অষ্টম শ্রেণীতে শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের রচনা লিখতে দিলেন। রচনার বিষয় : মোবাইল ফোন। ছাত্রছাত্রীরা পড়ল মহা ফাঁপরে। তারা মুখস্থ করে এসেছে গরুর রচনা। গরুর সঙ্গে মোবাইল ফোনের কোনো মিল বা লেশমাত্র সম্পর্ক আছে বলে তাদের জানা নেই। আজকে সবাই ধরা খাবে। এই স্যার আবার ভীষণ রাগী। একটু টের বেটের হলেই সপাং সপাং বেত্রাঘাত। উনার দিলে কোনো রহম নাই। কোমলমতি বালক-বালিকা এরা সব। এক ত্যাঁদড় ছাত্র ফোঁস করে উঠল। দাঁড়িয়ে সে মাথা চুলকানো শুরু করল। স্যার অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন,—কিরে, মাথা চুলকানোর কী হলো? কী বলতে চাস, ঝটপট বলে ফ্যাল না। অত ভূমিকার কী আছে?
তাজিমের সঙ্গে বালকটি বলল,
—স্যার, মোবাইল ফোন তো আমাদের সিলেবাসের বাইরে। হঠাত্ই এ রচনা লিখতে বলছেন যে?
স্যার কিঞ্চিত্ কুপিত হন ওর কথা শুনে। গম্ভীর হয়ে বলেন,
—ওহে মর্কটের দল! এখন যে ডিজিটাল যুগ চলছে, বলি সে খবর রাখিস কিছু? ওই যে একটা কথা আছে না— যেই দেশের যেই বাও/নাও মাথাত দা পাতলা বাও—। তোরা লিখে আন। যে যা পারিস। এই ধর, মোবাইল ফোনের উপকারিতা, কিংবা অপকারিতা। তোরা বাস্তব জীবনে যা যা দেখছিস, শুনছিস, আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে নিয়ে আয় এই বেলা।
ছাত্রছাত্রীরা ঘাড় গোঁজ করে লিখতে শুরু করে। ঘোড়াড্ডিম সাবজেক্ট। স্যারটা পাগলা টাইপের। খেপে গেলে খবর আছে। সুতরাং এ বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক না করাই ভালো।
হুম, বোঝা গেল। তা শেষ অব্দি কে কী লিখল রচনায়? আমরা কয়েকটি খাতা পরীক্ষা করে দেখি।
১ নম্বর খাতা : গরুর মতো মোবাইল ফোনও গৃহপালিত জন্তু। না না, জন্তু নয়। মোবাইল ফোনের তো হাত-পা কিছুই নাই। সিম কার্ড লাগে, সেট লাগে। এই সিম কাঁচাবাজারে পাওয়া যায় না। কোনো তার ছাড়াই চলে এই ফোন। টকাটক কথা বলা যায়। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সব জায়গায়। বিজ্ঞাপনে দিন বদলানোর চমকের কথা বলা হলেও বাস্তবে উল্টা। জেলের ছেলে, তার ছেলে, তারও ছেলে শেষতক জেলেই থেকে যায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাছের দরদামের তথ্য বিনিময় করা যায় মাত্র।
আমরা আরও লক্ষ করি, গোটা জাতিকে এ যন্ত্রটি ক্রমেই বাচাল করে তুলছে। দিন-রাত খালি কথা আর কথা। মোবাইল ফোন কোম্পানি একটার পর একটা আসছে দেশে। অদূর ভবিষ্যতে আরও কথা বলার প্রতিযোগিতা হবে বলেই মনে হচ্ছে।
২ নম্বর খাতা : মোবাইল ফোনের উপকারিতা অনেক আছে। আমরা পেপারে পড়েছি, জঙ্গি শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলাভাইকে নাকি মোবাইল ফোনের ট্র্যাকিং করেই ধরা হয়েছিল। আমাদের সবার নিজের বাড়িতেও এই ফোন কাজে লাগে। আমাদের কাজের ছেলেরও মোবাইল আছে। কাজ নেয়ার সময় সে শর্তই দিয়েছিল যে, তাকে মোবাইল কিনে দিতে হবে। সে কাঁচাবাজারে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখে প্রথমটায়। তারপর আম্মুকে মিস কল দেয়। একটা না, পরপর পাঁচটা। আম্মু রিং ব্যাক করলে সে সবিস্তারে জানায়—আজকের বাজারে কাঁচকি, নলা, চাষের কই, পুকুরের পাঙ্গাশ কোন্ মাছের কত দাম। আম্মুর নির্দেশনা মোতাবেক সে মাছ কেনে। (গোপনে বলে রাখি, প্রতিদিনই সে ধরা খায়। এটা যেন তার নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোকরাটা হররোজ পচা মাছ কিনে আনে। আর, আম্মুর বকা হজম করে নির্বিবাদে)। এ বিষয়টিতে মোবাইল ফোনের কৃতিত্ব আছে নাকি নেই, সেটা অবশ্য আমি ঠিক বিচার করে উঠতে পারিনি।
মোবাইল ফোন আবার ঝগড়া, অনশন, মান অভিমানেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমার বড় আপুকে আম্মু-আব্বু দু’জনই একজোট হয়ে বেধড়ক বকাঝকা করেন। এ ব্যাপারে আব্বু-আম্মুর মধ্যে কোনো মতপার্থক্য ছিল না। আপু নাকি কি জুস টুস দিয়ে সারা রাত কার সঙ্গে আলাপ-সালাপ করে। কয়েকবার শাসানির পরও আপু নিবৃত্ত হয়নি। সে কারণে তার ৭টা সিম সিজ করে নেয়া হয়েছে। প্রতিবাদে অনশন।
৩ নম্বর খাতা : মোবাইল ফোনের জন্য ল্যান্ডফোনের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিদেশি কোম্পানিগুলো নির্বিচারে আমাদের সব টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল ফোনের কারণেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এই ফোন অতি দ্রুত ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যখন হু হু করে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছিল, তখন বাণিজ্যমন্ত্রী একদিন দোকানপাট পরিদর্শনে বের হয়েছিলেন। টিভিতে দেখা গেছে, প্রবল উত্সাহে দোকানদারদের তিনি তার মোবাইল নম্বরও দিয়ে দিচ্ছেন (পরে তিনি হয়তো ওই সিম অবশ্যই বদলে ফেলেছেন, শান্তিতে ঘুমানোর স্বার্থেই)। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মজুতদার ঢাকা থেকে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির খবর পেয়ে যাচ্ছে এক লহমায়। গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রেও মোবাইল ফোন চমত্কার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
ব্যাপক, না না রেকর্ডসংখ্যক মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করায় বিদ্যুত্ সঙ্কট বেড়ে যাচ্ছে। কারণ প্রতিনিয়তই লাখ লাখ ফোনের ব্যাটারি চার্জ করতে হচ্ছে মহার্ঘ বিদ্যুতের সাহায্যে। এমনও দেখা যাচ্ছে, চার্জে থাকা অবস্থায়ই কথা চলছে। বিরাম নাই। কত কথা বলে রে! কত বিদ্যুত্ খরচ করে রে!
৪ নম্বর খাতা : এ খাতায় লেখা আছে সামান্য কয়েকটি বাক্য।—আমাদের পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। আমাদের কারওই কোনো মোবাইল ফোন নাই। সুতরাং এর উপকারিতা বা অপকারিতা সম্পর্কে আমার কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নাই।
খাতা আরো কয়েকটি ছিল। টিচার এ চারটি খাতা পড়েই ক্ষান্ত দিলেন। তার হাই উঠছে। গত রাতে এক ফোঁটাও ঘুম হয়নি। মোবাইল ফোন নিয়েই বৌয়ের সঙ্গে খিটিমিটি হয়েছে বেশ ভালো রকমের। রাতে কারো খাওয়া হয়নি। দু’জনার মধ্যে কথা বলাবলিও বন্ধ। এ যন্ত্রটি আপদ বিশেষ। এতে কোনো সন্দেহ নাই।
তাজিমের সঙ্গে বালকটি বলল,
—স্যার, মোবাইল ফোন তো আমাদের সিলেবাসের বাইরে। হঠাত্ই এ রচনা লিখতে বলছেন যে?
স্যার কিঞ্চিত্ কুপিত হন ওর কথা শুনে। গম্ভীর হয়ে বলেন,
—ওহে মর্কটের দল! এখন যে ডিজিটাল যুগ চলছে, বলি সে খবর রাখিস কিছু? ওই যে একটা কথা আছে না— যেই দেশের যেই বাও/নাও মাথাত দা পাতলা বাও—। তোরা লিখে আন। যে যা পারিস। এই ধর, মোবাইল ফোনের উপকারিতা, কিংবা অপকারিতা। তোরা বাস্তব জীবনে যা যা দেখছিস, শুনছিস, আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে নিয়ে আয় এই বেলা।
ছাত্রছাত্রীরা ঘাড় গোঁজ করে লিখতে শুরু করে। ঘোড়াড্ডিম সাবজেক্ট। স্যারটা পাগলা টাইপের। খেপে গেলে খবর আছে। সুতরাং এ বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক না করাই ভালো।
হুম, বোঝা গেল। তা শেষ অব্দি কে কী লিখল রচনায়? আমরা কয়েকটি খাতা পরীক্ষা করে দেখি।
১ নম্বর খাতা : গরুর মতো মোবাইল ফোনও গৃহপালিত জন্তু। না না, জন্তু নয়। মোবাইল ফোনের তো হাত-পা কিছুই নাই। সিম কার্ড লাগে, সেট লাগে। এই সিম কাঁচাবাজারে পাওয়া যায় না। কোনো তার ছাড়াই চলে এই ফোন। টকাটক কথা বলা যায়। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সব জায়গায়। বিজ্ঞাপনে দিন বদলানোর চমকের কথা বলা হলেও বাস্তবে উল্টা। জেলের ছেলে, তার ছেলে, তারও ছেলে শেষতক জেলেই থেকে যায়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাছের দরদামের তথ্য বিনিময় করা যায় মাত্র।
আমরা আরও লক্ষ করি, গোটা জাতিকে এ যন্ত্রটি ক্রমেই বাচাল করে তুলছে। দিন-রাত খালি কথা আর কথা। মোবাইল ফোন কোম্পানি একটার পর একটা আসছে দেশে। অদূর ভবিষ্যতে আরও কথা বলার প্রতিযোগিতা হবে বলেই মনে হচ্ছে।
২ নম্বর খাতা : মোবাইল ফোনের উপকারিতা অনেক আছে। আমরা পেপারে পড়েছি, জঙ্গি শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলাভাইকে নাকি মোবাইল ফোনের ট্র্যাকিং করেই ধরা হয়েছিল। আমাদের সবার নিজের বাড়িতেও এই ফোন কাজে লাগে। আমাদের কাজের ছেলেরও মোবাইল আছে। কাজ নেয়ার সময় সে শর্তই দিয়েছিল যে, তাকে মোবাইল কিনে দিতে হবে। সে কাঁচাবাজারে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখে প্রথমটায়। তারপর আম্মুকে মিস কল দেয়। একটা না, পরপর পাঁচটা। আম্মু রিং ব্যাক করলে সে সবিস্তারে জানায়—আজকের বাজারে কাঁচকি, নলা, চাষের কই, পুকুরের পাঙ্গাশ কোন্ মাছের কত দাম। আম্মুর নির্দেশনা মোতাবেক সে মাছ কেনে। (গোপনে বলে রাখি, প্রতিদিনই সে ধরা খায়। এটা যেন তার নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোকরাটা হররোজ পচা মাছ কিনে আনে। আর, আম্মুর বকা হজম করে নির্বিবাদে)। এ বিষয়টিতে মোবাইল ফোনের কৃতিত্ব আছে নাকি নেই, সেটা অবশ্য আমি ঠিক বিচার করে উঠতে পারিনি।
মোবাইল ফোন আবার ঝগড়া, অনশন, মান অভিমানেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমার বড় আপুকে আম্মু-আব্বু দু’জনই একজোট হয়ে বেধড়ক বকাঝকা করেন। এ ব্যাপারে আব্বু-আম্মুর মধ্যে কোনো মতপার্থক্য ছিল না। আপু নাকি কি জুস টুস দিয়ে সারা রাত কার সঙ্গে আলাপ-সালাপ করে। কয়েকবার শাসানির পরও আপু নিবৃত্ত হয়নি। সে কারণে তার ৭টা সিম সিজ করে নেয়া হয়েছে। প্রতিবাদে অনশন।
৩ নম্বর খাতা : মোবাইল ফোনের জন্য ল্যান্ডফোনের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিদেশি কোম্পানিগুলো নির্বিচারে আমাদের সব টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল ফোনের কারণেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এই ফোন অতি দ্রুত ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যখন হু হু করে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছিল, তখন বাণিজ্যমন্ত্রী একদিন দোকানপাট পরিদর্শনে বের হয়েছিলেন। টিভিতে দেখা গেছে, প্রবল উত্সাহে দোকানদারদের তিনি তার মোবাইল নম্বরও দিয়ে দিচ্ছেন (পরে তিনি হয়তো ওই সিম অবশ্যই বদলে ফেলেছেন, শান্তিতে ঘুমানোর স্বার্থেই)। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মজুতদার ঢাকা থেকে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির খবর পেয়ে যাচ্ছে এক লহমায়। গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রেও মোবাইল ফোন চমত্কার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
ব্যাপক, না না রেকর্ডসংখ্যক মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করায় বিদ্যুত্ সঙ্কট বেড়ে যাচ্ছে। কারণ প্রতিনিয়তই লাখ লাখ ফোনের ব্যাটারি চার্জ করতে হচ্ছে মহার্ঘ বিদ্যুতের সাহায্যে। এমনও দেখা যাচ্ছে, চার্জে থাকা অবস্থায়ই কথা চলছে। বিরাম নাই। কত কথা বলে রে! কত বিদ্যুত্ খরচ করে রে!
৪ নম্বর খাতা : এ খাতায় লেখা আছে সামান্য কয়েকটি বাক্য।—আমাদের পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। আমাদের কারওই কোনো মোবাইল ফোন নাই। সুতরাং এর উপকারিতা বা অপকারিতা সম্পর্কে আমার কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নাই।
খাতা আরো কয়েকটি ছিল। টিচার এ চারটি খাতা পড়েই ক্ষান্ত দিলেন। তার হাই উঠছে। গত রাতে এক ফোঁটাও ঘুম হয়নি। মোবাইল ফোন নিয়েই বৌয়ের সঙ্গে খিটিমিটি হয়েছে বেশ ভালো রকমের। রাতে কারো খাওয়া হয়নি। দু’জনার মধ্যে কথা বলাবলিও বন্ধ। এ যন্ত্রটি আপদ বিশেষ। এতে কোনো সন্দেহ নাই।
সূত্র : ওপেস্ট
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন