জানালাটার ফ্রেমে ঘূন ধরেছে । বাইরে থেকে ততটা বোঝা যায় না , কিন্তু মিসেস হক জানেন একটু টোকা লাগলে তা ঝরঝরিয়ে পরবে । ঠিক যেন তার সংসারের মত, বাইরে থেকে যারা দেখে তারা ভাবে কি সুন্দর একটা সংসার। মিসেস হক অসুস্হ ,কিন্তু তার বউমা কি ছিমছাম ভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে।
সত্যিই কি ছিমছাম ভাবে সংসার চলছে? নাকি সূর্য উঠে সূর্য ডুবে এভাবেই একেকটা দিন তিনি পার করছেন। অথচ এমন হবার কথাতো ছিল না ।
প্রায় ৫০ বছর আগে ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তার । দেবর,ননদ , শ্বশুড়-শ্বশুড়ির বিরাট সংসার। এই বিরাট সংসার চালাতে হতো তাকে অপুর সীমিত আয় দিয়ে । তারপর ছিল তার নিজের পড়াশোনা, যা তিনি অনেক কষ্ট করে চালিয়ে গিয়েছিলেন। ক্রমে ক্রম অপুর আয় উন্নতি বাড়তে লাগলো, ননদ,দেবর পড়া শোনা শেষ করল বিয়েসাদি করে এদিক সেদিক প্রতিষ্ঠিত হলো। শ্বশুড় শবাশুড়ি মারা গেলেন। ছেলেমেয়েদেরও নিজেই পছন্দ করে বিয়ে দিয়েছেন সবাই উচ্চ শিক্ষিত । সবদিকদিয়ৈ সবকিছু কেমন মসৃন ভাবে যাচ্ছিল। এজন্য অনেকেই তাকে হিংসা করত।
যদিও অপুর চাহিদি ছিল অনেক । সবসময় চাইত মিসেস হক যেন নিজেই সব করেন। তাই সংসারের সব কজ নিজের হাতেই করতেন । লোকলৌকিকতা, সামাজিকতা সব তাকেই সামলাতে হতো। কার বিয়েতে কি দিতে হবে, কার চিকিৎসা করাতে হবে সব, তা তার শ্বশুড় বাড়ীর পক্ষ হোক কিংবা বাবারবাড়ি। তবে একথা ঠিক অপু তাকে যথেয্ট সাহাষ্য এবং সম্মন করেছে। যা অপু আয় করত সবটাই তাঁর হাতে দিত। ।সুতরাং একজন স্ত্রীর যতটুকু সম্মান ,স্বাধীনতা পাওয়া উচিত সবকিছুই উনি পেয়েছিলেন। হ্যা পেয়েছিলেন এখন তা অতিত। সবার যত্ন আত্নি করতে গিয়ে আর নিজের ক্যারিয়ার করতে গিয়ে নিজের শরীরের প্রতি আর খেয়াল রাখেননি,৫বছর আগে স্ট্রোক হওয়ার পর এখন তার জায়গা এই হুইল চেয়ার। । যেদিন থেকে উনি এই হুইল চেয়ারে আশ্রয় নিয়েছেন সেদিন থেকে তার সংসারে ঊই পোকা ঢুকেছে। আস্তেআস্তে ভিতরটা খেয়ে ষাচ্ছে। ছেলেমেয়ে,স্বামী সবাই দূরে সরে যাচ্ছে।সেই অপুও কেমন অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে ।
টাকা পয়সার অভাব নেই তাই চিকিৎসা, লোকবলের অভাব নেই । যে জিনিসটার অভাব তা হোল আন্তরিকতার। ছেলেমেয়েরা কেমন দূরে সরে যাচ্ছে, অথচ একসময় মিসেস হকঈ ছিলেন ওদের বন্ধু। বড় ছেলে বউ নিয়ে আমেরিকায়,ওখানেই সেটেল করেছে। বড় মেয়েও স্বামির সাথে মধ্যপ্রাচ্যে। যখন তিনি সুস্হ ছিলেন তখন প্রতি বছর আসতো৷ অথচ গত ৫বছরে মাত্র একবার এসেছে। ছোট মেয়ে ভাইয়ের বউয়ের উদ্যত স্বভাব পছন্দ না,তাই আসা ছেড়ে দিয়েছে। ছোট ছেলের বউ দিশা,দিশা না হয়ে ওর নাম নেশা হলে ভাল মানাত । কারণ ছেলে ওর নেশায় মশগুল । ওর মুখোশ দিনদিন খুলে যাচ্ছে । টাকা পয়সা ওদের দেখাশোনা সব ওর হাতে ।এমন ভাব দেখায় যেন সবাই ওর আশ্রিতা । এই সংসারের প্রতিটি জিনিসে,টাকা পয়সায় তার ঘাম মিশে আছে।অপুকেও বশ করে ফেলেছে। না হয় এখন তিনি অসুস্হ নিজের হাতে কিছু করতে পারে না কিন্তু গত ৪৫ বছরতো করেছেন। যে অপু তার সাথে পরামর্শ ছারা কিছু করত না সে এখন সব ব্যাপারে দিশার পরামর্শ নেয়। তার সাজানো সংসার পুরোটা দিশার হাতে তুলে দিয়েছে । সংসারে যতক্ষন করতে পার ততক্ষন ভাল , যখন অক্ষম হয়ে যাবে তখন মূল্যহীন অন্যান্য আবর্জনার মতো । যদিও অপু বলে, টাকাপয়সা সংসারের সব ওর হাতে না দিলে ও থাকবে কেন একসাথে? ওরা সাথে আছে বলে একটা নাতির সাহচার্য্য হলেও পাচ্ছো। সেইটুকুও না পেলে কি ভাবে বেচেঁ থাকতে । একে কি বেচেঁ থাকা বলে? তার সেবা যত্নে যার বড় হলো তারাই তাকে অবহেলা করছে।
মাঝেমাঝে মিসেস হকের মনে হয় ভাগ্যিস উনি হিসাব করে চলেছিলেন , তাই মাথার উপর আশ্রয়টা আছে না হলে রাস্তা হত তাদের ঠিকানা । ছেলের বউ সাথে আছে লোভে। তবে মিসেস হকের খুব খারাপ লাগে যখন দেখেন দিশা তার কষ্টের টাকা যেনতেন ভাবে খরচ করছে । আজ বিউটি পারলার, কাল চাইনিজ খাওয়া ,নিত্যনতুন শাড়ী গহনা ,বছরে ১৴২ বার বিদেশ যাওয়া। কোত্থেকে এসব করে ? তার ছেলে কত মাইনা পায় তা তিনি ভালো ভাবেই জানেন।
ইস্ এসব তিনি কি ভাবছেন? এরাতো তারই উত্তরসূরি ,এরা ভাল থাকা মানে নিজে ভাল থাকা । তিনি কেন দিনদিন এমন হয়ে ষাচ্ছেন? কাউকে সহ্য করতে পারেন না । তবে কি পঙ্গু শরীরের সাথে সাথে মনটাও পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে ।‘ হে খোদা তুমি আমার ছেলেমেয়েদের ,আমার উত্তরসুরিদের সুস্হ রাখ ভাল রাখ।যত কষ্ট যত দুঃখ সব আমারই থাক। ‘- মনে মনে বলেন তিনি। ভাবেন- কেন মনটা এত ছোট হয়ে গেছে? তবে কি জানালাটার ঘূণে তার মনেও ধরেছে ?
আটলান্টা আমেরিকাসত্যিই কি ছিমছাম ভাবে সংসার চলছে? নাকি সূর্য উঠে সূর্য ডুবে এভাবেই একেকটা দিন তিনি পার করছেন। অথচ এমন হবার কথাতো ছিল না ।
প্রায় ৫০ বছর আগে ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তার । দেবর,ননদ , শ্বশুড়-শ্বশুড়ির বিরাট সংসার। এই বিরাট সংসার চালাতে হতো তাকে অপুর সীমিত আয় দিয়ে । তারপর ছিল তার নিজের পড়াশোনা, যা তিনি অনেক কষ্ট করে চালিয়ে গিয়েছিলেন। ক্রমে ক্রম অপুর আয় উন্নতি বাড়তে লাগলো, ননদ,দেবর পড়া শোনা শেষ করল বিয়েসাদি করে এদিক সেদিক প্রতিষ্ঠিত হলো। শ্বশুড় শবাশুড়ি মারা গেলেন। ছেলেমেয়েদেরও নিজেই পছন্দ করে বিয়ে দিয়েছেন সবাই উচ্চ শিক্ষিত । সবদিকদিয়ৈ সবকিছু কেমন মসৃন ভাবে যাচ্ছিল। এজন্য অনেকেই তাকে হিংসা করত।
যদিও অপুর চাহিদি ছিল অনেক । সবসময় চাইত মিসেস হক যেন নিজেই সব করেন। তাই সংসারের সব কজ নিজের হাতেই করতেন । লোকলৌকিকতা, সামাজিকতা সব তাকেই সামলাতে হতো। কার বিয়েতে কি দিতে হবে, কার চিকিৎসা করাতে হবে সব, তা তার শ্বশুড় বাড়ীর পক্ষ হোক কিংবা বাবারবাড়ি। তবে একথা ঠিক অপু তাকে যথেয্ট সাহাষ্য এবং সম্মন করেছে। যা অপু আয় করত সবটাই তাঁর হাতে দিত। ।সুতরাং একজন স্ত্রীর যতটুকু সম্মান ,স্বাধীনতা পাওয়া উচিত সবকিছুই উনি পেয়েছিলেন। হ্যা পেয়েছিলেন এখন তা অতিত। সবার যত্ন আত্নি করতে গিয়ে আর নিজের ক্যারিয়ার করতে গিয়ে নিজের শরীরের প্রতি আর খেয়াল রাখেননি,৫বছর আগে স্ট্রোক হওয়ার পর এখন তার জায়গা এই হুইল চেয়ার। । যেদিন থেকে উনি এই হুইল চেয়ারে আশ্রয় নিয়েছেন সেদিন থেকে তার সংসারে ঊই পোকা ঢুকেছে। আস্তেআস্তে ভিতরটা খেয়ে ষাচ্ছে। ছেলেমেয়ে,স্বামী সবাই দূরে সরে যাচ্ছে।সেই অপুও কেমন অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে ।
টাকা পয়সার অভাব নেই তাই চিকিৎসা, লোকবলের অভাব নেই । যে জিনিসটার অভাব তা হোল আন্তরিকতার। ছেলেমেয়েরা কেমন দূরে সরে যাচ্ছে, অথচ একসময় মিসেস হকঈ ছিলেন ওদের বন্ধু। বড় ছেলে বউ নিয়ে আমেরিকায়,ওখানেই সেটেল করেছে। বড় মেয়েও স্বামির সাথে মধ্যপ্রাচ্যে। যখন তিনি সুস্হ ছিলেন তখন প্রতি বছর আসতো৷ অথচ গত ৫বছরে মাত্র একবার এসেছে। ছোট মেয়ে ভাইয়ের বউয়ের উদ্যত স্বভাব পছন্দ না,তাই আসা ছেড়ে দিয়েছে। ছোট ছেলের বউ দিশা,দিশা না হয়ে ওর নাম নেশা হলে ভাল মানাত । কারণ ছেলে ওর নেশায় মশগুল । ওর মুখোশ দিনদিন খুলে যাচ্ছে । টাকা পয়সা ওদের দেখাশোনা সব ওর হাতে ।এমন ভাব দেখায় যেন সবাই ওর আশ্রিতা । এই সংসারের প্রতিটি জিনিসে,টাকা পয়সায় তার ঘাম মিশে আছে।অপুকেও বশ করে ফেলেছে। না হয় এখন তিনি অসুস্হ নিজের হাতে কিছু করতে পারে না কিন্তু গত ৪৫ বছরতো করেছেন। যে অপু তার সাথে পরামর্শ ছারা কিছু করত না সে এখন সব ব্যাপারে দিশার পরামর্শ নেয়। তার সাজানো সংসার পুরোটা দিশার হাতে তুলে দিয়েছে । সংসারে যতক্ষন করতে পার ততক্ষন ভাল , যখন অক্ষম হয়ে যাবে তখন মূল্যহীন অন্যান্য আবর্জনার মতো । যদিও অপু বলে, টাকাপয়সা সংসারের সব ওর হাতে না দিলে ও থাকবে কেন একসাথে? ওরা সাথে আছে বলে একটা নাতির সাহচার্য্য হলেও পাচ্ছো। সেইটুকুও না পেলে কি ভাবে বেচেঁ থাকতে । একে কি বেচেঁ থাকা বলে? তার সেবা যত্নে যার বড় হলো তারাই তাকে অবহেলা করছে।
মাঝেমাঝে মিসেস হকের মনে হয় ভাগ্যিস উনি হিসাব করে চলেছিলেন , তাই মাথার উপর আশ্রয়টা আছে না হলে রাস্তা হত তাদের ঠিকানা । ছেলের বউ সাথে আছে লোভে। তবে মিসেস হকের খুব খারাপ লাগে যখন দেখেন দিশা তার কষ্টের টাকা যেনতেন ভাবে খরচ করছে । আজ বিউটি পারলার, কাল চাইনিজ খাওয়া ,নিত্যনতুন শাড়ী গহনা ,বছরে ১৴২ বার বিদেশ যাওয়া। কোত্থেকে এসব করে ? তার ছেলে কত মাইনা পায় তা তিনি ভালো ভাবেই জানেন।
ইস্ এসব তিনি কি ভাবছেন? এরাতো তারই উত্তরসূরি ,এরা ভাল থাকা মানে নিজে ভাল থাকা । তিনি কেন দিনদিন এমন হয়ে ষাচ্ছেন? কাউকে সহ্য করতে পারেন না । তবে কি পঙ্গু শরীরের সাথে সাথে মনটাও পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে ।‘ হে খোদা তুমি আমার ছেলেমেয়েদের ,আমার উত্তরসুরিদের সুস্হ রাখ ভাল রাখ।যত কষ্ট যত দুঃখ সব আমারই থাক। ‘- মনে মনে বলেন তিনি। ভাবেন- কেন মনটা এত ছোট হয়ে গেছে? তবে কি জানালাটার ঘূণে তার মনেও ধরেছে ?
সূত্র: নতুন দেশ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন