আকাশে যখন ঘুড়ি ওড়ে তখন তার সঙ্গে মনটাও যেন উড়ে উড়ে যায়। মনে হয় ঘুড়ির সঙ্গে গিয়ে যদি আকাশটা ছুঁতে পারতাম! ওইভাবে যদি আকাশের কানে কানে কথা বলা যেতো ঘুড়ির মতো! ঘুড়ি দেখে আমাদের মন তাই আনমনা হতে বাধ্য। আর নিজে ঘুড়ি ওড়ানো? সে তো আরেক মজার ব্যাপার। এই টান টান, গেলো গেলো। ওই ঘুড়িটা কাটতেই হবে। দেখি, কার ঘুড়ি কত উপরে ওড়ে। মজার মজার সব কাণ্ড ঘটে সে সময়। চলো তো দেখি, আজ বরং আমরা কিছুক্ষণ ঘুড়ি উড়িয়েই আসি।
ঘুড়ির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যীশু খ্রীস্টের জন্মের প্রায় ২৮০০ বছর আগে চীনে প্রথম ঘুড়ি ওড়ানো হয়। সেসময় বাঁশের কাঠামোর সঙ্গে সিল্ক কাপড় দিয়ে ঘুড়ি বানানো হতো। এরপর তো কাগজ দিয়ে বানানো হলো ঘুড়ি। এই সময় আবার এই কাগজে বিভিন্ন তথ্যও লেখা হতো। কেন? কারণ কোনো কোনো সময় যুদ্ধক্ষেত্রে ঘুড়ি দিয়ে শত্রুপক্ষের চোখ এড়িয়ে নিজের লোকদের কাছে সংবাদ পাঠানো হতো। এছাড়াও আরো কিছু কাজে ঘুড়ি ওড়ানো হতো। যেমন দূরত্ব মাপা, বাতাসের গতিবিধি দেখা থেকে শুরু করে সংকেত পাঠানোর কাজেও ব্যবহার করা হতো ঘুড়ি। এরপর ১৩ শতকের শেষের দিকে পরিব্রাজক মার্কো পোলোর মাধ্যমে ঘুড়ির কথা ইউরোপের মানুষ জানতে পারে। তবে ঘুড়ির স্বর্ণযুগ বলা হয় ১৮৬০ সাল থেকে ১৯১০ পর্যন্ত সময়কে। কারণ এই সময় ঘুড়ি দিয়ে অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করা হতো।
ঘুড়ির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যীশু খ্রীস্টের জন্মের প্রায় ২৮০০ বছর আগে চীনে প্রথম ঘুড়ি ওড়ানো হয়। সেসময় বাঁশের কাঠামোর সঙ্গে সিল্ক কাপড় দিয়ে ঘুড়ি বানানো হতো। এরপর তো কাগজ দিয়ে বানানো হলো ঘুড়ি। এই সময় আবার এই কাগজে বিভিন্ন তথ্যও লেখা হতো। কেন? কারণ কোনো কোনো সময় যুদ্ধক্ষেত্রে ঘুড়ি দিয়ে শত্রুপক্ষের চোখ এড়িয়ে নিজের লোকদের কাছে সংবাদ পাঠানো হতো। এছাড়াও আরো কিছু কাজে ঘুড়ি ওড়ানো হতো। যেমন দূরত্ব মাপা, বাতাসের গতিবিধি দেখা থেকে শুরু করে সংকেত পাঠানোর কাজেও ব্যবহার করা হতো ঘুড়ি। এরপর ১৩ শতকের শেষের দিকে পরিব্রাজক মার্কো পোলোর মাধ্যমে ঘুড়ির কথা ইউরোপের মানুষ জানতে পারে। তবে ঘুড়ির স্বর্ণযুগ বলা হয় ১৮৬০ সাল থেকে ১৯১০ পর্যন্ত সময়কে। কারণ এই সময় ঘুড়ি দিয়ে অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করা হতো।
আমাদের দেশে অবশ্য ঘুড়ি এক বিশেষ সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মোঘল সাম্রাজ্যের সময় থেকে আমাদের উপমহাদেশে ঘুড়ি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখানে ঘুড়ি ওড়ানো এক উৎসব হিসেবেই দেখে সবাই। একসঙ্গে অনেক ঘুড়ি আকাশে ওড়ে। এর মধ্যে আবার চলে ঘুড়ি কাটাকাটি খেলা। সত্যিই, সে এক উৎসবই বটে।
আমাদের উপমহাদেশে যে ঘুড়িগুলো সাধারণত আগে থেকে ওড়ানো হতো তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো গুড্ডি বা পাতাঙ ঘুড়ি। এর সঙ্গে আবার লেজ লাগিয়ে সাপ ঘুড়িও বানানো হতো। এছাড়াও রয়েছে চাঙ গুড্ডি, চিল ঘুড়ি- আরো কতো কি! মূলত আনন্দ করাই হলো ঘুড়ি ওড়ানোর আসল কথা।
আমাদের উপমহাদেশে যে ঘুড়িগুলো সাধারণত আগে থেকে ওড়ানো হতো তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো গুড্ডি বা পাতাঙ ঘুড়ি। এর সঙ্গে আবার লেজ লাগিয়ে সাপ ঘুড়িও বানানো হতো। এছাড়াও রয়েছে চাঙ গুড্ডি, চিল ঘুড়ি- আরো কতো কি! মূলত আনন্দ করাই হলো ঘুড়ি ওড়ানোর আসল কথা।
আমাদের দেশে গ্রাম বাংলাতে ঘুড়ি ওড়ানোর দলে আছে মূলত শিশুরা। বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বানিয়ে সারাদিন আকাশে উড়িয়ে বেড়ানোর যে কি মজা, সে নিজে না ওড়ালে বোঝানো সম্ভব নয়। আর ঘুড়ি ওড়াবার সময়টাও যে এখনই। মাঠ থেকে ধান কাটা হয়ে গেলে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানো। কোনো কোনো সময় সে ঘুড়ি আবার হয় ভো-কাট্টা। ভো-কাট্টা মানে বোঝো নি? যখন কোনো ঘুড়ি কেটে যায়, তখন সে ঘুড়িকে বলা হয় ভো-কাট্টা। সেই ভো-কাট্টা ঘুড়ির পিছন পিছন সারাদিন ছুটে বেড়িয়েই অনেক সময় কেটে যায়। শুধু নজর রাখতে হয় ঘুড়িটা কোথায় গিয়ে পড়ে! কখনো কখনো এই কাটা ঘুড়ি গিয়ে পড়ে মস্ত কোনো গাছের মাথায়। কি হবে এবার! কিভাবে নামাবে সে ঘুড়ি? দস্যি ছেলের দলের কাছে কি আর মস্ত গাছ বলে কিছু আছে? ঠিক ঠিক তারা চড়ে বসে সে গাছের মাথায়। বিজয়ীর বেশে হাসতে হাসতে নামিয়ে আনে কেটে যাওয়া ঘুড়ি।
কখনো কখনো তো এমনও হয় যে এক এলাকার ভো-কাট্টা ঘুড়ি গিয়ে পড়ে অন্য এলাকায়। সেই এলাকার ছেলেদের তো মহা আনন্দ। মুফতে একটা ঘুড়ি তো পাওয়া গেলো। কিন্তু যদি সেই ঘুড়ি খুঁজতে খুঁজতে চলে আসে আসল মালিক, তবেই বাঁধে গণ্ডগোল। কে পাবে এবারে সে ঘুড়ি? যাই হোক, সে অনেক বাকবিতণ্ডার পরে হয়তো আসল মালিককেই দিয়ে দেয়া হয় সেই ঘুড়ি।
ভাবছো হয়তো, একটা কাটা যাওয়া ঘুড়ির পিছনে কেন মিছে এতো দৌড়াদৌড়ি, একটা নতুন বানিয়ে নিলেই তো হয়! তা হয়তো হয়। কিন্তু যে ঘুড়িটা বহু যত্ন করে বানানো হয়, তার জন্য তো একটু হলেও মায়া থাকে আসল মালিকের। সেজন্যই সে ছুটতে ছুটতে চলে যায় ঐ ঘুড়ির পিছে। আরো একটা কারণ অবশ্য আছে। কি সেটা? কাটা যাওয়া ঘুড়িটার সঙ্গে তো থাকে অনেকটুকু সুতো। এই সুতোর জন্যও অবশ্য ছেলেদের এত ছোটাছুটি। এই যাঃ! তোমাদের তো বলাই হয়নি। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য তো বিশেষ সুতো লাগে। মানে সাধারণ সুতো বাজার থেকে কিনে নিয়ে সেটাকেই ‘বিশেষ’ বানানো হয়।
দাঁড়াও দাঁড়াও, বলছি কেন সুতোকে বিশেষ বানানো হয়। ধরো তোমার ঘুড়ি উড়িয়েছো, আর অন্যদিকে তোমার আরেক বন্ধুও ঘুড়ি উড়িয়েছে। এখন তো খেলা হবে কে কার ঘুড়ি কাটতে পারে! মানে তুমি ঘুড়ি উড়িয়ে যদি তোমার বন্ধুটির ঘুড়ির সুতো কেটে দিতে পারো তবে তো ওর ঘুড়িটা হবে ভো-কাট্টা। সেই সঙ্গে তুমি জিতে যাবে। তবে এমনি এমনি তো আর তোমার ঘুড়ির সুতো গিয়ে অন্যের ঘুড়ির সুতো কেটে দেবে না। সেজন্য তোমার সুতোটি হতে হবে বিশেষ ধরনের। অর্থাৎ তোমার সুতোয় ধার থাকতে হবে । আর এর জন্য বাজার থেকে ঘুড়ির সুতো কেনার পর তাতে দিতে হয় মাঞ্জা। মানে মাঞ্জা দিয়ে সুতোকে বানাতে হয় ধারালো। তবেই তো তোমার সুতো অন্যের সুতো কাটার জন্য প্রস্তুত হবে। আর এই সুতোতে মাঞ্জা দেয়াও কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়। কারণ, মাঞ্জা দিতে হয় কাচের গুড়ো আর আঠা দিয়ে। এই কাজ করতে হয় খুবই সাবধানে। নাহলে হাত টাত কেটেকুটে একাকার হয়ে যাবে। বাজারে অবশ্য মাঞ্জা দেয়া সুতোও কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু নিজের ঘুড়ির সুতোয় নিজে মাঞ্জা দেয়ার মজাই আলাদা। সুতোয় মাঞ্জা দেয়ার পরে রোদে শুকোতে হয় সেই সুতো। ভালোভাবে শুকোনোর পরে তবেই তৈরি হবে তোমার ঘুড়ির সুতো।
ঘুড়ি কিনতে পাওয়া গেলেও নিজে বানানোই ভালো। কারণ তোমার যেমন খুশি তেমন ঘুড়ি বানাতে পারবে তখন। ইচ্ছে হলে বানালে একটা সাপ। আবার যদি তা ভালো না লাগে তবে বানালে একটা পরী। এরকম যেমন খুশি ঘুড়ি বানাতে পারবে তখন। যেহেতু শখ করেই ওড়ানো, তবে তা কেন নিজের মতো করেই বানাবে না তুমি?
ঘুড়ি বানিয়ে, সুতোয় মাঞ্জা দিয়ে এবারে তুমি সতি সত্যি তৈরি ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য। তোমার নিজের হাতে মাঞ্জা দেয়া সেই সুতো দিয়ে এবারে আকাশে ঘুড়ি ওড়ালে তুমি। আশে পাশে সবার ঘুড়ির সুতো কেটে তাদের বানিয়ে দেবে ভো-কাট্টা। তখন আকাশে থাকবে শুধুই তুমি, মানে তোমার ঘুড়ির সঙ্গে তুমি। যতক্ষণ খুশি ভেসে বেড়াও আকাশে। কেউ না করবে না তখন। কোন দিক দিয়ে সময় কেটে যাবে বলতেই পারবে না তুমি।
বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/এসএ/সাগর/ডিসেম্বর ০২/১০
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন