এবার পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি আগামী দিনে এ ধরনের প্রযুক্তির জয়জয়কার হবে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পরিবেশ বাঁচাতে গ্রিন টেকনোলজি বা প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এমনিতেই পরিবেশের যথেষ্ট বিপর্যয় ঘটেছে। পৃথিবীর আবহাওয়াতে যে পরিবর্তন এসেছে তাতে করে শীতের প্রকোপ বাড়ছে; সেই সঙ্গে আবার অসহনীয় গরমে নাকাল পৃথিবীবাসী। যেসব উপকরণ পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায় সেসব শনাক্ত করতে হবে এবং এইসব উপকরণের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সবুজ বেষ্টনী।
কী এই গ্রিন টেকনোলজি ?
যে টেকনোলজি বা প্রযুক্তি পরিবেশ বান্ধব এবং যা প্রাকৃতিক উৎস থেকে তৈরি ও ব্যবহৃত হয় তাকে বুঝায়। পৃথিবীতে প্রাকৃতিক উৎস ধ্বংস না করে প্রযুক্তি উৎপাদন করার উপায় খোঁজা এর প্রধান লক্ষ্য। গ্রীন টেকনোলজির সুবিধা হলো- এটি পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রীন টেকনোলজি ব্যবহার হতে পারে। যেমন, বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদন হবে। পরিবেশের সহায়ক এমন বিল্ডিং নির্মাণ করা যেতে পারে যা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। আরো বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে। পরিবেশ বান্ধব এসব প্রযুক্তি নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সামপ্রতিক তৎপরতা লক্ষ্যনীয়।
ওবামা প্রশাসনে গ্রীন টেকনোলজি ব্যবহারে সহযোগিতা
সমপ্রতি ওবামা প্রশাসন গ্রীন টেকনোলজি প্রসারে সহযোগিতা করার উপর জোর দিয়েছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বায়োফুয়েল প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনটি এজেন্সি যথা ইউএসডিএ, ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি এবং ইপিএ একটি গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে। এতে একটি স্ট্যান্ডার্ড ও লক্ষ্য নির্ধারন করা হবে। এতে বৃহৎ পরিসরে বায়োফুয়েল উৎপাদন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
চীনে পরিবেশ বান্ধব গাড়ী এবং ব্যাটারি
চীন একটি বৃহৎ রাষ্ট্র। সমপ্রতি এদেশে পরিবেশের ব্যাপারে সচেতন হয়ে ওঠছে চীনের একটি গাড়ী এবং ব্যাটারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি। এই প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের শতকরা ১০ ভাগ শেয়ার রয়েছে, তারা আগামী পাঁচ বৎসর পর্যন্ত চায়না বৃহত্তম সোলার ব্যাটারি প্লান্টে ৩.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। শিনজেন নির্ভর বিওয়াইডি পরবর্তী বৎসর ৮ লক্ষ ভেহিকল বা গাড়ী বিক্রি করবে। এই প্লান্টে ৫,০০০ মেগাওয়াট ব্যাটারি উৎপাদন করবে। বিওয়াইডি ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ গাড়ী বিক্রি করেছে। তারা আশা করছে এ বৎসর প্রথমার্ধে প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ী বিক্রি শুরু করবে।
এরিজোনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সোলার প্লান্ট
বিদ্যুৎ উৎপাদনে সোলার প্লান্ট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। অনেক দেশে এ প্রযুক্তির প্রসার ঘটলেও এরিজোনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি বৃহৎ সোলার প্লান্ট গড়ে ওঠেছে। এটি প্যারাবোলিক ডিস যা সূর্য হতে ইলেকট্রিসিটি বা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এই প্রজেক্টে প্রতিটি ডিস হতে ২৫ কিলোওয়াট এবং মোট ১.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। এতে স্টাইরলিং এনার্জি সিস্টেম টেকনোলজি কাজ করবে। সোলার পাওয়ার ডেভেলপার টেসেরা সোলার এরিজোনায় এজন্যে কাজ করে যাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়া এবং টেক্সাসে টেসেরা সোলার ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে।
হাইতিতে সোলার প্লান্ট
হাইতিতে সোলার পাওয়ার ইকুইপমেন্ট ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে লাইট জ্বালানো, পানি উত্তোলনে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর দেশটিতে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া পানির তো রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা এ ব্যাপারে এগিয়ে এসেছে। ক্ষুদ্র আকৃতির সোলার প্যানেল দ্বারা লেড ল্যাম্প জ্বলবে। সোল প্রতিষ্ঠান এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সোলার প্যানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সোলার ওয়ার্ল্ড সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওয়াটার পাম্প স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে। এখানে মোবাইল ফোনে সোলার প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। এতে বিল্ট ইন সোলার প্যানেল দ্বারা মোবাইল ফোনে চার্জ হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে|
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি
সেলফোন, ল্যাপটপ কম্পিউটার এবং বিভিন্ন পাওয়ার টুলে লিথিয়াম আয়োন ব্যাটারি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। এই ব্যাটারি সমূহ হবে ক্ষুদ্রাকৃতির এবং হালকা। এতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১০ সালের একটি উল্লেখ করার মতো প্রযুক্তি এটি। এটি ওভারচার্জিং, শর্ট সার্কিট এবং অতিরিক্ত হিট ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। এ ধরনের ব্যাটারি বাজারে আসার ফলে অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয় ঘটবে। এটি একটি পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি।
অ্যাপল আই গেজেটে বিল্ট ইন সোলার প্যানেল
এবার ইন্টিগ্রেটেড সোলার সেল ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে অ্যাপল কর্পোরেশন। অ্যাপল আই গেজেটে ইন্টিগ্রেটেড সোলার সেল থাকছে। অর্থাৎ সোলার সেল হতে ডিভাইসে বিদ্যুৎ যাবে।
এ প্রযুক্তি নিয়ে বিট গেটস্ এর ভাবনা
বিল গেটস এনার্জি বা জ্বালানি শক্তি এবং আবহাওয়ার নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করছেন। এ লক্ষ্যে বিল এবং মেলিন্ডা গেটস্ ফাউন্ডেশন কাজ শুরু করেছে। বিল গেটসের মতে, বিশ্বে কম খরচে বিদ্যুৎ শক্তি প্রয়োজন বিশেষ করে দরিদ্র লোকদের জন্যে। তিনি একটি বায়ো ফুয়েল কোম্পানী সেফায়ার এনার্জি গড়ে তুলছেন। এটি কার্বনকে সীমিত পর্যায়ে নিয়ে আসতে সচেষ্ট থাকবে।
বিশ্বে পরিবেশের বিপর্যয় রোধে গ্রিন টেকনোলজি বা প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে এবং এই প্রযুক্তি প্রসারে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দেশ এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তির যেনো শেষ নেই। এর সঙ্গে আরো একটি নতুন সমস্যা গ্যাস সংকট। এই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে আমরা বড় ধরনের সোলার প্লান্ট ব্যবহার করতে পারি। একদিকে এটি যেমন পরিবেশ বান্ধব তেমনি সাশ্রয়ী হবে বড় সোলার প্লান্ট নির্মাণে। আবার গ্যাস বা জ্বালানি সমস্যার সমাধানে বায়ো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি ক্ষুদ্র ও মাঝারি পরিসরে। একমাত্র গ্রিন টেকনোলজিই পারে পরিবেশকে নিরাপদ রাখতে ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন