদের ইচ্ছায় তিনি চট্টগ্রামের লেখক ও অনুবাদক কামালউদ্দীন আহমদের সঙ্গে পুনরায় পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। সেই থেকে তিনি ‘সুফিয়া কামাল’ নামে পরিচিত হন।
১৯৪৬ সালে কলকাতায় যখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাধে তখন দাঙ্গাপীড়িতদের সাহায্যের ক্ষেত্রে সুফিয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজে একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার ব্যাপারে সাহায্য করেন। পরের বছর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকা প্রকাশ করলে তিনি প্রথম সম্পাদক নিযুক্ত হন। এ বছরেরই অক্টোবর মাসে তিনি সপরিবারে ঢাকা চলে আসেন।
১৯৪৯ সালে তার যুগ্ম সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সুলতানা পত্রিকা, যার নামকরণ করা হয় বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গ্রন্থের প্রধান চরিত্রের নামানুসারে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সুফিয়া কামাল সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ‘মহিলা সংগ্রাম পরিষদ’ (বর্তমানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে তিনি তার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাচিত হন এবং আজীবন তিনি এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সুফিয়া কামালের দুই মেয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং ভারতের আগরতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার জন্য একটি হাসপাতাল স্থাপন করেন। সুফিয়া, তার স্বামী ও ছেলে দেশের মধ্যেই থেকে যান মুক্তিবাহিনীকে সাহস ও শক্তি জোগানোর জন্য এবং বিভিন্ন খবরাখবর সরবরাহের জন্য। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ‘একাত্তরের ডায়েরি’ নামে একটি দিনলিপি রচনা করেন এবং এ সময়ে লেখা তার কবিতাগুলো পরবর্তীকালে ‘মোর যাদুদের সমাধি পরে’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
সুফিয়া কামাল ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবিদের একজন। তিনি অনেক ছোটগল্প এবং ক্ষুদ্র উপন্যাসও রচনা করেছেন। ‘কেয়ার কাঁটা’ (১৯৩৭) তার একটি উল্লেখযোগ্য গল্পগন্থ। তার আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো : ‘মায়া কাজল’ (১৯৫১), মন ও জীবন (১৯৫৭), উদাত্ত পৃথিবী (১৯৬৪), অভিযাত্রিক (১৯৬৯) ইত্যাদি।
সাহিত্যচর্চার জন্য সুফিয়া কামাল অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৬১ সালে তিনি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘তঘমা-ই-ইমতিয়াজ’ নামক জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন; কিন্তু ১৯৬৯ সালে বাঙালিদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি তা বর্জন করেন। উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি পুরস্কার ও পদক হলো: বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২), একুশে পদক (১৯৭৬), নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৭৭), মুক্তধারা পুরস্কার (১৯৮২), জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫), Womens Federation for World Peace Crest (১৯৯৬), বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬), দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক (১৯৯৬), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭) ইত্যাদি। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের Lenin Centenary Jubilee Medal (১৯৭০) এবং Ges Czechoslovakia Medal (১৯৮৬)সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।
কবি হিসেবে সুফিয়া কামালের পরিচিতি যেমন উজ্জ্বল, তেমনি বুদ্ধিজীবী হিসেবেও তার ভাবমূর্তি এবং সামাজিক ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। যে সময়ে মুসলমান মেয়েরা শিক্ষা-দীক্ষায় ছিল একেবারেই পশ্চাৎপদ সে সময়ে সুফিয়া কামালের মতো শিক্ষিত ও সমাজপ্রগতি-সচেতন নারীর আবির্ভাব ছিল এক অসাধারণ ব্যাপার।
১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকায় তার জীবনাবসান ঘটে।
তথ্য সূত্র : বাংলা একাডেমী, ইন্টারনেট।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন