নাতীর জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে রেষ্টুরেন্টের দো-তলা থেকে নীচে এসে দাঁড়ান মিসেস রুকাইয়া। নাতির পাঁচ বছর পূর্ণ হল আজ। কেমন যেন একটি নষ্টালজিক ঘোরের মধ্যে ভাবতে থাকেন, কত দ্রুত সময় ফুরিয়ে যায়। এই তো সেদিন তার ছেলেই ছিল এতটুকু। ছেলের জন্মদিন কখনো রেষ্টুরেন্টে করেননি কিন্তু সবসময় ঘরোয়া আয়োজন করেছেন। আত্মীয়-স্বজন আর ছেলের বন্ধুদের উপস্থিতিতে জমজমাট হতো সেই অনুষ্ঠান গুলো। নিজ হাতে রান্না-বান্না সহ সব কাজ করতেন। এই ছেলে আজ বড় হয়েছে। বড় চাকরি করছে। নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে এই শহরেই আলাদা থাকছে। ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে রেষ্টুরেন্টে বড় পার্টি দিচ্ছে। কিন্তু কেমন যেন বন্ধনটা আলগা হয়ে গেছে। ভাবতে ভাবতে থাকেন আর একটি সিএনজি খুঁজতে এদিক-ওদিক তাকান। ঘরে অসুস্থ স্বামী, দ্রুত যাওয়া দরকার।
এমন সময় উপর থেকে নেমে আসে বাপী, তার ছেলের ইউনিভার্সিটি পড়া বন্ধু।
-খালাম্মা, এখানে দাঁড়িয়ে কি করেন?
-এই তো বাবা, একটা সিএনজি খুঁজছি। বাসায় যাব।
-চলেন, আপনাকে নামিয়ে দেই। আমার সাথে গাড়ি আছে।
-না, বাবা থাক, তোমার তো উল্টো পথ হয়ে যায়, দেরী হয়ে যাবে। আমি সিএনজিতে যেতে পারব।
বাপী অনেকটা জোর করেই মিসেস রুকাইয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। গাড়ি চলতে থাকে তার বাসার দিকে। আবার কথা শুরু করে বাপী।
-খালু কে দেখলাম না, উনি আসেন নি?
-না, বাবা, উনার শরীরটা ভালো নেই। ঠান্ডা-জ্বর-কাশিতে বেশ কাহিল হয়েছেন। তাই আসতে পারেন নি।
-তাহলে তো আপনাকে নামাতে এসে ভালোই হলো। খালুকে এক নজর দেখে যাওয়া হবে।
-হ্যাঁ, বাবা, তোমার খালুও খুব খুশি হবে। আমরা কিন্তু মাঝে মাঝেই তোমার কথা বলি। তুমি তো আজ-কাল আর আসই না।
-ব্যাস্ত থাকি খালাম্মা। আর হিমেলও তো এখানে থাকে না। আমিও আপনাদের কথা খুব মনে করি। হলে থাকতে আপনার বাসায় এসে কত খেয়ে গেছি, সেগুলি তো ভুলিনি। আপনার এই ঋণ তো আর শোধ করার মত নয়। তো খালাম্মা, আপনি সিএনজি খুঁজছিলেন, হিমেলের গাড়িতে ড্রপ নিলেই তো পারতেন।ওদের তো প্রোগ্রাম শেষ করে বেরুতে তো আরো অনেক দেরী হবে।
-হিমেল তো গাড়ি কিনে নাই বাবা।
এবার বাপীর অবাক হবার পালা। তবে কি হিমেল গাড়ি কিনার কথা মাকে বলে নি? তার ইউনিভার্সিটি লাইফের এই ঘনিষ্ট বন্ধুর অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু সে এত নীচে নামতে পারে এটা বাপী ভাবতে পারে না। বলবে না ভেবেও পরে বলেই ফেলল, হিমেল তো গাড়ি কিনেছে খালাম্মা, কয়েক মাস হয়ে গেল। গত মাসে ওর গাড়িতে চড়ে ওর সাথে আমরা শাফায়েতের বাসায় গেছি।
মিসেস রুকাইয়া দীর্ঘশ্বাস গোপন করেন না। বলেন আমাকে তো বলে নি বাবা। এরপর পরিবেশটা গুম হয়ে যায়। বাকী পথ টুকু কেউ আর কথা বলে না।
বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়না। এক দুপুরে ছেলে-বউ-নাতি এসে হাজির। হিমেল খুশী গলায় বলে মা একটা গাড়ি কিনে ফেলেছি। নীচে চল তোমাকে দেখায়ে নিয়ে আসি। মায়ের দুঃখবোধ কমে যায়। ছেলের হাসিমুখ দেখে তিনিও আনন্দিত হয়ে উঠেন। নীচে যেয়ে গাড়ি দেখে আসেন, ড্রাইভারের সাথে পরিচিত হন। বুঝতে দেন না যে তিনি খবরটি অন্যের কাছে পেয়েছেন এবং ছেলের উন্নতির 'এই খবরটা' অন্যের কাছ থেকে জানাটা খুব কষ্টের।
বউমা এবং নাতি সাধারণত খুব কমই আসে তার বাসায়। বউমা চাকরি করে, সময় পায় না। মাঝে মধ্যে ছেলে এসে মা ও বাবাকে দেখে যায়। কিন্ত নাতির জন্যে পরান পোড়ে মিসেস রুকাইয়ার। লজ্জার মাথা খেয়ে প্রত্যেক মাসেই তিনি যান ছেলের বাসায় নাতি কে দেখতে। যদিও খুবই ফর্মাল চা-বিস্কিট ছাড়া এক বেলা ভাত খেয়ে আসবার সৌভাগ্য তার এখনো হয় নি। ভাতের কাঙ্গাল তিনি নন। তবে যাতায়াতে বড় কষ্ট। রিকশা চলে না, সিএনজি সহজে পাওয়া যায় না।
ছেলের গাড়ি কিনবার খবর পাওয়ার পরের মাসেও তিনি ছেলের বাসায় যান নাতিকে দেখতে। নীচে দেখেন ছেলের গাড়ি, ড্রাইভার আদবের সাথে সালাম দেয়। ভাবেন যাবার সময় গাড়িতে চড়ে চলে যাবেন। মনে মনে প্লান করে ফেলেন একটু ঘুরে কাওরান বাজার যেয়ে পাইকারী বাজার মাসের কিছু বাজার করে নিবেন।
বাসায় ঢুকতেই নাতি এসে জড়িয়ে ধরে দাদুকে। চলে গল্প-খেলা-খুনসুটি। ফর্মালিটির চা পর্বও হয়। মুখ ফুটে গাড়ি চাইতে বাধে মিসেস রুকাইয়ার। আশা করেন ছেলেই বলবে মা গাড়িটা নিয়ে যাও। কষ্ট করে সিএনজিতে যাবার কি দরকার? কিন্তু না, ছেলে কিছু বলে না। তিনি বিদায় নিয়ে বের হয়ে আসেন। নীচে নামলে ড্রাইভার আবারো তাঁকে সালাম দেয়। তিনি গ্যারাজ পার হয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়ান। আবারো সিএনজি খুঁজতে থাকেন।
এবার দেখা হয় ছেলের আরেক বন্ধু শাফায়াতের সাথে। খালাম্মাকে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি দাঁড়া করে। বাপী, শাফায়াত সহ ছেলের বেশ কয়েকজন বন্ধু খুব আসতো তাঁর বাসায়। তিনিও নিজের ছেলের মতই আদর করতেন তাদের, বিভিন্ন রকম রান্না করে খাওয়াতেন। হলে থাকা এই ছেলে গুলোও তাঁকে মায়ের চোখে দেখতো। এরা বেশ বড় হয়েছে, বড় বড় চাকরি করে সবাই। এরা এখনো যথেষ্ট সম্মান করে তাকে। শাফায়াত গাড়ি থেকে নেমে এসে সালাম দেয়। বলে হিমেলের বাসা থেকে এলেন বুঝি? বাসায় যাবেন না অন্য কোথাও? কোথায় যাবেন নামিয়ে দেই।
এবার আর মিসেস রুকাইয়া ছেলে কে ছোট করার সুযোগ নেন না। বলেনঃ
-বাবা আমি কেন যেন আর গাড়িতে চড়তে পারি না। দম বন্ধ লাগে। দু-একবার বমিও করে ফেলেছি। হিমেল ই তো গাড়ি নেবার জন্য সাধল কিন্ত আমিই নেই নি। তুমি তোমার কাজে যাও, আমি ঠিকই একটা সিএনজি খুঁজে নিয়ে চলে যাব।
শাফায়াত গাড়ি নিয়ে চলে যায়। ঝাপসা চোখে মিসেস রুকাইয়া সিএনজি খুঁজতে থাকেন।
এমন সময় উপর থেকে নেমে আসে বাপী, তার ছেলের ইউনিভার্সিটি পড়া বন্ধু।
-খালাম্মা, এখানে দাঁড়িয়ে কি করেন?
-এই তো বাবা, একটা সিএনজি খুঁজছি। বাসায় যাব।
-চলেন, আপনাকে নামিয়ে দেই। আমার সাথে গাড়ি আছে।
-না, বাবা থাক, তোমার তো উল্টো পথ হয়ে যায়, দেরী হয়ে যাবে। আমি সিএনজিতে যেতে পারব।
বাপী অনেকটা জোর করেই মিসেস রুকাইয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। গাড়ি চলতে থাকে তার বাসার দিকে। আবার কথা শুরু করে বাপী।
-খালু কে দেখলাম না, উনি আসেন নি?
-না, বাবা, উনার শরীরটা ভালো নেই। ঠান্ডা-জ্বর-কাশিতে বেশ কাহিল হয়েছেন। তাই আসতে পারেন নি।
-তাহলে তো আপনাকে নামাতে এসে ভালোই হলো। খালুকে এক নজর দেখে যাওয়া হবে।
-হ্যাঁ, বাবা, তোমার খালুও খুব খুশি হবে। আমরা কিন্তু মাঝে মাঝেই তোমার কথা বলি। তুমি তো আজ-কাল আর আসই না।
-ব্যাস্ত থাকি খালাম্মা। আর হিমেলও তো এখানে থাকে না। আমিও আপনাদের কথা খুব মনে করি। হলে থাকতে আপনার বাসায় এসে কত খেয়ে গেছি, সেগুলি তো ভুলিনি। আপনার এই ঋণ তো আর শোধ করার মত নয়। তো খালাম্মা, আপনি সিএনজি খুঁজছিলেন, হিমেলের গাড়িতে ড্রপ নিলেই তো পারতেন।ওদের তো প্রোগ্রাম শেষ করে বেরুতে তো আরো অনেক দেরী হবে।
-হিমেল তো গাড়ি কিনে নাই বাবা।
এবার বাপীর অবাক হবার পালা। তবে কি হিমেল গাড়ি কিনার কথা মাকে বলে নি? তার ইউনিভার্সিটি লাইফের এই ঘনিষ্ট বন্ধুর অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু সে এত নীচে নামতে পারে এটা বাপী ভাবতে পারে না। বলবে না ভেবেও পরে বলেই ফেলল, হিমেল তো গাড়ি কিনেছে খালাম্মা, কয়েক মাস হয়ে গেল। গত মাসে ওর গাড়িতে চড়ে ওর সাথে আমরা শাফায়েতের বাসায় গেছি।
মিসেস রুকাইয়া দীর্ঘশ্বাস গোপন করেন না। বলেন আমাকে তো বলে নি বাবা। এরপর পরিবেশটা গুম হয়ে যায়। বাকী পথ টুকু কেউ আর কথা বলে না।
বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়না। এক দুপুরে ছেলে-বউ-নাতি এসে হাজির। হিমেল খুশী গলায় বলে মা একটা গাড়ি কিনে ফেলেছি। নীচে চল তোমাকে দেখায়ে নিয়ে আসি। মায়ের দুঃখবোধ কমে যায়। ছেলের হাসিমুখ দেখে তিনিও আনন্দিত হয়ে উঠেন। নীচে যেয়ে গাড়ি দেখে আসেন, ড্রাইভারের সাথে পরিচিত হন। বুঝতে দেন না যে তিনি খবরটি অন্যের কাছে পেয়েছেন এবং ছেলের উন্নতির 'এই খবরটা' অন্যের কাছ থেকে জানাটা খুব কষ্টের।
বউমা এবং নাতি সাধারণত খুব কমই আসে তার বাসায়। বউমা চাকরি করে, সময় পায় না। মাঝে মধ্যে ছেলে এসে মা ও বাবাকে দেখে যায়। কিন্ত নাতির জন্যে পরান পোড়ে মিসেস রুকাইয়ার। লজ্জার মাথা খেয়ে প্রত্যেক মাসেই তিনি যান ছেলের বাসায় নাতি কে দেখতে। যদিও খুবই ফর্মাল চা-বিস্কিট ছাড়া এক বেলা ভাত খেয়ে আসবার সৌভাগ্য তার এখনো হয় নি। ভাতের কাঙ্গাল তিনি নন। তবে যাতায়াতে বড় কষ্ট। রিকশা চলে না, সিএনজি সহজে পাওয়া যায় না।
ছেলের গাড়ি কিনবার খবর পাওয়ার পরের মাসেও তিনি ছেলের বাসায় যান নাতিকে দেখতে। নীচে দেখেন ছেলের গাড়ি, ড্রাইভার আদবের সাথে সালাম দেয়। ভাবেন যাবার সময় গাড়িতে চড়ে চলে যাবেন। মনে মনে প্লান করে ফেলেন একটু ঘুরে কাওরান বাজার যেয়ে পাইকারী বাজার মাসের কিছু বাজার করে নিবেন।
বাসায় ঢুকতেই নাতি এসে জড়িয়ে ধরে দাদুকে। চলে গল্প-খেলা-খুনসুটি। ফর্মালিটির চা পর্বও হয়। মুখ ফুটে গাড়ি চাইতে বাধে মিসেস রুকাইয়ার। আশা করেন ছেলেই বলবে মা গাড়িটা নিয়ে যাও। কষ্ট করে সিএনজিতে যাবার কি দরকার? কিন্তু না, ছেলে কিছু বলে না। তিনি বিদায় নিয়ে বের হয়ে আসেন। নীচে নামলে ড্রাইভার আবারো তাঁকে সালাম দেয়। তিনি গ্যারাজ পার হয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়ান। আবারো সিএনজি খুঁজতে থাকেন।
এবার দেখা হয় ছেলের আরেক বন্ধু শাফায়াতের সাথে। খালাম্মাকে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি দাঁড়া করে। বাপী, শাফায়াত সহ ছেলের বেশ কয়েকজন বন্ধু খুব আসতো তাঁর বাসায়। তিনিও নিজের ছেলের মতই আদর করতেন তাদের, বিভিন্ন রকম রান্না করে খাওয়াতেন। হলে থাকা এই ছেলে গুলোও তাঁকে মায়ের চোখে দেখতো। এরা বেশ বড় হয়েছে, বড় বড় চাকরি করে সবাই। এরা এখনো যথেষ্ট সম্মান করে তাকে। শাফায়াত গাড়ি থেকে নেমে এসে সালাম দেয়। বলে হিমেলের বাসা থেকে এলেন বুঝি? বাসায় যাবেন না অন্য কোথাও? কোথায় যাবেন নামিয়ে দেই।
এবার আর মিসেস রুকাইয়া ছেলে কে ছোট করার সুযোগ নেন না। বলেনঃ
-বাবা আমি কেন যেন আর গাড়িতে চড়তে পারি না। দম বন্ধ লাগে। দু-একবার বমিও করে ফেলেছি। হিমেল ই তো গাড়ি নেবার জন্য সাধল কিন্ত আমিই নেই নি। তুমি তোমার কাজে যাও, আমি ঠিকই একটা সিএনজি খুঁজে নিয়ে চলে যাব।
শাফায়াত গাড়ি নিয়ে চলে যায়। ঝাপসা চোখে মিসেস রুকাইয়া সিএনজি খুঁজতে থাকেন।
সূত্র : সোনার বাংলাদেশ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত দিন