বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ চলছে। প্রত্যেক বছর পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে চলছে অনেক প্রোগ্রাম। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক দেশই এখন পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। অনেকেই আতঙ্কে আছেন ভবিষ্যত্ বিপর্যয়ের কথা ভেবে। ২০০৯ সালের ১৭ অক্টোবর মালদ্বীপে প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে সাগরের তলদেশে ব্যতিক্রমধর্মী মন্ত্রিসভার বৈঠকের আয়োজন করা হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে মালদ্বীপ রাষ্ট্রটি পানির নিচে হারিয়ে যেতে পারে, এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা অত্যন্ত স্পষ্ট। আমরা যদি কোরআন-হাদিস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাই পরিবেশ সংরক্ষণকে বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চৌদ্দশ’ বছর আগে এ ব্যাপারে ইসলাম যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে তা আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি।
পরিবেশ কী : পরিবেশ হলো কোনো স্থান বা অঞ্চলের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, যার মধ্যে বসবাস করে মানুষ জীবনধারণ করে। অর্থাত্, পরিবেশ বলতে একটি এলাকার সামগ্রিক প্রাকৃতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থানকে বোঝায়, যার মধ্যে বসবাস করে ওই স্থানের জনগণ জীবিকা নির্বাহ করে। জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী, জলাশয়, বনভূমি, ভূমির উর্বরতা, প্রাকৃতিক অবস্থা এবং সরকার, রাজনীতি, জাতি, ধর্ম, জনসংখ্যা, শিক্ষাদীক্ষা, প্রভৃতি অপ্রাকৃতিক অবস্থা নিয়ে গঠিত হয় কোনো স্থানের পরিবেশ। আমরা এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
ইসলামে পরিবেশের গুরুত্ব : ইসলাম পরিবেশকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। মিসরের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা সাইয়েদ তানতাবী তাঁর এক বইতে লিখেছেন যে, আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের মধ্যে পাঁচ শতবার পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য উত্সাহিত করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে বলেছেন, এই পৃথিবী তোমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা একে আবাদ কর। তিনি বলেন : ‘তিনিই যমীন হতে তোমাদেরকে পয়দা করেছেন এবং তন্মধ্যে তোমাদেরকে বসতি দান করেছেন’ (সুরা হুদ : ৬১)। পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে পৃথিবী আবাদ হতে পারে; মানুষের বসবাসের উপযোগী হতে পারে। আর পরিবেশ যখন সংরক্ষণ করা হবে না তখন এই দুনিয়া বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
জলবায়ু : পৃথিবী মানুষের বসবাসযোগ্য থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বস্তু হচ্ছে পানি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে ষাটটি আয়াতে পানির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন : ‘সারা পৃথিবীর যত বস্তু সবগুলো আমি তৈরি করেছি পানি হতে’ (সুরা আল আম্বিয়া : ৩০)। দুনিয়ায় যা কিছু প্রাণ পেয়েছে তা কেবল পানি থেকেই পেয়েছে। তাই পানি আমাদের জীবনে মহামূল্যবান সম্পদ। বর্তমান বিজ্ঞান কোরআনের তত্ত্বকে গ্রহণ করেছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় প্লাটাপ্লাজম থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের সৃষ্টি। আর প্লাটাপ্লাজমের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এটি এমন একটি উপাদান যাতে রয়েছে কিছুটা আর্দ্রতা ও কিছুটা পানি। পানি একটি মৌলিক উপাদান। এই উপাদানকে সংরক্ষণের ব্যাপারে ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.) পানিকে দূষণমুক্ত রাখতে বলেছেন।
পাহাড়-পর্বত : আল্লাহতায়ালা পাহাড়-পর্বতকে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে পাহাড়-পর্বতের কথা বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা পাহাড়-পর্বত সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন : ‘আর পাহাড়কে আমি পেরেক হিসেবে সৃষ্টি করেছি’ (সুরা আন নাবা : ৭)।
পাহাড়-পর্বত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। জমিনকে ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচানোর জন্যই এই পাহাড়ের সৃষ্টি। আল্লাহতায়ালা গোটা দুনিয়াকে হেফাজতের জন্য যেখানে যতটুকু পাহাড় তৈরি করা দরকার সেখানে ততটুকু তৈরি করেছেন। বর্তমানে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পাহাড় কাটাকে পরিবেশের জন্য হুমকি মনে করছেন। সব দেশেই পাহাড়-পর্বত কাটা নিষিদ্ধ।
গাছপালা : গাছপালা ও বনজঙ্গল আমাদের জীবনে আল্লাহর বড় দান। আল্লাহতায়ালা এগুলো দান করে আমাদের জীবনকে ধন্য করেছেন। গাছপালা, বনজঙ্গল, তরুলতা ও উদ্ভিদ মানুষের জীবনের বড় অনুষঙ্গ। মানুষের জীবন এগুলো ছাড়া কল্পনা করা যায় না। প্রাণীকূল অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে না। আর এ অক্সিজেনের সম্পূর্ণটাই আসে গাছপালা থেকে। গাছ ছাড়া মানুষের জীবন তাই অর্থহীন। মানুষের পরম বন্ধু এ গাছ সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। আল্লাহ ও তার রাসুল (স.) আমাদেরকে বৃক্ষরোপণ ও এর যত্ন নিতে বলেছেন।
জীববৈচিত্র্য : আল্লাহপাক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য পাখ-পাখালী, পশু, হিংস্র জন্তু, বিষাক্ত সাপ ও বিচ্ছু সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। যেই এলাকার জন্য যতটুকু বিষাক্ত জন্তু সৃষ্টি করা প্রয়োজন আল্লাহ ততটুকুই সৃষ্টি করেছেন। এরা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ধ্বংস করে। এজন্য নবী (স.) বিষাক্ত সাপকেও বিনা কারণে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। অতএব, আমরা যদি পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা মানতে পারি তাহলে আমাদেরই কল্যাণ হবে। অন্যথায় আমরা নিজেরাই আমাদের মরণ ডেকে আনব। আমাদের জীবন-জীবিকা হুমকির মধ্যে পতিত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
পরিবেশ কী : পরিবেশ হলো কোনো স্থান বা অঞ্চলের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, যার মধ্যে বসবাস করে মানুষ জীবনধারণ করে। অর্থাত্, পরিবেশ বলতে একটি এলাকার সামগ্রিক প্রাকৃতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থানকে বোঝায়, যার মধ্যে বসবাস করে ওই স্থানের জনগণ জীবিকা নির্বাহ করে। জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী, জলাশয়, বনভূমি, ভূমির উর্বরতা, প্রাকৃতিক অবস্থা এবং সরকার, রাজনীতি, জাতি, ধর্ম, জনসংখ্যা, শিক্ষাদীক্ষা, প্রভৃতি অপ্রাকৃতিক অবস্থা নিয়ে গঠিত হয় কোনো স্থানের পরিবেশ। আমরা এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
ইসলামে পরিবেশের গুরুত্ব : ইসলাম পরিবেশকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। মিসরের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা সাইয়েদ তানতাবী তাঁর এক বইতে লিখেছেন যে, আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের মধ্যে পাঁচ শতবার পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য উত্সাহিত করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে বলেছেন, এই পৃথিবী তোমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা একে আবাদ কর। তিনি বলেন : ‘তিনিই যমীন হতে তোমাদেরকে পয়দা করেছেন এবং তন্মধ্যে তোমাদেরকে বসতি দান করেছেন’ (সুরা হুদ : ৬১)। পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে পৃথিবী আবাদ হতে পারে; মানুষের বসবাসের উপযোগী হতে পারে। আর পরিবেশ যখন সংরক্ষণ করা হবে না তখন এই দুনিয়া বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
জলবায়ু : পৃথিবী মানুষের বসবাসযোগ্য থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বস্তু হচ্ছে পানি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে ষাটটি আয়াতে পানির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন : ‘সারা পৃথিবীর যত বস্তু সবগুলো আমি তৈরি করেছি পানি হতে’ (সুরা আল আম্বিয়া : ৩০)। দুনিয়ায় যা কিছু প্রাণ পেয়েছে তা কেবল পানি থেকেই পেয়েছে। তাই পানি আমাদের জীবনে মহামূল্যবান সম্পদ। বর্তমান বিজ্ঞান কোরআনের তত্ত্বকে গ্রহণ করেছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় প্লাটাপ্লাজম থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের সৃষ্টি। আর প্লাটাপ্লাজমের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এটি এমন একটি উপাদান যাতে রয়েছে কিছুটা আর্দ্রতা ও কিছুটা পানি। পানি একটি মৌলিক উপাদান। এই উপাদানকে সংরক্ষণের ব্যাপারে ইসলামে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.) পানিকে দূষণমুক্ত রাখতে বলেছেন।
পাহাড়-পর্বত : আল্লাহতায়ালা পাহাড়-পর্বতকে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে পাহাড়-পর্বতের কথা বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা পাহাড়-পর্বত সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন : ‘আর পাহাড়কে আমি পেরেক হিসেবে সৃষ্টি করেছি’ (সুরা আন নাবা : ৭)।
পাহাড়-পর্বত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। জমিনকে ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচানোর জন্যই এই পাহাড়ের সৃষ্টি। আল্লাহতায়ালা গোটা দুনিয়াকে হেফাজতের জন্য যেখানে যতটুকু পাহাড় তৈরি করা দরকার সেখানে ততটুকু তৈরি করেছেন। বর্তমানে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পাহাড় কাটাকে পরিবেশের জন্য হুমকি মনে করছেন। সব দেশেই পাহাড়-পর্বত কাটা নিষিদ্ধ।
গাছপালা : গাছপালা ও বনজঙ্গল আমাদের জীবনে আল্লাহর বড় দান। আল্লাহতায়ালা এগুলো দান করে আমাদের জীবনকে ধন্য করেছেন। গাছপালা, বনজঙ্গল, তরুলতা ও উদ্ভিদ মানুষের জীবনের বড় অনুষঙ্গ। মানুষের জীবন এগুলো ছাড়া কল্পনা করা যায় না। প্রাণীকূল অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে না। আর এ অক্সিজেনের সম্পূর্ণটাই আসে গাছপালা থেকে। গাছ ছাড়া মানুষের জীবন তাই অর্থহীন। মানুষের পরম বন্ধু এ গাছ সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। আল্লাহ ও তার রাসুল (স.) আমাদেরকে বৃক্ষরোপণ ও এর যত্ন নিতে বলেছেন।
জীববৈচিত্র্য : আল্লাহপাক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য পাখ-পাখালী, পশু, হিংস্র জন্তু, বিষাক্ত সাপ ও বিচ্ছু সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। যেই এলাকার জন্য যতটুকু বিষাক্ত জন্তু সৃষ্টি করা প্রয়োজন আল্লাহ ততটুকুই সৃষ্টি করেছেন। এরা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ধ্বংস করে। এজন্য নবী (স.) বিষাক্ত সাপকেও বিনা কারণে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। অতএব, আমরা যদি পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা মানতে পারি তাহলে আমাদেরই কল্যাণ হবে। অন্যথায় আমরা নিজেরাই আমাদের মরণ ডেকে আনব। আমাদের জীবন-জীবিকা হুমকির মধ্যে পতিত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
সুত্র : আমার দেশ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন