— পাঁচ ইঞ্চি দেয়াল ভেদ করে দেখা যায়, এমন এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে একজন।
— কে সে? নিশ্চয়ই বড় বিজ্ঞানী?
— তা তো বটেই।
— তা জিনিসটা কি? মানে আবিষ্কারটা?
— কেন জানালা!
ছোটবেলায় এই জোকটা ছিল জালাল সাহেবের প্রিয় একটা জোক। আর বড় বেলায় এসে এই জোকই এখন যেন বিগ ট্র্যাজেডি হয়ে দাঁড়িয়েছে! বিষয়টা খুলেই বলা যাক...
জালাল সাহেব অবশেষে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হলেন। জমিজমা বেচে, অফিসের গ্র্যাচুইটি, পেনশন, হাবি-জাবি সব মিলিয়ে সবেধন নীলমণি এই ফ্ল্যাট। আটশ’ স্কয়ার ফিটের ফারমের মুরগির খাঁচা বললেই ভালো হতো। কিন্তু যেহেতু মূল্য চল্লিশ লাখ সামথিং... নিয়েছে (বারো কিস্তিতে) কাজেই এটাকে ঠিক মুরগির খাঁচা বলা যাচ্ছে না। ফ্ল্যাটই বলতে হচ্ছে। ভার্সিটিতে পড়ুয়া মেয়ের একটা রুম হয়েছে, কলেজ গোয়িং ছেলের একটা রুম হয়েছে এতেই তিনি খুশি। তাদেরও একটা বেডরুম হয়েছে সঙ্গে এটাচড বাথ। স্ত্রীর ঐ একটাই শখ ছিল, এটাচড বাথ হবে। শেষ জীবনে এসে সে আশা পূর্ণ হলো, তাই বা মন্দ কি? ভালোই চলছিল তাদের। নতুন ফ্ল্যাটে নতুন জীবন। কিন্তু একটা সমস্যা আবিষ্কার করলেন তার স্ত্রী। সমস্যাই বটে, ভয়াবহ সমস্যা। তাদের বেডরুমের একমাত্র জানালাটি খুললেই পাশের ফ্ল্যাটে টয়লেটের একমাত্র জানালা ... দূরত্ব কত হবে, খুব বেশি হলেও দেড় ফিট... সেই যে বিজ্ঞাপনে বলে না দূরত্ব যতই হোক কাছে থাকুন... কিন্তু এই কাছে থাকা সত্যি কঠিন, জানালা খুললেই ... !!
— আমার মনে হয় কি জান? স্ত্রী নাক কুঁচকে বলে।
— কি?
— ওরা যেদিন তোমার মতো পচা বাজার করে আনে, সেদিনই বাজে গন্ধটা নাকে বেশি লাগে...
— কি, আমি পচা বাজার করি?
— এটা নিয়ে আমি তর্ক করতে চাই না। এখন বল এই সমস্যার সমাধান কি? জানালাই যদি খুলতে না পারি, তাহলে ফ্ল্যাট বাড়ির এত বড় জানালা দিয়ে হবেটা কি?
— জানালা আমরা খুলবই খুলব ...
— কিন্তু ঐ টয়লেটের গন্ধ...?
— ঐ যে তুমি বললে ওরা যেদিন পচা বাজার করে সেদিনই...
— হ্যাঁ সেদিনই গন্ধটা বেশি আসে। পচা জিনিস খেয়ে পেট নেমে যায় তখন...
— হ্যাঁ... ওরা যাতে পচা বাজার না করে সে ব্যবস্থাই করতে হবে...
— মানে??
জালাল সাহেব মানে’র ব্যাখ্যায় আর গেলেন না। তিনি নিচে নেমে গেলেন। এই সময়টায় পাশের বাসার ভদ্রলোক সিগারেট খেতে বাইরে বের হোন। তার সঙ্গে একটু আলাপ জমানো দরকার। সিগারেট যারা খায়, তাদের মধ্যে আলাপ জমতে বেশি সময় লাগে না। এ আলাপ সে আলাপ করে খুব দ্রুতই তিনি আসল প্রশ্নে চলে এলেন।
— আচ্ছা আপনার বাসায় বাজার কার হাতে?
— কেন নিজেই করি। হঠাত্ এ প্রশ্ন করলেন যে?
— না, আমার বাসার বাজারও আমি করি কিনা! ভাবছি দু’জন এক সাথে গেলে... গল্পে গল্পে বেশ ... হে হে
— তা মন্দ বলেননি। আচ্ছা আপনি পচা মাছ ভালো মাছ বুঝতে পারেন?
জালাল সাহেব হাতের তালুর মধ্যে যেন চাঁদ পেলেন। এই সুযোগ।
— আমি মনে হয় বুঝতে পারি না। ভদ্রলোক বলতে থাকেন। ‘এইতো গতকাল শোল মাছ কিনলাম। আবার সন্দেহ হলো টাকি মাছও হতে পারে, বাসায় এনে স্ত্রীকে বললাম ‘দেখ তো এটা কি মাছ, শোল না টাকি?’ স্ত্রী কি বলল জানেন?
— কি বললেন ভাবী?
— বলল পচা মাছ!
— হা হা হা।
— আপনি হাসছেন?
— আরে ভাই বাদ দেন... কাল থেকে আমরা দুই ভাই মিলে বাজার করব, নো পচা মাছ...
পরদিন সত্যি সত্যি জালাল সাহেব আর তার টয়লেট জানালা প্রতিবেশী তরফদার সাহেব চললেন এক সঙ্গে বাজারে। জালাল সাহেবের একটাই উদ্দেশ্য তরফদার সাহেবের বাজার করার দিকে নজর রাখতে হবে, যাতে কোনো পচা জিনিস তার বাজারের ব্যাগে না ঢোকে... এ্যাট এনি কস্ট!
— জালাল সাহেব এ মাছটা মনে হচ্ছে তাজা—
— না না খবরদার... ওটা পচা, অবশ্যই পচা।
— কি করে বুঝলেন?
— দেখছেন না, ওটার গায়ে একটা মাছিও বসছে না। ফরমালিন দেয়া, স্রেফ ফরমালিন...
শেষমেষ তারা দেন-দরবার করে একটা মাছ কিনলেন তরফদার সাহেবের জন্য। ভ্যান ভ্যান করছে মাছি। বাজারের সব মাছি যেন এই মাছটার পেছনে লেগেছে। সেটাই কেনা হলো।
— ভাই জালাল সাহেব আপনি শিওর এটা তাজা মাছ?
— অবশ্যই, দেখছেন না এর পিছনে কত মাছি? মানে ফরমালিন দেয়া নেই...
অবশেষে দুই ভাই, মানে দুই প্রতিবেশী বাজার করে ফিরলেন। ভেতরে ভেতরে জালাল সাহেব পুলকিত। যাক শেষ পর্যন্ত বুদ্ধি করে তাজা মাছ গছানো গেছে প্রতিবেশীকে। আজ অন্তত জানালা খুলে ঘুমানো যাবে। স্ত্রীকে কীভাবে সুখবরটা দেবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না।
তবে সত্যি সত্যি সেদিন জানালা খোলার পরও কোনো গন্ধ এলো না, এ পারে। স্বামী-স্ত্রী আরামে চোখ বুজলেন সার্থক জানালা... কিন্তু একি? হঠাত্ ভ্যান ভ্যান করতে করতে শত শত মাছি ঢুকতে শুরু করল তাদের জানালা দিয়ে। স্ত্রী হতভম্ব হয়ে উঠে বসলেন।
—ওগো এত মাছি কোত্থেকে এলো?
— মনে হয়...
— কি মনে হয়?
মনে হয় ... তরফদার সাহেবের তাজা মাছের মাছিগুলো... এত বড় জানালা পেয়ে...!
— কে সে? নিশ্চয়ই বড় বিজ্ঞানী?
— তা তো বটেই।
— তা জিনিসটা কি? মানে আবিষ্কারটা?
— কেন জানালা!
ছোটবেলায় এই জোকটা ছিল জালাল সাহেবের প্রিয় একটা জোক। আর বড় বেলায় এসে এই জোকই এখন যেন বিগ ট্র্যাজেডি হয়ে দাঁড়িয়েছে! বিষয়টা খুলেই বলা যাক...
জালাল সাহেব অবশেষে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হলেন। জমিজমা বেচে, অফিসের গ্র্যাচুইটি, পেনশন, হাবি-জাবি সব মিলিয়ে সবেধন নীলমণি এই ফ্ল্যাট। আটশ’ স্কয়ার ফিটের ফারমের মুরগির খাঁচা বললেই ভালো হতো। কিন্তু যেহেতু মূল্য চল্লিশ লাখ সামথিং... নিয়েছে (বারো কিস্তিতে) কাজেই এটাকে ঠিক মুরগির খাঁচা বলা যাচ্ছে না। ফ্ল্যাটই বলতে হচ্ছে। ভার্সিটিতে পড়ুয়া মেয়ের একটা রুম হয়েছে, কলেজ গোয়িং ছেলের একটা রুম হয়েছে এতেই তিনি খুশি। তাদেরও একটা বেডরুম হয়েছে সঙ্গে এটাচড বাথ। স্ত্রীর ঐ একটাই শখ ছিল, এটাচড বাথ হবে। শেষ জীবনে এসে সে আশা পূর্ণ হলো, তাই বা মন্দ কি? ভালোই চলছিল তাদের। নতুন ফ্ল্যাটে নতুন জীবন। কিন্তু একটা সমস্যা আবিষ্কার করলেন তার স্ত্রী। সমস্যাই বটে, ভয়াবহ সমস্যা। তাদের বেডরুমের একমাত্র জানালাটি খুললেই পাশের ফ্ল্যাটে টয়লেটের একমাত্র জানালা ... দূরত্ব কত হবে, খুব বেশি হলেও দেড় ফিট... সেই যে বিজ্ঞাপনে বলে না দূরত্ব যতই হোক কাছে থাকুন... কিন্তু এই কাছে থাকা সত্যি কঠিন, জানালা খুললেই ... !!
— আমার মনে হয় কি জান? স্ত্রী নাক কুঁচকে বলে।
— কি?
— ওরা যেদিন তোমার মতো পচা বাজার করে আনে, সেদিনই বাজে গন্ধটা নাকে বেশি লাগে...
— কি, আমি পচা বাজার করি?
— এটা নিয়ে আমি তর্ক করতে চাই না। এখন বল এই সমস্যার সমাধান কি? জানালাই যদি খুলতে না পারি, তাহলে ফ্ল্যাট বাড়ির এত বড় জানালা দিয়ে হবেটা কি?
— জানালা আমরা খুলবই খুলব ...
— কিন্তু ঐ টয়লেটের গন্ধ...?
— ঐ যে তুমি বললে ওরা যেদিন পচা বাজার করে সেদিনই...
— হ্যাঁ সেদিনই গন্ধটা বেশি আসে। পচা জিনিস খেয়ে পেট নেমে যায় তখন...
— হ্যাঁ... ওরা যাতে পচা বাজার না করে সে ব্যবস্থাই করতে হবে...
— মানে??
জালাল সাহেব মানে’র ব্যাখ্যায় আর গেলেন না। তিনি নিচে নেমে গেলেন। এই সময়টায় পাশের বাসার ভদ্রলোক সিগারেট খেতে বাইরে বের হোন। তার সঙ্গে একটু আলাপ জমানো দরকার। সিগারেট যারা খায়, তাদের মধ্যে আলাপ জমতে বেশি সময় লাগে না। এ আলাপ সে আলাপ করে খুব দ্রুতই তিনি আসল প্রশ্নে চলে এলেন।
— আচ্ছা আপনার বাসায় বাজার কার হাতে?
— কেন নিজেই করি। হঠাত্ এ প্রশ্ন করলেন যে?
— না, আমার বাসার বাজারও আমি করি কিনা! ভাবছি দু’জন এক সাথে গেলে... গল্পে গল্পে বেশ ... হে হে
— তা মন্দ বলেননি। আচ্ছা আপনি পচা মাছ ভালো মাছ বুঝতে পারেন?
জালাল সাহেব হাতের তালুর মধ্যে যেন চাঁদ পেলেন। এই সুযোগ।
— আমি মনে হয় বুঝতে পারি না। ভদ্রলোক বলতে থাকেন। ‘এইতো গতকাল শোল মাছ কিনলাম। আবার সন্দেহ হলো টাকি মাছও হতে পারে, বাসায় এনে স্ত্রীকে বললাম ‘দেখ তো এটা কি মাছ, শোল না টাকি?’ স্ত্রী কি বলল জানেন?
— কি বললেন ভাবী?
— বলল পচা মাছ!
— হা হা হা।
— আপনি হাসছেন?
— আরে ভাই বাদ দেন... কাল থেকে আমরা দুই ভাই মিলে বাজার করব, নো পচা মাছ...
পরদিন সত্যি সত্যি জালাল সাহেব আর তার টয়লেট জানালা প্রতিবেশী তরফদার সাহেব চললেন এক সঙ্গে বাজারে। জালাল সাহেবের একটাই উদ্দেশ্য তরফদার সাহেবের বাজার করার দিকে নজর রাখতে হবে, যাতে কোনো পচা জিনিস তার বাজারের ব্যাগে না ঢোকে... এ্যাট এনি কস্ট!
— জালাল সাহেব এ মাছটা মনে হচ্ছে তাজা—
— না না খবরদার... ওটা পচা, অবশ্যই পচা।
— কি করে বুঝলেন?
— দেখছেন না, ওটার গায়ে একটা মাছিও বসছে না। ফরমালিন দেয়া, স্রেফ ফরমালিন...
শেষমেষ তারা দেন-দরবার করে একটা মাছ কিনলেন তরফদার সাহেবের জন্য। ভ্যান ভ্যান করছে মাছি। বাজারের সব মাছি যেন এই মাছটার পেছনে লেগেছে। সেটাই কেনা হলো।
— ভাই জালাল সাহেব আপনি শিওর এটা তাজা মাছ?
— অবশ্যই, দেখছেন না এর পিছনে কত মাছি? মানে ফরমালিন দেয়া নেই...
অবশেষে দুই ভাই, মানে দুই প্রতিবেশী বাজার করে ফিরলেন। ভেতরে ভেতরে জালাল সাহেব পুলকিত। যাক শেষ পর্যন্ত বুদ্ধি করে তাজা মাছ গছানো গেছে প্রতিবেশীকে। আজ অন্তত জানালা খুলে ঘুমানো যাবে। স্ত্রীকে কীভাবে সুখবরটা দেবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না।
তবে সত্যি সত্যি সেদিন জানালা খোলার পরও কোনো গন্ধ এলো না, এ পারে। স্বামী-স্ত্রী আরামে চোখ বুজলেন সার্থক জানালা... কিন্তু একি? হঠাত্ ভ্যান ভ্যান করতে করতে শত শত মাছি ঢুকতে শুরু করল তাদের জানালা দিয়ে। স্ত্রী হতভম্ব হয়ে উঠে বসলেন।
—ওগো এত মাছি কোত্থেকে এলো?
— মনে হয়...
— কি মনে হয়?
মনে হয় ... তরফদার সাহেবের তাজা মাছের মাছিগুলো... এত বড় জানালা পেয়ে...!
সূত্র : আমার দেশ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন