প্রতি বছর শীতকাল এলেই আমাদের আশপাশের জলাশয়, বিল, হাওড়, পুকুর ভরে যায় নানা রঙ বেরঙের নাম না জানা পাখিতে। এসব পাখিকে অতিথিপরায়ন বাঙালী আদর করে নাম দিয়েছে অতিথি পাখি। তুমি হয়তো ভাবতে পারো, যাযাবর এই পাখিরা আমাদের দেশে শীতের ছুটি কাটাতে আসে। কারণ তোমারও তো ঠিক ওই সময়ে স্কুলে ছুটি থাকে। কিন্তু আসলে ছুটি বা অবসর কাটাতে নয় এই পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে হাজির হয় নিজেদের জীবন বাঁচাতে। সে কথা বলছি দাড়াও। তার আগে বলি ওরা কোথা থেকে আসে সেই কথাটা।
আমরা যাকে অতিথি পাখি বলে চিনি, সেই পাখিকে ইংরেজিতে বলে মাইগ্রেটরি বার্ড (Migratory bird)। শুদ্ধ বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় পরিযায়ী পাখি। অর্থাৎ যেসব পাখি বছরের নিদিষ্ট একটা সময় নিজের দেশ বা নিজের এলাকা ছেড়ে বিশেষ প্রয়োজনে অন্য কোন দেশে বা এলাকায় চলে যায় এবং কিছুদিন পর আবার নিজের এলাকায় ফিরে আসে তাদেরকেই সাধারত পরিযায়ি পাখি বলে।
পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখিদের মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নিদিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পরিযায়ি পাখি। এসব পাখির মধ্যে প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি আমাদের দেশে প্রতি বছর বেড়াতে আসে। এদেরকেই আমরা বলি অতিথি পাখি।
পাখিদের একটা সুবিধা কি জানো? কোন দেশে যেতে ওদের কোন পাসপোর্ট বা ভিসা লাগে না। আবার যাতায়াত খরচ বা কোন রকম চেকিংয়ের ঝামেলাও ওদের পোহাতে হয় না। তাই প্রতিবছর এসব অতিথি পাখিরা বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে এ দেশে চলে আসে। কী মজা ওদের তাই না!
কিছু কিছু পাখি তাই প্রতিবছর ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে। উত্তর মেরু অঞ্চলের এক জাতীয় সামুদ্রিক শঙ্খচিল প্রতিবছর এই দূরুত্ব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে আসে।
বাংলাদেশের অতিথি পাখিরা অতোটা পথ পাড়ি না দিলেও তারাও অনেক দুর থেকেই আসে। বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশীর ভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এছাড়া ইউরোপ, দুরপ্রাচ্য (যেমন সাইবেরিয়া) থেকেও এসব পাখি নভেম্বরের দিকে আমাদের দেশে আসে। আর কয়েকমাস বাংলাদেশী বা বাঙালিদের সঙ্গে কাটিয়ে মার্চ-এপ্রিলের দিকে আবার ফিরে যায় নিজের দেশে।
এসব পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের অতি পরিচিতি অতিথি পাখি নর্দান পিনটেইল। এছাড়া স্বচ্ছ পানির বালি হাঁস, খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস (widgeon), ছোট সারস পাখি (egret), বড় সারস পাখি, হেরন (heron), নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি (great crested grebe), কাদাখোঁচা (snipe), গায়ক রেন পাখি (wrens), রাজসরালি, টিকিহাঁস, পাতিকুট, খরচা চকাচকি, মরচে রঙভুতিহাঁস, কালামাথা, গাঙচিল, সরালি, কালোকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও নানা রং আর কন্ঠ বৈচিত্রের পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধুসর ও গোলাপী রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙ্গামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল প্রভৃতি।
আমরা যাকে অতিথি পাখি বলে চিনি, সেই পাখিকে ইংরেজিতে বলে মাইগ্রেটরি বার্ড (Migratory bird)। শুদ্ধ বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় পরিযায়ী পাখি। অর্থাৎ যেসব পাখি বছরের নিদিষ্ট একটা সময় নিজের দেশ বা নিজের এলাকা ছেড়ে বিশেষ প্রয়োজনে অন্য কোন দেশে বা এলাকায় চলে যায় এবং কিছুদিন পর আবার নিজের এলাকায় ফিরে আসে তাদেরকেই সাধারত পরিযায়ি পাখি বলে।
পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখিদের মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নিদিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পরিযায়ি পাখি। এসব পাখির মধ্যে প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি আমাদের দেশে প্রতি বছর বেড়াতে আসে। এদেরকেই আমরা বলি অতিথি পাখি।
পাখিদের একটা সুবিধা কি জানো? কোন দেশে যেতে ওদের কোন পাসপোর্ট বা ভিসা লাগে না। আবার যাতায়াত খরচ বা কোন রকম চেকিংয়ের ঝামেলাও ওদের পোহাতে হয় না। তাই প্রতিবছর এসব অতিথি পাখিরা বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে এ দেশে চলে আসে। কী মজা ওদের তাই না!
কিছু কিছু পাখি তাই প্রতিবছর ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে। উত্তর মেরু অঞ্চলের এক জাতীয় সামুদ্রিক শঙ্খচিল প্রতিবছর এই দূরুত্ব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে আসে।
বাংলাদেশের অতিথি পাখিরা অতোটা পথ পাড়ি না দিলেও তারাও অনেক দুর থেকেই আসে। বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশীর ভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এছাড়া ইউরোপ, দুরপ্রাচ্য (যেমন সাইবেরিয়া) থেকেও এসব পাখি নভেম্বরের দিকে আমাদের দেশে আসে। আর কয়েকমাস বাংলাদেশী বা বাঙালিদের সঙ্গে কাটিয়ে মার্চ-এপ্রিলের দিকে আবার ফিরে যায় নিজের দেশে।
এসব পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের অতি পরিচিতি অতিথি পাখি নর্দান পিনটেইল। এছাড়া স্বচ্ছ পানির বালি হাঁস, খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস (widgeon), ছোট সারস পাখি (egret), বড় সারস পাখি, হেরন (heron), নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি (great crested grebe), কাদাখোঁচা (snipe), গায়ক রেন পাখি (wrens), রাজসরালি, টিকিহাঁস, পাতিকুট, খরচা চকাচকি, মরচে রঙভুতিহাঁস, কালামাথা, গাঙচিল, সরালি, কালোকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও নানা রং আর কন্ঠ বৈচিত্রের পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধুসর ও গোলাপী রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙ্গামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল প্রভৃতি।
অতিথি পাখি কেন আসে
আগেই বলেছি অতিথি পাখি ছুটি কাটাতে নয় বরং বেশ কিছু প্রাকৃতিক কারণে আমাদের দেশে বা অন্যান্য দেশে যেতে বাধ্য হয়। কেন বাধ্য হয়, এই প্রশ্ন নিশ্চয়ই করবে তুমি।সেই কেন’র উত্তর দেবার আগে বলতো, শীত এলে তুমি কী কর! নিশ্চয়ই সোয়েটার জ্যাকেট পরে ফেল। আর সুযোগ পেলে ঢুকে যাও লেপ অথবা কম্বলের তলায়। কিন্তু প্রচন্ড শীতে পাখিরা কী করবে! ওদের তো আর সোয়েটার, জ্যাকেট, লেপ, কম্বল কিছুই নেই! তাই শীতে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে মরার চেয়ে ওরা চলে যায় এমন দেশে যেখানে শীত কিছুটা কম। যেখানে ওরা সোয়েটার বা গরম কোন কাপড় না পড়েই অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারে পুরো শীতকালটা। অতিথি পাখিদের দুরদেশে যাওয়ার এটাই প্রধান কারণ।
তাছাড়া এ সময়টাতে শীতপ্রধান এলাকায় খাবারেও দেখা যায় প্রচন্ড অভাব। কারণ শীতপ্রধান এলাকায় এ সময় তাপমাত্রা থাকে অধিকাংশ সময় শুন্যেরও বেশ নিচে। আর তুষারপাত বা তুষারঝড় তো লেগেই আছে। তাই কোন গাছপালা জন্মাতে বা বাঁচতে পারে না। আর গাছপালা না থাকলে প্রাণীরা বাঁচবে কেমন করে!
তাই শীত এলেই উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চল, হিমালয়ের আশপাশের কিছু অঞ্চলের পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে কম ঠান্ডা অঞ্চলের দিকে।
বসন্তের সময় মানে মার্চ-এপ্রিলের দিকে শীতপ্রধান অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করে, কিছু কিছু গাছপালা জন্মাতে শুরু করে। ঘুম ভাঙতে শুরু করে পুরো শীতকালে ঘুমিয়ে থাকা অনেক প্রাণীদের। ঠিক এরকম এক সময়ে অতিথি পাখিরা নিজ বাড়িতে ফিরে যায় দলবলসহ। কিন্তু মজার ব্যাপার কী জানো, হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়েও এসব পাখিদের নিজের বাড়ি চিনতে একটুও ভুল হয় না। সেটা আবার আরেক রহস্য মানুষের কাছে।
অতিথি পাখিরা কিভাবে পথ চিনে নেয়
অতিথি বা পরিযায়ী পাখিদের কাছে কম্পাস, মানচিত্র বা সেক্সট্যান্ট যন্ত্র কোনটাই নেই। কিন্তু তারপরও তারা বসন্তের সময় ঠিক ঠিক নিজের বাসা চিনে ফিরে আসে। অথচ মানুষের পক্ষে এইসব যন্ত্র ছাড়া সমুদ্রে বা স্থলে হাজার মাইল চলাচল করা খুব কষ্টসাধ্য। তারপরও দেখো, এতসব যন্ত্র সঙ্গে নিয়েও কলম্বাস ভারত উপমহাদেশ মনে করে চলে গিয়েছিলেন কয়েক হাজার মাইল দুরের আমেরিকা মহাদেশে। সেটা অবশ্য আরেক ঐতিহাসিক ভুল।সে যাকগে, অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানী, গবেষক বা পাখি বিশারদরা এই বিষয় নিয়ে রহস্যের মধ্যে আছেন। তোমরা কেউ কেউ হয়তো ভাবছ, অতিথি পাখির কাছে বিষয়টা জিজ্ঞেস করে নিলেই তো ঝামেলা চুকে যায়! কিন্তু পাখিদের সঙ্গে মানুষের ভাষাগত পার্থক্যের কারণেই সে চেষ্টায় খুব বেশি লাভ হবে না বুঝতেই পারছ!
তবে মানুষ কিন্তু তারপরও বসে না থেকে নানান গবেষণা করে এই রহস্য সমাধানের চেষ্টা করেছেন। গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রের নাবিক যেমন কম্পাস ব্যবহার করে পথ চলে এই পাখিদের দেহে সেরকম কিছু একটা জন্মগতভাবেই আছে। যা তাদের পথ চলার সময় দিক চিনতে সাহায্য করে। তাছাড়া তারা সুর্য ও তারার অবস্থানের উপরই নির্ভর করে। পরিস্কার মেঘমুক্ত রাতে যখন আকাশে নক্ষত্র দেখা যায় তখন পরিযায়ী পাখিরা নির্বিঘ্নে পথ চলতে পারে বলে প্রমান পাওয়া গেছে।
কিন্তু আকাশ মেঘলা থাকলে নক্ষত্র ঢাকা পড়ে। এসময় এসব পাখিরা আকাশ থেকে নিচে কোন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে চলা পাখিরা এক্ষেত্রে দিকভ্রান্ত হয়। তাই এসময় অনেক দুরের কোন লাইটহাউজের শক্তিশালী আলোর দিকে তারা পথ ভুল করে চলে আসে দলে দলে। মেঘলা কুয়াশাচ্ছন রাতে লাইটহাউজের গ্লাসে আঘাত পেয়ে হাজার হাজার পাখি মারা পড়ে। তাই অতিথি পাখিদের এই অপমৃত্যু রোধে কিছু কিছু পাখি প্রেমী সংগঠন লাইটহাউজে নিরাপদ আলো ব্যবহার করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইতিহাসের পাতা থেকে
অতিথি পাখিদের ব্যাপারে আজকের মানুষরাই অনেক কিছুই জেনে গেছে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় অতিথি পাখিদের ধরে তাদের পায়ে এক ধরণের রিং পড়িয়ে জানার চেষ্টা চলছে অতিথি পাখিদের গতিপথ সম্পর্কে। কিন্তু শুধু আধুনিক মানুষই নয় এদের সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখত অতীতের মানুষরাও। সে ব্যাপারে তথ্য প্রমানসহ সাক্ষ্য দেয় ইতিহাস।ইতিহাসের পাতায় অতিথি পাখিদের নিয়ে সবচেয়ে প্রাচীন যে তথ্য পাওয়া যায় তা হচ্ছে ৩ হাজার বছর আগের। এসব তথ্যে দেখা যায়, গ্রীসের হেসিয়ড, বিখ্যাত কবি হোমার, ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস, দার্শনিক অ্যারিস্টোটলসহ আরও অনেকেই পরিযায়ী পাখি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতেন। এসব নিয়ে তারা অনেক কিছুই লিখেছেন।
অ্যারিস্টোটলের এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, সারস পাখি স্কাইথিয়ার বৃক্ষহীন প্রান্তর থেকে নীল নদের জলাভুমিকে ভ্রমণ করত। তিনি আবাবিল (swallow) ও অন্যান্য কিছু পাখি সম্পর্কে লিখেছেন, এসব পাখি হাইবারনেশন বা শীতনিদ্রায় যায়। কিন্তু তার এই ধারণাটি ভুল ছিল। এবং এই ভুল ধারণাই দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপের মানুষ বিশ্বাস করত। এই ভুল ধারণা ভাঙ্গতে ইলিয়ট কোয়েস (Elliott Coues) অনেক চেষ্টা করেন। অবশেষে এ বিষয়ে ১৮২টি প্রবন্ধ রচনা করে তিনি ১৮৭৮ সালে ইউরোপিয়ানদের এই ভুল ধারণা ভাঙতে সক্ষম হন। একটা ভুল ধারণা ভাঙতে প্রবন্ধের সংখ্যাটা কমই। তোমরা কী বল!
এদিকে জার্মানির এক গ্রামে এক তীর বিদ্ধ সাদা সারসের ফসিল পাওয়া গিয়েছিল। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল তীরটা আফ্রিকা এলাকার। এতেও প্রমাণিত হয় অনেক আগে থেকেই পাখিরা দুরদেশে ভ্রমন করে।
বিশ্ব অতিথি পাখি দিবস
পরিযায়ি পাখিরা শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বেই প্রতি বছর ভ্রমন করছে। প্রতি বছরই তার শীতপ্রধান অঞ্চলের তীব্র শীত থেকে বাঁচতে উড়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মাইল দুরের কোন উষ্ণ অঞ্চলের দিকে। সাদা চোখে কিছু না বোঝা গেলেও পাখিদের এই ভ্রমণের একটা আন্তর্জাতিক গুরুত্ব আছে। এই গুরুত্ব অনুধাবন করে অতিথি পাখিদের জন্য পাখি প্রেমীরা ‘বিশ্ব পরিযায়ি পাখি দিবস’ পালন করছেন।২০০৬ থেকে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। সে বছর ৯ এপ্রিল কেনিয়ার লাইকিপিয়াতে এই দিবসটি জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে ৪৬টিরও বেশি দেশ অংশ নিয়েছিল। ২০০৭ সালের ১২ থেকে ১৩ মে এই দিবসটি পালন করা হয়।
‘বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব’ নামের একটি সংগঠন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাখি মেলা বা পাখি উৎসবের আয়োজন করে আসছে বেশ কিছু দিন ধরে। ইতিমধ্যেই তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, মিরপুর সিরামিক লেক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, হাকালুকি হাওড় ও বাইক্কা বিল প্রভৃতি স্থানে এই মেলা ও উৎসবের আয়োজন করেছে। এই উৎসবে বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পাখির রেস, ভিডিও ও ছবি দেখে পাখি চেনা, পাখি বিষয়ক কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতা প্রভৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
যে যেভাবেই এই পাখিদের নিয়ে দিবস পালন করুক না কেন সবারই উদ্দেশ্যে প্রায় একই। আর তা হচ্ছে, অতিথি পাখিদের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করা।
আমাদের বন্ধু অতিথি পাখি
অতিথি পাখি আমাদের বন্ধু। কিন্তু কেন তা কি জান? অতিথি পাখি আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নানাভাবে রক্ষা করে। ভাবছ সেটা কিভাবে? যে কোন পরিবেশে উদ্ভিদ বা প্রাণী একটা নিদিষ্ট সংখ্যার চেয়ে বেশি হলেই সে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। অর্থাৎ সেই পরিবেশে কোন প্রাণী বা উদ্ভিদ টিকে থাকতে পারে না। যেমন ধর, কোন একটা পরিবেশে একসঙ্গে ছোট গাছ, পোকামাকড়, ব্যাঙ, সাপ, বাজপাখি যদি পরিমাণ মত বাস করে তাহলে ওই পরিবেশটা ঠিকঠাক টিকে থাকবে। কারণ খাদ্য-শৃংখল অনুযায়ী পোকামাকড় খাবে ছোট গাছ, ব্যাঙ পোকামাকড়কে খাবে, ব্যাঙকে খাবে সাপ এবং সাপকে খাবে বাজপাখি। এভাবে ওই পরিবেশটা স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু কোন কারণে যদি ওই পরিবেশে কোন পোকামাকড় না থাকে তাহলে ব্যাঙ বাঁচতে পারবে না। আর ব্যাঙ না পেলে সাপ বাঁচবে কিভাবে! একইভাবে বাজপাখিও পড়বে বিপদে। আবার বিপরীতভাবে পোকামাকড় বেশি থাকলেও বিপদ। কারণ তা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর নানাভাবে ক্ষতি করে।অনেক দুরদেশ থেকে এসে অতিথি পাখি খাদ্য হিসেবে অনেক পোকামাকড় ও ছোট ছোট জলজ উদ্ভিদ খায়। জলাশয় বা পুকুরে জলজ উদ্ভিদ এমনিতে বেশ দরকারী। এসব জলজ উদ্ভিদ পানিতে অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে। কিন্তু জলজ উদ্ভিদের পরিমাণ যদি বেশি হয়ে যায় তাহলে তা পানির পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায়। কারণ তখন জলজ উদ্ভিদ শ্বসনের সময় পানি থেকে অক্সিজেন নেয়। ফলে পানিতে বসবাসকারী মাছ বা অন্যান্য প্রাণী অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। আর তারা পোকামাকড় খাওয়ার কারণে প্রাকৃতিকভাবেই পোকামাকড়ের সংখ্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। আবার অতিথি পাখির মল জলাশয়ের মাছেদের প্রিয় খাবার। এই খাবার খেয়ে অনেক মাছ বেঁচে থাকে।
আর প্রাকৃতিক দৃশ্যের কথা নতুন করে আর কী বলব। অতিথি পাখি যখন ঝাঁক বেধে তাদের বিচিত্র স্বরে ডাকতে ডাকতে উড়ে চলে সেটা অবশ্যই পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্যের একটি। এই দৃশ্য দেখার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমাচ্ছে। এসব জায়গার মধ্যে ঢাকার মিরপুরের চিড়িয়াখানা ও জাতীয় উদ্যান, মিরপুর সিরামিক লেক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জলাশয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, পুটিয়ার পচামাড়িয়া, মৌলভীবাজারের এশিয়ার সর্ব বৃহৎ হাওর হাকালুকি হাওর, সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, দিনাজপুরের রামসাগর, বরিশালের দুর্গাসাগর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপকুলীয় ও জলাভুমি জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উদ্যোগে গত ৩০ ডিসেম্বর হাকালুকি হাওরে জলচর পাখির একটি শুমারি করা হয়। এই শুমারির নেতৃত্ব দেন পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম-আল-হক। জরিপে ৪১ প্রজাতির প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৫১টি স্থানীয় ও অতিথি পাখি দেখা গেছে। যা গতবছরের তুলায় আড়াইগুন বেশি। এসব পাখি দেখার জন্য, প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ভীড় জমাচ্ছে সেখানে।
বিপদও আছে!
এবছর অতিথি পাখি বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চলের জন্য একটু সমস্যা তৈরি করেছে। দক্ষিণাঞ্চলের সিডর আক্রান্ত কয়েকটি জেলার কৃষকরা অভিযোগ করেছে, অতিথি পাখি তাদের বীজতলার লাগানো ধান খেয়ে ফেলছে। এতে সে এলাকায় আবার নতুন করে খাদ্য সংকটের আশংকা/ আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
তাছাড়া অনেক গবেষকের ধারণা, সারাবিশ্বে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অতিথি পাখিরা অনেকাংশেই দায়ী।
এসব ঘটনা বাদ দিলে অতিথি পাখি আসলে আমাদের বন্ধু।
আমাদের অতিথি
পরিযায়ি পাখিরা আমাদের অতিথি। হাজার হাজার মাইল দুরের দেশ থেকে একটু আশ্রয়ের জন্য চলে আসে আমাদের দেশে। কিন্তু কিছু নিষ্ঠুর লোক এসব পাখিকে শিকার করছে অর্থের লোভে বা নিছক শিকারের আনন্দে। এদের আবার ‘সৌখিন শিকারী’ গালভরা নামে ডাকা হয়। তবে শুধু সৌখিন শিকারীরাই নয় অনেক পেশাদার শিকারীরা অতিথি পাখিদের যত্রতত্র শিকার করে টাকার লোভে। তুমিই বলো অতিথিদের সাথে কি কেউ এরকম অমানবিক আচরণ করে?এসব সৌখিন শিকারীদের ঠেকাতে সরকারী পর্যায়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ইতোমধ্যে হাকালুকি হাওরের ৫টি বিল দহবিল, হাল্লা-জল্লা, হারামডিঙা, নাগোয়া-লবিরই ও চাতলা বিলকে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে চাতলা ও দহবিলে হিজল, করচ, বরুন, মাটনা, আড়াং, মুর্তাসহ জলাভূমির উপযোগী বিভিন্ন উদ্ভিদের ডাল পোতা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাকি ৩টি বিলে পাকা খুঁটি বসিয়ে তার ওপর জারুল কাঠের তৈরি অতিথি পাখির কৃত্রিম বাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে আশা করা যায়, এসব অতিথি পাখি শিকারিদের কিছুটা ঠেকানো যাবে।
ছবি : কামরুজ্জামান
সূত্র : বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/আবুল বাসার/এমাইআর/২১ জানুয়ারি
1 Comment:
পাখিগুলোর আলাদা ছবি ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিলে সব থেকে ভাল হয়। সব জায়গাতে মুধু বর্ণনা পড়ি কিন্তু আমাদেরও চেনার প্রয়োজন আছে না কি ? অনুগ্রহ করে আমাদের পাখি চিনতে সাহায্য করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন