রঙ নিয়ে খেলা শিল্পীর কাজ। ক্যানভাসে নানান রঙে তিনি আঁকেন জীবনের বলা-না বলা গল্প আর কল্পনায় ভিড় করা সমূহ যন্ত্রণা ও আনন্দবোধ। রঙে আঁকা ছবিতে কখনও কখনও আশ্রয় নেয় কবিতার সৌন্দর্য ও স্বাতন্ত্র্য। আবার কোনো কোনো কবিতাও ধারণ করে রঙ-ছাপা বিপুল পরিসর। আর এভাবেই আমরা কবিকেও খুঁজতে থাকি রঙতুলি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা শিল্পীর আদলে। বাংলাদেশের, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের (জন্ম ১১ জুলাই, ১৯৩৬) কবিতা পড়তে পড়তে এমনই এক শিল্পীর চেহারা পাঠকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে রঙিন পর্দার বুকজুড়ে।
আল মাহমুদের কবিতার রঙচঙ কিংবা রঙচঙে কবিতা আমাদের নতুন করে যেন পাঠকের কাতারে সারিবদ্ধ করে। আমরা মুগ্ধচোখে দেখতে থাকি ‘সূর্যের আহ্নিক রঙে পাঠকের কাতারে সারিবদ্ধ করে,’ আমরা মুগ্ধচোখে দেখতে থাকি ‘সূর্যের আহ্নিক রঙে প্রতিদিন জ্বলে তার চুল,’ জমাট চুলের রঙ।
তিনি যখন সাজাতে থাকেন শব্দের কথামালা, তখন বারবার তাঁর ভাবনার পাথর ভেঙে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে রঙ-বেরঙ চিন্তাসুতো। কখনও কখনও নির্জন পটের মধ্যে রঙের বেশ ধরে প্রবেশ করে অচেনা কোনো ভয়ঙ্কর পোকামাকড়। মাহমুদের কবিতা—শাড়ি-পরা কোনো রমণীয় কবিতা গায়ে রঙ মাখে, কাটা সুপারির রঙ, পা সবুজ, নখ তীব্র লাল / যেন তার তন্ত্রে-মন্ত্রে ভরে আছে চন্দনের ডাল।’ তিনি কবিতার চোখ দিয়ে দেখেন ‘বর্ণালী মাকড়,’ ‘কালো ভুরুর টান,’ ‘ঘোলাটে রঙের জিভ,’ কিংবা ‘চৈনিক কালির মতো উপচানো/ পিচ্ছিল আঁধার।’ বর্ণহীন নির্বিরোধ কবি আল মাহমুদ, কতক সময় বুঝতেই যেন পারেন না, কী করে রঙিন হলো—রঙিন পোশাক, রঙিন বাসনা, ‘প্রাণের রঙের মতো পরাজিত প্রেমের কেতন’, ‘কৃষ্ণে ধবলে সবল দু’খানি পাখা’ আল মাহমুদের কবিতায় ঢালতে থাকে মৃদু গাঢ় বাতাস। আর রাত্রির গভীর অন্ধকারে সন্ত্রস্ত ‘কোনো নারী কোনোদিন তার তরে মাখেনি কাজল’। স্থির কালো টানা চোখের আভায় ‘কুকুর-বিড়াল কালো ছাগ’, ‘কালো ভুরুর টান’ চিবুকের পাশে ঠেসে-থাকা ‘কালো তিল’ ‘চৈনিক কালির’ পিচ্ছিল আঁধার, ‘কালো করুণ কাফন ঢাকা’ চোখে গভীর ‘সুর্মা’ আর ‘কালো মাটির’ অতলতা তাঁর কবিতায় লেপতে থাকে কালোর কঠিন মমতা। আর শক্ত হতে থাকে তাঁর কবিতার নরম মেটেল ভিত। অসহ্য গরমে ‘গাত্রবর্ণ কালো’ হওয়া কবি আল মাহমুদ ‘কাজল ভিজিয়ে’ নামেন ‘কালিময় নয়নের’ নদীতে। ‘ভুরুর নিচে জমানো ঝুলকালি’র হালকা জমিনে বুনতে থাকেন ‘গভীর কালো চোখের’ ‘কিছু কালো চিহ্ন’—
তুমি আমার একটি থোকা কালো আঙুর
সারা শরীর জড়িয়ে আছি লতা গাছি,
তোমার দেহে মনে আমার বেহায়া সুর
আমি ভ্রমর আমি তোমার কালো মাছি।
তুমি আমার তিতাস, কালো জলের ধারা
পানকৌড়ি আমি, আমি পানির ফেনা,
ডুব-সাঁতারে নিত্যকালের এই চেহারা
তুমি আমার কালো শালুক, চিরচেনা।
কালো মাটির কালো পুতুল তুমি আমার
সোঁদা মাটির গন্ধ হয়ে লুকোই গায়ে
আমি তোমার নীলাম্বরী শাড়ির দু’পাড়
বক্ষ ঘিরে জড়িয়ে থাকি লুটোই পায়ে।
তুমি আমার রাত্রি, আমার অমানিশা
আমি তোমার ছোট্ট কালো জোনাক পোকা,
এই তো আলো, এই তো কালো, নেই যে দিশা
আমি তোমার রুদ্ধদ্বারে একটি টোকা
(বেহায়া সুর : কালের কলস)
কবির সজাগ কালো দৃষ্টিতে ভেসে-ওঠা ‘কালো চুলের ঢেউ’ ‘রহস্যের ময়লা কালো জলে’ কিংবা খেতের আড়ালে ভিড়-করা ‘কালো মানুষের ধারা’য় অদৃশ্য হয় ক্রমাগত। কবি তখন ‘মহাকালের কালোর চেয়ে কালো’ ‘কালো লেখা’ লিখে কালো বুকের পশমে সাহস সঞ্চয় করতে থাকেন নতুন কোনো কালো ক্যানভাস দেখার প্রবল প্রত্যাশায়। এ প্রত্যাশা কিংবা প্রতীক্ষা কার জন্যে? আল মাহমুদের প্রতীক্ষার পথে দাঁড়িয়ে থাকা এক কালো বিড়ালের ছবি ‘সান্ত্রির সজাগ চোখ, তাক করা বন্দুকের মাছি / পার হয়ে চলে আসে এক বিড়ালিনী রোজ;/ দু’চোখ ঘুরিয়ে দেখে, আমি তারি প্রতীক্ষায় আছি।’ (কবি ও কালো বিড়ালিনী—১ : মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো) ‘কালো রোমের পালিশে’ কবি যেন খুঁজতে থাকেন আরও গভীর কোনো কালোশিল্প—
কবরের কাছে একটা কালো গাছের দিকে চোখ পড়তেই
আমার স্মৃতির ওপর বিদ্যুত্ বইল।
হ্যাঁ, পঁচাত্তরের এক চিত্র প্রদর্শনীতে এই শেয়ালটাকে
আমি দেখেছিলাম,
কামরুলের কালোশিল্পের মধ্যে এই ধূর্ত লেজ উঁচিয়েছিল;
সেই কুটিল চোখ আর লোভাতুর মুখচ্ছবি আমার চেনা।
আমি ফররুখের কবর পেছনে রেখে,
একটা কালো শেয়ালকে তাড়াতে তাড়াতে
বাংলাদেশের মানচিত্রের উপর দিয়ে
আমার কাফন নিয়ে দৌড়াতে লাগলাম।
(ফররুখের কবরে কালো শেয়াল; ওই)
‘আকাশের রঙ’ বিশালতা আর উদারতা প্রতীকী আমেজে ও উত্সাহে পাখা মেলে কবিদের ভাবনা সুতোয়। আর তখন কবিতার শরীরে লাগতে থাকে আকাশ-আকাশ বাতাস। আকাশের রঙ কি নীল না আকাশী? এ প্রশ্নও বোধ হয় কতকটা প্রাসঙ্গিক। যেমন কেউ বলেন নীল আকাশ। আবার কেউ বলেন আসমানি রঙ। হালকা নীলকে কি আকাশী বলে? যাই হোক, আমরা অন্তত নীল আর আকাশীকে আলাদা করে না দেখে এক প্লাটফরমে রেখে দেখার চেষ্টা করি। আল মাহমুদ তাঁর কবিতায় আকাশের প্রসন্নতাকে ধারণ করেন নীলের তাত্পর্যে। লেখেন, ‘তুমি এসো, কোমরে পেঁচিয়ে নীল শাড়ি / দুঃখের ঘরকে করো শোকোত্তীর্ণ প্রাণের বাগান।’ কষ্টের ‘নীল তরল আঙুল’ কাঁপতে থাকা, কিংবা লাউয়ের মাচায় ঝুলতে থাকা ‘সিক্তনীল শাড়ির নিশেন’ তাঁর কবিতাকে নিয়ে যায় চেতনার নিবিড় অন্তর্লোকে। ব্যক্তিক উল্লাস আর পাখির স্বাধীনতার নীল নীল অনুভূতি, উদ্ভিদহীন-পত্রহীন, হাহাকারে ভরা দগ্ধদেশে, গরম বাতাসের অন্তরালে ‘ভীষণ নীল’ জেগে থাকা, আর কোনো কবির মাতৃভূমিকে নীল পোশাকে মুড়িয়ে রাখার দারুণ আবেগ আল মাহমুদের কবিতার অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায় গভীর মমতায়।
বিবর্ণতা, বিষণ্নতার রঙ হলুদ। ঝরে পড়া কিংবা দিনশেষের গন্ধ মেখে এ রঙ হাজির থাকে মানুষের চিন্তায়, বাস্তবতার অলিগলিতে আর কবির প্রিয় খাতায়। যেন ‘রাতের হলদে পাতা ঝরে যায় শীতের গতিতে!’ এইভাবে আল মাহমুদ তাঁর কবিতাযাত্রায় সঙ্গী করেন হলুদ রঙকে। হলুদ লাল ফুলের মিশ্র চেতনা যেমন তাঁর কবিতাবুননে প্রেরণা জোগায়, তেমনি হলুদ পাতা আশা জাগায় পুরনোর বিদায়ের স্রোতে নতুনের আগমনের এমন সব দারুণ চিন্তা আর আবেগের হাত ধরে হাঁটতে থাকে আল মাহমুদের রঙের কবিতা কিংবা দাগ কাটতে থাকে কবিতায় রঙ। রঙের ফারাক তিনি বোঝেন। রঙের আবেগ আনন্দ বেদনা জাগানোর শক্তি তিনি জানেন। ‘হাওয়ায় হলুদ পাতা বৃষ্টিহীন মাটিতে প্রান্তরে / শব্দ করে ঝরে’ যাওয়ার অর্থ তাঁর কানে বাজে প্রতিনিয়ত। পিঠার মতো হলুদমাখা চাঁদ, প্রাতরাশের হলদেটে টাটকিনি মাছ, নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখি সারি সারি দাঁড়াতে থাকে কবির কবিতায়। আর তিনি দেখতে থাকেন মুগ্ধের মতো চারদিকে জেগে থাকা প্রবল হলুদ চোখ—
দামি কার্পেটে পা ডুবিয়ে আমি ঘরের আসবাবপত্র দেখতে থাকলাম।
দারুশিল্পের এক অতীত জগতে এসে পড়েছি। আমার চারদিকে
মেহগনির আসনের ওপর রেশমের গদি। দেয়ালের একটি বিশাল দারুচিত্রে
নগরনটী কমলা অভয়মুদ্রায় নৃত্যপরা। দেয়ালের অন্য পাশে
হরিণের চারটি মাথা।
মৃত হরিণেরা তাদের চারজোড়া পোখরাজের হলুদ চোখে
আমাকে দেখছে।
(চক্রবতী রাজার অট্টহাসি : মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো)
লাল বেদনার প্রতীক, ভালোবাসার প্রতীক। সংগ্রাম, যুদ্ধ আর ভয়াবহতাও আশ্রয় করে লাল রঙকে। লালে আছে প্রত্যয় আর নতুন আবাহনের হাতছানি। আল মাহমুদ তাঁর কবিতায় ‘হৃদয় নিংড়ে লাল তরল’ ঢেলে দিয়েছেন উজাড় করে। ‘যখন জীবনে শুধু অর্থহীন লাল হরতন’ খেলা করে কিংবা ‘নখ তীব্র লাল’ হয়ে ওঠে তখন আল মাহমুদ তাঁর কবিতায় যোগ করেন ধেয়ে চলার প্রেরণা। তিনি লিখতে থাকেন—
মোড়টা পেরিয়ে গিয়ে তুলে দেয়া হবে লাল পাল
ঢেউ ছিঁড়ে ছুটে যাব, নৌকা হবে গতিতে মাতাল;
বাতাসে ঘুমের গন্ধে চোখ দুটি যদি ভরে আসে
তখন মাঝির গানে কে কাঁদবে তরল তিতাসে!
(নৌকোয় : লোক-লোকান্তর)
যাপিত জীবনের ভয়াবহতা, অনগ্রসরতা, প্রতিবন্ধকতা আর যন্ত্রণার দগদগে দাগ কবি যখন প্রকাশ করতে চান শব্দের মৃদু মোড়কে, তখন তিনি ‘অতি লাল পিণ্ডের প্রসাদ’ চোখের সামনে ভাসতে দেখেন। তাঁর শিরায়-ধমনীতে কাঁপতে থাকে রক্তের প্রবল স্রোত। ভাবতে থাকেন—লেপ্টানো মাংস আর বিবর্ণ কলজের কাতারে টাঙানো থাকবে এই দীপ্ত লাল হালাল বিষয় ‘লালচক্ষু’ গায়ক পাখির জন্য কবির আর্তনাদ ভাসে বাতাসে বাতাসে। নদীর অচল পানি যেন ‘আলতা রঙে’ লালে লাল হয়ে ওঠে। প্রেয়সীর ‘কপালে লাল’ টিপ আঁকেন তিনি। স্বপ্ন বুনতে থাকেন বুকের গভীরে। প্রত্যাশা আর স্বপ্নে শিহরিত হন কবি—
লাল সূর্য উঠে আসবে। পরাজিতের মতো আমার মুখের ওপর রোদ
নামবে, সামনে দেখবো পরিচিত নদী। ছড়ানো ছিটানো
ঘরবাড়ি, গ্রাম। জলার দিকে বকের ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে। তারপর
দারুণ ভয়ের মতো বসে উঠবে আমাদের আটচালা।
কলার ছোট বাগান।
(প্রত্যাবর্তনের লজ্জা : সোনালি কাবিন)
‘পা সবুজ’ ‘রূপোলি নদীর জলে’ ভিজাতে ভিজাতে আর ‘সোনালি দোলকের মতো’ আশায় ভোলাতে ভোলাতে আল মাহমুদ কবিতা পাঠকের মগজ দরোজায় নির্মাণ করেন ‘সবুজে বিস্তীর্ণ দুঃখের সাম্রাজ্য’। হয়তো তাঁর কবিতার বিষয়-আশয় চিন্তার চিকন সুতো মানবতা মানবতা খেলার ছুতোয় ‘সবুজ পাহাড়ে একদিন ফিরে আসে’ কিন্তু পেছনে পড়ে থাকে ‘সবুজ জলের নূপুর’ আর মহত্ কোনো কারুশিল্পীর আঁকা ‘সবুজ সকাল’। কষ্টে থাকা একজন মানুষ, অসুখে আক্রান্ত সুখ-প্রত্যাশী কোনো কবিতা কারিগর হয়তো কখনও কখনও সম্ভ্রম ভাবনায় থাকেন ব্যাকুল। আল মাহমুদ তাঁর সেই চেতনাকে সাজান কবিতার গল্পে। তুলে আনেন সেই বেদনা কাতর মানুষটির ভেতরের বেদনার বহুধা বিস্তীর্ণ পোশাক-আশাক। আর আমাদের দাঁড় করান শিল্প-আদালতের নতুন কোনো কাঠগড়ায়—
কণ্ঠ উঁচু হয়ে আছে, গালে গর্ত, চোখ দুটি স্থির।
এক পক্ষকাল ধরে বার বার ব্যথায় ওষুধে
জানতে যে চেয়েছিলো আত্মহত্যা কী কারণে পাপ।
এইতো আশ্বিন আজ। একটুখানি আলো কিংবা বাতাস পেয়েই
সবুজ সম্ভ্রমটুকু টেনে ধরলো বুকের ওপর।
(অসুখে একজন : কালের কলস)
‘সবুজ পাতায়’ পেতে-রাখা অবুঝ কোনো ভালোলাগা পর্ব, আর মালার মতো জড়িয়ে পড়া ‘সবুজ শাড়ির জীর্ণতা’ অথবা পাগলের খুঁজতে থাকা ‘সবুজের অন্তরাল’ কবি আল মাহমুদকে ভাবিয়ে রাখে অনুক্ষণ। তিনি কৃষ্ণচূড়ার পাতায় মাথা গুঁজে শুষতে থাকেন জীবনের না-পাওয়া সব অর্থ, ‘সবুজ কুঁড়ি’র বেড়ে-ওঠা তাঁকে মোহিত করে, আচ্ছন্ন করে। কখনও কখনও যেন তাঁর চোখের পাতায় ‘আতঙ্কে লাফিয়ে উঠছে সবুজ ফড়িং’। পাখির ডাকের মতো অন্তর্হিত হয়ে যাওয়া অমলিন গভীর সবুজে আড়াল পড়া ‘ধানের সবুজ’ কবিকে ফের বাঁচতে শেখায়। শস্যের সবুজ থেকে ক্রমাগত উঠে এসে গোস্যার গোঙানি তাঁর চেতন-শরীরে নির্মম চাবুক মারে। তিনি তাই উপলব্ধি করতে পেরেছেন— ‘প্রেমকেও ভেদ করে সর্বভেদী সবুজের মূল’। আর সবুজ সবুজ রাজপথ, সবুজ সবুজ দারুণ জমিন শকুন-চোখের অন্তরালে বানাতে থাকে নিবিড় নিবাস। আল মাহমুদের চিন্তার সবুজতা—
চঞ্চুর সবুজ লতা রাজপথে হারিয়ে এসেছো।
অথচ পাওনি কিছু না ছায়া না পল্লবের ঘ্রাণ
কেবল দেখেছো শুধু কোকিলের ছদ্মবেশে সেজে
পাতার প্রতীক আঁকা কাইয়ুমের প্রচ্ছদের নিচে
নোংরা পালক ফেলে পৌর-ভাগাড়ে ওড়ে নগর শকুন।
(খড়ের গম্বুজ : সোনালি কাবিন)
আপাতভাবে মনে হবে, রঙ নিয়ে খেলা কবির কাজ নয়, চিত্রশিল্পীর কাজ। কিন্তু কবিতায় যখন কবি তৈরি করেন নানান রকম ছবি আর গল্পের ক্যানভাস, তখন রঙ-প্রয়োগে কবির সামর্থ্যের বিষয়-আশয় সামনে এসে পড়ে। কবিতায় থাকে ছবি, ছবিতে থাকে রঙ, আবার ছবিতেও থাকে কবিতার কত না বলা কথা— এভাবেই অনিবার্যরূপে কবিতা আর চিত্রের মধ্যে নির্মিত হয় এক অকৃত্রিম নিবিড় সেতু। আল মাহমুদের কবিতা পড়তে পড়তে তাঁর রঙ-প্রয়োগচাতুর্য আমাদের নজরে আসে। তখন তাঁর কবিতা ছবির মতো দুলতে থাকে আমাদের চোখের সামনে। আর আমরা পেতে থাকি দৃষ্টি-তৃপ্তির আনন্দ।
আল মাহমুদের কবিতার রঙচঙ কিংবা রঙচঙে কবিতা আমাদের নতুন করে যেন পাঠকের কাতারে সারিবদ্ধ করে। আমরা মুগ্ধচোখে দেখতে থাকি ‘সূর্যের আহ্নিক রঙে পাঠকের কাতারে সারিবদ্ধ করে,’ আমরা মুগ্ধচোখে দেখতে থাকি ‘সূর্যের আহ্নিক রঙে প্রতিদিন জ্বলে তার চুল,’ জমাট চুলের রঙ।
তিনি যখন সাজাতে থাকেন শব্দের কথামালা, তখন বারবার তাঁর ভাবনার পাথর ভেঙে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে রঙ-বেরঙ চিন্তাসুতো। কখনও কখনও নির্জন পটের মধ্যে রঙের বেশ ধরে প্রবেশ করে অচেনা কোনো ভয়ঙ্কর পোকামাকড়। মাহমুদের কবিতা—শাড়ি-পরা কোনো রমণীয় কবিতা গায়ে রঙ মাখে, কাটা সুপারির রঙ, পা সবুজ, নখ তীব্র লাল / যেন তার তন্ত্রে-মন্ত্রে ভরে আছে চন্দনের ডাল।’ তিনি কবিতার চোখ দিয়ে দেখেন ‘বর্ণালী মাকড়,’ ‘কালো ভুরুর টান,’ ‘ঘোলাটে রঙের জিভ,’ কিংবা ‘চৈনিক কালির মতো উপচানো/ পিচ্ছিল আঁধার।’ বর্ণহীন নির্বিরোধ কবি আল মাহমুদ, কতক সময় বুঝতেই যেন পারেন না, কী করে রঙিন হলো—রঙিন পোশাক, রঙিন বাসনা, ‘প্রাণের রঙের মতো পরাজিত প্রেমের কেতন’, ‘কৃষ্ণে ধবলে সবল দু’খানি পাখা’ আল মাহমুদের কবিতায় ঢালতে থাকে মৃদু গাঢ় বাতাস। আর রাত্রির গভীর অন্ধকারে সন্ত্রস্ত ‘কোনো নারী কোনোদিন তার তরে মাখেনি কাজল’। স্থির কালো টানা চোখের আভায় ‘কুকুর-বিড়াল কালো ছাগ’, ‘কালো ভুরুর টান’ চিবুকের পাশে ঠেসে-থাকা ‘কালো তিল’ ‘চৈনিক কালির’ পিচ্ছিল আঁধার, ‘কালো করুণ কাফন ঢাকা’ চোখে গভীর ‘সুর্মা’ আর ‘কালো মাটির’ অতলতা তাঁর কবিতায় লেপতে থাকে কালোর কঠিন মমতা। আর শক্ত হতে থাকে তাঁর কবিতার নরম মেটেল ভিত। অসহ্য গরমে ‘গাত্রবর্ণ কালো’ হওয়া কবি আল মাহমুদ ‘কাজল ভিজিয়ে’ নামেন ‘কালিময় নয়নের’ নদীতে। ‘ভুরুর নিচে জমানো ঝুলকালি’র হালকা জমিনে বুনতে থাকেন ‘গভীর কালো চোখের’ ‘কিছু কালো চিহ্ন’—
তুমি আমার একটি থোকা কালো আঙুর
সারা শরীর জড়িয়ে আছি লতা গাছি,
তোমার দেহে মনে আমার বেহায়া সুর
আমি ভ্রমর আমি তোমার কালো মাছি।
তুমি আমার তিতাস, কালো জলের ধারা
পানকৌড়ি আমি, আমি পানির ফেনা,
ডুব-সাঁতারে নিত্যকালের এই চেহারা
তুমি আমার কালো শালুক, চিরচেনা।
কালো মাটির কালো পুতুল তুমি আমার
সোঁদা মাটির গন্ধ হয়ে লুকোই গায়ে
আমি তোমার নীলাম্বরী শাড়ির দু’পাড়
বক্ষ ঘিরে জড়িয়ে থাকি লুটোই পায়ে।
তুমি আমার রাত্রি, আমার অমানিশা
আমি তোমার ছোট্ট কালো জোনাক পোকা,
এই তো আলো, এই তো কালো, নেই যে দিশা
আমি তোমার রুদ্ধদ্বারে একটি টোকা
(বেহায়া সুর : কালের কলস)
কবির সজাগ কালো দৃষ্টিতে ভেসে-ওঠা ‘কালো চুলের ঢেউ’ ‘রহস্যের ময়লা কালো জলে’ কিংবা খেতের আড়ালে ভিড়-করা ‘কালো মানুষের ধারা’য় অদৃশ্য হয় ক্রমাগত। কবি তখন ‘মহাকালের কালোর চেয়ে কালো’ ‘কালো লেখা’ লিখে কালো বুকের পশমে সাহস সঞ্চয় করতে থাকেন নতুন কোনো কালো ক্যানভাস দেখার প্রবল প্রত্যাশায়। এ প্রত্যাশা কিংবা প্রতীক্ষা কার জন্যে? আল মাহমুদের প্রতীক্ষার পথে দাঁড়িয়ে থাকা এক কালো বিড়ালের ছবি ‘সান্ত্রির সজাগ চোখ, তাক করা বন্দুকের মাছি / পার হয়ে চলে আসে এক বিড়ালিনী রোজ;/ দু’চোখ ঘুরিয়ে দেখে, আমি তারি প্রতীক্ষায় আছি।’ (কবি ও কালো বিড়ালিনী—১ : মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো) ‘কালো রোমের পালিশে’ কবি যেন খুঁজতে থাকেন আরও গভীর কোনো কালোশিল্প—
কবরের কাছে একটা কালো গাছের দিকে চোখ পড়তেই
আমার স্মৃতির ওপর বিদ্যুত্ বইল।
হ্যাঁ, পঁচাত্তরের এক চিত্র প্রদর্শনীতে এই শেয়ালটাকে
আমি দেখেছিলাম,
কামরুলের কালোশিল্পের মধ্যে এই ধূর্ত লেজ উঁচিয়েছিল;
সেই কুটিল চোখ আর লোভাতুর মুখচ্ছবি আমার চেনা।
আমি ফররুখের কবর পেছনে রেখে,
একটা কালো শেয়ালকে তাড়াতে তাড়াতে
বাংলাদেশের মানচিত্রের উপর দিয়ে
আমার কাফন নিয়ে দৌড়াতে লাগলাম।
(ফররুখের কবরে কালো শেয়াল; ওই)
‘আকাশের রঙ’ বিশালতা আর উদারতা প্রতীকী আমেজে ও উত্সাহে পাখা মেলে কবিদের ভাবনা সুতোয়। আর তখন কবিতার শরীরে লাগতে থাকে আকাশ-আকাশ বাতাস। আকাশের রঙ কি নীল না আকাশী? এ প্রশ্নও বোধ হয় কতকটা প্রাসঙ্গিক। যেমন কেউ বলেন নীল আকাশ। আবার কেউ বলেন আসমানি রঙ। হালকা নীলকে কি আকাশী বলে? যাই হোক, আমরা অন্তত নীল আর আকাশীকে আলাদা করে না দেখে এক প্লাটফরমে রেখে দেখার চেষ্টা করি। আল মাহমুদ তাঁর কবিতায় আকাশের প্রসন্নতাকে ধারণ করেন নীলের তাত্পর্যে। লেখেন, ‘তুমি এসো, কোমরে পেঁচিয়ে নীল শাড়ি / দুঃখের ঘরকে করো শোকোত্তীর্ণ প্রাণের বাগান।’ কষ্টের ‘নীল তরল আঙুল’ কাঁপতে থাকা, কিংবা লাউয়ের মাচায় ঝুলতে থাকা ‘সিক্তনীল শাড়ির নিশেন’ তাঁর কবিতাকে নিয়ে যায় চেতনার নিবিড় অন্তর্লোকে। ব্যক্তিক উল্লাস আর পাখির স্বাধীনতার নীল নীল অনুভূতি, উদ্ভিদহীন-পত্রহীন, হাহাকারে ভরা দগ্ধদেশে, গরম বাতাসের অন্তরালে ‘ভীষণ নীল’ জেগে থাকা, আর কোনো কবির মাতৃভূমিকে নীল পোশাকে মুড়িয়ে রাখার দারুণ আবেগ আল মাহমুদের কবিতার অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায় গভীর মমতায়।
বিবর্ণতা, বিষণ্নতার রঙ হলুদ। ঝরে পড়া কিংবা দিনশেষের গন্ধ মেখে এ রঙ হাজির থাকে মানুষের চিন্তায়, বাস্তবতার অলিগলিতে আর কবির প্রিয় খাতায়। যেন ‘রাতের হলদে পাতা ঝরে যায় শীতের গতিতে!’ এইভাবে আল মাহমুদ তাঁর কবিতাযাত্রায় সঙ্গী করেন হলুদ রঙকে। হলুদ লাল ফুলের মিশ্র চেতনা যেমন তাঁর কবিতাবুননে প্রেরণা জোগায়, তেমনি হলুদ পাতা আশা জাগায় পুরনোর বিদায়ের স্রোতে নতুনের আগমনের এমন সব দারুণ চিন্তা আর আবেগের হাত ধরে হাঁটতে থাকে আল মাহমুদের রঙের কবিতা কিংবা দাগ কাটতে থাকে কবিতায় রঙ। রঙের ফারাক তিনি বোঝেন। রঙের আবেগ আনন্দ বেদনা জাগানোর শক্তি তিনি জানেন। ‘হাওয়ায় হলুদ পাতা বৃষ্টিহীন মাটিতে প্রান্তরে / শব্দ করে ঝরে’ যাওয়ার অর্থ তাঁর কানে বাজে প্রতিনিয়ত। পিঠার মতো হলুদমাখা চাঁদ, প্রাতরাশের হলদেটে টাটকিনি মাছ, নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখি সারি সারি দাঁড়াতে থাকে কবির কবিতায়। আর তিনি দেখতে থাকেন মুগ্ধের মতো চারদিকে জেগে থাকা প্রবল হলুদ চোখ—
দামি কার্পেটে পা ডুবিয়ে আমি ঘরের আসবাবপত্র দেখতে থাকলাম।
দারুশিল্পের এক অতীত জগতে এসে পড়েছি। আমার চারদিকে
মেহগনির আসনের ওপর রেশমের গদি। দেয়ালের একটি বিশাল দারুচিত্রে
নগরনটী কমলা অভয়মুদ্রায় নৃত্যপরা। দেয়ালের অন্য পাশে
হরিণের চারটি মাথা।
মৃত হরিণেরা তাদের চারজোড়া পোখরাজের হলুদ চোখে
আমাকে দেখছে।
(চক্রবতী রাজার অট্টহাসি : মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো)
লাল বেদনার প্রতীক, ভালোবাসার প্রতীক। সংগ্রাম, যুদ্ধ আর ভয়াবহতাও আশ্রয় করে লাল রঙকে। লালে আছে প্রত্যয় আর নতুন আবাহনের হাতছানি। আল মাহমুদ তাঁর কবিতায় ‘হৃদয় নিংড়ে লাল তরল’ ঢেলে দিয়েছেন উজাড় করে। ‘যখন জীবনে শুধু অর্থহীন লাল হরতন’ খেলা করে কিংবা ‘নখ তীব্র লাল’ হয়ে ওঠে তখন আল মাহমুদ তাঁর কবিতায় যোগ করেন ধেয়ে চলার প্রেরণা। তিনি লিখতে থাকেন—
মোড়টা পেরিয়ে গিয়ে তুলে দেয়া হবে লাল পাল
ঢেউ ছিঁড়ে ছুটে যাব, নৌকা হবে গতিতে মাতাল;
বাতাসে ঘুমের গন্ধে চোখ দুটি যদি ভরে আসে
তখন মাঝির গানে কে কাঁদবে তরল তিতাসে!
(নৌকোয় : লোক-লোকান্তর)
যাপিত জীবনের ভয়াবহতা, অনগ্রসরতা, প্রতিবন্ধকতা আর যন্ত্রণার দগদগে দাগ কবি যখন প্রকাশ করতে চান শব্দের মৃদু মোড়কে, তখন তিনি ‘অতি লাল পিণ্ডের প্রসাদ’ চোখের সামনে ভাসতে দেখেন। তাঁর শিরায়-ধমনীতে কাঁপতে থাকে রক্তের প্রবল স্রোত। ভাবতে থাকেন—লেপ্টানো মাংস আর বিবর্ণ কলজের কাতারে টাঙানো থাকবে এই দীপ্ত লাল হালাল বিষয় ‘লালচক্ষু’ গায়ক পাখির জন্য কবির আর্তনাদ ভাসে বাতাসে বাতাসে। নদীর অচল পানি যেন ‘আলতা রঙে’ লালে লাল হয়ে ওঠে। প্রেয়সীর ‘কপালে লাল’ টিপ আঁকেন তিনি। স্বপ্ন বুনতে থাকেন বুকের গভীরে। প্রত্যাশা আর স্বপ্নে শিহরিত হন কবি—
লাল সূর্য উঠে আসবে। পরাজিতের মতো আমার মুখের ওপর রোদ
নামবে, সামনে দেখবো পরিচিত নদী। ছড়ানো ছিটানো
ঘরবাড়ি, গ্রাম। জলার দিকে বকের ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে। তারপর
দারুণ ভয়ের মতো বসে উঠবে আমাদের আটচালা।
কলার ছোট বাগান।
(প্রত্যাবর্তনের লজ্জা : সোনালি কাবিন)
‘পা সবুজ’ ‘রূপোলি নদীর জলে’ ভিজাতে ভিজাতে আর ‘সোনালি দোলকের মতো’ আশায় ভোলাতে ভোলাতে আল মাহমুদ কবিতা পাঠকের মগজ দরোজায় নির্মাণ করেন ‘সবুজে বিস্তীর্ণ দুঃখের সাম্রাজ্য’। হয়তো তাঁর কবিতার বিষয়-আশয় চিন্তার চিকন সুতো মানবতা মানবতা খেলার ছুতোয় ‘সবুজ পাহাড়ে একদিন ফিরে আসে’ কিন্তু পেছনে পড়ে থাকে ‘সবুজ জলের নূপুর’ আর মহত্ কোনো কারুশিল্পীর আঁকা ‘সবুজ সকাল’। কষ্টে থাকা একজন মানুষ, অসুখে আক্রান্ত সুখ-প্রত্যাশী কোনো কবিতা কারিগর হয়তো কখনও কখনও সম্ভ্রম ভাবনায় থাকেন ব্যাকুল। আল মাহমুদ তাঁর সেই চেতনাকে সাজান কবিতার গল্পে। তুলে আনেন সেই বেদনা কাতর মানুষটির ভেতরের বেদনার বহুধা বিস্তীর্ণ পোশাক-আশাক। আর আমাদের দাঁড় করান শিল্প-আদালতের নতুন কোনো কাঠগড়ায়—
কণ্ঠ উঁচু হয়ে আছে, গালে গর্ত, চোখ দুটি স্থির।
এক পক্ষকাল ধরে বার বার ব্যথায় ওষুধে
জানতে যে চেয়েছিলো আত্মহত্যা কী কারণে পাপ।
এইতো আশ্বিন আজ। একটুখানি আলো কিংবা বাতাস পেয়েই
সবুজ সম্ভ্রমটুকু টেনে ধরলো বুকের ওপর।
(অসুখে একজন : কালের কলস)
‘সবুজ পাতায়’ পেতে-রাখা অবুঝ কোনো ভালোলাগা পর্ব, আর মালার মতো জড়িয়ে পড়া ‘সবুজ শাড়ির জীর্ণতা’ অথবা পাগলের খুঁজতে থাকা ‘সবুজের অন্তরাল’ কবি আল মাহমুদকে ভাবিয়ে রাখে অনুক্ষণ। তিনি কৃষ্ণচূড়ার পাতায় মাথা গুঁজে শুষতে থাকেন জীবনের না-পাওয়া সব অর্থ, ‘সবুজ কুঁড়ি’র বেড়ে-ওঠা তাঁকে মোহিত করে, আচ্ছন্ন করে। কখনও কখনও যেন তাঁর চোখের পাতায় ‘আতঙ্কে লাফিয়ে উঠছে সবুজ ফড়িং’। পাখির ডাকের মতো অন্তর্হিত হয়ে যাওয়া অমলিন গভীর সবুজে আড়াল পড়া ‘ধানের সবুজ’ কবিকে ফের বাঁচতে শেখায়। শস্যের সবুজ থেকে ক্রমাগত উঠে এসে গোস্যার গোঙানি তাঁর চেতন-শরীরে নির্মম চাবুক মারে। তিনি তাই উপলব্ধি করতে পেরেছেন— ‘প্রেমকেও ভেদ করে সর্বভেদী সবুজের মূল’। আর সবুজ সবুজ রাজপথ, সবুজ সবুজ দারুণ জমিন শকুন-চোখের অন্তরালে বানাতে থাকে নিবিড় নিবাস। আল মাহমুদের চিন্তার সবুজতা—
চঞ্চুর সবুজ লতা রাজপথে হারিয়ে এসেছো।
অথচ পাওনি কিছু না ছায়া না পল্লবের ঘ্রাণ
কেবল দেখেছো শুধু কোকিলের ছদ্মবেশে সেজে
পাতার প্রতীক আঁকা কাইয়ুমের প্রচ্ছদের নিচে
নোংরা পালক ফেলে পৌর-ভাগাড়ে ওড়ে নগর শকুন।
(খড়ের গম্বুজ : সোনালি কাবিন)
আপাতভাবে মনে হবে, রঙ নিয়ে খেলা কবির কাজ নয়, চিত্রশিল্পীর কাজ। কিন্তু কবিতায় যখন কবি তৈরি করেন নানান রকম ছবি আর গল্পের ক্যানভাস, তখন রঙ-প্রয়োগে কবির সামর্থ্যের বিষয়-আশয় সামনে এসে পড়ে। কবিতায় থাকে ছবি, ছবিতে থাকে রঙ, আবার ছবিতেও থাকে কবিতার কত না বলা কথা— এভাবেই অনিবার্যরূপে কবিতা আর চিত্রের মধ্যে নির্মিত হয় এক অকৃত্রিম নিবিড় সেতু। আল মাহমুদের কবিতা পড়তে পড়তে তাঁর রঙ-প্রয়োগচাতুর্য আমাদের নজরে আসে। তখন তাঁর কবিতা ছবির মতো দুলতে থাকে আমাদের চোখের সামনে। আর আমরা পেতে থাকি দৃষ্টি-তৃপ্তির আনন্দ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন